ঈদের আনন্দ বয়ে যাক সব প্রাণে ,সব খানে : মোঃ শামছুল আলম
 প্রকাশিত: 
 ১৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৪২
 আপডেট:
 ১৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৪৪
                                
‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে
এলো খুশীর ঈদ ।
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে
শোন আসমানি তাকিদ ।’
ঈদ আসে কৃচ্ছ্র ও শুদ্ধতার প্রতীক হয়ে! তাকওয়ার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নতুন জীবনে ফেরার অঙ্গীকার নিয়ে। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত এবং অফুরন্ত কল্যাণের বার্তা ছড়িয়ে ঈদ আসে। ঈদ আসে শত্রুতা ও দ্বেষের প্রাচীর ডিঙিয়ে বন্ধুত্ব ও মিতালির হাত বাড়িয়ে! ঈদ আসে মহামিলনের মহোৎসবের আবেশে মনকে মথিত করতে! পরিশোধিত হৃদয়ে পরিতৃপ্তির ছোঁয়া ও ‘আবে হায়াত’র স্নিগ্ধতা দিতে!
ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জন্য একই সঙ্গে আনন্দোৎসব ও ইবাদত। এ আনন্দ আল্লাহর রহমত ও ক্ষমাপ্রাপ্তির, জাহান্নাম থেকে মুক্তির! এ আনন্দ সিয়াম-কিয়ামের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতার। এ আনন্দে কোনো অশ্লীলতা ও পাপ-পঙ্কিলতা নেই। এ আনন্দে কেবলই সওয়াব ও পুণ্যের দ্যূতি। এ আলোক-দ্যূতি ও আনন্দ ক্রমান্বয়ে সঞ্চারিত হয় হৃদয় থেকে হৃদয়ে। শিশু-কিশোর ও আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা—সবার দেহ-মানসে লাগে ঈদ-আনন্দের ছোঁয়া!
আহ্ ঈদের দিনের সে কী আনন্দ ! হৈ হুল্লোর ! নতুন জামা নতুন জুতায় হেসে ওঠে যেনো বাঁকা চাঁদ ! ছোটদের তো কথাই নাই কচকচে টাকা আর বড়দের স্নেহে আনন্দ আর ধরে না ! ঈদগাহে যেতে সেতো অন্যরকম আনন্দ !পখে পথে সালাম প্রিয়জনদের কোলাকুলি !
কবি নজরুল সে আনন্দকেই চিত্রায়ন করেছেন ঈদ মোবারক কবিতায়-
পথে পথে আজ হাঁকিব, বন্ধু,
ঈদ মোবারক ! আসসালাম !
ঠোঁটে ঠোঁটে আজ বিলাব শিরনী
ফুল-কালাম !
শাব্দিক অর্থে ঈদ মানে আনন্দ হলেও প্রকৃত বিবেচনায় ঈদ কেবলই একটি আনন্দময় দিন নয়; বরং ঈদ একটি ইবাদত। তাই মুসলমানের ঈদের মূল বক্তব্য হলো মহান আল্লাহর স্মরণ, তার জিকির, তার শ্রেষ্ঠত্ব, তার বড়ত্বকে সামনে রেখে সম্মিলিত আনন্দের পরিবেশ গড়ে তোলা।
আমাদের সামান্য সহযোগিতা এবং কিছু টাকা, কিছু নতুন কাপড় পেয়ে হতদরিদ্র, এতিম-দুস্থ, নিঃস্ব-অসহায় ও বেশুমার ছিন্নমূল মানুষের মুখে ফোটে হাসির রেখা। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ী ও কর্মজীবীরাও এ আনন্দে মেতে ওঠেন সমান রূপে। আর এভাবেই ঈদ সর্বজনীন ও সবার হয়ে ওঠে।
ঈদের আনন্দকে পরিশুদ্ধ করার জন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আনন্দ দান করার জন্য ইসলাম ধনীদের ওপর ওয়াজিব করেছে সদকাতুল ফিতর। সদকায়ে ফিতরের অন্তর্নিহিত রহস্য ও তাৎপর্য হলো, ঈদের আনন্দে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকেও শামিল করে নেয়া। আরো একটি রহস্য হচ্ছে, সদকাতুল ফিতর রোজার জাকাতস্বরূপ। জাকাত যেমনি সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে তেমনি সদকাতুল ফিতর রোজাকে শুদ্ধতা দান করে। রোজার ক্রটি-বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ করে।
সুখবর পেলেই মানুষ আনন্দিত হয়। এক মাস রোজার সাধনার পর ঈদের পবিত্র এই দিনে পুরস্কার হিসেবে ক্ষমা প্রাপ্তিই সেই আনন্দের কারণ। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা ঈদের দিন ফেরেশতাদের মধ্যে রোজাদারদের নিয়ে গর্ব করে বলেন, ‘হে ফেরেশতারা, আমার কর্তব্যপরায়ণ প্রেমিক বান্দার বিনিময় কী হতে পারে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘হে প্রভু পুণ্যরূপে পুরস্কার দান করাই তো তার প্রতিদান। ’ আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব (রোজা) পালন করেছে। অতঃপর দোয়া করতে করতে ঈদগাহে গমন করেছে। সুতরাং আমার মর্যাদা, সম্মান, দয়া ও বড়ত্বের কসম! আমি তাদের দোয়া কবুল করব এবং তাদের মাফ করে দেব। ’ (বায়হাকি: ৩/৩৪৩)
নির্মল এই ঈদ-আনন্দে মহান প্রভুর শাহী দরবারে সব মুসলমান অত্যন্ত বিনীতভাবে নিজেকে উজাড় করে দেয়। খোদায়ী সত্তার মধ্যেই নিজের সব কিছু সীমিত করে নেয় এবং নিজের চাওয়া-পাওয়ার পরিধি মহান আল্লাহর গণ্ডিসীমা লঙ্ঘন করে না।
ইসলামি উৎসব কারো ব্যক্তিগত বা রাষ্ট্রীয় ধ্যান-ধারণায় পালিত হওয়ার সুযোগ নেই, বরং ইসলামি উৎসব সামগ্রিক, ব্যাপক ও সার্বজনীন চিন্তা-চেতনা বাস্তবায়নের মাইলফলক। এখানে খোদামুখী চিন্তা-চেতনাই প্রতিফলিত হয়। এ জন্যই মুসলামানের ঈদে নেই কোনো গর্হিত কাজের ছড়াছড়ি, বরং যখন ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়, তাদের মুখে স্লোগান থাকে- ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ’ অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা বড়, আল্লাহতায়ালা শ্রেষ্ঠ, আল্লাহতায়ালা ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহতায়ালা বড়, আল্লাহতায়ালা শ্রেষ্ঠ, প্রশংসা শুধু তারই জন্য। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মুসলামনদের ধর্মীয় উৎসবের মূলমন্ত্র হলো, এই উৎসব পালিত হয় মহান প্রভুর বড়ত্ব, তার শ্রেষ্ঠত্ব ও তারই একত্ববাদের ঘোষণার মধ্য দিয়ে।
কবি-সাহিত্যিকরা ও ঈদের দিনকে খুশীর দিন হিসেবে চিত্রিত করেছেন । তবে কবি মতিউর রহমান মল্লিক তার গানে ঈদের সুখ ঈদের আনন্দ অপূর্ণ থাকার কথা বলেছেন । যদি খোদার বিধান কায়েম না হয় অপূর্ণই থেকে যাবে ঈদের আনন্দ । কবি লিখেছেন-
“ঈদের খুশী অপূর্ণ রয়ে যাবে ততদিন
খোদার হুকুমাত হবে না কায়েম কায়েম হবে না যতদিন।”
সত্যিই কবি অসাধারন সুন্দর করে যৌক্তিকতা কে ফুটিয়ে তুলেছেন তার গানে । পৃথিবীতে একমাত্র এক আল্লাহর হুকুমাত কায়েমের মাধ্যমেই ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করা সম্ভব । দূর করা সম্ভব উচ্চস্তর ও নিন্মস্তরের ভেদাভেদ ।
ঈদ থেকে শিক্ষা নিয়ে সারাবছর নিজের জীবনকে পরিচালিত করতে পারলেই সার্থক হবে ঈদ উৎসব । ঈদের দিন যেভাবে ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে যায়, সারাবছর ধরে সেই বিভেদের দেয়ালকে ছাপিয়ে গড়ে তুলতে হবে ঐক্যের পাহাড় । তাহলেই ঈদের দিনে সুখানন্দে জেগে ওঠবে মন । নেচে ওঠবে অন্তর । থাকবে না ভেদাভেদ। প্রাণে প্রাণে বেজে ওঠবে সুখের বীন ।
মোঃ শামছুল আলম
লেখক ও গবেষক
বিষয়: মোঃ শামছুল আলম

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: