৫০ লাখ পরিবার বছরে নিঃস্ব হচ্ছে চিকিৎসা খরচ চালাতে
 প্রকাশিত: 
 ৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৮:২৬
 আপডেট:
 ৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:৫৩
                                চিকিৎসার জন্য এখনো রোগীর পকেট থেকে ৬৭ শতাংশ টাকা খরচ হয়। বাকি ২৩ শতাংশ টাকা দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার (সরকার-দাতা সংস্থা) মাধ্যমে। আর নিজের চিকিৎসা খরচ পকেটের টাকায় চালাতে গিয়ে বছরে ৪ শতাংশ পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে। আবার অনেকে সম্পূর্ণ চিকিৎসা না করাতে পেরে মৃত্যুর কাছে জীবন সঁপে দিচ্ছে, যা সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার পথে বড় বাধা হয়ে আছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য বীমাও এখন পর্যন্ত জোরালো কোনো ভিত্তিতে আসছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ হাঁটছে অনেকটা খুঁড়িয়ে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ রবিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সমতা ও সংহতিনির্ভর সর্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের মূল জায়গা হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক। সরকারের এই কাঠামোগুলো মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার বড় ভিত্তি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই কাঠামোগুলোর কোনোটিই নানা সীমাবদ্ধতার কারণে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হতে পারছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘রোগী নিজের পকেট থেকে ৬৭ শতাংশ টাকা দিতে গিয়ে কেউ ঘরবাড়ি বিক্রি করছে, কেউ ঋণগ্রস্ত হচ্ছে। আবার কেউ এসব করেও চিকিৎসা শেষ করতে পারে না। ৪ শতাংশ পরিবার বা ৫০ লাখ মানুষ চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে এক পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা দেখতে পেয়েছি শুধু মাঠপর্যায়ের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা উপযুক্ত মানে কার্যকর করতে পারলে বছরে মানুষের পকেট খরচের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
 
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসচিব ও বাংলাদেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখন মানুষের অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ যাতে সহজে, সুলভে, বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় সেবা পায় সে জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। মাঠপর্যায়ে চিকিৎসক-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ তদারকি করা হচ্ছে। ওষুধ যন্ত্রপাতির বিষয়গুলোতে নজরদারি আরো বাড়ানো হয়েছে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে টাঙ্গাইলের কালিহাতী, মধুপুর ও ঘাটাইলে দরিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারীদের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় একটি পাইলট হেলথ ইনস্যুরেন্স কার্ড ব্যবস্থা চালু হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কার্ডধারী ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবে এবং ৫০টি রোগের (রোগ নির্ণয়, ওষুধ, পথ্যসহ) পূর্ণ চিকিৎসা বিনা মূল্যে পাবে। এসব চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিবারপ্রতি বার্ষিক এক হাজার টাকা প্রিমিয়াম হিসেবে সরকার দেবে, যার বিনিময়ে প্রতিটি পরিবার বার্ষিক সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা সুবিধা লাভ করবে। পাইলট চলাকালে এই প্রিমিয়ামের অর্থসহ প্রকল্পের যাবতীয় ব্যয় স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি উন্নয়ন সেক্টরের উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে সংস্থান করা হবে। পরবর্তী সময়ে সরকারি বরাদ্দ এবং সচ্ছল পরিবারের কাছ থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহের মাধ্যমে কর্মসূচিটির অর্থায়ন করা হবে। এর আগে সরকার সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উদ্যোগ হিসেবে ‘হেলথ কেয়ার ফাইন্যান্সিং স্ট্র্যাটেজি ২০১২-২০৩২’ হাতে নেয়।
 
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসচিব আরো বলেন, ‘টাঙ্গাইলের তিন উপজেলার কাজ চলছে, এবার আরো ১০টি উপজেলায় আমরা স্বাস্থ্যবীমার আদলে ওই হেলথ কার্ড কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।’ সুত্র-কালের কন্ঠ
বিষয়:

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: