সিডনী রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গ্র্যান্ড মুফতির ইন্তেকাল


প্রকাশিত:
৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:২৫

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ০২:৫৬


অস্ট্রেলিয়ার প্রভাবশালী আলেম ও সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ তাজুদ্দিন হামিদ আল-হিলালি ইন্তেকাল করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ভোরে মিসরে মারা যান তিনি। এর আগের দিন তিনি মক্কায় পবিত্র ওমরাহ পালন করে নিজ বাড়িতে ফেরেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের বিখ্যাত লাকেমবা মসজিদের ইমাম হিসেবে দীর্ঘ ৩১ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।


তাঁর মৃত্যুতে অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন অব ইসলামিক কাউন্সিল ও লেবানিজ মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন গভীর শোক জানিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ ড. রাতিব জুনাইদ বলেন, ‘শায়খ তাজুদ্দিনের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তাঁকে হারিয়ে আমরা একজন সত্যিকারের জ্ঞানী ও সমাজসেবককে হারালাম। আমরা তাঁর পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি গভীর শোক জ্ঞাপন করছি।


শায়খ তাজ ১৯৮২-২০১৩ সাল পর্যন্ত একজন অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম কমিউনিটিতে ঐক্যের প্রাণ ছিলেন। ৪০ বছরের বেশি সময় তিনি এই দেশের মুসলিমদের সেবায় কাজ করেছেন। আমি নিজেও তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ ৩০ বছর কাজ করেছি। যাঁরা ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে পরিচিত তাঁরা জানেন, তিনি কতটা রসিক ও উদার ছিলেন।

তিনি সব সময় কমিউনিটির সেবার জন্য উদগ্রীব থাকতেন। তিনি খুব সহজেই তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে জনসাধারণকে আকর্ষণ করতে পারতেন। মুফতি ও ইমামের দায়িত্ব থেকে অবসরের পর তিনি উত্তর আফ্রিকায় ধর্মীয় তাৎপর্য নিয়ে ঐতিহাসিক গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত হন এবং মিসরের গ্রামাঞ্চলে মানবিক কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় মুসলিমদের শিক্ষা, পরামর্শসহ নানাভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রাখেন। মহান আল্লাহ তাঁকে উত্তম বিনিময় দিন এবং তাঁকে সর্বোচ্চ জান্নাত দান করুন।


জানা যায়, শায়খ তাজুদ্দিন আল-হিলালি মিসরের সাওহাজ অঞ্চলের সামাতে ১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ গ্রামে পবিত্র কোরআন হিফজ ও প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়া ও আইন বিষয়ে ‘আলামিয়াহ’ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর আরবি ভাষা ও ফিকহুল মুকারিন বিষয়ে উচ্চতর ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন। তিনি মিসরের আওকাফ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইমাম হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন কলেজে আরবি ভাষা ও ইসলামী ফিকহের শিক্ষকতা করেন।

১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত লাকেমবা মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এদিকে ১৯৬৯ সাল থেকে শায়খ জায়দান শারীরিক অসুস্থতার কারণে অস্ট্রেলিয়ার গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারছিলেন না। অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন অব ইসলামিক কাউন্সিল ১৯৮৮ সালে শায়খ আল-হিলালিকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের গ্র্যান্ড মুফতি নিযুক্ত করে। মুসলিম কমিউনিটির সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ২০০৫ সালে শায়খ আল-হিলালিকে বর্ষসেরা মুসলিম ব্যক্তিত্ব হিসেবে ‘অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডস’ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে তিনি লাকেমবা মসজিদের ইমামতি থেকে অব্যাহতি নেন।

শায়খ আল-হিলালির মেয়ে আসমান এক বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘শায়খ আল-হিলালি একটি প্রতিষ্ঠান ছিলেন, যার প্রভাব আমাদের অন্তরে জীবন্ত থাকবে। কমিউনিটিতে তিনি একজন সচেতন বাবার ভূমিকায় ছিলেন। কমিউনিটির যেকোনো সদস্যের ডাকে তিনি সাড়া দিতেন এবং ক্লান্তিহীনভাবে তার জন্য কাজ করতেন। অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম কমিউনিটির সবার অন্তরে ইসলামের ভালোবাসা তৈরিতে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে। মানবিকতা, অধ্যবসায় ও কঠিন কাজের জন্য তিনি অস্ট্রেলিয়াবাসীর কাছে কিংবদন্তিতুল্য ছিলেন। শেষ বয়সে তিনি মিসরে বসবাস করতেন এবং মাঝেমধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় যেতেন।’


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top