করোনার টিকা নেয়া লাগতে পারে প্রতি বছর : মু: মাহবুবুর রহমান
প্রকাশিত:
১৯ এপ্রিল ২০২১ ২০:২৮
আপডেট:
১৩ জানুয়ারী ২০২৫ ১৯:১৩
এখন থেকে প্রতি বছর করোনাভাইরাসের টিকা নেয়া লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলবার্ট বোরলা।
স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনবিসিতে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। যদিও গত ১ এপ্রিল সাক্ষাৎকারটি রেকর্ড করা হয়।
আলবার্ট বোরলা বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রতি বছর ভ্যাকসিন নেয়া লাগতে পারে।
করোনার ভাইরাসের নতুন নতুন ধরন বা ভ্যারিয়ান্ট ‘মূল ভূমিকা’ পালন করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি অনুযায়ী সম্ভবত করোনা প্রতিরোধী টিকার ৩য় বুস্টার ডোজ প্রয়োজন হতে পারে। সেটা হতে পারে ছয় মাস বা ১২ মাসের মধ্যে। হয়তো প্রতিবছর টিকা নিতে হতে পারে। তবে আগে এসব বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া দরকার।’’
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে জনসন অ্যান্ড জনসনের প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স গোরস্কি সিএনবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, মানুষকে প্রতিবছর হয়তো করোনা প্রতিরোধী টিকা নিতে হতে পারে। তাঁর ঐ মন্তব্যের পর ফাইজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলবার্ট বোরলাও একই ধরণের অনুমানের কথা জানালেন।
জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেকের সঙ্গে যৌথভাবে করোনা ভ্যাকসিন তৈরি করছে মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোতে ফাইজারের ভ্যাকসিন ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক অবশ্য ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা করে যে, করোনার নতুন নতুন ধরনের বিরুদ্ধে আরও ভালোভাবে লড়াই করার জন্য তারা ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ পরীক্ষা করছে।
করোনা প্রতিরোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলছে টিকাদান কার্যক্রম। মূলত: ফাইজার, মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা ব্যবহার করে বিশ্ব ব্যাপী চলছে করোনা ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম। করোনার এই তিনটি টিকাই দুই ডোজের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রথম ডোজ শেষ হয়ে কোথাও কোথাও চলছে দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ। দুই ডোজ নেয়ার পরও টিকাগ্রহণকারী কতদিন সুরক্ষিত থাকবেন তা নিয়ে অবশ্য এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি গবেষকরা।
প্রাথমিক গবেষণা বলছে, মডার্না, ফাইজার ও বায়োএনটেকের টিকার কার্যকারিতা কমপক্ষে ছয় মাস পর্যন্ত বহাল থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা ছয় মাসের বেশি সময় পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারলেও করোনার নতুন নতুন ধরনের কারণে নিয়মিত বুস্টার ডোজ নেয়া প্রয়োজন হতে পারে। ফাইজারের সিইও বোরলা বলেন, বুস্টার ডোজ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
বুস্টার ডোজের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার(১৫ এপ্রিল) এমন তথ্য জানিয়েছেন।
মার্কিন কোভিড-১৯ রেসপন্স টাস্কফোর্সের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডেভিড কেসলার বলেছেন, টিকা নেয়ার পর রোগ প্রতিরোধক্ষমতার স্থায়িত্ব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, টিকার বুস্টার ডোজ প্রয়োজন হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস অব ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ট প্রিভেনশন - সিডিসির পরিচালক রোসে ওয়ালেনস্কি বলেন, টিকা নেয়ার পরও যাঁরা করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষ করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৫,৮০০ জনের দুই ডোজ টিকা নেয়ার পরও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় করোনা সংক্রমণ হয়েছে; যাদের ৩৯৬ জন কে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে । টিকা নেয়ার পরও আবারো করোনা সংক্রমণের এই হার প্রতি ১৩ হাজারে ১ জনের কম হলেও এদের মধ্যে ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন নেয়ার পরও আক্রান্তের ঝুঁকি আছে। কাজেই ফ্লু ভ্যাকসিনের মতো এটাও প্রতি বছর নিতে হতে পারে। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত টিকার মধ্যে শুধু গুটি বসন্তের ক্ষেত্রে একবার টিকা দেয়ার পর রোগটি আর হয় না। যেহেতু করোনা টিকার সুরক্ষার স্থায়িত্বকাল কমপক্ষে ছয় মাস এবং কোনো করোনা টিকার কার্যকারিতাই ১০০ ভাগ নয় সেহেতু ধারণা করা যায়, ফ্লু ভ্যাকসিনের মতো করোনা ভ্যাকসিনও প্রতি বছর নিতে হবে।
বিষয়: মু: মাহবুবুর রহমান
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: