সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১


রাশিদ খানকে ভুলবে না সঙ্গীত দুনিয়া


প্রকাশিত:
১৪ জানুয়ারী ২০২৪ ১৪:৩৪

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ২২:৪৮

 

ক্যান্সারে ভুগছিলেন। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, বিপদ কাটিয়ে ঠিক সুস্থ হয়ে যাবেন শিল্পী। তার মধ্যেই হঠাৎ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। হাসপাতালে ভর্তি হলেন শিল্পী। আর ফেরা হলো না বাড়ি। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া গোটা সঙ্গীত জগতে।

কে ছিলেন রাশিদ খান? কিভাবে সুরের আকাশে নক্ষত্র হয়ে ওঠেন এই শিল্পী? ফিরে দেখা যাক, তার জীবন।


১৯৬৮ সালের ১ জুলাই উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁতে জন্ম তার। রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার শিল্পী ছিলেন তিনি। এই ঘরানার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ইনায়েত হুসেন খাঁ। এই ঘরানার আর এক দিকপাল সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ। তিনি ছিলেন রাশিদের দাদা। তার কাছেই ছোটবেলায় গানের তালিম নিতে শুরু করেন রাশিদ। প্রাথমিকভাবে বদাউনে তার বাড়িতেই চলত তালিম। নিসার হুসেন খাঁ একজন কঠোর নিয়মানুবর্তী মানুষ ছিলেন। তিনি ভোর ৪টা থেকে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতেন এবং রশিদকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্কেলের একটি নোট অনুশীলন করাতেন বলে শোনা যায়।এমনকি একটি মাত্র নোট অনুশীলন করতে করতে গোটা দিন বেরিয়েও যেত কখনো কখনো। ছোটবেলায় নাকি রাশিদ এসব পছন্দ না করলেও, মেনে নিতেন। পরে তিনি বলেছেন, সেই প্রশিক্ষণ তাকে পরবর্তীকালে সুরসাধনায় অনেক সাহায্য করেছে।

আর রাশিদের মামা ছিলেন গোয়ালিয়র ঘরানার উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁ। মামার কাছে দ্বিতীয় পর্বের শিক্ষা শুরু হয় রাশিদের। রাশিদের মধ্যে সঙ্গীত প্রতিভা লক্ষ্য করে তার মামা তাকে মুম্বইয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।


খুব অল্প বয়সেই কলকাতায় চলে আসেন রাশিদ। সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমির স্কলারশিপ নিয়ে গান শেখা শুরু করেন। তার পরে থেকে যান কলকাতাতেই। ১১ বছর বয়সে তার প্রথম সঙ্গীতানুষ্ঠানটি করেন রাশিদ এবং পরের বছর, তিনি দিল্লিতে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসে, যখন নিসার হুসেন খাঁ কলকাতায় সঙ্গীত গবেষণা অ্যাকাডেমিতে চলে আসেন, রশিদ খানও সেখানে যোগ দেন।

রামপুর-সহসওয়ান গায়কি গোয়ালিয়র ঘরানার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এই ঘরানার বিশেষত্ব হলো এতে শিল্পীরা ধীর গতিতে, উদাত্ত কণ্ঠস্বরে জটিল ছন্দময় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। রাশিদ খান এই ঘরানাতেই ছিলেন পারদর্শী। তিনি বিলম্বিত খেয়ালে তার মামার পদ্ধতিতে সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। আবার এই তিনিই আমির খান এবং ভীমসেন জোশীর গায়কি শৈলীতে ছিলেন বিশালভাবে প্রভাবিত।


তিনি আবার ছিলেন তারানাতেও একজন উস্তাদ। সেগুলোকে তিনি নিজের ঢঙে পরিবেশন করতেন। সব মিলিয়ে নিজের জগতে তিনি ছিলেন অনন্য।

তিনি ২০০৬ সালে পদ্মশ্রী এবং সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০২২ সালে তিনি শিল্পকলার ক্ষেত্রে ভারত সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণে ভূষিত হন। এছাড়াও ঝুলিতে ছিল আরো বহু পুরস্কার ও সম্মান।

পণ্ডিত ভীমসেন জোশী নাকি একবার মন্তব্য করেছিলেন যে রশিদ খান হলেন ‘ভারতীয় কণ্ঠ সঙ্গীতের নিশ্চিত ভবিষ্যৎ’। সেই ভবিষ্যৎ এখন অতীত। রেকর্ড হয়ে থাকা কণ্ঠস্বরের জাদুর মধ্যেই মিশে থাকবেন ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের না-পাওয়া ভবিষ্যতের জাদুকর।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top