কাঠগড়ায় যখন কমিউনিটি সাংবাদিকতা
প্রকাশিত:
২০ নভেম্বর ২০১৭ ০৭:৩৫
আপডেট:
৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৮
আউয়াল খান: সাংবাদিকতা সবসময় একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। এই প্রবাসে অনেকেই সাংবাদিকতার কাজটি কোনরূপ পারিশ্রমিক ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে করে যাচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়াতে দুই একটি বাংলা কমিউনিটি পত্রিকা অবশ্য এখন কিছু পারিশ্রমিক দিচ্ছে তবে তা অপ্রতুল। ইদানিং একটা বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, পারিশ্রমিক বা আর্থিক কোন সুবিধা না থাকা সত্বেও এই প্রবাসে বিশেষ করে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ সাংবাদিক হওয়ার দৌড়ে নামছেন। যে কোন মূল্যে সাংবাদিক হওয়ার এই প্রচেষ্টার ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব কমিউনিটিতে এখন খুবই দৃশ্যমান। ফলে কমিউনিটিতে সাংবাদিকদের কথা বললেই অনেকেই অনেক সময় ব্যঙ্গাত্মক শব্দ বলতে শোন যায়। তবে এর পিছনে কিছু কারন রয়েছে। এখানেও অনেকের কাছে সাংবাদিকতার অর্থ হচ্ছে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেয়া এবং নিজের ব্যাক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করা। সেটা যে কোন উপায়ে, প্রয়োজনে সাংবাদিকতার নামে তথ্যসন্ত্রাস করে । সাংবাদিকতার নামে যখন ইনিয়ে বিনিয়ে মিথ্যা গল্প কমিউনিটিতে স্হাপন করার হীন চেষ্টা করা হয় তখন তা নিশ্চয় আর সাংবাদিকতা থাকে না।তখন তাকে তথ্য সন্ত্রাস বলাই শ্রেয়। আর যেসব জ্ঞানপাপী এই হীন কাজটি করে থাকেন তাদেরকেও সাংবাদিক না বলে তথ্যসন্ত্রাসী বলাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। আর এই কারনেই বাংলাদেশের মত এ পেশাটিও অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে দিন দিন তাঁর কৌলিন্য হারাচ্ছে। কিন্তু দূঃখজক হলে ও সত্য, যখন কেউ সাংবাদিকদের গালি দেয় অথবা ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় সম্বোধন করে তখন তাঁর ভাগ আবার সব সাংবাদিকেই নিতে হয়।
কেউ বিপদে পড়লে প্রতিকারের জন্য পড়লে কিছু পেশার মানুষের কাছে দ্রুত ছুটে যায়। এরা হলো পুলিশ, আইনজীবি, ডাক্তার, সাংবাদিকতা।, উদাহরন স্বরপ আমরা অসুস্থ হলেই ডাক্তারের কাছে যাই। একটু ভূল ত্রুটি হলেই ডাক্তাদের বিভিন্ন ধরনের গালি দেই। কিন্তু পৃথিবীর সব ডাক্তার তো খারাপ নয়। তাহলে তো মানুষের গড় আয়ু বাড়ত না বা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসত না। তেমনি ভাবে এখানে ও পুলিশকে নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য শোনা যায় । কিন্তু সব পুলিশ যদি অকর্মণ্য হতো তবে অস্ট্রেলিয়া সহ সারা বিশ্বের অরাজকতা সৃষ্টি হতো।এদের মত কমিউনিটির সাংবাদিকরা ও অসহায় । যেমন যে কোন প্রয়োজনে বা অনুষ্ঠানে কমিউনিটির বিভিন্ন প্রবাসী বা সংগঠকরা সাংবাদিকদের কাছে আসবে প্রয়োজন শেষে অথবা কোন সংবাদে নিজের স্বার্থে আঘাত লাগলে বা কারো নাম বা ছবি বাদ গেলে কটুক্তি করবে অথবা বলবে এরা তো সাংবাদিকই না।
এর পাশাপাশি কমিউনিটিতে আবার অনেকেই অভিযোগ করেন এখানকার সাংবাদিকরা পিঠ বাচিয়ে সাংবাদিকতা করেন। এই অভিযোগ আংশিক সত্য এবং এর পিছনেও অনেক কারন রয়েছে এবং সেটি না বুঝেই অনেকেই অনেকেই কমিউনিটির সাংবাদিকদের প্রতি নিয়মিত বিশেষদগার করেন। এ কথা ঠিক যে বিশ্বের অন্য দেশের মতো অস্ট্রেলিয়াতে সাংবাদিকতা অতটা ঝুঁকিপূর্ণ না হলে ও রয়েছে মানহানি আইনের বিভিন্ন জটিলতা। এই আইনের কারনেই কমিউনিটির একাধিক বাংলা পত্রিকাকে বড় অংকের ক্ষতিপূরন দিতে হয়েছে । তাই এখানে একজন সাংবাদিক যখন কোন অপরাধ বা দূষ্কর্মের সংবাদ পরিবেশন বা প্রকাশ করেন তখন তাকে মানহানি আইনের কারনে অনেক বিষয়, বিশেষ করে ব্যাক্তির নাম বা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে হয়। আর এই বিষয়টি না বুঝেই অনেকেই একে দায়সারা সাংবাদিকতা বলে অবিহিত করেন।
সব সমাজে যেমন খারাপ পুলিশ, খারাপ আইনজীবী আছে, খারাপ ডাক্তার আছে তেমনি সমাজে সাংবাদিক নামধারী কিছু তথ্য সন্ত্রাসী আছে এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। সব পেশাতেই এই ধরনের ভালো মন্দের মিশ্রন আছে। তাই বলে কিছু দুষ্কৃতকারীর জন্য নির্দিষ্ট কোন পেশাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো কতটা ঠিক তা একটু ভেবে দেখা উচিৎ।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: