সিডনী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১

পোয়েট লরিয়েট থেকে নোবেল লরিয়েট কবি লুইজ গ্লিক : মু: মাহবুবুর রহমান 


প্রকাশিত:
২৮ অক্টোবর ২০২০ ২০:৫৮

আপডেট:
২৮ অক্টোবর ২০২০ ২২:০৬

ছবিঃ কবি লুইজ গ্লিক 

 

যারা নোবেল পুরস্কার পায় তাদেরকে ইংরেজিতে নোবেল লরিয়েট বলা হয়, এটা আমরা জানি। আর পোয়েট লরিয়েট হলেন তারাই যাদেরকে কোনো দেশের সরকার, জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় কবি হিসাবে নিয়োগ দেয়। এদেরকে আবার রাষ্ট্রীয় কবিও বলা হয়। সরকারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, উদযাপনে পোয়েট লরিয়েটরা সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখে সবাইকে বিমোহিত করে দিবেন, তাদের কাছ থেকে সরকারের প্রত্যাশা এমনই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ডে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একজন কবিকে পোয়েট লরিয়েট হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।  পোয়েট লরিয়েট নিয়ে এতো কথা বলার কারণ হলো এবছর যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরুস্কারে ভূষিত হয়েছেন অর্থাৎ নোবেল লরিয়েট লুইজ গ্লিক, ২০০৩-০৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোয়েট লরিয়েট ছিলেন।    

এবার আলোকপাত করার চেষ্টা করবো নোবেল পুরস্কারধারী অর্থাৎ নোবেল লরিয়েট নিয়ে আলোচনায়। নোবেল পুরস্কারকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক ও গৌরবময় পুরস্কার। অনন্যসাধারণ গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৯০১ সাল থেকে দেয়া হচ্ছে নোবেল পুরস্কার। সাহিত্য, শান্তি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে ১৯০১ সাল থেকে। পরে ১৯৬৮ তে নোবেল পুরস্কারের তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি। 

সারা বিশ্বের লেখক লেখিকাদের কাছে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার কিংবা সাহিত্যে নোবেল লরিয়েট হওয়া প্রচণ্ড গুরুত্ব বহন করে। নোবেল পুরস্কার এখন পর্যন্ত এই বিশ্ব ভ্রম্মান্ডের যেকোনো সাহিত্যিকের জন্য সর্বোচ্চ সম্মাননা বলে বিবেচিত। আর ১৯০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১১৭ জন লেখক-লেখিকা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এই ১১৭ জন নোবেল লরিয়েটের মধ্যে বাঙালি মাত্র একজন— বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নারীদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। ২০২০ সাল পর্যন্ত মাত্র ১৬ জন নারী পেয়েছেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার।  

নোবেল পুরস্কার আয়োজক সুইডিশ অ্যাকাডেমির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১৯০১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৮৭৩ জন পুরুষ, ৫৭ জন নারী এবং ২৮ সংগঠনকে দেয়া হয়েছে নোবেল পুরস্কার । ৫৭ জন নারী নোবেল লরিয়েটের মধ্যে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন ১৬ জন আর এই ১৬ তম জন হলেন ২০২০ সালের নোবেল বিজয়ী মার্কিন কবি লুইজ গ্লিক। 

১৯৯৩ সালে নোবেল পাওয়া বিখ্যাত ঔপন্যাসিক  টনি মরিসনের পর এই প্রথম কোনো মার্কিন নারী সাহিত্যিক লাভ করলেন নোবেল সম্মাননা ৷ বলে রাখা ভালো, প্রয়াত টনি মরিসন আমেরিকান হলেও তিনিই একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ নারী যিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। নোবেলজয়ী সাহিত্যিকদের মধ্যে কবির সংখ্যা বেশ কম। লুইজ গ্লিকের আগে সবশেষ কবি হিসেবে ২০১১ সালে নোবেল জিতেছিলেন সুইডিশ লেখক টমাস ট্রান্সট্রোমার। 

নোবেল কমিটি লুইজ গ্লিককে পুরস্কার দেয়ার কারণ হিসেবে বিবৃতিতে বলেছে, গ্লিকের ‘সহজবোধ্য কবিকণ্ঠ নিরাভরণ সৌন্দর্যের সঙ্গে ব্যক্তির অস্তিত্বকে সর্বজনীন করে তোলে। তাঁর কণ্ঠস্বর আপোষহীন। তাঁর লেখা একই সাথে হাস্যরস এবং বুদ্ধিদীপ্ত সমৃদ্ধ। '  

সুইডিশ অ্যাকাডেমি তাদের বিবৃতিতে বলেছে, কেবল যাপিত জীবনের উত্থান-পতন আর নৈরাজ্যই গ্লিকের কবিতার আধার নয়, তিনি আমূল বদলে যাওয়ার, পুনর্জন্মের কবি। লুইজ গ্লিককে অনেকে অবশ্য আগে থেকেই পুনর্জন্মের কবি বলে ডেকে থাকেন।  গ্লিকের কবিতা আবেগপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। আধুনিক জীবনে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার পাশাপাশি প্রায়ই তার লেখায় পৌরাণিক কাহিনী, ইতিহাস বা প্রকৃতির ছবি ফুটে ওঠে। আর তাই তিনি ‘আত্মজীবনীমূলক কবি’ হিসেবেও প্রসিদ্ধ। 

ছবিঃ কবি লুইজ গ্লিক ও বারাক ওবামা

মার্কিন সাহিত্যে গ্লিকের অবদানের বিষয়ে নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্ডার্স ওলসন বলেন, ‘‘তাঁর লেখায় রয়েছে রসবোধের তীব্র উপস্থিতি, সরলতা, আর দৃঢ়তা ৷ শৈশব ও পারিবারিক জীবন এবং বাবা-মা আর ভাই-বোনের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক সবসময় তাঁর কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। তিনি মিথ ও শাস্ত্রীয় মোটিফ থেকে প্রেরণা নিয়ে বিশ্বজনীন হওয়ার চেষ্টা করেছেন।''  

১৯৬৮ সালে গ্লিকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ফার্স্টবর্ন’ প্রকাশিত হয়। তবে সাহিত্যে নোবেলজয়ী ৭৭ বছর বয়সী এই মার্কিন কবির সর্বাধিক প্রশংসিত কাব্যগ্রন্থের নাম ‘দ্য উইল্ড আইরিস।’ ১৯৯২ সালে প্রকাশিত কবিতার বই ‘দ্য ওয়াইল্ড আইরিস' গ্লিককে এনে দেয় পুলিৎজার পুরস্কার৷ ‘দ্য ওয়াইল্ড আইরিশ’ কাব্যগ্রন্থের তিনটি ভাগ রয়েছে। প্রথম ভাগে কল্পনার বাগানে ফুলগুলো কথা বলে মালির সঙ্গে, দ্বিতীয় ভাগে মালি নিজেই নিজের সঙ্গে কথা বলেন আর তৃতীয় ভাগে বর্ণনা করা হয়েছে ঈশ্বরবন্দনা।  

 

জন্ম ও পরিচয় 

হাঙ্গেরিয়ান বংশোদ্ভুত আমেরিকান কবি ও প্রাবন্ধিক লুইজ গ্লিকের জন্ম ১৯৪৩ সালে, নিউইয়র্কে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি বেড়ে ওঠেন লং আইল্যান্ডে। তার বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী, মা ছিলেন গৃহিনী। লুইজ গ্লিকের মা ছিলেন ওয়েলেস্লি কলেজের গ্র্যাজুয়েট। শৈশবে মা-বাবার কাছ থেকে গ্রিক পুরাণ আর ধ্রুপদী গল্প সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন গ্লিক।  যা তাঁর কবিতা লেখার আগ্রহকে বাড়িয়ে দিয়েছিলো।   

লুইজ গ্লিক বর্তমানে ম্যাচুসেটসের কেমব্রিজ শহরে বসবাস করেন। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি শিক্ষকতায়ও যুক্ত। কানেকটিকাটের নিউ হেভেনের ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত এই কবি। ইয়েল ছাড়াও বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিসহ অনেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। 

 

শৈশব, কৈশোর ও কবি হয়ে ওঠা 

মাত্র ১৮ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯৬১ সাল থেকে কবিতা লেখা শুরু করেন লুইজ গ্লিক। তবে শৈশবে অ্যানারেক্সিয়া নার্ভোসা রোগে ভুগেছিলেন অনেক দিন। তাঁর জন্মের আগেই তাঁর বড় বোন ঐ রোগে মারা যান। রোগমুক্তির জন্য বছর সাতেক থেরাপি নিতে হয়েছে তাঁকে। অসুস্থতার কারণে স্কুলও ছাড়তে হয়। দীর্ঘ অসুস্থতা এবং চিকিৎসার কারণে লুইজ গ্লিক নিয়মিত শিক্ষার্থী হতে পারেননি।  তাই বলে পড়াশুনা ছেড়ে দেননি, ১৯৬১ সালে তিনি অর্জন করেন স্নাতক ডিগ্রি। 

১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব জেনারেল স্টাডিজের অধীনে কবিতাবিষয়ক ওয়ার্কশপ সম্পন্ন করেন লুইজ গ্লিক। সেখানে তিনি মার্কিন দুই পোয়েট লরিয়েট লিওনি এডাম এবং স্ট্যানলি কুনিজকে শিক্ষক হিসেবে পান। নিজের কবি হয়ে ওঠার পেছনে এই শিক্ষকদের ভূমিকাকে উল্লেখযোগ্য বলে মনে করেন লুইজ গ্লিক। হয়তো এদের কাছ থেকেই শিক্ষা নেয়ার সময় লুইজ গ্লিক ভেবেছিলেন আমিও যদি পোয়েট লরিয়েট হতে পারতাম যা তিনি হয়েছিলেন ২০০৩-০৪ সালে। 

১৯৬৭ সালে গ্লিক বিয়ে করেন কিন্তু ১৯৬৮ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তবে ১৯৬৮ সালেই তাঁর প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয়। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ফার্স্টবর্ন’ - এর মাধ্যমেই কবি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন লুইজ গ্লিক। মানবাত্মার বিশ্বাস ও বিশ্বাসহীনতা, মানবিকতা ও অমানবিকতা, নৈতিকতা ও অনৈতিকতা, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ, মিথ ও বাস্তবতা সব মিলিয়ে প্রথম বইয়ের মাধ্যমেই লুইজ গ্লিক মার্কিন সাহিত্যে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে নেন। 

প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া খুব বেশি না করলেও লুইজ গ্লিক ১৯৭১ এর পর ভারমন্টে গডার্ড কলেজে কবিতা পড়াতে শুরু করেন। ঐ এই সময়ের লেখা কবিতা নিয়ে ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় কবিতার বই -‘দ্য হাউস অন মার্সল্যান্ড’।  এ বইটি তাঁকে সত্যিকার অর্থে কবির খ্যাতি এনে দেয় এবং তাঁকে আমেরিকানরা আলাদা করে চিনতে শুরু করেন।   

১৯৭৭ সালে গ্লিক দ্বিতীয় বিয়ে করেন। আর তাঁর তৃতীয় কবিতার বই -‘ডিসেন্ডিং ফিগার’ প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালে। এই বইয়ের কারণে তিনি যেমন প্রশংসিত হন, তেমনি সমালোচিতও হন। পরে অবশ্য বইটি সমাদৃত হয়। 

১৯৮৪ সালে গ্লিক ম্যাসাচুসেটসের উইলিয়াম কলেজের ইংরেজি বিভাগে সিনিয়র লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। আর ১৯৮৫ সালে তাঁর চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য ট্রায়াম্প অব একিলিস’ প্রকাশিত হয়। বইটি উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পায় সমালোচকদের।  

তাঁর বিখ্যাত আরও দুটি কবিতার বই ‘আরারাত’ ও ‘দ্য ওয়াইল্ড আইরিস’ প্রকাশিত হয় ১৯৯০ ও ১৯৯২ সালে। ‘দ্য ওয়াইল্ড আইরিস’ বইটি সম্পর্কে পাবলিশার্স উইক্লি মন্তব্য করেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বই’ এবং সমালোচক এলিজাবেথ লান্ড দ্য ক্রিস্টিয়ান সায়েন্স মনিটরে লেখেন, ‘একটি মাইল ফলক কাজ’।  

দ্য ওয়াইল্ড আইরিস বইটির জন্য ১৯৯৩ সালের পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হন লুইজ গ্লিক । লুইজ গ্লিকের কাব্যজীবনে যথার্থই ‘দি ওয়াইল্ড আইরিশ’ একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। কারণ এই বইয়ের জন্য তিনি দেশে-বিদেশে আলোচিত হয়ে ওঠেন ও বাড়তে থাকে তাঁর পাঠক সংখ্যা।  

এ পর্যন্ত ১২টি কবিতার বই প্রকাশের পাশাপাশি প্রবন্ধও লিখেছেন এই মার্কিন কবি৷ ১৯৯৪ সালে প্রকাশ পায় লুইজ গ্লিকের প্রুফস অ্যান্ড থিওরিজ : অ্যাসেজ অন পোয়েট্রি। এরপর ২০১৭ সালে বেরিয়েছে আমেরিকান অরিজিনালিটি। এর বাইরে তিনি ১৯৯৩ সালে সম্পাদনা করেন দ্য বেস্ট অ্যামেরিকান পোয়েট্রি ১৯৯৩। 

তাঁর অন্যান্য বইয়ের মধ্যে আরও আছে দ্য ফার্স্ট ফোর বুকস অফ পোয়েমস (১৯৯৫), মিডোল্যান্ডস (১৯৯৬), ভিটা নোভা (১৯৯৯), দ্য সেভেন এইজেস (২০০১), অক্টোবর (২০০৪), অ্যাভার্নো (২০০৬), অ্যা ভিলেজ লাইফ (২০০৯), পোয়েমস ১৯৬২-২০১২ (২০১২) এবং ফেইথফুল অ্যান্ড ভার্চুয়াস নাইট (২০১৪)। 

মার্কিন এ কবি আমেরিকার বড় বড় সব পুরস্কারই পেয়েছেন। পুলিৎজার ছাড়াও পেয়েছেন ন্যাশনাল হিউম্যানিটিস মেডাল, ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড, ন্যাশনাল বুক ক্রিটিকস সার্কল অ্যাওয়ার্ড, বলিঞ্জেন প্রাইজ। লুইজ গ্লিক ২০০৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন পোয়েট লরিয়েট অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অর্থাৎ আমেরিকার রাষ্ট্রীয় কবি। বাকি ছিল শুধু নোবেল সাহিত্য পুরস্কার, সেই শূন্যতাও এবার পূরণ হলো তবে ৭৭ বছর বয়সে।   

 

মানবিক কবি লুইজ গ্লিক 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লুইজ গ্লিকের কবিতায় মানবিক হতে চাওয়ার যন্ত্রণাদায়ক বাস্তবতার কথা উঠে আসে। তিনি এমন অজস্র কবিতা লিখেছেন যার উপজীব্য বিষয়, শৈশব, মৃত্যু এবং পারিবারিক জীবন। গ্রিক পুরাণ ও পৌরাণিক চরিত্রের সাথে তাঁর কবিতার যোগসূত্র ঘটেছে ব্যাপকভাবে।  তবে লুইজ গ্লিক নিজেকে কোন বিশেষ অভিধায় দেখতে চান না। এমনকি নিজেকে ফেমনিস্ট বলতেও তিনি নারাজ। বরং জীবন ও মৃত্যুর শাশ্বত রহস্য আর প্রকৃতির অনিঃশেষ রহস্যময়তাকেই তিনি তাঁর কবিতায় খুঁজে চলেন। 

লুইজ গ্লিক তাঁর রচনায় যন্ত্রণা, আকাঙ্ক্ষা আর প্রকৃতি নিয়ে লিখেছেন। বিশেষ করে বিষন্নতা আর একাকিত্ব নিয়ে প্রচুর কবিতা লিখেছেন তিনি। কারণ হয়তো তাঁর শৈশবে রোগের যন্ত্রনা, একাকিত্ব ও বিষন্নতা। নাইন-ইলেভেনের মর্মান্তিক ঘটনাও গ্লিককে খুবই প্রভাবিত করেছিল। নাইন-ইলেভেনের হামলার উপর তিনি দীর্ঘ কবিতা লেখেন। তবে ঐ মর্মান্তিক ঘটনা তাঁকে জীবন গুটিয়ে ফেলার পরিবর্তে জীবনকে উদ্‌যাপন করতেই বেশি উৎসাহী করেছে। 

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণাকালে গ্লিকের পুলিৎজার বিজয়ী ‘দ্য ওয়াল্ড আইরিস’ কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘‌স্নোড্রপস'‌ কবিতাটি উদ্ধৃত করেছে নোবেল কমিটি। শীতের শুষ্কতা-রুক্ষতা শেষে যেমন প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পায়, সেই স্মৃতির বন্দনা গ্লিক করেছেন এই কবিতায় । গ্লিক লিখেছেন— 

‘বেঁচে থাকার প্রত্যাশা করি নাই / তবু বিস্ময় দিয়েছে পৃথিবী 
কখনো ভাবি নাই/ আবার মেলব চোখ, অনুভবের আলপনায়—' 

 

মু: মাহবুবুর রহমান 
নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top