সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

উপবৃত্তি দয়া নয়, আমার শিক্ষার্থীদের অধিকার : শাকিলা নাছরিন পাপিয়া


প্রকাশিত:
২৯ জুন ২০২২ ১৮:৫৮

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫:০৪

 

বিনীত ভাবে নয়, কঠোরভাবে জবাব চাই। কারণ, বিগত বছরগুলোতে ইনিয়ে বিনিয়ে, সবিনযে, প্রার্থনা করে, বিনয়ের সাথে বহুবার বলেছি উপবৃত্তির টাকা সব শিশুরা পাচ্ছে না। কেন পাচ্ছে না। কী করলে পাবে সে বিষয়েও কোন জবাবদিহি বা নির্দেশনা নাই।
কোন সমস্যা থাকলে তা পরবর্তীতে সমাধানের চেষ্টা করা হয় কিন্তু এই উপবৃত্তি প্রতি বছর জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।
একটা সার্ভার তৈরি করা হয়েছে যা পিঁপড়ার চেয়েও ধীর গতিতে কাজ করে। প্রথমে শিওর ক্যাশ, তারপর নগদে টাকা দেওয়া হলো। লক্ষ লক্ষ টাকা নগদ থেকে উধাও হয়ে গেল।
বিদ্যালয় থেকে নামের তালিকা দেয়া হলো। শিক্ষকবৃন্দ সারাদিন রাত ল্যাপটপের কাছে বসে থাকলেন। রাতের ঘুম হারাম করে নামের তালিকা পাঠালেন। একটা শিক্ষার্থীও যাতে বাদ না পরে সে জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। ফলাফল কী হলো?
কেউ প্রাপ্য টাকার দ্বিগুণ পেল। আবার কেউ মোটেও পেল না।
কেন পেল না তাও জানার কোন উপায় নেই। কী করলে পাবে সে ব্যাপারেও কোন সঠিক নির্দেশনা নেই।
শুকনো মুখে শিশুরা জানতে চায় অমুকে টাকা পেল আমি কেন পেলাম না? কোন উত্তর দিতে পারি না।
রাস্তায় অভিভাবকরা শুনিয়ে শুনিয়ে বলে, সব টাকা মাস্টাররা মেরে দিয়েছে। মাথা নিচু করে হেঁটে যাই। তর্কে জড়াই না। এভাবে আর কতোদিন?
হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়া দেশে একশত টাকা অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হলেও এই টাকাটা একটা পরিবারের কাছে কতোটা গুরুত্ব বহন করে তা বিশাল বিলাসবহুল অট্টালিকায় বসবাসরত মানুষকে বুঝানো সম্ভব না।
উপবৃত্তির সুবিধাভোগীরা অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। নিন্দুকেরা হয়তো বলবেন, এ টাকা তো রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রের টাকা সৃজনশীল চিন্তা নিয়ে সাধারণ জনগনের মাঝে বিতরণ করার যে মননশীল ভাবনা তা সবাই ভাবার ক্ষমতা রাখে না।
লক্ষ লক্ষ শিক্ষর্থীর মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে অন্য রকম এক আনন্দের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আশীর্বাদে সিক্ত হবার কথা ছিল কিন্তু যাদের অবহেলা বা অযোগ্যতার কারণে বঞ্চিতদের দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয় পরিবেশ তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা অবশ্যই কর্তব্য।
আমাদের মিডিয়া ফলাও করে কোন কিছু প্রচার না করা পর্যন্ত প্রশাসন বা সমাজের বোধোদয় হয় না। অনেক ক্ষেত্রে মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনেক খবর পৌঁছে যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত।
বর্তমানে মিডিয়া মৌসুমীর সংসার,পরীমনির পেটের দৈর্ঘ্য, জয়ার সৌন্দর্যের রহস্য, শ্রাবন্তীর নতুন বিয়ে এসব নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। দরিদ্র, অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সামান্য কিছু টাকা কোথায যাচ্ছে, জন্ম নিবন্ধন, আইডি কার্ডের ভুল এসব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ভাববার সময় কোথায় মিডিয়ার?
যদি শিক্ষকদের পকেটে যেত এই টাকা তাহলেও হয়তো নিউজ হতো। কিন্তু নগদের একাউন্ট থেকে গত বছর যে টাকা লোপাট হলো তার হিসাব পাওয়া তুচ্ছ শিক্ষকের সাধ্য নয়।
যে নগদ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ হলো এ বছর সেই নগদেই কেন আবার উপবৃত্তির টাকাটা দেয়া হলো?
গত বছরের চেয়ে হয়রানি এবছর আরো বেশি। কেন টাকা পেল না-- এ প্রশ্নের জবাব শিক্ষক অভিভাবক কারো জানা নেই।
অনেক অভিভাবক বলছেন, এই টাকা আমরা চাইনি। তবে, টাকা দিয়ে এতো হয়রানি কেন? কেউ পাবে, কেউ পাবে না কেন?
মিডিয়ার ভূমিকা আশা করা বৃথা। বাকি রইল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে অনেক বিষয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি গোচর হয়েছে। ফলে সমাধানও হয়েছে। যেমন, একজন নারীর পুলিশে চাকুরী পাওয়া, স্বাধীনতা পুরস্কার বাদ হওয়া, রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর আদেশ অমান্য করে টিটির চাকুরী সসম্মানে ফিরে পাওয়া।
সাড়ে চার লক্ষ শিক্ষক। এক লক্ষ শিক্ষকও যদি জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে, উপবৃত্তির ক্ষেত্রে নানা অসংগতি তুলে ধরে তাদের নিজ নিজ আইডি থেকে লিখে যান তাহলে সমস্যাটা অন্তত দৃষ্টি গোচর হতো।
আমাদের সমস্যাগুলো বছরের পর বছর চলতেই থাকে। সমাধানের পথ আমাদেরই তৈরি করতে হবে। শিক্ষক সংগঠন কয়েক ডজন। এদের কক্সবাজার, বান্দরবান ঘোরাঘুরির ছবি, ভালো ভালো খাবারের ছবি দেখে দেখে আমরা মুগ্ধ। এসব সংগঠনের নেতাদের টক শো তে আলোচনা শুনে আমরা কৃতজ্ঞ।
এ পর্যন্ত শিক্ষক বা শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন কাজে কোন সংগঠন কী ভূমিকা রেখেছে তা আমার মতো সামান্য শিক্ষকের বোধগম্য নয়।
এই উপবৃত্তি আমার প্রতিটি শিক্ষার্থীর অধিকার। একজন শিক্ষার্থীও যদি বাদ পড়ে তাহলে শিক্ষক হিসাবে জানা আমার অধিকার- কেন সে বাদ পড়লো? কী করলে সে টাকা পাবে?
নগদের এই হয়রানির জন্য, অতীতের চুরির জন্য জবাবদিহিতা আবশ্যক।
দেশের বিশিষ্ট নাগরিক এবং সাংবাদিকদের দরিদ্র শিশুদের অধিকারে পাশে থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top