সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

মেঘমাচায় ভোর : লিপি নাসরিন


প্রকাশিত:
২৬ নভেম্বর ২০২০ ২২:৪৪

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৬:৫২

 

ভোর চারটায় উঠে শ্রাবণী রেডি হচ্ছে। একবার মেঘমাচার দরজা খুলে বাইরে তাকিয়ে আবার বন্ধ করে দেয়। মৃদু আলোয় বাইরে মেঘের অবিন্যস্ত  জাদুময়ি প্রক্ষেপ তাকে মাতাল করে ফেলে। সাকিবের গা ধরে কয়েকবার ঝাঁকুনি দেয়, এই ওঠো, আর কখন যাবো? দেরি হলে সূর্য ওঠা দেখতে পাবো না তো, ওঠো না।

অস্পষ্ট কণ্ঠে কেমন স্বর টেনে টেনে সাকিব বলে, তুমি যাও, আমি যাবো না, ঘুমুতে দাও প্লিজ।

মেজাজ ওঠে শ্রাবণীর, এই আমরা কি এখানে ঘুমুতে এসেছি ? চলো ওঠো। আর একবার সাকিবকে ঝাঁকুনি দিতেই ও পাশ ফিরে শ্রাবণীকে টান দিয়ে নিজের বুকের উপর নেয়।

এই কী করছো,কী করছো ? আমি রেডি হয়েছি বাইরে যাবো।

কতোবার দেখেছো সূর্য ওঠা, আজ দেখতে হবে না, এসো আদর করে দিই।

শ্রাবণী স্বামীর অগোছালো কথাবার্তায় বুঝতে পারে সে ঘুমিয়ে পড়লে সাকিব রাতে ড্রিঙ্ক করেছে। ও কখন ঘুমিয়েছিল শ্রাবণী জানে না।কাল দুপুরে তারা পৌঁছেছে, সপ্তাহখানেক থাকবে। সাকিব আবার শান্ত হয়ে গেলে তার বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে শ্রাবণী বাইরে আসে। লম্বা প্যাসেজের শেষে রাস্তার পাশে এই কটেজের  কেয়ারটেকারকে পেয়ে বললো, সাহেব ঘরে আছে। কেয়ারটেকার সালাম দিয়ে বললো, কোন অসুবিধা নেই আপা।

এই কেয়ারটেকার তাদের পরিচিত কারণ এখানে এলে এই কটেজে  তারা ওঠে। সাকিব কতোবার বলেছে, আরো সুন্দর কটেজ আছে। আমার বন্ধুকে দিয়ে ফোন করিয়ে আমরা আর্মিদের ওখানে থাকবো। শ্রাবণী রাজি হয় না। এই কটেজ থাকলে সে নাকি আকাশ, মেঘ আর একটু একটু করে ঘোমটা খোলা ভোরকে দেখতে পায়, গায়ে মাখতে পারে মেঘ, বুনোফুলের গন্ধ। ওরা নাকি ওর সাথে কথা বলে।

সাকিব বউয়ের পাগলামিকে ভীষণ ভালোবাসে।

তার উপর শ্রাবণী কবি। সাকিব বিনা শব্দে শ্রাবণীর সব কিছু মেনে নেয়।

প্যাসেজ ছেড়ে রাস্তায় উঠে এপাশ ওপাশ তাকায়। সূর্যোদয় দেখার জন্য মানুষ আবছা আলো আর ভেসে থাকা মেঘের মধ্যে দিয়ে আলৌকিক মানুষের মতো হেঁটে চলছে, যেন অনাগত মহাকালের ডাক ধ্বনিত হচ্ছে পাহাড়ে পাহাড়ে ঠোকর খেয়ে। সাকিবের উপর খুব রাগ হচ্ছে ওর। সবাই জোড়া জোড়া ও শুধু একা।

হেলিপ্যাডের কাছে যখন পৌঁছালো তখন লোকারাণ্য। গোল জায়গাটিতে বৃদ্ধ,তরুণ থেকে শিশুরা পর্যন্ত ছোটাছুটি করছে। শ্রাবণী মানুষের ফাঁক গলে গলে একেবারে সামনে যাবার চেষ্টা  করলো। কোনরকম দাঁড়ানোর মতো একটা জায়গা পেয়ে মোবাইলের ক্যামেরা অন করে ধরে থাকে ।

সামনে দিগন্ত প্রসারিত হয়ে আছে শুধু সাদা বরফের মতো মেঘ, কোন সবুজের লেশমাত্র নেই। শ্রাবণীর মনে হচ্ছে হাত দুটো সামনে প্রসারিত করে ঝাঁপ দিয়ে ঐ মেঘের মেদুর থেকে তুলে আনে পেজাতুলো মেঘ। তারপর মেঘের অলঙ্কারে সেজে  উড়ে চলে পাহাড়ের ওপারে বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে। ইস্ ও কেন মেঘ হলো না!! হঠাৎ আনন্দ ধ্বনিতে ওর ভাবনায় ছেদ পড়ে। মোবাইল দুহাতে তুলে একের পর এক ছবি তোলে। চারিদিক লাল আভায় ভরিয়ে অগ্নি লাভার মতো  মেঘের মধ্যে দিয়ে ওঠে আসে অগ্নি গোলক। কনকপ্রভা ছড়িয়ে যাচ্ছে চারিদিকে। কিছু পর চারপাশটা কেমন পিঙ্ক রঙ ধারণ করে তারপর  ইয়োলিশ ; আবার মেঘের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে সূর্য মোহময় করে দিয়ে চারদিক। নেচে নেচে ছুটে আসতে থাকে মেঘ, ঘন ধোঁয়ার মতো আচ্ছন্ন করে ফেলে চারপাশ। একটু দুরে মানুষগুলোকে তেমন দেখা যায় না।

শ্রাবণীর ফোন বেজে ওঠে।

কোথায় তুমি? ওপাশে ঘুম জড়ানো সাকিবের গলা।

হেলিপ্যাডে।

আমাকে ফেলে একা গেলে কেনো?

ঢঙ করো না সাকিব। তোমাকে কতো করে ডেকেছি।  মেঘের মধ্যে হাত পেতে থাকে শ্রাবণী।

পাশে দু একজন ওকে দেখছে।

ফোন কেটে দেয়। হঠাৎ শুনতে পেলো কেউ একজন রুমঝুম রুমঝুম বলে ডাকছে।

নামটা ভীষণ কাব্যিক মনে হলো ওর। রুমঝুম রুমঝুম,বেশ কয়েকবার মনে মনে উচ্চারণ করে। যেন নিক্বণ ঝরে ঝরে পড়ছে। কেউ হয়তো তার মেয়েকে কাছে পিঠে দেখতে না পেয়ে ডাকছে।

কটেজে ফিরে দেখে সাকিব তখনো ঘুমোচ্ছে।

ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে শ্রাবণী, তার আগে আরেকটা ঝাঁকুনি দিয়ে যায় সাকিবকে।

মনের মধ্যে তার রুমঝুম শব্দটাই খেলছে শোনার পর থেকে। মাঝে মাঝে গুনগুন করছে

রুমঝুম রুমঝুম রুমঝুম ঝুম খেজুর পাতার...

সাকিব, আমরা কি আজ ব্রেকফাস্ট করবো না?

আমার শাওয়ার নেওয়া শেষ, আমি আজকে রুমে খাবো না। বাইরে যাচ্ছি,  তুমি কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাও। আমি গেলাম।

আমাকে রেখে যেও না। তুমি চলে গেলে আমি মরে যাবো দেবী ।

খিলখিল করে হেসে ওঠে শ্রাবণী।

সাকিব উঠে শ্রাবণীকে বুকের মধ্যে নিয়ে  আবার শুয়ে পড়ে। শ্রাবণীর বুকের ভেতর দীর্ঘশ্বাস মোচড় কাটে।

তুমি প্রায়ই রাতে কাঁদো শ্রাবণী, কেন?

এই যে এখন তোমার বুকের মধ্যে কান্নার স্রোত বয়ে যাচ্ছে আমি স্পন্দিত হচ্ছি।

যাহ কী বলছো, কাঁদবো কেন? শ্রাবণী সাকিবের বুকের উপর থেকে নিজেকে তুলে নেয়।

আমি বুঝি তোমার কষ্ট,শ্রাবণীর ডান হাতটা ধরে রেখেই সাকিব বলে।

তুমি কিন্তু ড্রিঙ্ক করা ছাড়তে পারছো না সাকিব। আমাকে কথা দিয়েছিলে। শ্রাবণীকে কেমন অন্য মানুষ মনে হয় সাকিবের। ছাড়বো, ছাড়বো সব ছেড়ে দেবো একটু সময় দাও সোনা।

ঠিক আছে হয়েছে, ওঠো ফ্রেশ হও। ক্ষুধা পেয়েছে।

বাইরে যাবার দরকার কী? কেয়ারটেকারকে বললেই তো এনে দেবে।

না, আমি তোমার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে যাবো।

তাহলে এখন আর একটু ধরতে দাও বলেই সাকিব আবার হাত বাড়ায়।

শয়তানি হচ্ছে না, বলেই  শ্রাবণী এক ঝটকায় সরে যায়।

 

বাইরে এখন ঝকঝকে রোদ। মনেই হচ্ছে না সকালে এই প্রকৃতি ছিলো একদম ভিন্ন রূপে। শ্রাবণী সাকিবের হাত ধরে যায় পেদা টিংটিংয়ে। এই হোটেলে সবসময় ট্যুরিস্টদের ভীড় লেগে থাকে। ওরা দাঁড়িয়ে  থাকে কিছুক্ষণ চেয়ার খালি হবার অপেক্ষায়। হোটেলের সামনে বাঁশের মধ্যে মুরগি  রান্না হচ্ছে। শ্রাবণী তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। বাইরে রোদের তরঙ্গের সাথে বড় চুলার আগুন একেবারে মিশে গিয়ে জায়গাটাকে  প্রচণ্ড উত্তপ্ত করে তুলেছে।

কর্নারে চেয়ার ফাঁকা হতেই ওরা গিয়ে বসে। এই জায়গা থেকে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। অনেক দূরে নিচের খাদ গুলো যেন কেমন হাতছানি দিয়ে ডাকে। শ্রাবণী তাকিয়ে থাকতে থাকতে বলে আজ কিন্তু রাতে হেলিপ্যাডে যাবো আমরা। ওখান থেকে চাঁদটাকে দেখে মনে হয় ঝপ করে আঁচলে নেমে আসবে।

আমি যেতে পারবো না। আজ শিহাব ও শান্তনু  এসেছে বউ নিয়ে। রাতে আমরা খেলবো।

ওরা আসবে বলে নি তো।

বলেছিল তোমাকে বলতে ভুলে গেছি। তুমি ভাবিদের সাথে নিয়ে যেও।

যা বলেছো। তাহলে আমার চাঁদ দেখা মাটি।

আমি একাই যাবো।

না রাতে একা যেও না। আর এর আগেও কতোবার দেখেছো। একই জিনিসের মধ্যে কী এমন দেখার আছে শ্রী। সাকিব মাঝে মাঝে আদর করে শ্রাবণীকে শ্রী বলে ডাকে।

তুমি বুঝবে না। একই জিনিস আমি যতবার দেখি ততবার সেটা ভিন্ন রূপ মাধুরী  নিয়ে আমার কাছে ফিরে আসে। সব ফিলিংস গুলোই যে পজিটিভ তা নয় বাট সাম নেগেটিভ ফিলিংস পজেস অ্যা ওয়ান্ডারফুল কম্পোজিশন। আই কিপ অন ফাইন্ডিং সামহোয়াট আনরিয়্যাল ইন

রিয়েল এক্সিসটেন্স। শ্রাবণী রুটির টুকরো মুখে নিতে নিতে বলে।

বললাম চলো সুইজারল্যান্ড যাই, বা অন্য কোথাও, নাহ এখানে আসতে হবে।সাকিব মৃদু অভিযোগের সুরে বলে।

সেখানে তো গিয়েছি, আবার যাবো। কিন্তু এখানকার মায়ায় পড়ে গেছি। এই পাহাড়ের প্রেমে পড়ে গেছি।

কটেজে এসে শ্রাবণী সটান শুয়ে পড়ে।

কী হলো শুয়ে পড়লো যে? বলে সাকিব আবার বাইরে যেতে উদ্যত হয়।

তুমি এখন এই রোদের মধ্যে কোথায় যাবে।

দেখি ওরা এসেছে একবার দেখা করে আসি।

 

সন্ধ্যার পাহাড় কেমন যেন নিস্তব্ধ, মরা মাছের চোখের মতো একদিকে নিস্পৃহ তাকিয়ে রয়।

শ্রাবণী বাইরে চেয়ার পেতে বসে আছে। অপেক্ষা য় আছে চাঁদের জেগে ওঠার। সামনে ঐ উঁচু পাহাড়টার ওপাশ থেকে একটু একটু করে জাগছে। শ্রাবণী নিজের ভিতরে চাঞ্চল্য অনুভব করে প্রচণ্ড। বেরোনোর জন্য তাড়া অনুভব করে। চাঁদটা কেমন যেন চশমা পরা ঘোলাটে চোখে তাকিয়ে আছে আজ। উঠবে কী উঠবে না দোলাচলে ভুগছে। শ্রাবণী নিজের মনে হেসে ওঠে।

সাকিব ফিরে এসেছে। চেয়ার টেনে শ্রাবণীর পাশে বসে।

দেখা হলো ওদের সাথে?

হয়েছে। তুমি কি বের হবে এখন?

আর একটু পর যাই। আচ্ছা তুমি আমাকে ঐ অন্ধকার পথটুকু পার করে দিয়ে আসতে পারবে? অবশ্য খুব বেশি সমস্যা নেই কারণ আর্মি পোস্ট রাস্তার পাশেই।স্বল্প আলোর পথটুকু তার পরে। তবে ঐ পথটুকু হাঁটার সময় নিজের ভেতর একটা থ্রিল অনুভব করি; সবসময় মনে হয় পাশের পাহাড় থেকে কিছু একটা ধেয়ে আসছে। একটা দৌড় দৌড় ভাবের মধ্যে থাকি।

ঠিক আছে আমি তোমাকে দিয়ে আসবো আবার ফেরার সময় হলে ফোন দিও। আমি গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসবো।

কেন গো? ভয় পাও, যদি আর ফিরে না আসি?

সাকিব জোরে হেসে ওঠে। তারপর মুখোমুখি শ্রাবণীর গলাটা জড়িয়ে ধরে বলে, তোমাকে না, আমার নিজেকে ভীষণ ভয় শ্রাবণী।

শ্রাবণী অবাক হয়। মাঝে মাঝে সাকিব এমন সব কথা বলে তাতে শ্রাবণী ভয় পেয়ে যায়।

 

হেলিপ্যাডে পৌঁছেছে যখন, তখন রাত দশটা। চাঁদও খোলস ছেড়ে পূর্ণরূপ ধরেছে। বেশ মানুষের জটলা। এদিকে সেদিকে দল হয়ে গল্প করছে, কেউ গিটার বাজিয়ে গান করছে। এক দল বাঁশের চোঙের মধ্যে মুখ দিয়ে টেনে টেনে ধূমপান করছে। কেউ ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে উন্মুক্ত আকাশের নিচে বই পড়ছে। শুধু শ্রাবণী একা।

চত্ত্বরের মাঝ বরাবর বেশ ফাঁকা। শ্রাবণী হাঁটছে কখনো আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকছে। হঠাৎ একটা বাঁশিতে সুর উঠলো। মুগ্ধতায় চমকে উঠলো শ্রাবণী। বাঁশি বাজাচ্ছে কে? এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো এক ভদ্রলোক পশ্চিম কোণায় একাকী বাঁশি বাজাচ্ছে। পাঁচ-ছয় বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে ভদ্রলোকের আশে পাশে ঘুরে বেরাচ্ছে। বাচ্চাটার সাথে তার মা টাইপের কোন ভদ্রমহিলা নেই দেখে শ্রাবণীর একটু কৌতূহল হলো কিন্তু পরক্ষণেই তা মিলিয়ে গিয়ে বাঁশির সুরে সে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এই বাঁশির সুর তার খুব পরিচিত মনে হয়। শ্রাবণীকে কেমন নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসে। 

রুমঝুম ওদিকে যেয়ো না মামণি, বাজানো থামিয়ে ভদ্রলোকটি কথা বলে ওঠে।

এবার শ্রাবণীর আরো অবাক হবার পালা। সব দ্বিধা কাটিয়ে সে মেয়েটিকে দেখার জন্য ওদিকে পা বাড়ায়।

এক্সকিউজ মি। আপনার মেয়ের নাম বুঝি রুমঝুম?

ভদ্রলোক পিছন ফিরে  তাকায়। একটু দূরে ল্যাম্প পোস্ট থেকে বিচ্ছুরিত আলো উভয়ের চোখেমুখে। ভদ্রলোকটি শ্রাবণীর দিকে ফিরে জ্বি বলতেই শ্রাবণীকে কোন এক অদৃশ্য জাদুকর যেন পাথরের মূর্তিতে রূপান্তরিত  করে ফেলে। টুঁটি চেপে ধরেছে কে যেন তার, কণ্ঠ রোধ হয়ে আসে। সে মূর্তির স্থির দুটো চোখ থেকে অপার বিস্ময়ের ক্লান্তি ঝরে পড়ে।

কম্পিত ঠোঁট দুটি অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে, অতনু, তুমি এখানে?

শ্রাবণীকে দেখে অতনুও যেন ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে। কিছুক্ষণ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর ঠোঁটের কোণে একটু ক্লান্তির হাসি টেনে অতনু বলে, কেমন আছো শ্রাবণী? মুহূর্তে শ্রাবণী তার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এসে বলে, তোমার মেয়ে বুঝি? খুব সুন্দর নাম, রুমঝুম।

হ্যাঁ, আমার মেয়ে রুমঝুম। রুমঝুমকে কোলে নিয়ে অতনু বলে, আন্টিকে হাই বলো মামণি।

হাই আন্টি, রুমঝুম বাবার গলা জড়িয়ে থাকে।

হাই রুমঝুম।

তোমার মেয়েটা খুব সুন্দর হয়েছে অতনু। তা মেয়ের মাকে দেখছি না যে।

অতনু সে কথায় না গিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে শ্রাবণীকে।

তুমি একা এসেছো? কদিন থাকবে ? কোথায় উঠেছো?

না, একা নয়। সাকিব আর আমি এ কথাটা বলতে গিয়ে থেমে যায় শ্রাবণী।

তোমার মেয়ের মাকে দেখছি না যে বলে শ্রাবণী এ পাশ ও পাশ তাকায়।

অতনু রুমঝুমকে বলে,  মামণি আন্টিকে বলে দাও তো মা কোথায়।

আন্টি, মামণিতো ঐ আকাশে, ঐ যে দেখছো না বড় তারাটা, বাবা বলেছে আমার মামণি ঐ তারাটার মধ্যে লুকিয়ে আছে। আমি বড় হলে মামণি আসবে। আকাশের দিকে আঙুল তুলে রুমঝুম বলে।

শ্রাবণীর কষ্টটা কেমন যেন বুক থেকে মাথা আবার মাথা থেকে বুকের মধ্যে ওঠা-নামা করছে।

কতো দিন অতনু? কেমন জড়ানো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।

রুমঝুমের বয়স যখন এক বছর।

শ্রাবণী শুধু 'ওহ' শব্দটা কোন ভাবে যেন গলা থেকে বাইরে ঠেলে দেয়।

আসি, বলে অতনু মেয়েকে নিয়ে চলে যেতে অগ্রসর হতেই শ্রাবণী বলে, কতো দিন থাকবে?

অতনু একটু থেমে বলে, ঠিক নেই, ভালো লাগলে থাকতে পারি না লাগলে কালই চলে যেতে পারি। চলো মামণি।

রুমঝুম আমাকে যেতে বলবে না? শ্রাবণী বলে ওঠে ।

ছোট মেয়েটি বাবার মুখের দিকে তাকায়, বাবার ইশারায় বলে ওঠে, চলো আন্টি।

আজ না মামণি, আগামীকাল আসি?

 ঠিক আছে, বাবা চলো আমরা যাই।

আমি মেঘপুঞ্জ কটেজে আছি বলেই অতনু মেয়েকে নিয়ে চলে গেলো।

শ্রাবণী তাকিয়ে রইলো ওদের দিকে যতক্ষণ দেখা যায়। অভিমান, কষ্ট, ক্ষোভ সব কিছু শ্রাবণীকে ঘিরে ধরলো প্রচণ্ড শক্তিতে। চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। গণ্ডদেশ বেয়ে গরম প্রবাহ অনুভূত হলো। কতক্ষণ এভাবে চললো শ্রাবণী জানে না। রাতের পাহাড়, মোমের মতো গলে পড়া সাদা জ্যোৎস্না, হাত মাপা আকাশ সব অদৃশ্য হয়ে গেল ওর চেতনা থেকে। শ্রাবণী কাঁদছে। বহুদিনের জমানো কান্না আজ বাঁধ ভেঙেছে। প্রচণ্ড বেগে ছুটে আসছে জলপ্রপাতের মতো, শ্রাবণীকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দূরে বহুদূরে।

অল্প কয়েকজন ছাড়া সবাই চলে গেছে। শ্রাবণী বসে আছে অতনু আর রুমঝুম যেখানে বসে ছিলো সেখানেই। চাঁদও ঘোলাটে হতে শুরু করেছে। ওর ফোনটা বেজে ওঠে। ফোন রিসিভ করে ও।

শ্রী তুমি কি রাতে ওখানেই থাকবে? আমাকে যেতে বলছো না কেন? ওপাশে সাকিবের গলা।

চোখ মুছে ভাঙা গলায় বলে, এসো।

বউয়ের কান্না জড়ানো কন্ঠে সাকিব উদ্বিগ্ন হয়ে বলে, কী হয়েছে শ্রাবণী, তুমি কাঁদছো কেনো? আমি এক্ষুনি আসছি।

বিশ-পঁচিশ মিনিট পর সাকিব প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে হেলিপ্যাডে চলে আসে।

শ্রাবণী দেখতে পায় সাকিবকে। সাকিব এদিক ওদিক শ্রাবণীকে খুঁজছে। ও আস্তে করে হেঁটে কাছাকাছি আসতেই সাকিব ওকে দেখতে পায়।

কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলে, কী হয়েছে শ্রী? তুমি কাঁদছিলে  কেন?

তেমন কিছু না, হঠাৎ করে মাথাটা প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হলো তাই ...

সাকিব ওকে জড়িয়ে ধরে নামতে নামতে বলে, বললাম আজ যেয়ো না শুনলে না। সকালে এলে আবার রাতে। রেস্ট হয়নি। এখন তো কষ্ট করে এটুকু পথ হাঁটতে হবে তোমাকে।

 

পরদিন শ্রাবণী সারাদিন ঘর থেকে বের হয় নি। মাথা যন্ত্রণা নিয়ে শুয়ে দিন পার করেছে। সাকিব তার ডাক্তার বন্ধুদের একের পর এক ফোন করে পরামর্শ মাফিক শ্রাবণীর পরিচর্যা করেছে। সাথে করে আনা কিছু সাধারণ ঔষধ ছিলো। প্যারসিটামল খাইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়েছে। শ্রাবণী কখনো একটু ঘুমিয়েছে কখনো জেগে থেকে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।

সারাদিনে শারীরিক যন্ত্রণার মধ্যে ভেবেছে ও যদি চলে যায়, আর যদি দেখা না হয়। ওর সাথে আরেকবার তার দেখা হওয়া জরুরী।

সন্ধ্যার দিকে শ্রাবণী উঠে বসে। ফ্ল্যাক্স থেকে চা ঢেলে দেয় সাকিব।

এখন একটু ভালো লাগছে শ্রী? কাছে এসে বউয়ের মাথাটা নিজের কাঁধে নেয়।

শ্রাবণী হু বলতেই সাকিব ওর ঠোঁট দুঠো নিজের ঠোঁটের মধ্যে নিয়ে আদর করে।

তারপর আস্তে করে বলে, শ্রী এনিথিং রঙ?

কাল তুমি অনেকক্ষণ কেঁদেছিলে।

শ্রাবণী মাথাটা সাকিবের কাঁধ থেকে উঠিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে, মে বি সামথিং রঙ সাকিব। দেয়ার ফলোড এ ডে।

ইট উইল বি ওকে ডিয়ার। হাত দিয়ে শ্রাবণীর মুখটা আলতো করে ছুঁয়ে দেয় সাকিব।

আমি একটু ওদের ওখানে যাচ্ছি। একটু পর চলে আসবো। তুমি রেস্ট নাও। বারান্দায় বসতে পারো চেয়ার নিয়ে।

সাকিব বেরিয়ে গেলে শ্রাবণী বাইরে এসে বসে।

কেয়ারটেকারকে দেখতে পেয়ে আস্তে করে ডাক দিয়ে হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দেয়।

আমি আপনাকে এখনি খবর এনে দিচ্ছি, বলে  কেয়ারটেকার চলে যায়।

কেয়ারটেকার খবর এনে দেবার পর সাকিব ফেরা পর্যন্ত ও বারান্দায় বসেছিলো। আলো-আঁধারের মধ্যে দেখা রুমঝুমের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল বারবার। কী সুন্দর মেয়েটা! কথা ছিলো তাদের মেয়ে হলে নাম রাখবে রুমঝুম। অতনু ঐ একটি কথাই রেখেছে।

এখনো বাইরে কেন শ্রী? চলো ভেতরে চলো, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে আর তুমি কমফর্ট ফিল করলেই আমরা চলে যাবো। তুমি কি আর থাকতে চাচ্ছো?

তুমি যা বলবে তাই হবে। শ্রাবণী বলে।

কেয়ারটেকার আজ খাবার দিয়ে গেছে। শ্রাবণী শুধুমাত্র এক টুকরো চিকেন আর এক স্লাইস পাউরুটি খেলো। সাকিব খুব সাধলো আরো কিছু খেতে। মুখের কাছে তুলে ধরলো গরম সুপের বাটি। শ্রাবণী মুখ ঘুরিয়ে নিলো তবু সাকিবের জোরাজুরিতে  এক চামচ মুখে নেয়।

শ্রাবণী জানে আর একটু রাত হলেই সাকিব ওসব ছাইপাঁশ নিয়ে বসবে।

শ্রী শুয়ে পড়ো, তুমি সিক। শ্রাবণী মনে মনে হাসে আর বলে , বোথ উই আর সিক সাকিব, বাট উই ডোন্ট নো। উই আর প্রিটেন্ডিং এভরি মোমেন্ট।

সাকিব কখন শুয়েছিল শ্রাবণী জানে না, ওর নিদ্রালু ভাবের জন্য শুইয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ ও চোখ মেলে সাকিবের দিকে তাকিয়ে বলে, আচ্ছা সাকিব আমি যদি তোমাকে খুন করি তোমার কোন আপত্তি আছে?

কী বলছো শ্রী এসব, আমাকে খুন করবে মানে?

হিংস্র বাঘিনীর মতো চিৎকার করে ওঠে শ্রাবণী

হ্যাঁ, তোমাকে আমি খুন করে অতনুর সাথে পালিয়ে যাবো। আমি রুমঝুমের মা হবো। তোমার এই অতি ভালোবাসা আমার কাছে অসহ্য, অসহ্য বলতে বলতে সাকিবের বুকের উপর বসে বালিশ চেপে ধরে ওর মুখের উপর দানবীয় শক্তিতে।

সাকিব গোঙাতে থাকে,তারপর এক ঝটকায় শ্রাবণীকে মেঝেতে ফেলে দেয়।

লাফিয়ে ওঠে শ্রাবণী ঘুম ভেঙে। ভয়ে ওর বুক ওঠানামা করে দ্রুত। সাকিবের দিকে তাকায়। সাকিব অন্য পাশে কাত হয়ে ঘুমোচ্ছে। ওর যেন সম্বিত ফিরে আসে। ঘড়িতে তখন রাত দুটোর কাঁটা ছোঁয় ছোঁয়। শ্রাবণী উঠে দরজা আস্তে করে ভেজিয়ে বাইরে আসে।

সোজা অতনুর রুমে গিয়ে দরজায় টোকা দেয়।

কে? অতনু জেগে ছিলো। বই পড়ছিল।

শ্রাবণী আস্তে করে বলে, আমি শ্রাবণী ।

অতনু দরজা খুলেই বলে, এতো রাতে তুমি?

শ্রাবণী কোন কথা না বলে অতনুকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢোকে। অতনু দরজা বন্ধ করে চেয়ারে বসে। শ্রাবণী ঘুমন্ত রুমঝুমকে দেখছিল। কী মায়ায় ভরা মুখটি!!বুকের ভিতরটা  যেন জ্বলে যাচ্ছে ,ওকে কোলে তুলে আদর করতে ইচ্ছা করছে।

তুমি এতো রাতে এলে, তোমার স্বামী কিছু মনে করবেন না?

সাকিব ঘুমিয়ে, শ্রাবণী উত্তর দেয়

তোমার বরের নাম বুঝি?

মিঃ অতনু রায়, ভেবো না তোমার সাথে পালিয়ে যাবার জন্য আমি আমার স্বামীকে ফাঁকি দিয়ে এখানে এসেছি। অতনু দুহাত বুকে বেঁধে নিচের দিকে তাকিয়ে শ্রাবণীর কথা শুনছিল।

তুমি কি এতোদিন পর ঝগড়া করার জন্য এতো রাতে এলে শ্রাবণ?

বাহ বাহ! ডাক্তার অতনু রায়। তুখোড় বক্তা, বংশীবাদক, প্রগতিশীল ছাত্রনেতার ঐ নামটি এখনো মনে আছে দেখছি।

তুমি রেগে যাচ্ছো শ্রাবণ, তুমি অসুস্থ।

তোমাকে কে বললো সে কথা?

তুমি সন্ধ্যায় যাকে পাঠিয়েছিলে তিনিই বলেছেন। শ্রাবণ আমি জানতাম তুমি আসবে।

তাই নাকি? তা মনো বিশেষজ্ঞ কবে হলে?

অতনু সিগারেট ধরায়।

তুমি জানো না ঐ গন্ধ আমি নিতে পারি না ?

তাছাড়া মেয়েটারও তো ক্ষতি করছো।

কয়েকটা টান দিয়ে অতনু সিগারেট নিভিয়ে ফেলে।

তোমার ছেলে-মেয়ে কজন? অতনু প্রশ্ন করে।

নেই, অবশ্য এসব নিয়ে আমাদের কোন অভিযোগও নেই। সাকিব এক অসাধারণ স্বামী।

ভালো লাগলো তোমার কথা শুনে। সুখে আছো ভালো লাগছে জেনে। অতনু শ্রাবণীর দিকে না তাকিয়েই কথা বলে।

আমি শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর পাবার জন্য তোমার এখানে এসেছি আর তাছাড়া আমার কিছু জানার নেই বা থাকা উচিতও নয়।

বলো এতো বছর পর তুমি কী জানতে চাও, অতনু শ্রাবণীর চোখে চোখ রাখে।

তুমি সেদিন রেল স্টেশনে কেন আসো নি?

এসব পুরানো কথা জেনে কী লাভ শ্রাবণ?

লাভ লোকসানের হিসাব এটি নয় অতনু।

এটি আমার বিশ্বাস ভঙ্গের প্রশ্ন। যে অতনুকে চিনতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে সেই অতনু কীভাবে বদলে গেলো সেটিই আমি জানতে চাই।

তোমার কি একবারও মনে হয়নি একটি মেয়ে তার জাত কুল ত্যাগ করে তোমার সাথে চলে যাবার জন্য ভোররাতে স্টেশনে এসে অপেক্ষা করছে , সময় পেরিয়ে যাচ্ছে তুমি আসছো না, সেই মেয়েটার কী হলো যাকে তুমি ভালোবাসতে

প্রচণ্ড, হ্যাঁ প্রচণ্ড। অতনু, তুমি তো কোনদিন ধর্ম মানতে না। বলতে মানবতাই তোমার ধর্ম।

তাহলে কেন তুমি সেদিন ধর্মের বেড়ি ভেঙে, সংস্কার ভেঙে আসতে পারো নি? আমি তো পেরেছিলাম অতনু।

আমি তোমাকে চিঠিতে সব জানিয়েছিলাম শ্রাবণ।

তোমার  চিঠির ভাব আমার কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়েছিল অতনু। আমি তোমাকে সংবাদ পাঠিয়েছিলাম সব কিছু জানিয়ে।

বাবা আসলে কিভাবে যেন জেনে গিয়ে আমাকে আটকে রাখে মৃত্যুর দিব্যি দিয়ে ।

মৃত্যুর দিব্যি ?

হ্যাঁ, তুমি জানো আমি বাবার এক ছেলে।তিন বোনের পর আমার জন্ম। তাই বুঝতেই পারছো আমি কতোটা অসহায় ছিলাম।  বাবা চায় নি আমি অন্যধর্মের মেয়েকে...

ওহ!! শ্রাবণী যেন ডুকরে ওঠে।

তবে তোমার প্রতি যে অন্যায় করেছিলাম তার প্রায়শ্চিত্ত আমাকে দিয়ে ধর্ম করিয়ে নিয়েছে।

রুমঝুম মা হারা হয়েছে।

দুজনেই কতোক্ষণ চুপ করে থাকে। যেন নিজেদের ভেতরের কথাগুলো নিজেরা পড়ে নিচ্ছে। হঠাৎ অতনু শ্রাবণীর একদম কাছে এসে দাঁড়ায়, দুহাতে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমরা কি আবার শুরু করতে পারি না শ্রাবণ?

আবার সেই আগের মতো- তুমি, আমি।

কী করছো অতনু, অতনু ...প্লিজ ছাড়ো আমাকে

খুব শান্ত গলায় শ্রাবণী বলে।

আমি আর পারছি না শ্রাবণ। বিলিভ মি।আই এম টোটালি ফিনিশড শ্রাবণ। শ্রাবণী চলে আসতে উদ্যত হতেই অতনু বলে, শ্রাবণ যেও না, ফিরে এসো আমার কাছে। আজ আমি বড্ড একা, ভীষণ একা শ্রাবণ।

তা আর হয় না অতনু। তুমি একা কিন্তু আমি তো একা নই। শ্রাবণী চলে আসে।

তার পরের গল্পটা খুব ছোট। অতনু খুব সকালে মেয়েকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে।

মেয়েকে রেডি করিয়ে বলে, মামণি তুমি তোমার মায়ের কাছে যাবে?

রুমঝুম ঘুম জড়ানো চোখে বলে, মামণি তো আকাশের সেই যে তারাটার মধ্যে তুমি যে বলো।

না মা, তোমাকে মিথ্যে বলেছিলাম। চলো তোমাকে তোমার মামণির কাছে রেখে আসবো।

তুমি যাবে না বাবা মামণির কাছে?

না মা আমি যে যেতে পারি না, শুধু তুমি যেতে পারো।

অতনু গুছিয়ে মেয়ের হাত ধরে বেরিয়ে পড়ে।

রুমঝুমকে নিয়ে সোজা মেঘমাচার প্যাসেজে গিয়ে দাঁড়ায় ।

একটা চিঠি ওর হাতে দিয়ে বলে, তোমার মামণি কে এই চিঠিটা দেবে। আর মামণি যা বলে তাই শুনবে, মামণিকে একটুও কষ্ট দেবে না। মেয়েকে বুকের সাথে জড়িয়ে মুখে চুমো মেখে দেয় অতনু ।

বাবা তুমি আসবে না, তুমিও থাকো বাবা, আমি তো ভয় পাবো, ছোট্ট রুমঝুম বলে ওঠে।

না মা, তোমার মামণি  উঠে তোমাকে কোলে নিলেই আমি চলে যাবো। আর চিঠিটা তোমার মামণিকে দেবে।কোন ভয় নেই মা। আমি আছি এখানে তুমি যাও। ঐ যে দরজাটা দেখা যাচ্ছে ওখানে তোমার মামণি আছে।

অতনু দাঁড়িয়ে  থাকে, রুমঝুম আগায় আর পিছে ফিরে বাবাকে দেখে। অতনু হাত নেড়ে মেয়েকে বিদায় জানায়। মেঘমাচায় মেঘ ঘন হয়ে আসে। রুমঝুম দরজার সামনে গিয়ে মামণি  মামণি বলে কয়েকবার ডাকতেই দরজা খুলে শ্রাবণী বাইরে এসে রুমঝুমকে কোলে নেয়। মেঘ গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতে থাকে-

অতনুর চোখে রুমঝুম অদৃশ্য হয়ে গেলে ও ঘন মেঘের মধ্যে দৌড়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে

সমাপ্ত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top