রবের দেয়া অসংখ্য নিয়ামতে ভরপুর আমাদের জীবন : মো: শামছুল আলম
 প্রকাশিত: 
 ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:২০
 আপডেট:
 ৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:১৫
                                
আশরাফুল মাখলুকাত মানবজাতির প্রতি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অগণিত নিয়ামত দান করেছেন। বিশ্বের সব মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ও সেসব নিয়ামতকে গণনা করে শেষ করা যাবে না!
যেমন এগুলো কি খুব ছোট বিষয় যে আপনি আপনার দুই হাত ঠিকভাবে নাড়াতে পারছেন, দ্রুত গতিতে দৌড়াচ্ছেন, ভোরের সজীব হাওয়ায় বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন, এবং দুচোখ দিয়ে রোদের আলো উপভোগ করছেন?
আপনি একজন সুস্থ মানুষ, আপনার প্রত্যেকটি অঙ্গ ক্রুটিহীন, কর্মদক্ষতায় আপনি পরিপূর্ণ। এই ব্যাপারগুলোও যদি আপনি অবহেলার দৃষ্টিতে দেখেন, তবে এখনই জেগে উঠুন৷
এই জীবনে জমানো স্বর্ণ, রৌপ্য কখনোই আপনার পুঁজি নয়৷ বরং আপনার আসল পুঁজি, আসল সম্পদ হলো আপনাকে দেয়া আল্লাহর উপহার সমূহ - যেমন: বুদ্ধি, সামর্থ্য, স্বাধীনতা এবং সবচেয়ে বড় উপহার - সুস্বাস্থ্য। "
আপনি কি বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে আপনার দুটো চোখ বিক্রি করবেন?" ডেল কার্নেগী বিস্মিত হলেন:
"আপনার দুই পা এবং হাতের জন্য আপনি কী নেবেন? আপনার শ্রবণশক্তি? আপনার সন্তান কিংবা পরিবার? নি
জের সম্পদের পরিমাণ গণনা করুন। আপনি দেখবেন জীবনে যত অর্থ, স্বর্ণ জমিয়েছেন তার বিনিময়েও আপনি সেগুলো বিক্রি করতে রাজী নন৷ কিন্তু আমরা কি আসলেই এগুলোর শুকরিয়া আদায় করি? আহ, না। যেমন স্কোপেনহাওয়ার বলেছেন:"
আমরা খুব কমই চিন্তা করি যে আমাদের কী কী আছে কিন্তু আমাদের কী নেই তাই নিয়ে আমরা সবসময় ভাবি। হ্যাঁ, আমাদের কাছে যা আছে তা নিয়ে কদাচিৎ চিন্তা আসে কিন্তু আমাদের যে জিনিসের অভাব তা সবসময়ই যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি।"
এটি বর্ণিত আছে যে, একজন সৎ ধর্মীয় পন্ডিত, ইবনে আল-সামাক খলিফা হারুন উর রশীদের পরামর্শ সভায় অংশ নিচ্ছিলেন। খলিফা পানি চাইলেন এবং তাকে বললেন: "আমাকে উপদেশ দাও।"
তার মুখের সামনে পাত্র ধরে ইবনে আল-সামাক জিজ্ঞেস করলেন:
"হে বিশ্বাসীদের নেতা, এই পানীয় যদি আপনার কাছ থেকে আটকে রাখা হতো, তাহলে আপনি কি এর পরিবর্তে আপনার রাজ্য দিয়ে দিতে পারতেন? খলিফা বললেন: " হ্যাঁ।"
পানীয়টি পান করে ইবনে সামাক তাকে জিজ্ঞেস করলেন:
যদি এটি আপনার দেহের ভেতরে আটকে থাকতো এবং আপনি এটিকে বের করে দিতে পারতেন না (প্রস্রাব করতে পারতেন না), আপনি কি তা বের করে দেয়ার জন্য আপনার রাজ্য দিতে প্রস্তুত থাকবেন?খলিফা জবাব দিলেন: "হ্যাঁ।" ইবনে আল-সামাক বললেন:
"একটি রাজ্যের এমন কোনো বৈশিষ্ট্য নেই যা কোনো পানীয় কিংবা এক ঢোক পানীয় বের করে দেয়ার পদ্ধতির বিকল্প হতে পারে।"
কোনো তোয়াক্কা করা ছাড়াই তা আমাদের আছে এবং বিনা প্রচেষ্টায় আমরা তা পেয়ে বসে আছি- যার জন্য এক রাজা তার রাজ্য পর্যন্ত উৎসর্গ করতে পারে। সে নিয়ামতগুলো হলো- পানযোগ্য পানি পাওয়া এবং তা বের করে দেয়ার অঙ্গ সমূহ সচল থাকা।
আমরা কি স্রষ্টা প্রদত্ত অসংখ্য নিয়ামতের কথা স্মরণ করি? কিংবা আমরা কি এটার প্রশংসা করি এবং এর জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই?
সুস্থতার মাঝে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া আমাদেরকে ভুলিয়ে দেয় যে সুস্থতা কত বড় নিয়ামত; অসুস্থতা ছাড়া আমরা এর মর্ম বুঝিই না। কিন্তু মানুষের দৃষ্টিতে তা যতই সামান্য বা ক্ষুদ্র হোক না কেন, এটি সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর দৃষ্টির অধীন এবং তার দেয়া প্রত্যেকটি নিয়ামতের সাথে তার সামনে এই নিয়ামতেরও হিসাব নেয়া হবে। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন:
"যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।"(সূরা নাহল; আয়াত: ১৮)
সমস্ত জীবনই একটি উপহার। আমাদেরকে মন এবং অনুভূতি দান করার জন্য অবশ্যই আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত; এবং এই সমগ্র মহাবিশ্ব অসংখ্য নিয়ামতে সজ্জিত এবং স্রষ্টার মহিমা ঘোষণাকারী লক্ষণ দ্বারা পরিপূর্ণ: "তোমরা কিরূপে আল্লাহকে অস্বীকার কর? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন, আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং পুনরায় তোমাদেরকে জীবন্ত করবেন, অতঃপর তোমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।" (সূরা বাকারা; আয়াত: ২৮)
আমাদের ইন্দ্রিয় হলো- এই মহাবিশ্বের সাথে আলাপচারিতা, নতুন কিছুর আবিষ্কার এবং এখান থেকে শেখার জন্য চমৎকার এক হাতিয়ার। যখন চারদিক এর শক্তি, সৌন্দর্য, এবং বিশালতা দ্বারা প্লাবিত হয়, তখন যিনি আমাদেরকে জীবন দিয়ে সম্মানিত করেছেন তার প্রতি কৃতজ্ঞতায় নত হোন:
"আর আল্লাহ তোমাদেরকে নির্গত করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ হতে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না এবং তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।" (সূরা নাহল; আয়াত: ৭৮)
যখন আমাদের সংবেদনশীল মন ভোঁতা, উদাসীন বা অযত্নে পূর্ণ হয়ে ওঠে; যখন আমরা আর আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের অবিরাম প্রবাহর মূল্য দেই না...তখন একটি সুন্দর চিন্তা- মনকে অস্বাভাবিকতা এবং অমনোযোগের নিস্তেজতা থেকে মুক্ত করার পরে ইন্দ্রিয়গুলি জাগাতে সাহায্য করবে; এটি অনুভূতিগুলির নবায়ন করবে এবং আকাশ ও পৃথিবীর বিশালতায় আমাদের চোখ খুলে দিবে; এই সবকিছু সৃষ্টি করা হয়েছে কেবল আমাদের জন্যই, যা আল্লাহর আহ্বানকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে:
"হে মানুষ সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের উপাসনা কর, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে সৃষ্টি করেছেন; যাতে তোমরা পরহেজগার (ধর্মভীরু) হতে পার। যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদ সরূপ সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশ হতে পানি বর্ষণ ক’রে তার দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফল-মূল উৎপাদন করেছেন। সুতরাং তোমরা জেনে শুনে কাউকেই তার সমকক্ষ স্থির করো না।" (সূরা বাকারা; আয়াত: ২১-২২)
মোঃ শামছুল আলম
লেখক ও গবেষক
বিষয়: মো: শামছুল আলম

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: