সিডনী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১

লাশ কাটা ঘর : উজ্জ্বল সামন্ত


প্রকাশিত:
২৯ জুন ২০২২ ১৯:০৮

আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:০৪

 

মর্গে সারি সারি মৃতদেহ। প্রত্যেকের পায়ের বুড়ো আঙুলে মাথায় ট্যাগ দিয়ে নম্বর লেখা। মৃতদেহের শনাক্তকরণের নাম্বার। মৃতদেহগুলি পোস্টমর্টেমের জন্য আনা হয়েছে। নারী পুরুষ প্রত্যেকের শরীরে সিজর ও অনান্য মেডিকেল যন্ত্রপাতি দিয়ে কাটা ছেঁড়া হবে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে পোস্টমর্টেম জরুরি হয়ে পরে। অনেক সময় পুলিশ ও ফরেনসিক টিমের লোকজন মর্গে আসেন বিভিন্ন তথ্য/সূত্র অনুসন্ধানের জন্য। ডাক্তারি পাঠরত অনেক যুবক-যুবতীও তাদের মেডিকেল প্রফেসর এর সঙ্গে এসে ক্লাস করেন যারা শল্যচিকিৎসক হবেন। হঠাৎ এক বিপত্তি দেখা দেয়। মর্গ থেকে লাশ উধাও হয়ে যাচ্ছে কিছু ঘন্টার জন্য। এই মর্গে সদ্য চাকরি পেয়েছে অরুনাভ ও কয়েকজন ল্যাব এটেনডেন্ট পদে। মর্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ব্যাপারটি লক্ষ্য করেছেন যখন একজন মৃতের স্বামী তার স্ত্রীর দেহ সৎকারের জন্য মর্গে এসে স্ত্রীর লাশ না পেয়ে অভিযোগ করেছেন । পুলিশ খবর দিলে , এসআই সৌরিশ বাবু তদন্ত এসে সকলকে জেরা করেছেন। প্রাথমিক তদন্ত করে প্রত্যেকে থানায় তলব করেছেন হাজির হওয়ার জন্য। সৌরিশ বাবু অনেক চেষ্টা করেও এর রহস্য উদঘাটনে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন। মর্গে সিসিটিভি ফুটেজ দেখেও কে এই কান্ড করছে ধরা পড়ছে না। সৌরিশ বাবু ৩০ বছর পুলিশ ক্যারিয়ারে এমন ঘটনা কখনো শোনেনি। হঠাৎ তার বন্ধুর বৌমার অপরাজিতার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। থানায় খবর দিলে লাশটি পোস্টমর্টেমের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।

প্রখ্যাত ডাক্তার অংশুমান রায়ের পরিবার বলতে স্ত্রী আর একমাত্র কন্যা তিতাস। জনসেবা, প্রতিপত্তি, প্রাচুর্যের কোন অভাব না থাকলেও অংশুর চরিত্রের একটা অন্ধকার অধ্যায় অজানা কয়েকজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছাড়া। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির আড়ালে অঙ্গ চুরির আন্তর্জাতিক জাল বিছিয়ে ছিল নিপুণ ভাবে। মর্গের পোস্টমর্টেম টেবিলে শরীরের বিভিন্ন মূল্যবান অঙ্গ তুলে নিয়ে অঙ্গগুলি সংরক্ষিত করে বিদেশে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন।

তিতাস বিদেশ থেকে ডাক্তার হয়ে কিছুদিন হল দেশে ফিরেছে। পোস্টমর্টেম ডিপার্টমেন্টে সরকারি ডাক্তার হিসেবে বাবার সঙ্গে কাজে হাত দিতেই উঠে আসে অংশুর অন্ধকারের সাম্রাজ্য। অপরাজিতার লাশ পোষ্টমর্টেম এর আগে ডাক্তার অংশুমান সরকারি হাসপাতালের প্রধান দায়িত্বে, তিনি মর্গে তার বিশ্বস্ত দু তিনজন সঙ্গীর সঙ্গে লাশটিকে কেটে তখন মূল্যবান অঙ্গগুলি তুলে সংরক্ষণে ব্যস্ত হঠাৎ তিতাস এসে পড়ে। লজ্জায়, ঘৃণায় বলে সে, "বাবা,কেন তুমি এই অসামাজিক কাজে জড়িত? একজন প্রখ্যাত ডাক্তার সমাজের একজন বিশেষ ব্যক্তিত্ব। কি করে তোমার পক্ষে এমন জঘন্য কাজ করা সম্ভব?" ধূর্ত অংশুর ছলচাতুরী ভোলাতে পারে না মেয়েকে। বাবার অন্যায় কে মেনে নিতে পারে না তিতাস, সব কথা মাকে গিয়ে বলে।

স্ত্রী- কন্যার অনুরোধে অসহায়তা ফুটে ওঠে তার মুখে। যে অন্ধকার পথে সে হেঁটে এসেছে, এই পথ ছাড়়তে চাইলে বিদেশি এজেন্টদের হাতে খুন হতে হবে তাকে।
তিতাসের দীর্ঘ অনুরোধ ও অনুনয় বিনয়ে বিদেশি এজেন্টদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ দেয় অংশু। সপ্তাহ দুই পর নার্সিং হোম থেকে ফেরার পথে অজ্ঞাত আততায়ীর লড়ির ধাক্কায় ওর গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে যায়।‌তাকে নিয়ে যায় চিরঘুমের দেশে।

তিতাস ব্যথিত হৃদয়ে বাবার দেহ দান করে দেয় মেডিকেল কলেজে। এখন সেটি শায়িত আছে মর্গে। লাশকাটা ঘরে চলবে দেহের ময়নাতদন্ত। বাবার নামে একটি এনজিও খুলে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। নার্সিংহোমে ন্যূনতম খরচে বিভিন্ন পরিষেবাও দেওয়ার সুবিধা করেছে। হয়তো সে এভাবেই বাবার পাপের পাপস্খলন হবে ভেবে মনে মনে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করে ...


উজ্জ্বল সামন্ত
কবি ও লেখক, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top