সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচর যাত্রা :  মু: মাহবুবুর রহমান 


প্রকাশিত:
৭ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:৪২

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:০৮

 

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে শুরু হলো বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভাসানচর যাত্রা। শুক্রবার (৪ঠা ডিসেম্বর) রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। প্রথম দলে দেড় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আছে বলে জানায় সংবাদ মাধ্যমগুলো।  

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের পুরো প্রক্রিয়া ঐচ্ছিক। অর্থাৎ যারা যেতে আগ্রহী, শুধু তাদেরকেই ভাসানচরে স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ভাসনচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের সব প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। 

সরকারি সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য ভাসানচরে বসবাস উপযোগী অবকাঠামোসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে। প্রথম দফায় যেসব রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেয়া হবে, তাদের জন্য খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ অন্তত এক মাসের রসদ দ্বীপটিতে মজুত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।   

নোয়াখালী জেলার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য আধুনিক বাসস্থান ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও খেলার মাঠ গড়ে তোলা হয়েছে। আর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সেখানে মহিষ, ভেড়া, হাঁস, কবুতর পালন করা হচ্ছে। আবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। পরীক্ষামূলকভাবে ধান চাষও করা হচ্ছে। 

তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করে বাংলাদেশ সরকার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে আশ্রয়ন প্রকল্প তৈরি করেছে সেখানে গুচ্ছগ্রাম আছে ১২০টি এবং ঘরের সংখ্যা ১ হাজার ৪৪০টি। আছে ১২০টি সাইক্লোন সেন্টারও। ভাষানচরে ১ লাখ ১ হজার ৩৬০ জন রোহিঙ্গা আরামের সঙ্গে বসবাস করতে পারবে বলে জানা গেছে। 

সম্প্রতি রোহিঙ্গা নেতাদের ভাসানচরে নিয়ে গিয়ে দ্বীপটি এবং সেখানে নির্মিত অবকাঠামো  ঘুরিয়ে দেখানো হয় যাতে তারা সেখানে যেতে আগ্রহী হয়। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জীবন যাপন নির্বিঘ্ন করতে আগেই ভাসানচরে পৌঁছেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় আড়াইশ সদস্য এবং ২২ এনজিওর কর্মকর্তা। রোহিঙ্গাদের প্রথম দলের বসবাস শুরুর পর, কক্সবাজারের ক্যাম্পে থাকা মিয়ানমারের বাকি নাগরিকদের মধ্যে অনেকেই ভাসানচরে যেতে আগ্রহী হবেন বলে মনে করেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। 

তবে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এই স্থানান্তর বন্ধের দাবি জানিয়েছে। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের কাউকে জোর করে ভাসানচরে নেয়া হচ্ছে না। যারা সরকারের আহবানে সাড়া দিয়েছে, শুধু তাদেরই স্থানান্তর করা হচ্ছে। 

৪ঠা ডিসেম্বর ভাসানচরে পৌঁছা রোহিঙ্গাদের এই দলটিই প্রথম আশ্রিত দল নয়। এর আগে গত মে মাসে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দুই দফায় নারী-শিশুসহ মোট ৩০৬ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ফিরে আসে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সঙ্গনিরোধের জন্য সরকার তাদেরকে ভাসানচরে নিয়ে যায় এবং এখন পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থান করছে। 

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পরবর্তী মিয়ানমার সরকারের অব্যাহত নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে এদেশে পালিয়ে এসে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয় ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে বসবাস করছে। উখিয়া-টেকনাফের ঘিঞ্জি ক্যাম্পগুলো থেকে সরিয়ে আরও নিরাপদে রাখতে নোয়াখালীর দ্বীপ ভাসানচরে নিজস্ব অর্থায়নে আশ্রয় ক্যাম্প নির্মাণ করে সেখানে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ভাসানচরের আশ্রয় ক্যাম্পে কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করতে পারবে। 

 

মু: মাহবুবুর রহমান  
নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top