সিডনী মঙ্গলবার, ১৪ই মে ২০২৪, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১


ক্রেডিট কার্ডের সামান্য ঋণের কারণে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে অনেক অস্ট্রেলিয়ান


প্রকাশিত:
২৬ অক্টোবর ২০১৯ ১৬:০০

আপডেট:
১৪ মে ২০২৪ ২১:২৪

ক্রেডিট কার্ডের সামান্য ঋণের কারণে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে অনেক অস্ট্রেলিয়ান

অনেকেই বর্তমানে ফার্নিচার বা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গৃহসামগ্রী বা গ্যাজেট কিনতে গিয়ে স্বল্পমেয়াদী ঋণের জন্য বিশেষায়িত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে থাকেন। কয়েকশত ডলার থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকার জিনিস কিনতে গিয়ে স্বল্পমেয়াদে সূদমুক্ত বা দীর্ঘমেয়াদে কিছুটা সূদসহই অনেকে এই ঋণ গ্রহণ করেন। সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ানদের মাঝে এ ধরণের ক্রেডিট কার্ড ঋণ বহুল প্রচলিত একটি বিষয় এবং এর মাধ্যমে প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থের লেনদেন ঘটছে।



কিন্তু এই ছোট অংকের ক্রেডিট কার্ড ঋণের কারণেই সমস্ত সহায়-সম্পদ হারিয়ে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে অনেক পরিবার। অস্ট্রেলিয়ার সরকারী নিয়ম অনুযায়ী কোন অনাদায়ী ঋণ যদি ৫০০০ ডলারের সমপরিমাণ বা তার বেশি অংকের হয় সেক্ষেত্রে ঋণদাতা সংস্থা একটি ট্রাস্ট কতৃপক্ষের মাধ্যমে ঋণগ্রহীতাকে দেউলিয়া ঘোষণা করে তার সম্পত্তি ক্রোকের মাধ্যমে ঐ ঋণ আদায়ের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে। এ সব ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী ট্রাষ্টটিও এই লেনদেনের জন্য হাজার হাজার ডলার ফি হিসেবে আদায় করে নেয়। এ ধরণের ঋণ আদায়কারী সংস্থাগুলো এখন যেসব ঋণগ্রহীতার নিজেদের নামে কোন বাড়ির মালিকানা আছে তাদের ক্ষেত্রে বর্ধিত হারে এ ধরণের ব্যবস্থা নেয়ার ফলে সামান্য কিছু ঋণের কারণে সারাজীবনের সঞ্চিত অর্থে কেনা সব সহায়-সম্পত্তি হারানোর মুখোমুখি অবস্থায় পড়ছে এই পরিবারগুলো।



নিউ সাউথ ওয়েলসের নিউক্যাসলে বসবাসরত মিস্টার এবং মিসেস ফরেস্ট এমনই এক দম্পত্তি। বর্তমানের পঞ্চাশের কোঠায় বয়স, প্রায় বার্ধক্যে উপনীত দুজনেই সারাজীবন কাজ করেছেন এবং পাবলিক হাউজিং এ বসবাস করেছে। মিসেস ফরেস্ট ছিলেন একজন রাঁধুনী কিন্তু সম্প্রতি তিনি অসুস্থতার জন্য আর কাজ করতে পারছেন না। অন্যদিকে তার স্বামী একজন ট্রাক ড্রাইভার হিসেবে এখনও কাজ করে যাচ্ছেন।



সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে মর্টগেজের মাধ্যমে তারা একটি বাড়ি কিনেছেন। গত পাঁচ বছর আগে তারা এ ধরণের স্বল্পমেয়াদী একটি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে একটি বিছানা এবং একটি ওয়াশিং মেশিং ক্রয় করেন। সূদমুক্ত মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ত্রিশ শতাংশ সূদ যোগ করে ঐ ঋণ তারা কিস্তিতে পরিশোধ করে আসছিলেন। অন্যদিকে বাড়ির মর্টগেজ ও অন্যান্য বিলের কারণে কিছুদিন পর তারা ঐ কিস্তি পরিশোধে অপারগ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন পরে এসে হঠাৎই গত বছরের মে মাসে তারা একটি ঋণ আদায়কারী সংস্থা থেকে পাওয়া ফোনকলে জানতে পারেন, বর্তমানে সূদসহ এই ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এগারো হাজার ডলার এবং তাদের একমাত্র সম্পত্তি বাড়িটি ক্রোক করার মাধ্যমে এ ঋণ আদায়ের আইনী কার্যক্রম শুরু করেছে লায়ন ফাইন্যান্স নামের এই ঋণ আদায়কারী সংস্থাটি।



এমনকি নর্দান টেরিটরির একজন সংসদ সদস্য জেফ কলিন্স নিজেও এমন এক ঘটনার শিকার হয়েছেন। তার সামান্য কয়েক হাজার ডলারের ঋণ সূদসহ বেড়ে দাঁড়িয়েছিলো প্রায় ছয় হাজার ডলারে। পরবর্তীতে তিনি নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করে যাচ্ছিলেন কিন্তু প্রায় দুই বছর পর হঠাৎ করে লায়ন ফাইন্যান্স তার কাছ থেকে মোট তেরো হাজার ডলার আদায়ের জন্য তাকে দেউলিয়া ঘোষণার আইনী কার্যক্রম শুরু করে। যদিও তিনি আদালতে সেই মামলার মোকাবিলা করে নিজের বাড়ি রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছেন এবং এই বিশাল অংকের টাকার এখনও কিস্তিতে পরিশোধ করে যাচ্ছেন, কিন্তু অনেক পরিবার ইতিমধ্যেই এ ধরণের ক্ষুদ্র ঋণের শিকার হয়ে নিজেদের বাড়ি হারিয়ে দেউলিয়ায় পরিণত হয়েছে। জেফ কলিন্স বলেন, এই ঋণ আদায়কারী সংস্থাটির কোন ধরণের নৈতিকতা নেই।



এ ধরণের অনৈতিক অর্থনৈতিক চর্চার কারণে বর্তমানে অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন আইনগতভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করার জন্য পর্যাপ্ত অনাদায়ী ঋণের ন্যুনতম অংক পাঁচ হাজার থেকে বাড়িয়ে অন্তত বিশ হাজার কিংবা তারও বেশি করা প্রয়োজন। অন্যথায় এই সুযোগে ঋণ আদায়কারী সংস্থাগুলো সামান্য ঋণকে সূদ এবং নানা শর্তের মারপ্যাচে বিশাল খরচসহ দেখিয়ে অনেক পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে ফেলছে।



 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top