বাংলায় কথা বলায় নারীকে `বাঙালি’ ভেবে হেনস্তা
প্রকাশিত:
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০৯
আপডেট:
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:২৬
কলকাতার এক নারী হিন্দিতে কথা বলতে অস্বীকার করে বাংলায় কথা বলছিলেন বলে তাকে শুনতে হলো যে তিনি বাংলাদেশে নেই, ভারতে আছেন! ভারতে থেকে কেন তিনি হিন্দি জানেন না, এই প্রশ্নও করা হয় ওই বাঙালি নারীকে।
এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে প্রথমে দুই নারীর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছে এবং পরে একাধিক পুরুষকেও সেই বিতর্কে যোগ দিতে ‘শোনা’ যাচ্ছে।
সেখানে একজন নারীকে ইংরেজি এবং হিন্দিতে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে।
অন্য নারীর শুধু গলা শোনা গেছে– তিনি বাংলায় কথা বলার জন্য জেদ করছেন।
ভিডিওটির সত্যতা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি এবং এটাও বোঝা যাচ্ছে যে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার আগে সেটি এডিট করা হয়েছে– আশপাশের যাত্রীদের মুখ ‘মোজাইক’ করে ঢেকে দেওয়া হয়েছে এবং অন্তত একবার ভিডিওর মাঝখানে ‘কাট’ করা হয়েছে। ভিডিওর ওপরে বাংলায় ‘টেক্সট’ ও লেখা হয়েছে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি কে করেছেন, তা স্পষ্ট নয়, তবে যে নারী বাংলায় কথা বলার জন্য জেদ করছিলেন তার খোঁজ পাওয়া গেছে।
শক্তিরূপা সাধুখাঁ নামের ওই নারী বলেছেন, ঘটনাটি কলকাতার মেট্রোরেল পরিসরে ঘটেছে ১৮ নভেম্বর দুপুরে।
তবে অন্য যে নারী মিজ সাধুখাঁর সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন, তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
শক্তিরূপা সাধুখাঁ দাবি করছেন, ‘যে ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা কে করেছেন আমি জানি না। তবে আমি নিজে একটা ভিডিও করেছিলাম ঘটনার।
সেটা পরে রেল পুলিশ আমাকে জোর করে ডিলিট করিয়ে দেয়।’
বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন ‘বাংলা পক্ষ’ বলছে শুধু নভেম্বর মাসেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত সাতটি ঘটনা তারা জানতে পেরেছেন; যেখানে হিন্দিতে কথা বলতে অস্বীকার করায় ‘বাংলাদেশি’ বলে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে।
ইন্ডিয়াতে থেকে হিন্দি জানেন না?
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দুই মিনিট ২০ সেকেন্ডের ভিডিওর শুরুতেই দেখা যাচ্ছে যে এক নারী ইংরেজি এবং হিন্দি মিশিয়ে বলছেন, ‘আপনি বাংলাদেশে থাকেন না, আপনি ইন্ডিয়াতে থাকেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডিয়ার অংশ, তাই আপনাকে হিন্দি শিখতে হবে। আপনি বাংলা জানেন অথচ ইন্ডিয়াতে থেকে হিন্দি জানেন না?’
এরপরে আরেকটি নারী কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে (তাকে ভিডিওতে দেখা যায়নি)।
শক্তিরূপা সাধুখাঁ দাবি করছেন যেই গলা তার। তাকে বাংলায় বলতে শোনা গেছে, ‘আমি পশ্চিমবঙ্গে থাকি, নিজের মাটিতে থাকি, তোর মাটিতে থাকি না।’ এরপর সাধুখাঁ অন্যদের উদ্দেশে বলছেন, ‘উনি আমাকে অপমান করছেন! আমার মাটিতে বসে আমাকে....’
জবাবে প্রথম নারী ইংরেজিতে বলেন, ‘মেট্রো আপনার নয়, ওয়েস্ট বেঙ্গল আপনার নয়।’
দুজনের তর্কের মাঝে প্রথম নারীকে বারবার হিন্দিতে বলতে শোনা যায়, ‘ইন্ডিয়া মে রহতে হো না, হিন্দি নেহি আতা? ইন্ডিয়ান হো না, হিন্দি নেহি আতা?’ অর্থাৎ, ‘ভারতে থাকো তো, হিন্দি আসে না? ভারতীয় তো, হিন্দি আসে না?’
এরপরে একবার ওই নারীকে হিন্দিতে বলতে শোনা যায়, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কোথায়? ইন্ডিয়াতেই তো? ইন্ডিয়ার ভাষা কী– হিন্দি!’
কেন তার অনুমতি না নিয়ে ভিডিও করা হচ্ছে, সেই কথাও বলেছেন ওই নারী। এর জন্য তিনি মামলা করবেন এবং ভিডিও রেকর্ডকারীকে জেলে যেতে হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন। এর মাঝে কয়েকবার দ্বিতীয় নারী-কণ্ঠে বলতে শোনা গেছে, ‘বাংলায় বলুন না প্লিজ।’
ভিডিও রেকর্ডিংটি যেখানে কাট করা হয়েছে, তারপরের অংশে ইংরেজি ও হিন্দি বলতে থাকা নারীকে আবারও বলতে দেখা গেছে, ‘আমি হিন্দুস্তানি।’
এরপরে এক ভারিক্কি গলার পুরুষকে হিন্দিতেই বলতে শোনা যায়, ‘আপনি হিন্দুস্তানি তো কী! ইংরেজিতে বলুন!’
এই তর্কের মধ্যে একাধিকবার কয়েকটি পুরুষ কণ্ঠ শোনা গেছে– হিন্দি এবং বাংলায় তারা বলছেন, দুজনে বাইরে গিয়ে ‘সলিউশন’ করে আসুন, আরো একাধিক ব্যক্তি বলছেন দুজনেই বাইরে যান না ইত্যাদি।
কেন বাঁধল ঝগড়া?
শক্তিরূপা সাধুখাঁ বলছেন, ‘আমি ১৮ নভেম্বর হাওড়ার দিক থেকে মেট্রো রেলে উঠেছিলাম। খুব ভিড় ছিল। এসপ্ল্যানেড স্টেশনের লিফটে ওঠার পরে দেখা যায় ওজন বেশি হয়ে গেছে। ওই মেয়েটি একদম শেষে ওঠে লিফটে। যেটা স্বাভাবিক যে শেষে যিনি বা যারা ওঠেন, ওজন বেশি হয়ে গেলে তারা নেমে যান। কিন্তু ওই মেয়েটি কিছুতেই নামতে চাইছিল না। আমি বাংলায় তাকে বলি নেমে যেতে। তখনই সে আমাকে বলতে থাকে যে আমি কি বাংলাদেশি নাকি যে হিন্দি বলতে পারি না। ভারতে থেকে কেন আমি হিন্দি জানি না, এটা বারবার বলতে থাকে মেয়েটি।’
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: