সিডনী শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


সিডনিতে কফি আড্ডায় জাফর ইকবাল এবং ইয়াসমিন হক


প্রকাশিত:
১২ জুন ২০১৯ ০৩:১২

আপডেট:
১৭ মে ২০২৪ ১৬:৪২

সিডনিতে কফি আড্ডায়  জাফর ইকবাল এবং ইয়াসমিন হক

গত ২৮ শে এপ্রিল প্রভাত ফেরী ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এবং ডঃ ইয়াসমিন হককে নিয়ে সিডনিতে নাগরিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠানটি পরিবেশন করে। পরের দিন, প্রভাত ফেরীর সম্পাদিকা এবং অস্ট্রেলেশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল একাডেমির ডিরেক্টর শ্রাবন্তী কাজী আশরাফীর আমন্ত্রণে নর্থ স্টার্থ ফিল্ডের শপিং মলের এক কফি শপে এই দুই খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব এক আলোচনায় মিলিত হন। কফির সাথে সাথে ঘরোয়া আলোচনার মত করে চলতে থাকে গল্প, স্মৃতি চারণ আর আড্ডা। সাথে ছিলেন প্রভাত ফেরীর প্রকাশক ও বিশিষ্ট আবাসন ব্যবসায়ী সোলায়মান দেওয়ান এবং প্রভাত ফেরীর অন্যান্য সদস্যরা। এই সময় প্রভাত ফেরীকে এই খ্যাতিমান শিক্ষক দম্পতি সংক্ষিপ্ত প্রসারে সাক্ষাতকার প্রদান করেন  । খোলা মেলা ভাবে এই দুই মহারথী কথা বলেন, তুলে ধরেন নিজেদের পরিকল্পনা, অনুভুতি এবং ভাবনাকে। পাঠকদের জন্য নিম্নে  সাক্ষাতকারটি দেয়া হলঃ



প্রভাত ফেরীঃ সিডনিতে প্রথমবার এসে কেমন লাগছে?



ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ সিডনিতে খুব ভাল লাগছে তার কয়েকটা কারণ আছে। প্রথম কারণ হচ্ছে এখানের আবহাওয়া।  আমি জানি না সারা বছর এরকম থাকে কিনা?  নাকি আমরা সৌভাগ্যবান এখন আবহাওয়া ভালো আছে।  আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে গিয়ে এটা একটা বহুজাতিক শহর, পৃথিবীর সব দেশের মানুষ এখানে আছে। ডাইভারসিটিটা এখানে আছে। আমাদের খুব ভাল লাগছে। মূলত আমার ছাত্র,ছাত্রীরাই আমাদেরকে নিয়ে সময় কাটাচ্ছে। বাংলাদেশী কমিউনিটির সাথে বেশী সময় কাটাচ্ছি,  কাজেই এসে এখন মনে হচ্ছে না যে, আমি বিদেশে এসেছি। মনে হচ্ছে যেন নিজের দেশেই আছি। সবকিছু এত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সুন্দর। একটা মেট্রোপলিটন শহর হলে সেইটা খানিকটা ঘিঞ্জি হয়ে যায় খানিকটা নোংরা থাকে , কিছু কিছু সমস্যা থাকে , এখন পর্যন্ত এ ধরণের কিছু পাইনি আর কি।



 প্রভাত ফেরীঃ বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাথে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন  কি?



ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ আমাদের মাথাপিছু আয় ২০০০ ডলারের কাছাকাছি হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে , সেই সুফলটা যদি আরেকটু ব্যাপক হতো তাহলে আমার আরো ভালো লাগতো। এখন ও সমাজে মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। কেউ কেউ অনেক ধনী আবার কেউ কেউ গরীব থেকে যাচ্ছে।



প্রভাত ফেরীঃ তাহলে কি বাংলাদেশের ধন-বৈষম্য কমানোর উপর জোর দেওয়া উচিৎ?



ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ আমার মনে হয় এখন আমাদের মুল লক্ষ্যটা সেইখানেই থাকা উচিত।   অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাব যেহেতু আমরা কাজটা শুরু করে দিয়েছি, সেটা হঠাৎ করে থেমে যাওয়ার আমি কোন আশংকা দেখিনা তবে, সম্পদের সুষম বন্টন যদি পুরো দেশের সব মানুষ পেতে পারে আমাদের অবশ্যই সেভাবে কাজ করতে হবে।  আর আমি সব সময় বলে থাকি যে,  বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে গিয়ে এখানে প্রায় ৫ কোটি ছেলে মেয়ে স্কুল কলেজে লেখাপড়া করে। আমরা ওদের লেখাপড়াটা যদি গুছিয়ে সুন্দর করে দিতে পারি তাহলে আমাদের আর কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। একজন মানুষ যখন নাকি লেখাপড়া জানে বা শিখতে পারে ওদের কে বলতে হয় না যে এই টা করো ঐটা করো, তুমি ঐ চাকরিটা নেও , ওরা নিজেরাই নিজেদের জীবনটা গুছিয়ে নিয়ে নিজেকে মাননসই করতে পারবে। সেজন্য আমি ওদেরকে একটাই পরামর্শ দেই যে, লেখাপড়াটা  তুমি ঠিকমতো করো,  তোমার জীবনটাকে ঠিক মতো গুছিয়ে নাও। সেটা এখনও আমার মনের মতো হয়নি, তবে খুবই দ্রুত হবে।





প্রভাত ফেরীঃ সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের কারনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। বাংলাদেশের অবস্থানটা এখন কেমন? কতটা জঙ্গীমুক্ত?



ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ পাকিস্তানের উদাহরণ দেই। পাকিস্তানে যখন একটা জঙ্গি ধরা পড়ে। অনেক মানুষ জঙ্গির পক্ষে থাকে। জঙ্গির পক্ষে একটা হৈ চৈ পড়ে । আমাদের দেশে  কোন  জঙ্গি ক্রসফায়ারে  মারা গেলে, তার মৃতদেহ  আত্মীয় স্বজনরা নিতে চাই না। কাজেই এটা কিন্তু একটা মৌলিক পার্থক্য। আমাদের সমাজ জঙ্গিবাদকে প্রশয় দেয়না । তাই আমি মনে করি বাংলাদেশ কিন্তু খুবই সফলভাবে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রন করেছে।



 প্রভাত ফেরীঃ আমরা দেখি কিছু কিছু  ধর্মীয় বক্তা অনলাইনে ধর্মের নামে বিভিন্ন ধরণের উগ্রপন্থার দিকে মানুষকে ধাবিত হওয়ার কথা বলে, সরকারের এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণটা আমরা সেভাবে দেখিনা। এর কারন কি?



ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ আসলে ঐভাবে নিয়ন্ত্রণ করাতো কঠিন। যেমন কেউ যদি দেশের বাইরে থেকে এই জিনিসটাকে প্রচার করে তাহ‌লে  সরকার কি করবে?  সবার ধর্মের উপর একটা দূর্বলতা আছে।  হয়তো অনেক ভালো কথা বলছে। নামাজ পড়া, রোজ রাখার কথা, হজ্বের কথা, মাঝখানে একটা জিহাদী ঢুকিয়ে দিলো। বন্ধ করলে শধু জিহাদের কথা বন্ধ হবে তা না সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কাজেই জিনিসটা একটু স্পর্শকাতর, তাই পারে না। আমার মনে হয় যে, আস্তে আস্তে হয়ে যাবে। এরপরে নির্বাচনের ব্যাপার আছে , ভোটের ব্যাপার আছে।



প্রভাত ফেরীঃ বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের সাথে ইসলামফোবিয়া সমান্তরলভাবে বাড়ছে। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলায় বাংলাদেশী সহ  ৪৯ জন নিহত হলো। এর কারন কি। এ থেকে উত্তোরনের জন্য কি করা উচিৎ?



ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমি মনে করি সারা পৃথিবী একটা দু:সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। ১৯৬০ খুবই একটা ভালো  সময় ছিল। তখন সারা পৃথিবীর মানুষের ভেতর একটা ভ্রাতৃত্ববোধ ছিল। একজন আরেকজনকে সাহায্য করতো। আর বর্তমান সময় পৃথিবীর  জন্য বড় দু:সময়। যেমন ট্রাম্প নির্বাচনে জিতে গেল। সে প্রবলভাবে ঐ পন্থার মানুষ। ইউরোপের জায়গায় জায়গায় নির্বাচনে ডানপন্থীরা জিতে যাচ্ছে। ব্রাজিলেও এ ধরণের একটা ঘটনা ঘটছে। এই অবস্হায় আমাদের হয়তো ধৈর্য্য ধরে একটু অপেক্ষা করতে হবে। প্রত্যেকটা কমিউনিটি তার নিজের পক্ষ থেকে প্রচারমূলক কাজ করুক। যারা ইসলামফোবিয়া আক্রান্ত তারা তো আইএস এর উদাহরণ দেয়। আমরা অস্বীকার করতে পারবো না যে শ্রীলংকায় কিছু হয় নাই।  কাজেই আমরা সকলে একটা দু:সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।  দু:সময় টিকে থাকাটাই হচ্ছে বিজয়। টিকে থাকতে হবে এবং ধৈর্য্য ধরে টিকে থাকতে হবে এবং আমাদের কাজ করতে হবে,  বুঝাতে হবে সবাইকে যে এটা কোন ধার্মিকের কাজ নয়। এটা একটা প্যানাটিক গ্রুপ। প্রবাসীদেরই এ ব্যাপারে কাজ করা উচিত মূলধারার সাথে। নিউজিল্যান্ডের উদাহরনটা দেখেন,  একজন  ভদ্র মহিলা এত কম বয়সে প্রধানমন্ত্রীর  মত একটা বড় পদের দায়িত্ব কত উদার ও মানবিকভাবে পালন করলেন। পৃথিবীর সকল রাষ্ট্র প্রধানরা যদি এরকম  হতেন,  তাহলে আমাদের আর এত দুশ্চিন্তা করতে হতো না। কারণ সবাইতো জানে যে, আমাদের ধর্ম কখনো এগুলো অনুমোদন করে না। বিছিন্ন কিছু মানুষ ধর্মের কিছু ভুল ব্যাখা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে।





প্রভাত ফেরীঃ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একজন  বড় সমালোচক আপনি। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলছেন যে, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলা উচিত। এই ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কি?



ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ আমি উনার সাথে একমত না।  আমাদের দেশে অর্ধেক ছেলে অর্ধেক মেয়ে লেখাপড়া করে। মেয়েরা একটু বেশী। আমার মনে হয় না, সব দেশ আমাদের মতো ছেলে এবং মেয়েদের সমান ভাবে পড়াতে সক্ষম হয়েছে। মেয়েদেরকে বৃত্তি দেওয়া ওদেরকে আগ্রহী করার জন্য। আমাদের প্রত্যেক বাচ্চাকে জানুয়ারী মাসে নতুন বই হাতে তুলে দেওয়া হয়, প্রায় ৩৮ কোটি বই। । আমরা যে পরিমান সংখ্যক বই ছাপায়  তা যদি একটার পর একটা রাখা হয়ে তাহলে সারা পৃথিবী তিন বার পাক খেয়ে চলে আসবে। এতগুলি বই ছাপিয়ে প্রত্যেকটা বাচ্চার হাতে তুলে দেওয়া হয়। আমাদের দেশে এখন প্রাইমারী স্কুলে,  বাচ্চাদের জন্য দুুুপুরে  খাবারের ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে । তবে হ্যা , এখনও সেভাবে মানের উন্নতি হয়  নাই। কিন্তু সংখ্যাটা তো হয়েছে। মানসম্পন্ন  শিক্ষা ব্যবস্হা জন্য সবাই পরিকল্পনা করছে । প্রাইমারী স্কুলের বাচ্চারা যেন গণিতটা আনন্দ নিয়ে পড়তে পারে, সেই জন্য প্রাইমারী স্কুল থেকে আমাদের গণিত অলিম্পিয়াডের কমিটি আছে তাদের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি  প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষন দিচ্ছে।  কিভাবে গণিত পড়াতে হয়। এখন ঐ বাচ্চারা অপেক্ষা করতে থাকে কখন   তাদের গণিত পড়ানো হবে। তবে এটা ঠিক এখন যে লেভেলে আছে তাতে আমরা কেউ সন্তুষ্ঠ না। কিন্তু আমাকে দেখতে হবে যে, আমরা কি এগিয়ে যাচ্ছি নাকি নিচের দিকে নেমে যাচ্ছি। যদি এগিয়ে যেতে থাকি তাহলে আমি ধৈর্য্য ধরতে রাজি আছি। দেখতে দেখতে আমরা ঐ জায়গায় পৌছে যাবো। কাজেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি তবে আরও উন্নতি করা প্রয়োজন।



প্রভাত ফেরীঃ আমরা জানি, আপনার  প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছে। আপনি কি এখনও নিজেকে বাংলাদেশে নিরাপদ মনে করেন, না  আক্রমন হতে পারে এমন আশংকায় থাকেন।



ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ আমার উপর আঘাত করেছে কয়জন? একজন? আর আমার জন্য দোয়া করেছে কয়জন? কোটি কোটি। তাহলে আমি কেন আংশকায় থাকবো?  একজন দুইজন আমাকে পছন্দ করে না। সেজন্য মানুষ যারা অসংখ্য মানুষ আমাকে ভালবাসে, তাদের ভালবাসাকে ফেলে দেব? 



প্রভাত ফেরীঃ আমি জানি আপনার আরও একটা পরিচয় আছে।  বাংলাদেশের প্রতিথযশা লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর সহোদর। ভাই এবং পাঠকের দৃষ্টিকোন থেকে  হুমায়ুন আহমেদকে আপনি কিভাবে মুল্যায়ন করেন?



ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ হুমায়ুন আহমেদ তো বাংলাদেশের মানুষকে গল্পের বই পড়া শিখিয়েছে। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এর আগে আমরা শুধুমাত্র পশ্চিম বাংলার বই পড়তাম। হুমায়ুন আহমেদ লেখালেখি শুরু করার পরে তখন এদেশের মানুষ লেখালেখি শুরু করে দিল।  । তার লেখনির ভেতরে পাঠককে আকর্ষন করার  প্রবল একটা ক্ষমতা আছে  , তাই  আমিও তার একটা বই পড়া শুরু করলে, শেষ না করে উঠতে পারি না। এটাকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। । মৌলিকভাবে সে একজন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লেখক। যখন নাকি দেশে রাজাকার কথাটি টেলিভিশনে উচ্চারণ করা নিষিদ্ধ ছিল তখন সে একটা টিয়া পাখির মুখ দিয়ে উচ্চারণ করিয়েছে তুই রাজাকার। প্রথম রাজাকারদের বিরুদ্ধে উক্তিটি কিন্তু সে  উচ্চারণ করিয়েছে টেলিভিশনে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন মানুষ। সে মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সিনেমা তৈরী করেছে, নাটক করেছে এবং টেলিভিশনে জনপ্রিয় নাটক লিখেছে। যখন বাকের ভাই মারা গেল,  তখন দেশে হরতাল ডেকেছে। পৃথিবীর কতজন লেখক তা দাবি করতে পারে? সে কিন্তু ম্যাজিক দেখাতে পারতো, ছবি আকতে পারতো এগুলো অনেকে জানে না। গান লিখেছে। এত গুনি একজন মানুষ। আমার খুবই অহংকার হয় গর্ব হয় আমি এরকম একজনের ভাই। তবে খুবই দু:খ লাগে ভেবে, সে নিজের শরীরের  যত্ন নেয়নি। ক্যান্সারের মতো রোগ তার শরীরে বাসা বেঁধেছে। সে যদি শরীরের আরেকটু যত্ন নিত আরও কিছু দিন বেঁচে থাকতে পারতো আরও কিছু হয়তো  দিয়ে যেতে পারতো।



প্রভাত ফেরীঃ বাংলাদেশে অনেক লেখকের নতুন নতুন বই বের হচ্ছে ?  নতুন কোন কোন  লেখককে আপনার সম্ভাবনাময় বলে মনে হয়।



ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ অনেকেই আছে। একটা নাম বললাম  আর একটা নাম বলতে ভুলে গেলাম, তাহলে তারা নারাজ হবে। তাই কারও নাম উচ্চারণ করছি না। কিন্তু হ্যা অবশ্যই নতুন লেখক তৈরী হচ্ছে। আমি চাচ্ছিলাম তারা আরেকটু বেশী জনপ্রিয় হোক । আমার প্রত্যশার তুলনায় তা  একটু কম হচ্ছে।



প্রভাত ফেরীঃ আপনার লেখা সবচেয়ে প্রিয় বই কোনটি?



ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ এটা খুবই দুরুহ ব্যাপার যে, আপনার যদি মাকে জিজ্ঞেস করেন যে, আপনার কোন সন্তানটি প্রিয়। তখন মা কিন্তু উত্তর দিতে পারে না কারণ সব সন্তানই তার কাছে প্রিয়। আমার বিষয়টাও সেরকম। সেভাবে বলতে পারবো না, তবে মুক্তিযুদ্ধের উপর একটা বই লিখেছিলাম ‌'আমার বন্ধু রাশেদ'। মুক্তিযুদ্ধেকে তুলে ধরার জন্য বইটি নিয়ে সিনেমা হয়েছে। কেউ যদি বলে কোন বইটি পড়বো আমি ও বইটির নামটাই বলি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বোঝার জন্য বইটি পড়তে বলি।



প্রভাত ফেরীঃ আপনি কি নতুন কোন বই লিখছেন?



ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ বাচ্চাদের জন্য কিছু বই লিখছি। কারণ ওরা আশা করে থাকে। বাচ্চারা অপেক্ষা করে থাকে। ওটা বই মেলার  প্রকাশিত হবে?



প্রভাত ফেরীঃ নামটি গুলো বলবেন?



ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ না নামটা এখনও ঠিক করিনি।



প্রভাত ফেরীঃ পত্রিকার পাঠক এবং অষ্ট্রেলিয়ার প্রবাসীদের জন্য যদি কিছু বলতেন।



ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ এই দেশের ডাইভারসিটিটা বড় ভাল লাগে। সুন্দর দেশে থাকলে তার মনটাও সুন্দর থাকে। আমি চাই যে তারা এখানে থেকে জীবনটাকে উপভোগ করুক এবং প্রত্যেককেই বলবো  যে, প্রত্যেকেই কিন্তু আপনার বাংলাদেশের দূত। কাজেই এখানে এমনভাবে থাকতে হবে। যাতে বাংলাদেশ সম্পর্কে এখানের লোকের খুব একটা ভালো ধারণা হয় । আর যখন নাকি সুন্দর ভাবে জীবন টাকে গুছিয়ে নিবেন তখন যেন দেশের কথাটা মনে করেন এবং দেশকে একটু সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন।



প্রভাত ফেরীঃ আমাদের কে সময় দেয়ার জন্য  প্রভাত ফেরীর পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।



ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালঃ আপনাকে ধন্যবাদ





ড. ইয়াসমিন হকের সাক্ষাৎকার



প্রভাত ফেরীঃ সিডনি সফর নিয়ে কিছু বলুন



ড. ইয়াসমিন হকঃ এখানের  বাঙালী কমিউনিটিটা দেখে আসলেই আমার খুব ভাল লেগেছে , আমি যখন স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যাই, তখন কথা বলার জন্য কোন বাঙালী পেতাম না।  রোজ কাদতাম । আর এখনে অনেক বাঙ্গালী, মনে হয় যেন দেশেই আছি। আর ভালো লাগছে যে প্রায় সবাই প্রতিষ্ঠিত। আপনাদের আয়োজিত অনুষ্ঠানও খুব পছন্দ ভালো লেগেছে।



প্রভাত ফেরীঃ দেশে নারী নির্যাতনের  মাত্রাটা অনেক বেড়ে গেছে। নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো, এটার কারণ আপনি কি মনে করেন?



ড. ইয়াসমিন হকঃ এই ধরনে ঘটনা খুবই দূঃখজনক।  এর প্রধান কারন  যে অপরাধীদের শাস্তি হয় না কিছু ক্ষেত্রে  শাস্তি হলে তা অনেক  দেরী হয়। এই জন্য এরা আরও সাহস পায় অপরাধ করার।  আমাদের দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ কম। এছাড়া ঘটনা ঘটার আগে প্রতিরোধের চেষ্ঠা করতে হবে, এছাড়া যখন কোন নির্যাতন ঘটনা ঘটবে  তখনই তো ঐ জায়গায় যেতে হবে বলতে হবে যে, এটা করা ঠিক না। বাচ্চাদের শিখাতে হবে ছোট বেলা থেকে।



প্রভাত ফেরীঃ এখানেও নারী নির্যাতনের  ঘটছে । মাত্র ২-৩ সপ্তাহ আগে একজন বাংলাদেশী মহিলা মারা গেছে তার স্বামীর হাতে। দেখা যাচ্ছে এই খানে মহিলারাও বাংলাদেশের মত, তারা কাউকে কিছু বলেন না। প্রবাসী যে নারীরা এই ধরণের ঘটনার শিকার হচ্ছে আপনি তাদের উদ্দেশে কিছু বলুন।



ড. ইয়াসমিন হকঃ আমার মনে হয় যোগাযোগ  খুবই গুরুত্বপূর্ন ওদের জানতে হবে যারা নতুন আসে তাদের এখানে কিন্তু অনেক ধরেনের সহায়তা সেল আছে।   আবার এখানে যারা এগুলো করে সে সব স্বামীরা বউদের আইসোলেটেড করে রাখার চেষ্টা করে। ওদের বন্ধু  যেমন দরকারি তেমনি নম্বর রাখাও দরকারি। নম্বর আছে ফোন কর, সাহায্য তোমার দরজায়।



প্রভাত ফেরীঃ কর্মক্ষেত্রে আমাদের দেশে  নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে না কমছে?  নাকি লেখাপড়া শেষ করে  নারীরা সংসারে ব্যাস্ত হয়ে পড়ছে



 ড. ইয়াসমিন হকঃ  মেয়েরা আসছে চাকুরীতে,  প্রত্যেক পেশাতে মেয়েদের অংশগ্রহন বেড়েছে। এই যে, আইটিতে   অনেক মেয়ে আসছে । মোটামুটি সব সেক্টরেই মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে। এখনতো মেয়েরাই বেশি ডাক্তারি  পড়ছে।



প্রভাত ফেরীঃ ম্যাডাম আপনাকে ধন্যবাদ



ড. ইয়াসমিন হকঃ  ধন্যবাদ


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top