সিডনী শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


অস্ট্রেলিয়াতে আপনাকে স্বাগতম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশিত:
২৭ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৪৯

আপডেট:
১৮ মে ২০২৪ ২১:২১

অস্ট্রেলিয়াতে আপনাকে স্বাগতম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বাঙালিদের মধ্যে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা। কারণ আপনি আসছেন এখানে। দীর্ঘ দিন পর বাংলাদেশের সরকার প্রধানের অস্ট্রেলিয়া সফর। আপনি এর আগেও সিডনিতে এসেছেন, ১৯৯৯ সালে। আপনাকে কাছে পেয়ে আমরা আপ্লুত হয়েছিলাম। আপনার কাছে দাবী ছিল সিডনিতে কনসুলেট অফিস। আমাদের সে আকাঙ্ক্ষা পূরণ হতে চলছে।



 



গ্লোবাল সামিট অব উইমেনসভায় অংশ নিতেই আপনার এখানে আগমনের মূল উদ্দেশ্য। আপনি যতবার ক্ষমতায় এসেছেন নারীর ক্ষমতায়নে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়েছেন।দেশে মাধ্যমিক থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট লেভেল পর্যন্ত প্রায় কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন প্রকার মেধাবৃত্তি প্রদানের আওতায় এনেছেন। দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে টিফিন প্রদান করার উদ্যোগ নিয়েছেন। ফলে ঝরে পড়া কমেছে এবং মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৬০ ভাগ নারী শিক্ষক দ্বারা পূরণ করছেন। শিক্ষার পাশাপাশি সরকার মাতৃস্বাস্থ্য এবং পুষ্টির দিকেও নজর দিয়েছেন। আমরা জেনেছি সারা দেশে হাসপাতাল স্থাপনের অংশ হিসেবে প্রায় ১৬ হাজার ৫শ কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে নারীদের প্রসূতি সেবাও নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পেশায় নারীদের সাফল্যজনক অংশগ্রহণও বেড়েছে। সমাজের সব পেশার ক্ষেত্রেই নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। এগুলো সবই আপনার কারনেই সম্ভব হয়েছে। নারী উন্নয়নের পথিকৃত হিসেবে আপনার উপস্থিতি এবারের সামিটকে শুধু তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলব তা নয়, বাংলাদেশও আপনার মাধ্যমে এটি নতুন একটি স্তরে উপনীত হবে।



মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জানেন বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক গভীর বন্ধুত্বের। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্ট্রেলিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার আপামর জনসাধারন একাত্তরে আমাদের মুক্তিসংগ্রামে আমাদের প্রতি বাড়িয়ে দিয়েছিল তাদের বন্ধুত্বের হাত। দুনিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের মত অস্ট্রেলিয়াও সেই যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছিল, বাংলাদেশের গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছিল, এবং উদ্বাস্তুদের জন্য মানবিক সাহায্যের ডালি নিয়ে এগিয়ে এসেছিল।বাংলাদেশের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। বন্ধুতের সেই ধারাবাহিকতা এখনো বিদ্যমান। বাংলদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া রযেছে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বানিজ্য। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বানিজ্যিক সম্পর্ক দিনে দিনে উন্নত হচ্ছে। কমে আসছে ব্যবধান। একই সঙ্গে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া মধ্যে, শিক্ষা, শিল্প প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার সুযোগ রয়েছে।



দেশের পর্যটন খাতও সমৃদ্ধ। শুধু পর্যটন থেকেই দেশের জিডিপির উল্লেখযোগ্য অংশ আসে। এই বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে পারে বাংলাদেশ। কারণ পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশেরও বিপুল সম্ভাবনা। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে নানাভাবে সাহায্য করতে পারে অস্ট্রেলিয়ার। বাংলাদেশের ইকোট্যুরিজম বিকশিত করা থেকে শুরু করে বিশেষ বিশেষ পর্যটন স্থানগুলো সমৃদ্ধ পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা এবং পর্যটকদের আকৃষ্ট করার ব্যাপারে সহায়তা করতে পারে এই দেশটি। উচ্চশিক্ষা কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে এখানে। সবচেয়ে বড় বিষয় হতে পারে বিনিয়োগ।



দেশে নতুন নতুন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা গড়ে উঠছে। এসব এলাকায় শতভাগ রপ্তানিযোগ্য পণ্যের কারকানা স্থাপন করা যেতে পারে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প আজ বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। ব্র্যান্ড বাংলাদেশ ইমেজ তৈরি হয়েছে। কর্মসংস্থান, বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ মিকা রেখেছে দেশের পোমাক শিল্প। পোশাক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকার স্টেকহোল্ডারদের নেওয়া ১০২টি উদ্যোগের মধ্যে ৭৭ শতাংশ উদ্যোগের ক্ষেত্রেই এরই মধ্যে অগ্রগতি এসেছে। সার্বিক বিবেচনায় পোশাক খাতের সুশাসন নিয়ে গর্ব করার জায়গায় এসেছে বাংলাদেশ। এই সম্ভাবনাময় শিল্প ছাড়াও অনেক আধুনিক নতুন নতুন শিল্প এখন জায়গা করে নিচ্ছে। সুযোগ পেলে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। আমাদের শুধু সম্ভাবনার জায়গাগুলো নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কাছে তুলে ধরতে হবে। বিশিষ্ট বন্ধু হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহবাধ জানাতেই পারি। পারস্পরিক বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে অস্ট্রেলিয়ার বড় বিনিয়োগ পাওয়া অসম্ভব নয় বলেই আমরা মনে করি। আমরা জানি আপনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাঙালিরাও এখন দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। আপনার আহবান তাদের যে অনুপ্রাণিত করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সেখানে বিনিয়োগের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে বলে আমরা আশা করি।



আপনার সফর খুবই স্বল্প সময়ের জন্য। এই স্বল্প সময়েও আপনি আমাদের জন্য কিছুটা সময় রেখেছেন। আপনার সঙ্গে আমাদের মত বিনিময় হবে। প্রবাসে থেকে আপনাকে কাছে পাওয়ার চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই। বিশ্বের যেকোনো দেশে আপনি প্রবাসীদের জন্য সময় রাখেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এমন সরকার প্রধানের জুড়ি মেলা ভার ।এরইমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রদেশ থেকে বাঙালি কমিউনিটির নেতারা সিডনি এসে পৌঁছেছেন।



আপনাকে দেখে আমরা আশান্বিত হই।

বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top