সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


সুস্বাগতম পবিত্র মাহে রমজান : পারভীন আকতার


প্রকাশিত:
১০ এপ্রিল ২০২১ ১৯:৪২

আপডেট:
১০ এপ্রিল ২০২১ ১৯:৪৬

 

পবিত্র লাইলাতুল বরাতের পর মাহে রমজানের আমেজ শুরু হয়। অনেকেই রোজা ধরেন অর্থাৎ রোজা রাখেন; রমজানকে আগাম অভ্যর্থনা জানান। বিশেষ করে ঘরের মুরুব্বিগণ খুব আনন্দের সাথে রোজা রাখেন ও ধ্যানমগ্ন হন। বিগত অতীতে আমরা পারিবারিক বন্ধনে এই দৃশ্যগুলো বেশ উপভোগ করতাম। চারদিকে সিয়াম সাধনার মাসের যে আনন্দ কল্লোল শুরু হয়ে যায় তা অন্যরকম মনে খুশির খোরাক বয়ে আনে।

পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে জনগণের কল্যাণে বিশ্বের প্রায় রাষ্ট্র নানা প্রণোদনা সহায়তা দান করেন যা আমাদের দেশ চোখে পড়াতো দূরে থাক বরং ফায়দা লুটেরাদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিলে হয়তো তা অনেকাংশে কমে আসতো। 'কে শুনে কার কথা' এসব নীতি থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ ও নিয়ন্ত্রণে আনা খুবই জরুরী।

একদল সিন্ডিকেট বাজারে লাগামহীন অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখে সারাবছর। আজ পেঁয়াজ নয়তো কাল ভোজ্যতেল! কী করবে সাধারণ মানুষ দিশা খুঁজে পাচ্ছে না। আমরা তো এলিয়েন নই যে হাওয়া থেকে খাবার খেয়ে বাঁচবো। মানুষ হয়ে কতটা আমরা অমানবিক নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছি দিনদিন, একটু কি তা ভাবছি?
সারাদিন রোজা রেখে যদি একজন রোজাদার যদি ভালোভাবে ইফতার আর সেহেরি খেতে না পারে তাহলে মানুষ হিসেবে আমরা নিজেদের দুনিয়ার কোন দাঁড়িপাল্লায় মাপবো আমার জানা নাই।

ইবাদতের মাস শব-ই- বরাতের পর থেকে এক প্রকার শুরু হয়ে গেছে। অথচ মানুষ বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়ে যাচ্ছে। যে তেল ছিল ৯০/১০০ টাকা লিটার আজ তা ১৩০/১৪০ টাকা। একটি নারকেলের দাম ১০০ টাকা! ভাবা যায়! চাল, আলুর দাম যেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে! অদ্ভুত এই দেশের ব্যবসা নীতি। মানুষকে কষ্ট দিয়ে ধনী হতে চায় একটি দল।

একজন দিনমজুরের ডেইলি কত টাকা ইনকাম হয় সেই অনুপাতে বাজার দর ঠিক করা উচিত। দরকার হলে এক খন্ড করে মাছ বিক্রি হবে। আস্ত মাছ কেনার সামর্থ্য না থাকলেও একটি খন্ড কেনার ক্ষমতা সবারই থাকে। আমলা বা সরকারি চাকরিজীবীদের পকেট কাটার চিন্তা করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে অভুক্ত রাখা এটা কোন ধরনের নোংরামি? আমরা সকলে প্রজাতন্ত্র মায়ের সন্তান। তবে কেন এতো বৈষম্যের শিকার হবো? রাষ্ট্র কী করে এই দূরাবস্থায় জানতে চায় জনগণ।

সিয়াম সাধনার এই একটি মাস আমরা কি মানবিক আচরণ করতে পারি না? মানুষকে খুশি রাখতে চমক হিসেবে সবকিছুর ইতিবাচক পরিবর্তন করতে কি পারিনা? দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালে রাখুন। এটি করতে একটু সদিচ্ছার দরকার কেবল। 'মুনাফা বেশি করবো না, মানুষের আত্মার তুষ্টি নেব' এমন মনোভাব সৃষ্টি হোক। আমরা মুসিলমদের একটি ফ্যাস্টিভাল বিশ্বের দীর্ঘতম সিয়ামের মাস যা আর কোন ধর্মে নেই। অথচ প্রতিটি ধর্মের মানুষ এই জন্য ভুক্তভোগী হয়। অন্যান্য ধর্মের মানুষজনদেরও এই নিষ্পেষণের শিকার হতে হচ্ছে। হু হু করে বাড়ছে নিত্যপন্যের দাম। কেউ যেন দেখার নেই, এই অবস্থা। রাষ্ট্রযন্ত্রের চেয়ে বড় কিছুই নেই। দাপট বা ক্ষমতা কেন্দ্রেই সবচেয়ে বেশি থাকে। তাহলে রাষ্ট্রের চেয়ে এই সিন্ডিকেটগুলো এতো ক্ষমতাধর হয় কী করে? নিশ্চয়ই এদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা স্বীয় সরকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা আছে। খাদ্য গুদামজাত খাবার লুকিয়ে রাখা বন্ধ হোক। এমন করোনাকালে খুবই অমানবিক নির্যাতনের সামিল হচ্ছে একটির পর একটি বাজার দরের হিসেব নিকেশ।
পবিত্র রমজান উপলক্ষে আসুন আমরা সবাই পরম ত্যাগের মহিমায় নিজেদের শুদ্ধ ও পবিত্র করি। সকল বিভেদ, ভুল, দোষ ও ত্রুটির উর্ধ্বে থেকে মানবসেবায় নিজেদের নিয়োজিত করি। আমাদের মনে রাখতে হবে জীবনের প্রতিটিক্ষণই খুবই মূল্যবান আর অন্তিমকাল। যেকোন সময় ডাক আসলে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখতে হবে। এই কালে নয় কেবল বরং পরকালের কথা ভেবে আমাদের পূণ্য সঞ্চয় করতে হবে।



পারভীন আকতার
শিক্ষক, কবি ও প্রাবন্ধিক
চট্টগ্রাম

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top