সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০


এই করেছ ভালো : মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়


প্রকাশিত:
১০ মে ২০২১ ২০:১৬

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ১৪:৩২

 

সুজয় সিগারেটের একটা এ ক্লাস রিং শুন্যে উড়িয়ে বলল –দূর, তাই আবার হয় নাকি? গল্প তো গল্প। আমি অবাক হয়ে খানিকক্ষণ ওর দিকে চেয়ে থেকে বললাম –হয় বন্ধু হয়, তোমার তো মাথা মোটা, তাই অনেক কিছু বুঝতে তোমার অনেক সময়ই লাগে। সুজয় পকেট থেকে আবার একটা সিগারেট বের করে ধরিয়ে বলল – জানিস এটার দাম কত?বললাম- এরসে তো বঞ্চিত দাস, জানবে কি করে? খুব কায়দা করে সিগারেট ধরিয়ে সুজয় বলল – লিখিস গল্প অথচ নেশা করিস না, এটা কি করে হয়? নেশা ছাড়া আবার গাল গল্প হয় নাকি? মুচকি হেসে বললাম- হয় বন্ধু হয়, আমি নেশা করি না বটে তবে নেশা ধরাতে আমি ওস্তাদ|ধরাবো নাকি তোকে? সুজয় হাসলো। ব্যঙ্গের হাসি।

গোল্লায় যাক সুজয়। আমি বলি আমার কথা। আমার বয়স মেরেকেটে বত্রিশ। লম্বায় ছ ফুট তো হবই, বেশি ও হতে পারি। আদিমাস্টার মশায় বলতেন- তুই ব্যাটা ভগবানের লগা। ভগবান তোকে দিয়ে গাছ থেকে তেনার ইচ্ছামত ফলটা মূলোটাপাড়িয়ে নেবেন। তোর ভাগ্যে লবডন্কা।

আদি স্যারের কথা খেটে গেছে। আমি একটা ভালো বিদেশী কোম্পানিতে কাজ করতাম। তাড়িয়ে দিয়েছে। টুইসন করে যা পাই তাতে যে কেউ ঈর্ষায় জ্বলতে বাধ্য। কোনোনেশা করিনা বলে রক্ষে। ধোপ দুরস্ত পোশাক জোটেনাতবে দেদার সিনেমা দেখি, কফি হাউসে আড্ডা মারি, আর কিনি ক্লাসিকাল গানের সিডি। মেয়েরা আমাকে বেশ পছন্দই করে। বর্তমানের নামী মহিলা ঔপনাসিক দোয়েল মিত্র প্রায়শই বলেন –একদিন আসবেন না আমার বাড়ি। জমিয়ে গল্প করা যাবে। কোনদিনই যাওয়া হলনা ভদ্র মহিলার বাড়ি।

শুভমিতার গল্প বলব? কলকাতার এক অভিজাত পরিবারে জন্মেছিল শুভমিতা। এক নামকরা কলেজে পড়ে স্নাতক হলো। চাকরি নিল একটা স্কুলে। কয়েক মাসের মধ্যে ছাড়ল সেই চাকরি| জয়েন করলো একটা এন জি ও তে। কিছুদিন যোগাযোগ ছিল আমার সঙ্গে। তারপর একদিন কোথায় যেন চলে গেল মেয়েটা।

মালবিকার কথা বলব? কি হবে বলে? আপনারা তো চেনেন না ওকে। তবেওর একটা কথা আমার খুব মনে পড়ে। ও প্রায়শই বলত – আমাকে দেখলে ওর নাকি খুব কান্না পায়। কোনদিনই জানতে পারলাম না কেন।

একবার কি হয়েছিল জানেন? আমি আর আমার বন্ধু সুচেতনা শহীদ মিনারের তলায় বসে গল্প করছিলাম। বিষয় তিশয় সেরকম কিছু ছিল না। ওই এলো মেলো চর্বিত চর্বন। সেখ্হানে কবি সোমদেব ও ছিলেন আবার বলিউডের নায়ক দেবকুমার ও ছিলেন। চিনে বাদাম চিবুতে চিবুতে গল্প হচ্ছিল। হঠাত্‌ কি হলো জানেন?

সুচেতনা দুম করে বলে উঠলো আমার জন্য ও নাকি শহীদ মিনার থেকেও ঝাঁপ দিতে রাজি আছ,। জোর ভয় পেয়ে গেলাম। কি জানি বাবা, সাহিত্য পড়া মেয়ে, সত্যিই যদি ওপর থেকে ঝাঁপ দেয়? আমি লুফতে পারব ওকে? বললাম- এটা তো অত্যন্ত ভালো কথা। আমার জন্যে যে কেউ ঝাঁপ দিতে পারে আমি তো স্বপ্নেও কখনো ভাবিনি। তা এক কাজ কর ছোট টুলথেকে ঝাঁপ দিয়ে প্রাকটিস শুরু কর। মানুষ তো প্রাথমিক প্রাকটিস এর পরেই বড় কাজে হাত দেয়, তাই না? সেদিনকার মত ট্রাম এ তুলে দিয়ে আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। এক ঘন্টা অন্তর ফোন করে জানলাম ও অ্যাকচুয়ালি করছে টা কি।

পাঁচ দিন সুচেতনার দেখা নেই। ফোন করি, ফোন বেজে যায়, ধরেনা কেউ। মনের মধ্যে শহীদ মিনার উঁকি দিচ্ছে দিনরাত। রোজ সকালে কাগজ খুলেই আগে পড়িহতাহতের খবর। ঠিকানা জানা ছিল। একদিন সন্ধ্যে বেলায় সাহস করে চলেই গেলাম সুচেতনাদের বাড়ি।

সাহেবী কোম্পানির বড়বাবু বাবা সামনেই বসে ছিলেন। প্রনাম করলাম। বেশ কেতাবি ঢঙে ভদ্রলোক জিগ্গেস করলেন আমি কে? কি চাই? একটুওঘাবড়ে না গিয়ে পেড়ে ফেললাম কথাটা।- দেখুন আমি সুচেতনার খুব ভালো বন্ধু। আমরা দুজন দুজন কে খুব ভালো করে চিনি, বেশ কয়েক বছর তো হবেই.. তো ওকে আমি চাই... একচুয়ালি ও আমাকে ছাড়া বাঁচবে না বলেছে।

কথাটা তখন শেষ হয় নি, সুচেতনার বাবা উঠে গেলেন। নিয়ে এলেন ভারী সুন্দর একটা কার্ড। আমার হাতে দিয়ে বললেন – টেক ইট ইয়ং গাই ... রিড ইটকেয়ারফুলি।

কাঁপা কাঁপা হাতে খামটা নিলাম। বিয়ের কার্ড। ওপরে লেখা আছে –সুচেতনা ওয়েডস সুজয়।

 

মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top