জুমার দিনের বিশেষ কিছু আমল : মুফতী মাহমুদ হাসান
 প্রকাশিত: 
 ১০ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:০৫
 আপডেট:
 ৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:৫৪
জুমার দিন সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম এবং মর্যাদাপূর্ণ একটি দিন।এই দিনের ফজিলত সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য হাদিস গ্রন্থগুলোতে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়াছে। এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ৮৫৪)
এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমার দিন দিবসসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৮৪)
জুমার দিনের আট আমল
মর্যাদাপূর্ণ এই দিনের অনেক আমল হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কিছু আমল ধারাবাহিক উল্লেখ করা হচ্ছে
১. গোসল করা। ২. উত্তম পোশাক পরিধান করা। ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৪. মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনা।
এই চারটি আমলের কথা একসঙ্গে একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যদি তার নিকট থাকে। তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়। নির্ধারিত নামাজ আদায় করে। তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সমস্ত সগিরা গুনাহর জন্য কাফ্ফারা হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৩)
৫. যথাসম্ভব দ্রুত মসজিদে যাওয়া। এই দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে দ্রুত মসজিদে যাওয়া। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝো।’ (সুরা জুমআ, আয়াত : ৯)
রাসুল (সা.) বলেছেন, জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মোটাতাজা উট কোরবানি করে। এরপর যে আসে সে ওই ব্যক্তি যে একটি গাভী কোরবানি করে। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগি দানকারীর ন্যায়। তারপর ইমাম যখন বের হন তখন ফেরেশতাগণ তাদের লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনতে থাকেন। (বুখারি, হাদিস : ৯২৯)
৬. সুরা কাহফ তিলওয়াত করা
মর্যাদপূর্ণ এই দিনের বিশেষ একটি আমল হচ্ছে সুরা কাহফ তিলওয়াত করা। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর উজ্জ্বল করা হবে। (আমালুল ইয়াওমী ওয়াল লাইল, হাদিস : ৯৫২)
৭. বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা
এই দিনের আরেকটি আমল হচ্ছে নবীজির ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। এই মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিনই সর্বোত্তম। এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে। এই দিনে সমস্ত সৃষ্টিকে বেহুশ করা হবে। অতএব তোমরা এই দিনে আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)
৮. দোয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া
জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ একটি আমল হচ্ছে দোয়ার প্রতি মনোনিবেশ করা। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে যে, তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর নিকট যে দোয়া করবে আল্লাহ তা কবুল করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)
মুফতী মাহমুদ হাসান।
সিনিয়র শিক্ষক: দারুল হক্ব ইসলামিয়া মাদ্রাসা মির্জাপুর, টাঙ্গাইল।
বিষয়:

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: