সিডনী সোমবার, ১৩ই জানুয়ারী ২০২৫, ৩০শে পৌষ ১৪৩১

জুলাই-সেপ্টেম্বরে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ


প্রকাশিত:
১৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:০২

আপডেট:
১৩ জানুয়ারী ২০২৫ ২০:৩৩

রাজস্ব আয় কম হওয়ায়, আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ধার বা ঋণ নেওয়ার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

ব্যাংকাররা বলছেন— নতুন করে ঋণ নেওয়ার চাহিদা কমে যাওয়া, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের উচ্চ সুদহারের কারণে ব্যাংকগুলোর কাছে এটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে বিভিন্ন মেয়াদী ট্রেজারি বিল ও বন্ড বিক্রির মাধ্যমে ৪৭,২০৯ ধার করেছে। গত অর্থবছরের একই সময় শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকার ধার করেছিল ২৪,৪৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ধার বেড়েছে প্রায় ৯৩ শতাংশ।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "সরকার টার্গেট অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। বিদেশ থেকে যেসব ফান্ড পাওয়া যেতো, সেটিও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুব বেশি আসেনি। ফলে সরকারকে বাধ্য হয়ে ব্যাংক খাত থেকে ধার করতে হচ্ছে।"

প্রাইভেট খাতে লেন্ডিং ডিমান্ড (ঋণের চাহিদা) কম থাকায় ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে সরকারকে ধার দিচ্ছে মন্তব্য করে এ ব্যাংকার বলেন, "বর্তমানে লোনের চাহিদা কমে গেছে, কারণ নতুন করে সেভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে ব্যাংকগুলো তাদের লিকুইড মানি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করছে।"

সম্প্রতি সরকারের ধার করার প্রবণতা কমায় ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার ৫–১০ বেসিস কমেছে বলেও জানান এই অভিজ্ঞ ব্যাংকার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ধার নিয়ে মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধার পরিশোধ করছে সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধার পরিশোধ করা হয়েছে ৪২,৭৯৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধার পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৩০,৩৭৮ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময় শেষে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নিট ধার ৪,৪১৫ কোটি টাকা বেড়েছে। ২০২৪ অর্থবছরের একই সময় শেষে সরকারের ধার কমেছিল ৫,৯০৪ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংক কন্ট্রাকশনারি মানিটারি পলিসির অংশ হিসেবে বাজারে টাকার যোগান কমাচ্ছে। এই প্রক্রিয়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে লিকুইড মানি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফেরানো হচ্ছে। মূলিস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের পদক্ষেপ ভালো ফল দেয়।"

"এছাড়া, ব্যাংকগুলোতে রেপোর মাধ্যমে টাকা ধার দেওয়ার দিনের সংখ্যা কমিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন সপ্তাহে দুই কার্যদিবস ব্যাংকগুলো রেপোর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার পায়; আগে সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসেই ধার দেওয়া হতো," যোগ করেন তিনি।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন টিবিএসকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ওভারড্রফটের মাধ্যমে সরকারের ধার নির্ধারিত লিমিট ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো থেকে ধার নিয়ে সরকার সেগুলো পরিশোধ করেছে।

তিনি বলেন, "এছাড়া রাজস্ব আদায় টার্গেটের তুলনায় কম হলেও সরকারি কর্মচারীদের বেতন, ঋণের সুদসহ সরকারের অপারেটিং কস্ট মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ধার বাড়াতে হয়েছে।"

ব্যাংকগুলো কম সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করছে উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুলিশি রেট ও ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহারে অসামঞ্জস্যতা আছে। পলিসি রেট ও বিল-বন্ডের সুদহারের পার্থক্যে একটা সমন্বয় থাকা উচিত। তা না হলে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকায় মুনাফা করার সুযোগ পায়।"

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ধার নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, "কোনো ব্যাংক তারলী সংকটে পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেবে। এখন এই ধারের টাকা দিয়ে তারা যদি ব্যবসা করে, তাহলে সেটি সমস্যা তৈরি করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এসব বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।"

ব্যাংক খাত থেকে ধার কমাতে সরকারকে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে ও আয় বাড়াতে এক্সপেন্ডিচার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেভিনিউ মোবিলাইজেশন- এর প্রক্রিয়া সংস্কার করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক এই অর্থনীতিবিদ।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top