ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছোট্ট হালিমার যে ছবিটি সবাইকে কাঁদাচ্ছে
প্রকাশিত:
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৩:০৬
আপডেট:
৫ আগস্ট ২০২৫ ০০:৫৩

পাশাপাশি উচ্চ ভবন। সরু গলির মতো ভবনের মধ্যবর্তী স্থান। সেখান দিয়ে মানুষ যেতে পারবে না। সেই সরু গলির মধ্যে নিষ্পাপ শিশু হালিমার লাশ পড়েছিল।
জেলা শহরের ভাদুঘর ভূঁইয়াপাড়া থেকে ওই শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
শিশু হালিমার মুখটা আবছা, ঘাড় বেঁকে ছিল। শরীরে মেজেন্টা রঙের শীতের পোশাক। পরনে বেগুনির ওপর লাল-সাদা স্ট্রাইপের ট্রাউজার। পায়ে গোলাপি রঙের স্যান্ডেল, ওপরের অংশে ফুলের কাজ। ডান হাত সামনে ঝুঁকিয়ে, বাম হাত একটু পেছনে রাখা। খালি চোখে মনে হবে- নিষ্পাপ শিশুটি গা এলিয়ে শুয়ে আছে, শীতে কারও উষ্ণতা পেতে।
কিন্তু এই একটি ছবিতেই যে একরাশ কান্না জড়িয়ে রয়েছে, তা শনিবার সকালেও কারও জানা ছিল না। জানতেন না তার প্রিয়জনরাও। দুপুরে জানার পর ছোট্ট হালিমার এ ছবি এখন কাঁদাচ্ছে সবাইকে।
আড়াই বছরের হালিমা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ভাদুঘর ভূঁইয়াপাড়ার রাজমিডিস্ত্র আমির হোসেনের মেয়ে। শনিবার সকাল ৭টার দিকে বাড়িতেই খেলছিল। হঠাৎই তার আর খোঁজ নেই। নেই তো নেই-ই!
এর পর কত সন্ধান। অলিগলি তছনছ। না পেয়ে মাইকিং করা হয়- খবর চাই হালিমার। বয়স আড়াই। পরনে জামা-ট্রাউজার। আধো আধো গলায় বলতে পারে বাবার নাম আমির হোসেন, মা অমুক। কোনো সহৃদয়বান সন্ধান পেলে জানাবেন এই নম্বরে…।
মাইকিং চলার ফাঁকেই দুপুর পৌনে ১টার দিকে এলো খবর- হালিমার সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে সে খবর বুকভাঙার। ছোট্ট হালিমার দেহ মিলেছে ভবনের ফাঁকে। মা-বাবা তো পড়িমড়ি করে ছুটে গিয়ে জেলা শহরের ভাদুঘর ভূঁইয়াপাড়া থেকে তার লাশ উদ্ধার করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। তোলপাড় শুরু হয় সারা দেশে। তদন্তে নামে পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে সদর মডেল থানা পুলিশে বেশ কয়েকটি টিম রোববার রাতে অভিযানে যায়।
সন্দেহভাজন ৫-৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। তার মধ্যে নিহত হালিমার মা খাদিজা ও বাবা আমিরসহ নিকটাত্মীয়রা আছে। রাতেই তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে কোনো মুখ খুলছে না।
তবে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, হালিমা হত্যার পেছনে তার মা খাদিজার সঙ্গে কারও পরকীয়া সম্পর্ক আছে কিনা, পারিবারিক বিরোধ, পূর্বশত্রুতা কিংবা তৃতীয় কেউ এ ঘটনা ঘটাতে পারে কিনা? এসব বিষয় মাথায় নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।
ঘটনার বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন রোববার সকালে জানান, ঘটনার পর আমরা আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ছাড়া শনিবার দিনে ও রাতে আমাদের বেশ কয়েকটি পুলিশের টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় আমরা বেশ কয়েকজনকে আটক করেছি। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত এ ঘটনার ঘাতককে বের করার।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: