সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ৫ই ডিসেম্বর ২০২৪, ২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১


এই আচরণ কিসের ইঙ্গিত? : শিবব্রত গুহ


প্রকাশিত:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:১৮

আপডেট:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:৩৮

ছবিঃ অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত

 

এখন সারা ভারত উত্তাল হয়ে রয়েছে বিখ্যাত বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের রহস্যজনক মৃত্যুকে ঘিরে। সুশান্ত কি আত্মহত্যা করেছে না তাঁকে খুন করা হয়েছে? এই নিয়ে সারাদেশ জুড়ে এখনো তুমুল বিতর্ক চলছে। ইতিমধ্যে, এই ব্যাপারে নিষিদ্ধ মাদক ড্রাগের নাম জড়িয়েছে। দেশের সেরা তিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা, সিবিআই, ইডি ও নারকোটিকস - এই ব্যাপারে জোরকদমে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে।

যত এই ব্যাপারে তদন্ত এগিয়ে চলেছে, ততই, অনেক রাঘব বোয়ালের নাম এর সাথে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর শেষ যে কোথায় হবে ? কেউ জানে না। ইতিমধ্যে এই কেসের অন্যতম অভিযুক্ত রিয়া চক্রবর্তী ও তার ভাইকে জেরা করে এনসিবি বলিউডের ২৫ জন সেলিব্রিটির এই ড্রাগের ব্যাপারে জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ী গৌরব আরিয়া ইডির কাছে জেরায়, মহারাষ্ট্রের শাসক দল শিবসেনার বড় বড় নেতার এই মাদক ব্যবসায় যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

বলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী, কঙ্গনা রানাওয়াত, একদম শুরু থেকেই, বলে এসেছেন জোর গলায়, যে, সুশান্ত আত্মহত্যা করেনি। তাঁকে খুন করা হয়েছে। এরজন্য দায়ী বলিউডের নেপোটিজম বা স্বজনপোষণ। তিনি আরও বলেছেন, যে, বলিউডের অনেক তারকাই ড্রাগের নেশায় আসক্ত। তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন বলিউডের মুভি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে।
তিনি সমালোচনা করেন সুশান্ত মৃত্যু রহস্যের তদন্তে, মুম্বাই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। এতে প্রচন্ড ক্ষেপে যায় তাঁর ওপরে উদ্ধব ঠাকরে প্রশাসন। শিবসেনার তরফ থেকে খোলাখুলি কঙ্গনাকে হুমকি দেওয়া শুরু হয়। তারা কঙ্গনাকে মুম্বাই না আসার পরামর্শ দেয়। কিন্তু অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত, যে অন্য ধাতুতে গড়া। বিদ্রোহ তাঁর রক্তে। তিনি অন্যায়ের সাথে কখনো আপোষ করেননি আর ভবিষ্যতে করবেনও না। তাঁর বীরত্বের হয়না কোন তুলনা।
তাঁর বুকের পাটা আছে বলতেই হবে। তিনি গর্জে ওঠেন। তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে, শিবসেনার দিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন৷ তিনি পরিষ্কার করে, শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতের উদ্দেশ্যে বলেন, যে ৯ই সেপ্টেম্বর, তিনি সব বাধা উপেক্ষা করে মুম্বাইতে আসবেন। মুম্বাই তাঁর কর্মভূমি। তাঁকে মুম্বাই আসা থেকে কোনও শক্তি আটকাতে পারবে না।
এতে চটে গিয়ে সঞ্জয় রাউত কঙ্গনাকে উদ্দেশ্য করে, কটু ভাষা প্রয়োগ করেন। কিন্তু, কঙ্গনা তাঁর লক্ষ্যে থাকেন অটল। কারণ, তিনি যে শেখেননি ভয় পেতে। ভয়কে তিনি করেছেন জয়। কঙ্গনাকে উচিত শিক্ষা দেবার জন্য কোমর বেঁধে নেমে পড়ে শিবসেনা। তাদের আদেশ পালনের জন্য, কাজে নেমে পড়ে বৃহন্মুম্বাই পুরসভা বা বিএমসি ও মুম্বাই পুলিশ। গত ৯ ই সেপ্টেম্বর, সকালেই, মুম্বাইয়ের বান্দ্রায়, কঙ্গনার মণিকর্ণিকা ফিল্মসের অফিস ভাঙার জন্য, বিএমসির প্রচুর কর্মী নিয়ে, মুম্বাই পুলিশের আধিকারিকরা, হাজির হয়েছিল সেখানে। শুরু হয় ভাঙার কাজ।
এই কাজ আরম্ভ হতেই বম্বে হাইকোর্টে অভিযোগ জানানো হয় কঙ্গনার তরফ থেকে। বলা হয়, বেআইনীভাবে, কঙ্গনার সম্পত্তি ভাঙছে বিএমসি। এদিন, ভার্চুয়াল মাধ্যমে, শুনানি করা হয় বম্বে হাইকোর্টে। সেখান থেকে বম্বে হাইকোর্টের বিচারক, বিএমসিকে, নির্দেশ দেয়, যেন, কঙ্গনার অফিস ভাঙার কাজ অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু, কে শোনে কার কথা! বিএমসি যে কঙ্গনার ওপর প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত তখন।
সত্যি, এদের দুঃসাহস দেখে অবাক হতে হয়! এরা বম্বে হাইকোর্টের আদেশকে মানে না। অনেকে অভিযোগ করেছেন, যে, মুম্বাইতে অনেক অবৈধ নির্মাণ আছে। তাদের ক্ষেত্রে, বিএমসি কেন এতদিন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয় নি? কেন? কেন? কঙ্গনার ব্যাপারে তাদের এত তৎপরতা কেন? কঙ্গনা প্রতিবাদ করেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাই?
কেন কঙ্গনাকে সময় দেওয়া হল না? তাঁর মুম্বাই আসা পর্যন্ত কি অপেক্ষা করতে পারত না বিএমসি? পারত নাকি? একজন নারীকে এইভাবে চূড়ান্ত হেনস্থা করার পেছনে আসল উদ্দেশ্য কি প্রতিশোধ নেওয়া?
বিএমসি এমনভাবে, ভাঙচুর করেছে কঙ্গনার অফিস, তা দেখলে ভয় লেগে যাবে। অফিসের ভেতরে থাকা দামী দামী সব আসবাবপত্রও ভেঙে ফেলা হয়। যা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায় ভারতবাসী। সারা দেশে এর বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়। দেশবাসী কঙ্গনার বিরুদ্ধে হওয়া এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ জানায়। একজন ভারতীয় নারীর ওপর এই ক্রমাগত অত্যাচার কি মেনে নেওয়া যায়? যায় কি?



না মানা যায় না। একজন মানুষ হয়ে যদি আমরা মানুষের পাশে না দাঁড়াই, তাহলে, আমরা কিসের মানুষ? মানুষের প্রকৃত পরিচয় তাঁর মানবতায় মেলে। দেশবাসী আজ সবাই মিলে একজোট হয়ে, কঙ্গনার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁকে সমানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র সংগ্রাম করার সাহস যোগাচ্ছেন। যা সত্যিই প্রশংসার।
যা অবিরাম সাহস যোগাবে কঙ্গনাকে। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, কঙ্গনার সাথে হওয়া অন্যায়  অত্যাচারের বিরুদ্ধে, ওইদিন, মহারাষ্ট্রের নানা জায়গা থেকে বহু মানুষ, আসেন, কঙ্গনার ভেঙে দেওয়া অফিসের সামনে, প্রতিবাদ জানাতে। তাঁরা ওখানে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে করছিলেন প্রতিবাদ। তাঁদের মধ্যে অনেক বয়স্কা মহিলাও ছিলেন। তাঁদের এই প্রতিবাদ হয়নি সহ্য মুম্বাই পুলিশের।
মুম্বাই পুলিশ তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁদের মারধোর করা হয়। খুব জঘন্য বর্বরোচিত আচরণ তাঁদের সাথে করে মুম্বাই পুলিশ। তাঁদের করা হয় গ্রেফতার। কেন এই গ্রেফতার? এর পেছনে থাকা মূল উদ্দেশ্য কি? অন্যায়ের প্রতিবাদ কি শান্তিপূর্ণ ভাবে করা যাবে না মুম্বাইতে? হঠাৎ করে মুম্বাই পুলিশ এব্যাপারে কেন সক্রিয় হল?

এক সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেল, তার নাম রিপাবলিক ভারত। তারা ২৪ ঘন্টা ধরে, তাদের চ্যানেলে সুশান্ত মৃত্যু রহস্য, সম্বন্ধে নানা সংবাদ একের পর এক দেখিয়ে চলেছে। তারা সমানে তোপ দেগে চলেছে মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকার ও মুম্বাই পুলিশের বিরুদ্ধে। তারা চাইছে মনেপ্রাণে , যাতে সুশান্তের পরিবার ন্যায় বিচার পায়।
রিপাবলিক ভারতের অর্ণব গোস্বামী, অভিযোগ করেছেন, যে, তাদের দুইজন সাংবাদিককে করা হয়েছে গ্রেফতার। অর্ণব গোস্বামী টিভিতে এও বলেছেন, যে, তাঁকে বারবার নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যে, তিনি যেন আর রিপাবলিক ভারতে, সুশান্ত মৃত্যু রহস্য সম্বন্ধে এই টানা কভারেজ বন্ধ করে দেন এখানেই। এটা কিছুতেই বেশিদিন চালানো যাবে না। রিপাবলিক ভারতের সাংবাদিকদের সাথে বারংবার খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। এসব কেন হচ্ছে? এর পেছনে লুকিয়ে থাকা আসল উদ্দেশ্য কি? মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকার ও মুম্বাই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে সারা ভারত জুড়ে।
বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর সহ নানা জায়গায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে ভারতবাসী। তাঁরা আজ প্রচন্ড ক্ষেপে রয়েছে শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতের বিরুদ্ধে। তাঁরা নানা জায়গায় সঞ্জয় রাউতের কুশপুত্তলিকা দাহ করে।
রাজস্থানের কর্নি সেনা, পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কঙ্গনার। তাঁরা বিপুল সংখ্যায় হাজির হয়েছিল মুম্বাইয়ের বিমানবন্দরে, কঙ্গনার সমর্থনে। তাঁদের এই উদ্যোগ সত্যি প্রশংসার যোগ্য। আমাপর ভারতবাসী এইসব বিষয় নিয়ে, অনেক প্রশ্ন তুলেছেন, এবার সেইসব প্রশ্নগুলো, আমি একে একে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।


১. সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু রহস্যের শুরু থেকেই মুম্বাই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এক বড় প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। তারা শুরু থেকেই এই ব্যাপারে কোন তৎপরতা দেখায়নি সেভাবে। তাদের তদন্ত চলছিল ধীরগতিতে। তারা শুরু থেকেই সুশান্তের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেছে।
কিন্তু, সুশান্ত সিং রাজপুতের পরিবারের লোকজন সহ অধিকাংশ ভারতবাসী মনে করে, যে, এটা খুন। সুশান্তকে নির্মমভাবে করা হয়েছে খুন। এটা তাঁদের ধারণা। এর পেছনে অনেক কারণও আছে। ধারণা করা হচ্ছে, যে, সুশান্ত সিং রাজপুত ও তাঁর প্রাক্তন সেক্রেটারী দিশা সালিয়ানের মৃত্যু রহস্যের পিছনে অনেক বড় বড় মানুষের নাম থাকতে পারে। তারা ধরা পড়ে গেলে, বিপদে পড়তে পারে, মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকার।
এই মত দেশের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। যার জন্য, মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকার ও মুম্বাই পুলিশ শুরু থেকেই, প্রধান অপরাধী, রিয়া চক্রবর্তীকে বাঁচানোর চেষ্টা করে গেছে আপ্রাণ। যা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ বলেই মনে করছে সারা ভারতের মানুষ।
কেন মুম্বাই পুলিশের এরকম আচরণ? যে মুম্বাই পুলিশকে নিয়ে গর্ব করতো সারা দেশবাসী, অতীতে, এখন সেই মুম্বাই পুলিশের নিন্দায় মুখর সারা ভারতের মানুষ। কেন এরকম হল?
যাদের ধরে আগেই জেলে পুরে দেওয়া উচিত ছিল, তা না করে, তাদের জামাই আদর করে সুরক্ষা দেওয়ার প্রকৃত অর্থ কি? তা জানতে চায় দেশবাসী আজ মুম্বাই পুলিশের কাছ থেকে। নারকোটিকস, মুম্বাইয়ের নানা জায়গা থেকে অনেক ড্রাগস উদ্ধার করেছে ইতিমধ্যেই। কিছু ড্রাগ প্যাডলারস ধরা পড়েছে তাদের হাতে।
এখন প্রশ্ন, মুম্বাইতে যে মুম্বাই পুলিশের নাকের ডগায় বসে বহাল তবিয়তে ড্রাগের ব্যবসা চলছিল, তা কি অজানা ছিল মুম্বাই পুলিশের কাছে?
নারকোটিকস যা পারলো, তা তারা পারলো না কেন? কি কারণে তাদের এই ব্যর্থতা। ড্রাগ যে কতটা ক্ষতিকর তা কি তারা জানে না? যে ড্রাগ আমাদের যুবসমাজকে কুরে কুরে শেষ করে দিচ্ছে, সেই ড্রাগের ব্যবসার সাথে জড়িত রিয়াকে, নিরাপত্তা দিচ্ছে মুম্বাই পুলিশ, এ ভাবলেও লাগে অবাক। এর পেছনে কি কারণ?
সত্যের গলা বারবার টিপে ধরতে চাইছে মুম্বাই পুলিশ। কিন্তু, তারা জানে না, যে, সত্যকে কি চেপে রাখা যায়? যায় কি? যায় না, যায় না, কখনো। সত্যের হয় না কোন বিকল্প। সত্যের তুলনা হয় না কারো সাথে।

২. মহারাষ্ট্রের শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরে, একজন মহান মানুষ ছিলেন। মারাঠি জাতির জন্য তাঁর অবদান কখনো ভোলার নয়। তিনি ভারতবর্ষকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি নারীজাতিকে প্রচন্ড সন্মান করতেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত, অভিনেত্রী কঙ্গনাকে উদ্দেশ্য করে যে ধরনের ভাষা প্রয়োগ করেছেন, তা শুনলে বালাসাহেব ঠাকরে নিশ্চিত প্রতিবাদ করতেনই।
ভারতের নারীদের সারা পৃথিবীর মানুষ সন্মান করে থাকে, সেখানে, সঞ্জয় রাউতের এহেন ভাষা প্রয়োগের কারণ কি? তা জানতে প্রবল ইচ্ছুক ভারতবাসী। সঞ্জয় রাউতের এত ঔদ্ধত্যের কারণ কি? তাঁর এই ঔদ্ধত্য কি চরম ক্ষতি করছে না শিবসেনা দলের?

৩. মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, যে সব পদক্ষেপ একের পর এক বর্তমানে নিয়ে চলেছেন, তা সবই ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ। যা হার মানায় মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে, এই মত প্রকাশ করেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। কি লুকাতে চাইছেন তিনি? তাহলে এর মধ্যে কি কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে? কি সেই রহস্য? তা জানাতে উৎসুক আপামর ভারতবাসী। উদ্ধব ঠাকরের সরকারের অহমিকা কেন এত? তাঁরা নিজেদেরকে কি ভাবছেন?
কেন তাঁরা প্রতিবাদকে ভয় পাচ্ছেন? কেন তাঁরা বারবার যাঁরা, প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা করছেন? তাঁদের নানাভাবে ভয় দেখাচ্ছেন কেন? কেন তাঁদের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হচ্ছে? কেন?

কিসের জন্য তাঁরা এত ভীত? কেন মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকার রিপাবলিক ভারতের সম্প্রচার সারা মহারাষ্ট্রে, পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার এক জঘন্য ষড়যন্ত্র করছে? কেন? কেন? মহারাষ্ট্র কি আলাদা কোন দেশ? মহারাষ্ট্র কি ভারতের অংশ নয়? এখানে, মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার স্বাধীনতা সহ সব রকমের স্বাধীনতা হরণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকার। কেন? কেন?

জানতে চায় দেশবাসী।

মহারাষ্ট্রে এর আগে এত সরকার ছিল, তাদের কারো ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি। তাহলে, এবার কেন? উদ্ধব ঠাকরেকে বুঝতে হবে, যে, তিনি কোন রাষ্ট্রনায়ক নন, একনায়কতন্ত্র শাসন যে বেশিদিন চলতে পারে না, তা কি তিনি জানেন না? না কি তিনি সব বুঝেও বুঝতে চাইছেন না?
তিনি যে ভুলে গেছেন, বিশ্বের বড় বড় একনায়কতন্ত্রী শাসক যেমন - হিটলার, মুসোলিনি, সাদ্দাম হুসেন, কর্নেল গদ্দাফির শেষ পরিণতির কথা? তাদের প্রত্যেকের শেষ পরিণতি হয়েছিল করুণ। তাহলে, কেন তিনি, এরকম ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছেন? তিনি কি ভুলে যাচ্ছেন, যে ভারতবর্ষ বীরেদের দেশ। এই দেশের বুকে জন্ম নিয়েছিলেন, শিবাজি, রাণা প্রতাপসিং, সম্রাট অশোক, রানী লক্ষ্মীবাঈ, নেতাজী সুভাষ বোস, মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ক্ষুদিরাম বোস, ভগৎ সিং, বিনয় বাদল দীনেশের মতো মহান বীর ও বীরাঙ্গনারা। তাঁদের বীরত্ব ও শৌর্যে আজও ভারতবাসী হয়ে আছে মুগ্ধ।
যে ভারতবাসীরা ব্রিটিশদের রক্তচক্ষুকে ভয় পায়নি, তাঁরা কি কখনো ভয় পাবে মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকারের রক্তচক্ষুকে? কখনো পাবে না, কারণ, ভারতবাসীরা জানে, অন্যায়ের প্রতিবাদ কিকরে করতে হয়? ভারতবাসীরা অন্যায় কখনো মুখ বুজে সহ্য করেনি, আজো করবে না। এই সহজ কথাটা কেন মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকার বুঝেও বুঝে উঠতে পারছে না?
তাদের বারবার এই ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ কি ক্রমশ ক্ষেপিয়ে তুলছে না ভারতবাসীদেরকে তাদের বিরুদ্ধে? ক্ষমতায় থাকা মানে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা নয়? বরং গণতন্ত্রের উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ করা ও সমাজের বুকে তাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। এসব কি তারা ভুলে যাচ্ছে? যাচ্ছে কি ভুলে?
এভাবে আর কতদিন চলবে? আর কতদিন? সিবিআই, ইডি ও নারকোটিকস - যেভাবে দ্রুততার সাথে তদন্তকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে, তাতে খুব তাড়াতাড়ি আসল সত্য উদঘাটিত হবে, আপামর ভারতবাসীর কাছে। তখন কি হবে?

এখনো সময় আছে। ধ্বংসের পথ থেকে সরে আসুক মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকার। নাহলে, পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরো আরো খারাপ হতে বাধ্য। কারণ, যেভাবে, সারা ভারতবাসী মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকার, বিএমসি ও মুম্বাই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠেছে, তাতে যেকোন সময়, বিরাট অঘটন ঘটে যেতে পারে, অবশ্যই পারে।

 

শিবব্রত গুহ
কলকাতা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top