সিডনী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

তর্পণ : বিনোদ ঘোষাল


প্রকাশিত:
২ নভেম্বর ২০২০ ২১:০৩

আপডেট:
৭ এপ্রিল ২০২২ ২১:৪০

ছবিঃ বিনোদ ঘোষাল

 

গলার সামনে ক্ষুরটা ধরা। ক্ষুর ধরা হাতটা ঠকঠক করে কাঁপছে লোকটার। অরিন্দম ভয়ে চোখ বুজে ফেলল। ঢোক গিলতে ভয় করছে। যদি কণ্ঠনালি নড়ে গিয়ে ক্ষুরটা কুচ করে বসে যায়। সব শেষ। প্রত্যেকটা মুহূর্তকে মনে হচ্ছে অনন্তকাল। কেন ঘে মরতে এখানে ঢুকতে গেছিল সকাল সকাল। বাড়িতে পামেলা চা বানিয়ে বসে রয়েছে। অরিন্দম বাড়ি ফিরলে একসঙ্গে আয়েস করে বিছানায় বসে খাবে। খবরের কাগজের পাতা ওল্টাবে। টুকটাক আট বছরের দাম্পত্য জীবনের কথা, তারপর পামেলা চা শেষ করে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়েই বলতে এ ব্বাবা এত দেরি হয়ে গেল। আজ খেয়ে যেতে পারব না, বলেই দৌড় দেবে টয়লেটের দিকে। আর অরিন্দম ফিক করে হেসে আবার কিছুক্ষন বিছানায় নিশ্চিন্ত গড়াবে। শনি রবি বাদ দিয়ে রোজ সকালের এমনটাই রুটিন। তবে আজ হয়ত রুটিনটা ভেঙে গেল। কিংবা এমনও হতে পারে বাকি জীবনটা পামেলাকে একাই চা খেতে হবে। অরন্দমের আর বাড়ি ফেরা হবে না।

ক্ষুরটা গলার কাছ থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে অরিন্দম এতক্ষণ ধরে আটকে রাখা দমটা ছেড়ে কোৎ করে ঢোঁক গিলল। প্রাণপণে লোকটাকে বলতে চাইল আমাকে ছেড়ে দিন। পারল না। তার আগেই লোকটা ওর মাথাটা সামান্য চেপে ধরে ডানদিকে কাত করে ক্ষুর টানল ঘাড়ে। একইভাবে হাতদুটো ঠকঠক করে কাঁপছে। আয়নার সামনে সাদা কাপড়ে মোড়া অরিন্দম শেষ একবার তাকাল নিজের দিকে। বড় সুন্দর মুখটা তার আতংকে কী ভয়ানক হয়ে উঠেছে।

আসলে রোজ সকালের মতো আজও নিজের চার বছরের ছেলেকে বাইকে বসিয়ে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পৌছে বাড়ি ফিরছিল অরিন্দম। ছেলের স্কুলটা ওর বাড়ির থেকে দুকিলোমিটার। পুলকারের বদলে ছেলেকে স্কুলে দিয়ে যাওয়া নিয়ে আসার কাজটা ওই করে থাকে গত দু বছর ধরে। আজও ফিরছিল। স্টেশন রোডের ওপর দিয়ে বাইক চালাতে চালাতে হঠাৎই থমকে গেছিল একটা সেলুনের সামনে। পামেলা কয়েকদিন ধরেই বলছে চুলটা এবার কাটাও। রাস্তার পাগলদের মতো নইলে এবার জট পড়ে যাবে। এই যাচ্ছি যাৰ করে আর যাওয়া হচ্ছিল না। আজ সেলুনটা চোখের সামনে পড়তেই থেমে গেছিল। ও সাধারনত পাড়ার নীনুদার সেলুনেই চুল দাড়ি কাটায়। কিন্তু নীলু দা দোকান খোলে একটু বেলার দিকে। তখন আবার বাড়ি থেকে বেরোতে ইচ্ছে করে না অরিন্দমের। অতএব বাইকটা রাস্তার পাশে স্ট্যান্ড করিয়ে সেলুনের সামনে একটা বেঞ্চে বসে থাকা ছেলের দিকে তাকিয়ে অরিন্দম জিজ্ঞেস করেছিল ভিড় আছে?

ছেলেটা সেলুনের দরজাটা সামান্য ফাঁক করে ভেতরে চোখ চালিয়ে নিয়ে বলেছিল না না চলে আসুন। দাদু ফাঁকাই আছে।

দাদু! অরিন্দম ভেবেছিল এই ছেলেটাই বোধহয় দোকানদার, মানে নাপিত।

সেলুনের ভেতরে ঢুকতেই আরও অবাক। একজন লোক, ভেতরের বেঞ্চে বসে, কমপক্ষে সত্তরের ওপর বয়েস। এই বয়েসেও বেশ ফরসা গায়ের রঙ, তবে চামড়া টিলে হয়ে কুঁচকে যাওয়াতে রঙের গ্লেজ বোঝা যাচ্ছিল না। কপালে-গালে বার্ধক্যজনিত অনেকগুলো ছোটবড় নানা সাইজের ছোপ ছোপ কালো তিল। মাথায় সবমিলিয়ে খান চল্লিশেক চুল কিন্তু পরিপাটি ব্যাকব্রাশ করা। চোখে পুরনো মডেলের সোনালি ফ্রেমের চশমা,তবে সোনালি রংটা এখন বহু বয়েসের কারনে অনেকটাই ফিকে। ডান হাতে কালো ব্যান্ডের সোনালি ডায়ালের ঘড়ি। আর পরনে পরিস্কার ঘিয়ে রঙের হাফ হাতা ফতুয়া আর সাদা পাজামা। প্রথমটায় অরিন্দম ভেবেছিল কোনও কাস্টমার হবে। জিজ্ঞেস করেছিল, কেউ নেই?

বসে পড়। এই তো রয়েছি। বলে লোকটা উঠে দাঁড়িয়েছিল। চেয়ারে বসে পড়েছিল অরিন্দম। মনে তখনই কেমন যেন একটা কু ডাকছিল...এত বয়েস... পারবে তো?

সেই কু ডাক রীতিমতো আতঙ্কে পরিনত হল কয়েক মুহূর্তে যখন অরিন্দম মাত্র ফুট দুয়েক দূর থেকে দেখল ড্রয়ার টেনে সাদা কাপড় আর চিরুনি কাঁচি বার করার সময়ে লোকটার হাত দু'টো থর থর করে কাঁপছে। এই কেলো করেছে! এইভাবে কাঁপলে চুল কাটা তো দূরের কথা যে কোনও মুহূর্তে এ্যাক্সিডেন্ট ঘটিয়ে ফেলতে পারে। উঠে যাবে ভাবছিল অরিন্দম। পারল না। কিছু বলার আগেই লোকটা একটা পরিস্কার সাদা কাপড় দিয়ে ওর গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে দিল। পাড়ার নীনুদার মতো করে নয়, বেশ গুছিয়ে যত্ন করে ঢাকল যাতে চাদরের ভেতরে অরিন্দমের পোশাকে একটাও চুল না পড়ে।

আগে তো তোমাকে দেখিনি, এই প্রথমবার এলে?...

হ্যাঁ। 

ভালো ভালো, আরে তোমরাই তো আসবে। তা তোমার নামটা কি বাবা?

অরিন্দমের কথা বলতে একটুও ইচ্ছে করছিল না। তবু বলল অরিন্দম গাঙ্গুলি।

থাকো কোথায়?

বাগানপাড়া।

ওহ বাগান পাড়া? শ্যামা গাঙ্গুলিকে চেনো? মারা গিয়েছেন অবশ্য কয়েকবছর আগে।

হ্যাঁ উনি আমার জেঠু ছিলেন।

তাই নাকি? বলে ক্ষুর টানা থামালেন উনি। কিছু একটা ভাবলেন তারপর আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাহলে কার ছেলে?

উমাকান্ত গাঙ্গুলি।

ও বাবা তুমি উমাদার ছেলে তাহলে! আরে তোমার বাবা-জ্যাঠা সবাই আমার দোকানেই তো চুল কাটাতে আসতেন।

কতদিনের বন্ধু আমরা।

তাই?

তবে? ব্যাস তারপর ওর মুখ চলতেই থাকল। নাইন্টিন ফিফটি সেভেনে দোকান করি। তখন বেড়া আর টালির দোকান ছিল। স্টেশনে এই একটাই সেলুন ছিল আমার। সব অফিস ফেরতা আমার কাছে আসত, শ্যামাদা, উমাদা দুজনেই আসত। তবে উমাদা বরাবর বিকেলের দিকে আসত আর শ্যামাদা আসত একটু রাত করে।

হ্যাঁ জেঠুর অফিস থেকে ফিরতে রাত হত।

লোকটা অরিন্দমের কথা শুনতেই পেল না। নিজের মনেই একটানা বকে যেতে লাগল। ওহ সেসব কতকাল আগের ঘটনা। তখন দোকানে সারাদিন ধরে হৈ হৈ চলত। এইসব রাস্তাঘাট তখন কোথায়? সব মাটির রাস্তা। অটো তো দূরের কথা রিক্সাও চলত না তখন। সবাই হয় হেঁটে কিংবা সাইকেলে যাতায়াত করত। প্রতি রোববার সকাল হতে না হতেই পেল্লায় আড্ডা বসত চলত সেই দুপুর পর্যন্ত। সেইসব দিনগুলো... বলে ঠোঁটের কোনে জমে ওঠা থুতু কাচি ধরা হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মুছে নিল। তারপর আবার বলতে শুরু করল, উমাদা ছিলেন বড় রসিক লোক। এখন কেমন আছেন? অনেক বয়স হয়েছে?

বাবা মারা গেছেন প্রায় পাঁচ বছর হল। জেঠুও তার বছর চারেক আগে।

শুনে খুব স্বাভাবিক গলাতেই বলল ও, হ্যাঁ। বয়স হলে চলে ঘেতে তো হবেই। আমাকেও হবে।

সিক্সটি টু বয়স হয়েছিল বাবার। বলেই ফেলল অরিন্দম। আসলে বাবার বয়সটা যে মোটেও চলে যাওয়ার ছিল না, সেটা এই লোকটাকেও জানাতে ইচ্ছে করল।

হুমম...তা কাজকম্ম কিছু কর তুমি?

চাকরি করি। সংক্ষেপে উত্তর দিল অরিন্দম। প্রশ্নটার ধরন মোটেও ভালো লাগেনি ওর। কাজকম্ম করবে না কেন? একটা নাম করা মেডিসিন কোম্পানির রিজিওন্যাল সেলস ম্যানেজার ও।

ভালো ভালো। আমার বড় ছেলেটা রেলে চাকরি করে। আসানসোলে থাকে ফ্যামিলি নিয়ে। ছোটটা পড়াশোনা বেশি করল না। ইলেভেন পর্যন্ত পড়ে ছেড়ে দিল। বললাম দোকানে এসে বস। চালু দোকান। আমিও বা আর ক'দিন? বয়েস তো কম হল না। ছেলে বলল সেকেলে সেলুনে বসবে না। অনেক খরচা করে দোকানটাকে ওর মনের মতো করে সাজিয়েছি, এই যে দেখছ সব সাবান, শ্যাম্পু, লোশন টোশন অনেক দাম এসবের। আমার সময়ে এতকিছুই লাগত না। একটু জল, আর বাটি সাবান সঙ্গে এই ক্ষুর কাঁচি চিরুনি ব্যাস।

হুঁ। বলে আবার আয়নার দিকে তাকাল অরিন্দম। ভয়টা একটু যেন কম লাগছে আগের থেকে। ভদ্রলোকের হাত কাঁপছে ঠিকই কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাঁচি কিংবা ক্ষুরের একটা সামান্য খৌঁচাও লাগায়নি।

ছেলের কথায় এত খরচ করলাম কিন্ত কোথায় কি? নিজেও বসে না, কাস্টমারও আসে না নতুন। কদ্দিন আর এইভাবে পারব জানি না।

কেন ছেলে কী করে?

ধুৎ কীসব হাবিজাবি ব্যবসায়ে ঢুকেছে। ওই ইট বালি সিমেন্ট সাপ্লাই দেয়। বাজে কাজ যত। ক টাকা মাস গেলে হাতে আসে কে জানে?

বাবা কি রোজই আসত এখানে? আচমকা প্রশ্নটা করেই ফেলল অরিন্দম।

না না রোজ না তবে হপ্তায় বার দু-তিন দিন তো আসতেনই। খুব মজার মজার কথা বলতে পারতেন তোমার বাবা।

হ্যাঁ জানি। অরিন্দমের মনে পড়ল ছুটির দিনগুলোয় বাবা বাড়ি থাকলে গোটা বাড়িটা সারাদিন হা হা হো হো তে ভরে থাকত। সারাদিন ধরে জমিয়ে রাখত বাবা। মা দিদি অরিন্দম তো থাকতই এমনকি ওর বন্ধুরা, বাবার পাড়ার বন্ধুরাও আসত বাবার সঙ্গে গল্প করতে। আড্ডা দিতে বাবার কোনও বয়েস লাগত না। যে কোনও বয়েসের সঙ্গে সমান ভাবে মিশে যেতে পারত সহজে। বড্ড বন্ধু ছিল লোকটা অরিন্দমের। খুব বন্ধু। রিটায়ার করার তিন মাসের মধ্যেই হঠাৎ একদিন রাত্রে বলল বুকে পেইন হচ্ছে। পরদিন সকালে শিবতলা শ্মশানে দাঁড়িয়ে অরিন্দমের মনে হয়েছিল মানুষের এই পৃথিবীতে আসার জন্য প্রায় দীর্ঘ নয়-দশ মাসের একটা প্রস্তুতি থাকলেও চলে যাওয়াটা বড় আচমকা, সকলকে অপ্রস্তুত করে দিয়ে। বাড়িটা খাঁ খাঁ হয়ে গেল তারপর।

বড় সুন্দর নামকীর্তন গাইত তোমার বাবা। খুব ভালো গলা ছিল। আমি অনেকবার গেছি তোমাদের বাড়িতে কীর্তনের আসরে। বলল লোকটা। তারপর অরিন্দমের চিবুক ধরে খানিকটা উঁচু করে ধরল মুখটা।

উত্তর দিল না অরিন্দম। সত্যিই এত সুন্দর গাইতে পারত বাবা। বছরে বেশ কয়েকবার কীর্তনের আসর বসত বাড়িতে। অনেকেই আসত। সকলকে চিনতে পারত না অরিন্দম। ছোট ছিল তখন। অষ্ট প্রহর কিংবা উদয় অস্ত নামের থেকে সারা রাত জেগে হরিবাসর বেশি প্রিয় ছিল বাবার। কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে সারা রাত ধরে চলত নামগান। পাশের ঘরে বিছানায় শুয়ে নির্ঘুম অরিন্দম ভাবত এত সুন্দর গলা কী করে হল বাবার কোনওদিন কারও কাছে গান না শিখেও? তিন কাকুর হারমোনিয়াম, সুকুমারজেঠুর বেহালা অনীল জেঠুর করতার আর প্রদীপকাকার খোল বাজত মৃদুলয়ে। গান শুনতে শুনতে কখন যেন ঘুম এসে যেত অরিন্দমের। সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখতে পেত বাবা বাজার করে ফিরেই অফিস ঘাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করছে। রাত্রের প্রেমিক মানুষটা তখন ঘোরতর সংসারি অফিসবাবু।

দেখো ঠিক হয়েছে কাটা? বলল লোকটা।

অরিন্দম চোখ বুজেই ছিল। ভাবছিল হয়তো অনেকদিন আগে বাবা এই চেয়ারটাতেই এমনভাবে চোখ বন্ধ করে বসে চুল কাটাত।

দেখে নাও। পছন্দ হয়েছে কি না?

অ্যাঁ ... হ্যাঁ হ্যাঁ। চোখ খুলে সামনে আয়নার দিকে তাকাল অরিন্দম। এত তাড়াতাড়ি কাটা হয়ে গেল! হ্যাঁ ভালো হয়েছে।

লোকটা অরিন্দমের গলায় প্যাঁচানো সাদা চাদরটা খুব যত্নে আস্তে আস্তে ছাড়িয়ে নিল। তারপর চাদরটা বাইরে নিয়ে গিয়ে ভালো করে ঝেড়ে আবার ভেতরে এসে আবার বলল, দেখো পছন্দ হয়েছে তো?

হ্যাঁ খুব ভালো হয়েছে।

এই বছর কয়েক হয়েছে এমন কাঁপা রোগ ধরেছে যে কিছু ঠিকঠাক করতে পারি না বটে কিন্তু ক্ষুর কাঁচি একবার হাতে তুললে আর কাঁপাকাপি আমাকে কাবু করতে পারে না। ছেলে বলে তোমার এ হাত কাঁপার ভয়ে নাকি এখন খদ্দের আসতে ভয় পায়, তা বাবা তুমিই বলো এই হাতে কি আমি খারাপ কাটলাম নাকি তোমার কোনও চোট লাগল?

না না আপনি একদম ফার্স্টক্লাস কেটেছেন। আমার খুব পছন্দ হয়েছে।

এতকালের অভ্যেস বাবা যাবে কোথায়? যতই কাঁপি হাতে একবার কাচি তুললেই সব শান্ত... বলে একটু থেমে নিয়ে বলল লোকটা তা তোমার যদি পছন্দই হয়ে থাকে তোমার বন্ধুদেরও বলো আসতে...কেমন...তোমাদের বাবা জেঠুরা্ও তো এখানেই চুল কাটাতো .... তোমার বাবা, তারপর তোমাদের বাড়ির পাশেই ছিলো সুকুরদার বাড়ি, উনিও আসতেন মাঝেমাঝে। বেহালা না কী যেন একটা তারযন্ত্র বাজাতেন ঠিক মানে পড়ছে না এখন। তবে খুব পেটের রোগে ভুগতেন সুকুমারদা। মনে আছে। আর মারাও গেলেন তো তাড়াতাড়ি। কি এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল যেন শুনেছিলান... যাওয়া হয়নি আর।

হ্যাঁ ট্রেন এক্সিডেন্টে মারা গেছিল। সুকুমার জেঠুও আসতো এখানে? ওর ছেলে তো আমার বন্ধু।

আচ্ছা আচ্ছা হ্যাঁ হ্যাঁ সব্বাই আসত, বললাম না।

মানিব্যাগ বার করে দুটো দশ টাকার নোট বার করে লোকটার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল জেঠু আপনার নামটা?

সুরেন প্রামানিক।

আচ্ছা। আমি আসি তাহলে।

হ্যাঁ আবার এসো। আর বন্ধুদেরও বোলো।

শিয়োর। বলে দোকান ছেড়ে বেড়িয়ে বাইক স্টার্ট করল অরিন্দম। বাকি রাস্তাটকু বাবার সঙ্গেই ফিরল অনেকদিন পর অনেক স্মৃতি .....।

 

২.

 

কী জানি মাইরি আমার তো মনে পড়ে না বাবা কোনওদিন স্টেশনে চুল কাটাতে যেত। কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে নাড়তে নাড়তে বলল ঈশান।

আমিও জানতাম না আমার বাবা যে ওখানে যেত। বলল অরিন্দম।

তারমানে পুরো ঢপ ঝেড়েছে। সিগারেট ধরিয়ে বলল ঈশান।

অমনই ঢপ বলে দিলি? লোকটা ঘদি আমাদের বাবাদের কোনওদিন না ই দেখে তাহলে এত ডিটেল দিল কী করে?

হুম সেটাই খোঁজ নিতে হবে। গম্ভীর গলায় বলল ঈশান।

আসলে দেখ আমার বাবা কিংবা তোর বাবা যখন ওই সেলুনে চুল কাটাতে ঘেত তখন আমাদের এই পাড়া কিন্তু মোটেও ডেভেলপ হয়নি। হয়তো সেলুনই ছিল না। তাই ওখানেই কাটাতো। আর লোকটা তো এটা বলেনি যে আজীবন ওখানেই চুল কাটিয়েছে। বলেছে অনেকদিন আগের কথা। বলল অরিন্দম। আসলে সেদিনের পর থেকে ওই লোকটা... ওই সেলুনটার প্রতি এমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি তৈরি হয়ে গেছে... ওর নিজেরই অজান্তে।

প্রতি রোববারের মতো সকাল বেলার আড্ডাটা আজও বসেছে অরিন্দমের বাড়িতে। ঈশান আর উজান অরিন্দমের ছোটবেলার বন্ধু পাশাপাশিই বাড়ি। সারা সপ্তাহ যে যার কাজে ব্যস্ত থাকলেও রবিবার চলে আসে আড্ডা দিতে। একেক দিন একেক বিষয় নিয়ে আড্ডা জমে ওঠে। আগে ঠিক এই ঘরটাতেই অরিন্দমের বাবা ঈশানের বাবা মানে সুকুমার জেঠু ও আরও অনেকে মিলে গল্প করত। এখন তারা কেউ নেই, ট্রাডিশনটা রয়ে গেছে। আর তার জন্য বেশ গর্বও বোধ করে ওরা। আজকে গল্পের বিষয়টা সুরেন প্রামানিক। তাই নিয়েই জমে উঠেছে।

সব থেকে বড় কথা নি কিন্তু শুধু আমার বাবাকেই চিনতেন এমন নয় উজানের বাবাকে কিংবা তোর বাবাকেও খুব ভাল করে চেনে। এমনকি সুকুমার জেঠু যে ভালো বেহালা বাজাতে পারত সেটাও বলল।

আর বেহালা... বলে একটু থেমে নিয়ে ঈশান বলল কী লাভ হল সারাজীবন বেহালা বাজিয়ে? না দু'টো পয়সা এক্স্ট্রা রোজগার বাড়াতে পেরেছিল কি? হয় তোদের বাড়ির কীর্তনে নয়তো নিজের ঘরে বসে যতরাজ্যের কষ্টের সুর বাজাতো। এত মন খারাপ লাগতো... মাইরি বলছি আমার একটুও ভালো লাগত না। গোটা বাড়িটায় যেন একটা বিষন্নতার ছাপ পড়ে গেছিল ওই বেহালার জন্য। এর থেকে যদি তবলা বা সেতারটেতার কিছু একটা বাজাতো তাহলে হয় তো ...

তারপর কয়েকমুহুর্ত তিনজনেই চুপ। আসলে ঈশানের বাবার মৃত্যুটা সত্যিই খুব মর্মান্তিক ছিল। এই বছর কয়েক আগের ঘটনা। ঈশানের বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। বিয়ের ঠিক দিন কয়েক আগে কাকু কয়েক বাড়িতে নেমন্তন্ন সেরে সন্ধেবেলা ট্রেন থেকে নেমে রেললাইন ক্রস করছিলেন। সেদিন হয়তো কোনওকারনে অন্যমনস্ক ছিলেন। যাবে না যাবেন না থ্রু ট্রেন আসছে ... প্ল্যাটফর্মের লোকদের সাবধানবাণী কিংবা স্টেশনমাস্টারের রুম থেকে বার বার মাইকে এ্যানাউন্স কোনওটাই কানে ঢোকেনি কাকুর।

বোনের বিয়েটা থেমে গেল। আর হলই না। ঈশান অনেকপরে ওদের দুজনের কাছে একবার বলে ফেলেছিল, জানিস আমার কেন জানি না মনে হয় বাবার চলে যাওয়ার ঘটনাটা এক্সিডেন্ট নয়, ইচ্ছে করে...

কী যা তা বলছিস এসব। আপত্তি তুলেছিল অরিন্দম আর উজান দুজনেই।

না রে আমি খুব ভুল বোধ হয় বলছি না। বাবা পেরে উঠছিল না।

মানে?

আমি তো তেমন কিছুই রোজগার করি না। বড়দির বিয়েতে অনেকটাকা খরচ হয়েছিল। বিয়েটাও টিকল না। এবার বোনের বিয়েতে যা এস্টিমেট দাঁড়িয়েছিল তাতে বাবা হিমসিম খেয়ে যাচ্ছিল পুরো। ঘে কয়েকজন পুরনো বন্ধুরা লোন দেবে বলেছিল শেষপর্যন্ত দিতে পারেনি। বাবা পুরো কেমন যেন হয়ে গেছিল... সারাদিন একা একা বিড়বিড় করত। এমনকি আর বেহালা নিয়েও বসত না। কি যে ভাবত লোকটা আমাদের কিচ্ছু বলত না।

সেদিনের সেই যন্ত্রণাটা যে ঈশান আজও বয়ে বেড়ায় সেটা উজান আর অরিন্দম খুব ভালো করেই জানে। তাই দুজনেই চেষ্টা করে সেই প্রসংগ যেন না আসে। আজ অনেকদিন পরে চলে এল।

উজান বলল আমার কিন্তু কেসটা একটু গন্ডোগোলের লাগছে।

একটু কেন পুরো কেসটাই ঘাপলা শালা। পুরো দুনিয়াটা দুনম্বরিতে ভরে গেছে। বেশ ঝাঁঝিয়ে উঠল ঈশান। এইসব শয়তানগুলোকে গুলি করে মারা উচিৎ।

উজান আর অরিন্দম দুজনেই বেশ অবাক হল ঈশানকে এতটা রিএ্যাক্ট করতে দেখে।

তুই এতটাই বা উত্তেজিত কেন হচ্ছিস?

মালটা আমার বাবার সম্পর্কে কী বলল? ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল ঈশান।

তেমন কিছুই না... তবে... বলে একটু থেমে নিয়ে অরিন্দম বলল, কাকু যে মারা গেছেন এবং বাকি অনেককিছু কিন্তু জানে লোকটা।

তাই? অবিশ্বাস আর খুব সামান্য হয়তো বিশ্বাসের দোলাচলে খনিকটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল ঈশান। পরমুহুর্তেই আবার গলা চড়িয়ে বলে উঠল আজ বিকেলের মধ্যে সব খবর পেয়ে যাব, ওই পরামানিকের পুরো ডিটেল আমি বার করে ছাড়ব। এসব ঠগবাজগুলোকে আইডেন্টিফাই করা খুব দরকার।

ভেঙে গেল আড্ডা।

 

আর ঠিক সেদিনই সন্ধেবেলায় অরিন্দমের বাড়ির কলিংবেলে শন্দ। পামেলা দরজা খুলতেই ঈশানের প্রশ্ন, অরিন্দম আছে? মুখচোখ খুবই উত্তেজিত।

হ্যাঁ আছে তো। ওই ঘরে আছে, যাও।

একটু কড়া করে চা বানাও তো। পামেলাকে বলে সোজা বেডরুমে ঢুকে গেল ঈশান। অরিন্দম ছেলের হোমটাস্ক দেখছিল। ঈশান এসেই বলল কী বলেছিলাস? সব ডিটেল নিয়ে আসব? হুঁ হুঁ আমি ঈশান চক্রবর্তী।

তুই তো মারাত্মক টেনস হয়ে রয়েছিস দেখছি।

আরে আসল খবর শুনলে তুইও চমকে উঠবি বলে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল ঈশান। উত্তেজনায় রীতিমতো হাঁপাচ্ছে। আমি তোকে বলেছিলাম না মালটা জালি হবে, ঠিক তাই।

মানে? জিজ্বেস করল অরিন্দম।

মানে তোর ওই সুরেন প্রামানিক একটা পাক্কা টপবাজ। এককালে দোকানটা অল্পস্বল্প চলত ঠিকই কিন্তু ইদানিং একেবারেই চলে না। লোকটার সবথেকে বিটকেল স্বভাব হল পাড়া বেপাড়ায় যারা অনেক পুরনো বাসিন্দা তাদের সবার খোঁজ নিয়ে বেড়ানো। অনেকদিনের অভ্যাস। আগে বেশি ছিল এখনও রয়েছে।

তো?

তো কেসটা হল এই লোকটা আদৌ আমার বাবা কিংবা তোর বাবাকে চিনতোই না, কোনওকালে হয়তো জেনে থাকবে, সেটাই মওকা পেয়ে তোর কানে ঢেলে দিয়েছে। তবে হ্যাঁ মারাত্মক স্মৃতিশক্তি। এই বয়েসে এতটা মনে রাখার ক্ষমতা কম কথা নয়। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেলে হাঁপাতে লাগল ঈশান।

তোর কথা যদি মেনেও নিই, যদি ধরেও ওই লোকটা আমার কাছে ঢপ ঝেড়েছে আমাদের বাবাদের সঙ্গে ওর কোনও পরিচয় ছিল না কিন্তু তাও গুল মেরে লোকটার লাভ কি?

সেকি রে এত ব্রাইট সেলসের ছেলে হয়ে তুই এই সহজ স্ট্রেটেজিটা বুঝলি না? সিম্পলি মার্কেটিং স্ট্রেটেজি। কাস্টমার ধরার স্টাইল। পুরীর পাণ্ডাদের যেমন তোর বাপ চোদ্দপুরুষের কে কবে ওর কাছে বা ওর বাপ ঠাকুর্দার কাছে এসেছিল তা সব নোট করা থাকে, কেন থাকে? যাতে নেক্সট জেনারেশনটাও সেই রেফারেন্স দেখিয়ে নিজের বাগে আনা যায় এটাও হুবহু এক, শুধু নোটসটা মাথায় রাখে লোকটা। লোকটার দু-হাত কাঁপলেও এখনও ব্রেইনটা কাঁপেনি। এবার বুঝলি?

হুম। ছোট্ট করে উত্তর দিল অরিন্দম।

বুঝেছিস তো? বলে প্রবল উৎসাহে বিছানায় দু'পা গুটিয়ে বাবু হয়ে বসে ঈশান বলল, স্টেশনের আশেপাশের বেশ কয়েকটা পাড়ার পুরনো যেসব ফ্যামিলিগুলো রয়েছে তাদের খোঁজ খবর নিজের হার্ডডিস্কে ভরে রেখেছে লোকটা। দোকান তো চলে না, ওই কাঁপা মালের কাছে কে ঢুকবে তোর মতো দু-চার পিস মুরগি ছাড়া, আর একবার ঢুকে পড়লে ব্যাস অমনিই তার ঠিকানাটা জেনে নিয়ে বাপ ঠাকুর্দার ইতিহাস বলতে শুরু করবে, যাতে তোর মনটা নরম খেয়ে যায়, আর পরেরবার তুইও ওই দোকানেই আসিস ফ্যামিলি ট্রাডিশন বজায় রাখার জন্য।

কিন্তু আমি যে দ্বিতীয়বার যাব তারই বা গ্যারান্টি কী?

নাহ কোনও গ্যারান্টি নেই। তবে প্রোবাবলিটির ইকোয়েশনে প্রতি দশটা কেদে একটা-কিংবা দুটো কেস তো ওর ফেবারে যাবেই। ভালো বিজনেস পলিসি কিন্তু। বলে খিক খিক করে হেসে উঠল ঈশান। হাসিটার মধ্যে যতটা না আনন্দ ছিল তার থেকে কিছুটা রাগ আর ঘেন্না ছিল বেশি।

তুই শিয়োর?

আজ পর্যন্ত আমার ইনফোতে কখনও এদিকসেদিক হতে দেখেছিস?

কথাটা সত্যি। সেই স্কুল লাইফ থেকেই যে কোনও বিষয়ে খবর জোগার করতে ঈশানের জুড়ি নেই। বন্ধুরা মজা করে ওকে খবরিলাল বলে ডাকত। স্কুলের টিচাররাও জানত সেই কথা। একবার তো অঙ্কেরস্যার নীলাদ্রীবাবু ওকে নিজের মেয়ের গোপন প্রেমের খবর নেওয়ার জন্যও ফিট করেছিলেন ঈশানকে। অরিন্দমের মনটা কেমন বিষন্ন হয়ে পড়ল ওর কথায়। সত্যি বলতে ও নিজেও ভেবে বসেছিল এরপরের বার থেকে ওই দোকানেই যাবে... কিন্ত লোকটা এইভাবে ঠকাল ভাবতে পারেনি। এই বয়েসেও মানুষ লোক ঠকাতে পারে? তাও এমন সেন্টিমেন্ট বিক্রি করে! মুখের ভেতরটা তেতো হয়ে উঠল অরিন্দমের। এই সত্যিটা না জানলেই হয়তো ভালো ছিল। এইকদিনে মনের খুব ভেতরে গড়ে ওঠা একটা ভালো লাগায় আচমকা কালি ছিটিয়ে দিল যেন কেউ।

পামেলা ঘরে ঢুকল চা নিয়ে। দুজনকেই চুপ করে বসে থাকতে দেখে জিজ্জেস করল কী ব্যাপার বলতো আজ তোমাদের? সেই সকাল থেকে দেখছি কী যেন গম্ভীর আলোচনায় ব্যন্ত তোমরা? কী ব্যাপারটা কি?

আর কি? বসো বলছি, বলল ঈশান। চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসল পামেলা।

ঈশান আবার দ্বিগুন উৎসাহে বলে উঠল তোমার কর্তা এখনও মার্কেটিংটা ভালো করে শিখে উঠতে পারল না বুঝলে বৌদি। বলে পুরো ঘটনাটা রসিয়ে রসিয়ে বলতে থাকল যতক্ষন না অরিন্দম বেশ বাঁঝিয়ে বলে উঠল, মাঝে মাঝে ঠকতেও ভালো লাগে ঈশান... দেখিস কখনোও...।

 

৩.

 

ছেলেকে স্কুলে দিয়ে সকালে দ্রুত বাড়ির দিকে ফিরছিল অরিন্দম। আজ একটু তাড়াতাড়ি বেরোনোর রয়েছে। একটা ক্লায়েন্ট মিট করার কথা। ঝড়ের গতিতে বাইক চালাতে চালাতে গত দু-দিনের মতো আজও একঝলক নিজের অনিচ্ছাতেও তাকিয়ে ফেলল মডার্ণ হেয়ার কাটিং এর বন্ধ দরজাটার দিকে। এই দু-দিনে এই দোকানটার পাশ দিয়ে যতবার যাওয়া আসা করেছে প্রতিবার একসঙ্গে তীব্র একটা রাগ আর প্রচন্ড আকর্ষন বোধ করেছে ও। অদ্ভুত অনুভূতি। লোকটা একনম্বরের মিথ্যুক, সবকথা বানানো এটা জানার পরেও দোকানের ভেতরে ঢোকার আকর্ষনটা যে ঠিক কিসের বুঝতে পারছে না। খালি মনে হয় ভারি দরজাটা ঠেলে ঢুকলেই দেখতে পাবে বাবা ওই চেয়ারটায় চোখ বুজে বসে। সুরেন নামের লোকটা একমনে ক্ষুর টানছে বাবার কড়কড়ে শক্ত দাড়িতে। আর সামনে পাতা বেঞ্চে বসে এন্তার গল্প করছে ঈশানের বাবা সুকুমার জেঠু ওর নিজের জেঠু... আরও অনেকে।

আজও পেরিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ বাইকটা থামাল। এই মানসিক অত্যাচারটা এবার শেষ হওয়া উচিৎ। লোকটা শয়তান। মানুষের মনের বড্ড নরম জায়গায় খেলে ব্যবসা করতে চাইছে। এর একটা জবাব দেওয়া দরকার। মোক্ষম জবাব, যাতে লোকটার সঙ্গে সঙ্গে অরিন্দমের নিজের মনের ভেতরে তৈরি হওয়া এই দুদিনের স্বপ্নগল্পগুলোও গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়। এমন ভাষায় ঝাড় দিতে হবে যাতে মানুষটা এমন মিথ্যাচারণ করার আর সাহস না পায় জীবনে।

মনকে প্রস্তুত করে দরজাটা ঠেলল অরিন্দম। আর সঙ্গে সঙ্গেই আবার টেনে বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে এল।। কয়েকমুহূর্ত চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল রাস্তার সামনে। তারপর ধীরে ধীরে নিজের বাইকে উঠে আবার স্টার্ট দিল। ভাগ্যিস ভেতরের দুজনের কেউই দেখতে পায়নি ওকে। ভেতরে সুরেন প্রামানিক নামের লোকটা তখনও কাঁপা হাতে কাচি চালাতে চালাতে বলে চলেছে, তোমার বাবা তো প্রায় রোজই আসত আমার দোকানে... বড় ভালো মানুষ ছিল... কথা বলত কম কিন্তু বেহালার হাত ছিল ভারি মিষ্টি... চোখে জল এনে দিত...।

আর সামনের চেয়ারটায় বসে দু-চোখ বুজে সেই বানানো সত্যিকথাশুলো পরম যত্নে মুঠোয় করে নিজের ভেতরে ভরে নিচ্ছিল ঈশান।।

 

সমাপ্ত

 

লেখক পরিচিতিঃ
বিনোদ ঘোষালের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরে। জীবনে বহু বিচিত্র কাজে জড়িয়ে পড়ার পর অবশেষে তিনি লেখালেখিকেই একমাত্র পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, ফিচার, নাটক, চলচ্চিত্র সমালোচনা তার লেখালেখির বিষয়। দেশ পত্রিকাতে বিনোদ ঘোষালের লেখা প্রথম গল্প ‘একটু জীবনের বর্ণনা’  প্রকাশিত হলে, গল্পটি পাঠকমহলে বিশেষ সাড়া ফেলে। তারপর থেকে তিনি নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন। কাজী নজরুল ইসলামের সমগ্র জীবনকে ভিত্তি করে লেখা তার দীর্ঘ উপন্যাস ‘কে বাজায় বাঁশি?’ একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিনোদ ঘোষাল ২০১১ সালে তার ‘ডানাওলা মানুষ গল্প’ গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সাহিত্য একাডেমি যুব পুরস্কার। ২০১৪ সালে তিনি ‘নতুন গল্প ২৫’ বইটির জন্য পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমির সোমেন চন্দ স্মৃতি পুরস্কার পান। এছাড়াও তিনি পূর্বভারত পুরস্কার, মিত্র ও ঘোষ স্মৃতি পুরস্কার, শৈলজানন্দ পুরস্কারে সম্মানীত হয়েছেন। দেশের বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের সাহিত্য উৎসবে বাঙালি লেখক প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন। ২০১৬ সালে তিনি মাননীয় ভারতের রাষ্ট্রপতি আমন্ত্রণে রাষ্ট্রপতিভবনে 'রাইটার্স ইন রেসিডেন্স প্রোগ্রামে' যোগদান করেন। অর্জন করেছেন ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রকের ফেলোশিপ ।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top