নারীর অধিকার বাস্তবায়নের অন্তরায় সমূহ : পারভীন আকতার
 প্রকাশিত: 
 ৮ মার্চ ২০২২ ২৩:০১
 আপডেট:
 ৪ নভেম্বর ২০২৫ ২১:১৫
                                
নারীর প্রথম ও প্রধান রূপ মমতাময়ী মা। মায়ের সাথে পৃথিবীর আর কোনকিছুরই তুলনা হয় না। মায়েদের প্রতিনিয়ত ত্যাগ তিতিক্ষার ফসল একটি সফল পরিবার তথা সমৃদ্ধ সমাজ এবং একটি সুগঠিত জাতি। নারীর ধরণই এমন; কেবল সহনশীলতার পরম আশ্রয় একজন নারী। প্রকৃতির জীনগত বৈশিষ্ট্যে নারীর নরম গড়ন, মনও কাদামাটি। তাইতো নারীর রূপকে সহজে প্রতিমা রূপ দেয়া সম্ভব হয়। এবং তাঁকে ঘিরেই যত আরাধনা করতে দেখা যায় মহা আড়ম্বরপূর্ণ উৎসবে।
নারীর জীবন অতিকায় পর্বতের চূড়ায় উঠার মতই।কখনো তার চেয়েও কঠিন। প্রকৃতির পাওয়া নরম স্বভাবের কারণে নারীকে নিয়ে চলছে নানা ধরনের ট্রল, হয়রানি আর ব্যবিচার যানঘরে এবং বাইরে সমানতালে প্রবহমান। আমরা কখনোই এই বৈষম্য চাই না। মীনা রাজুর কার্টুন অনেকের মনে আছে। রাজুর ভাতের পাতে মাছ, ডিম আর মীনা পাতে শুধুই সবজি দিয়ে ছেলে মেয়ের প্রতি কী রকম সামাজিক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা একেবারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে।এরপরও কি আমরা থামছি? নারীর প্রতি সহিংসতা কমাচ্ছি কি? আজকাল ফেসবুকে ধর্ষণের খবরেও কিছু মানুষ হাসির রিঅ্যাক্ট দেয়। এতে বুঝা যায়, নারীরা এখনো খেলনার পুতুল যাকে যেমন ইচ্ছে ব্যবহার করা যায়।
এবার আসি চাকরী ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান আমরা কতটা সুদৃঢ় করতে পেরেছি তা খানিকটা অবরতারণা করি। আমরা নারীরা যখন বাসে উঠি, নারীদের জন্য যতসামান্য সীট সংরক্ষিত করা হয়।মানে শুরু থেকেই গণ্ডগোল। নেই কোন নারীর জন্য আলাদা গাড়ী সার্ভিস যাতে নারী সুরক্ষিত ও নিরাপদে কর্মস্থলে পৌঁছতে পারে। পুরুষের সাথে ঠেলাঠেলি করে গাড়িতে চড়লে নানারকম হয়রানি এবং ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়। কর্মস্থলে পৌঁছে দেখা যায় পুরুষদের বেশি সুযোগ সুবিধা দেয় হয় নারীদের তুলনায় অনেকক্ষেত্রে। খুব দক্ষ ও কর্মঠ হলেও তাঁদের কোনঠাসা করে রাখা হয় শুধু নারী কপাল নিয়ে জন্মেছে বলেই। পুরুষরা আড়চোখে তাকান এখনো। এজন্য কর্মস্থল এখনো নারীবান্ধব হয়ে উঠেনি। নারীরা ঘরের অধিকাংশ কাজ করেন আবার কর্মস্থলেও চুল পরিমাণ ছাড় দেয়া হয় না। মানবিকতার চর্চা বলতে নমনীয়তা, কমনীয়তা নারীর জায়গায় খুব কম দেখা মেলে।সাংসারিক চাপ আর চাকরীতে আটপৌরে মনোভাবের কারণে নারী দিনদিন নিজের ঠাঁই হারিয়ে ফেলে।জীবন শেষে অনেক সময় নারী জীবন প্রাপ্তিতে মেলে অবহেলার শূন্য খাতা।
একজন মায়ের মাধ্যমে জগতে মানবজাতির গর্ভধারণ তাহলে কি শুধুই জন্মের নিমিত্তে নারীর সর্বস্ব উজাড় করে দেয়া? একজন নারীর জীবন পুষ্প মণ্ডিত করার মত মন কি আমাদের কখনোই সৃষ্টি হবে না? এই দায় কি পৃথিবী নেবে না? মায়ের আঁচলে সুখ খুঁজতে মরিয়া অথচ সেই মাকেই কেন বৃদ্ধা বয়সে আশ্রমে যেতে হয়?রাষ্ট্র এর কি জবাব দেবে জানতে চাই।
আজকে আমরা নারীর অধিকার সুনিশ্চিত কতুটুকু করতে পেরেছি তা প্রকৃত সুফলার অবয়ব খুবই কিন্নর দেখতে পাই।কথায় কথায় নারী মুক্তির স্লোগান, কাগজে বড় বড় হেড লাইন, সভা সেমিনার নারীর জন্য দরদে উতলা। অথচ আজ নারীর প্রতি অবিচার ঘর থেকে শুরু করে বাইরে সীমাহীন পর্যায়ে চলে গেছে। কয়জন মেয়ে খুব স্বাধীন, ভাল অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে?নিজের মন মত জীবন চলাতে পারা নারীর সংখ্যা হাতেগোনা। অধিকাংশ নারী এখনো তাঁদের প্রাপ্য অধিকারটুকু পায় না। আর যাঁরা প্রতিবাদ করেন সে সব নারীকে সমাজ বা রাষ্ট্র বয়কট করে। কেড়ে নেয় তাঁদের বেঁচে থাকার অধিকারটুকু।
আসুন আমরা নারীর প্রতি সশ্রদ্ধ হই। সম্মানের সাথে তাঁদের জীবনপথ এগিয়ে দেই। নারীর প্রতি সহনশীল হই। নারীকে প্রথম ভোরে সূর্যের আলোয় আলোকিত করি। নারীদের সুশিক্ষিত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলি। নারীর সম্ভ্রমের নিরাপত্তা দিই, গর্ভের সন্তানের মতই নারীর প্রতি মমতার আশ্রয় হই। বিবেকের কাছে দায়মুক্ত হই; নারীই আমার আপনার মা, বোন, স্ত্রী, নাতনী, নানী দাদীর প্রতিটি রূপকে যথাযথ মর্যাদা দিই এবং তাঁদের চলার পথের মৌলিক ও ঐচ্ছিক অধিকারগুলো পাইয়ে দিয়ে নারীর জীবনকে ফুলেল সুভাষিত করি।
পারভীন আকতার
শিক্ষক, কবি ও প্রাবন্ধিক
চট্টগ্রাম
বিষয়: পারভীন আকতার

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: