সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

 নির্মম শিক্ষা (অণুগল্প) : ডঃ সুবীর মণ্ডল


প্রকাশিত:
১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:৪২

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০০:৩৮

 

সুদর্শন পবিত্র রায়, বয়স ৩০-এর কাছাকাছি, সদ্য সরকারি  স্কুলের চাকরি  পেয়েই বিয়ে  করল নিজের পছন্দ করা পাত্রীকে। অল্পদিনের বিবাহিত জীবন মহাআনন্দে কাটছিল। বেশ কিছুদিনে সংসারটা পরিপাটি করে সাজিয়ে নিতে অসুবিধা  হল না। শুধুমাত্র দুঃখ সন্তানহীনতার। এই বিষয়ে  দুজনেই পাত্তাই দিতেন না।  অনেক দিন ধরে  কোন সন্তান নেই। অনেক  চিকিৎসা করিয়েছেন, একজন  দায়িত্বশীল  স্বামী  হিসেবে। মনের মধ্যে  হতাশার চিহ্ন পাওয়া যায় না। ভালোবাসার অভাব নেই। যেন made for each other । অনেকেই  তাদের  বর্ণময়  মধুর সম্পর্ক  দেখে  হিংসাও করত।  কিন্তু মিষ্টি  স্বভাবের মৃদুভাষি,  শিক্ষক  দম্পতির  এনিয়ে কোন ভাবনা ও বক্তব্য ছিল  না। শুধুমাত্র  হাসি দিয়েই  উড়িয়ে  দিতেন সব কুকথা। এছাড়া নানান ধরনের  কাজে  ডুবিয়ে রাখতেন  নিজেদেরকে।  সমাজ  সেবার যুক্ত  ছিলেন। কিছু  লেখালেখি  করতেন  বিভিন্ন গবেষণা মূলক পত্রিকায়। এইভাবেই  সময়  পেরিয়ে  যেত।  দুজনের ভরাট সংসার, দুজনেই কাজ পাগল  মানুষ। তাই মাঝে মাঝেই  নানান  ধরনের কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করেন।  রান্নাঘরে রান্না করতে  ভালোবাসতেন, এর জন্য  স্ত্রী  বিরক্ত  হতেন।গায়ে  মাখতেন না সব কথা।  স্বেচ্ছায়  ছাদে কাপড় দিতে গেলেই পাশের বাড়ির  উঠতি সুন্দরী  বিশাখার  সে কি বাঁকা, তীর্যক  বিদ্রূপের হাসি। যেন  হুল হয়ে  ফুটত। নীরবে  হজম করতেন, মায়া মাখানো হাসি দিয়েই। একবার তো আত্মীয় পরিজনদের সামনে চিৎকার করে পবিত্রকে  শুনিয়ে শুনিয়ে  সদ্য যুবতী  বিশাখা বলে উঠত, "দ্যাখো, দ্যাখো, বউয়ের কাপড় মেলছে", মনে আঘাত পেলেও কিছু বলে না পবিত্র।

এরপর কালের নিয়মে ডানাকাটা সুন্দরী বিশাখার বিয়ে হল। কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ চাকুরে বর, মোটা অঙ্কের মাইনে, কলকাতার বিরাটিতে সাজানো - গোছানো বিশাল ফ্ল্যাট, দুজনের সংসার— এ এক স্বপ্ন পূরণের ছবি,  বিশাখার  অফুরান খুশি দেখে কে! নতুন বাড়িতে গিয়েই তার অতীতের দেখা স্বপ্নগুলো, কেমন যেন ক্রমশ ফিকে ও মলিন হতে লাগল। ভেবেছিল ও আর ওর বর একসাথে মিলে গড়বে নতুন বর্ণময় ভুবন। কৈশোরে সুখী গৃহকোণের স্বপ্ন দেখত। ক্রমশ সে স্বপ্নিল স্বপ্ন ধূসর হতে শুরু করল। তবু আশা হারাতে রাজি ছিল না। সময় গড়িয়ে গেল, কিন্তু কোথায় কী! কাজে হাত লাগানো দূরে থাক,পান থেকে চুন খসলেও চলে গালাগালি, মারধর, সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বিশাখা  নিঃসঙ্গ  একা বসে কাঁদে। ক্রমশ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ল।  চরম দুঃসময়ে কোন আপনজনের সাহায্য  পেল না। নিজের  পৃথিবীতে সে শুধুই একা। বিধাতা বোধহয় তখন অলক্ষ্যে একটু মুচকি হাসেন।

 

ডঃ সুবীর মণ্ডল
বিরাটি, কোলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top