প্রভাত ফেরীর পৃষ্ঠপোষকতায় এবং একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়ার আয়োজনে সিডনিতে বইমেলা
প্রকাশিত:
১২ মার্চ ২০২৪ ১২:৫০
আপডেট:
১২ মার্চ ২০২৪ ১২:৫৪
প্রভাত ফেরীর পৃষ্ঠপোষকতায় এবং একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়া আয়োজনে গত ৩ মার্চ রোববার অ্যাশফিল্ড পার্কে অনুষ্ঠিত হলো সিডনি বইমেলা। উল্লেখ্য যে ২০০৬ সালে সিডনির অ্যাশফিল্ড পার্কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। তারপর থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে দেশীয় বই মেলার আদলে গত ২৫ বছর ধরে এই মেলার আয়োজন চলছে।
সিডনিতে এটাই একমাত্র বই মেলা। সিডনি থেকে প্রকাশিত প্রভাত ফেরী পত্রিকার পৃষ্ঠপোষকতায় এবারের বইমেলায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক। এ মেলার জন্য সারা বছর উম্মুখ হয়ে থাকে এখানকার লেখক-পাঠকরা। কথা সাহিত্যিক আনিসুল হকের নেতৃত্বে প্রভাত ফেরীর মধ্য দিয়ে সকালে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদান করা হয়। এরপর অ্যাশফিল্ড পার্কে সিডনিতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা বইমেলা প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করে ভাষা শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মান্যবর আল্লামা সিদ্দিকী এবং সম্মানিত মার্ক জোসেফ কুরি, এম পি, বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন। এই সময় উপস্থিত ছিলেন প্রভাত ফেরীর প্রধান সম্পাদক শ্রাবন্তী কাজী, একুশে একাডেমির সভাপতি আবদুল মতিন, সিডনিতে অবস্থিত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল জনাব শাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় কাউন্সিলর, মেয়র, একুশে একাডেমির জেনারেল সেক্রেটারি জনাব রওনক হাসান, একাডেমির অন্যান্য সদস্যগণ এবং কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিডনির প্রখ্যাত শিল্পী অমিয়া মতিনের নেতৃত্বে দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন একুশে একাডেমির শিল্পীরা।
এরপর সম্মানিত অতিথিদের মেলার স্টেজে নিয়া যাওয়া হয়।
সম্মানিত অতিথিদের নিয়ে এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন রওনক হাসান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন হাইকমিশনার মান্যবর এম আল্লামা সিদ্দিকী, প্রভাত ফেরীর প্রধান সম্পাদক শ্রাবন্তী কাজী, আশীষ বাবলু, কনসাল জেনারেল জনাব শাখাওয়াত হোসেন, সম্মানিত এম পি মার্ক জোসেফ কুরী এম পি সহ স্থানীয় কাউন্সিলরবৃন্দ এবং একুশে একাডেমির সভাপতি জনাব আবদুল মতিন।
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে থাকে বই প্রেমীরা ছুটে আসেন এই মেলায় অংশগ্রহনের জন্য।
বিপুল সংখ্যক সাহিত্য প্রেমী দর্শক, বইপ্রেমী ক্রেতা, শিশু-কিশোর-তারুন্য অংশ নেন। জায়গায় জায়গায় আড্ডা জমতে দেখা যায়। বই কেনার পাশাপাশি অনেকেই বই উল্টেপাল্টে দেখছিলেন। প্রবাসী বাংলাদেশি পাঠকের সঙ্গে কথা বলে, অটোগ্রাফ দিয়ে ও ছবি তুলে দিনভর স্টলে স্টলে ঘুরে বেড়ান আনিসুল হক।
সাহিত্যিক শাখাওয়াত নয়নের উপস্থাপনায় সিডনি প্রবাসী ১২ জন লেখকের বইয়ের মোড়ক উম্মোচিত করেন কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক এবং প্রভাত ফেরীর প্রধান সম্পাদক শ্রাবন্তী কাজী।
বইমেলা উপলক্ষে শাখাওয়াত নয়নের সম্পাদনায় ‘মাতৃভাষা’ নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়।
মহান ভাষা আন্দোলনের স্মরণে মঞ্চে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, মঞ্চনাটিকা, সহ বিভিন্ন আয়োজন। বাংলাদেশি অনেক মুখরোচক খাবারের স্টলও ছিল। একুশে একাডেমির শিল্পী গোষ্ঠীর সুমি দে, অমিয়া মতিন, পিয়াসা বড়ুয়ার নেতৃত্বে সিডনির বিভিন্ন বয়সীদের পরিবেশনা বই প্রেমী পাঠকদের মুগ্ধ করে।
প্রথম বারের মতো অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ সম্মাননা পেলেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, সিডনির সংবাদমাধ্যম প্রভাতফেরীর সম্পাদক শ্রাবন্তী কাজী আশরাফী ও একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার নেহাল নেয়ামুল বারী। বইমেলার আয়োজক একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়া কর্তৃক ‘ভাষা দিবস সম্মাননা’ নামের সম্মাননা প্রদান করেন ক্যানবেরায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনার এম আল্লামা সিদ্দিকী।
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান নিয়ে সিডনির একুশে বইমেলার আয়োজক সংগঠন একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি আবদুল মতিন বলেন, ‘সিডনিতে বইমেলা আয়োজনের ধারাবাহিকতার ২৫ বছর পূর্তি ছিল এবার। এই বিশেষ উপলক্ষে আমরা ভাষা দিবস সম্মাননা প্রদান করেছি। বাংলাদেশ থেকে আসা আমাদের আমন্ত্রিত অতিথি আনিসুল হক; বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ভাষা দিবস সম্মাননা দেওয়া হয়েছে তাঁকে।’
আবদুল মতিন আরও বলেন, এবারের সিডনির বইমেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রভাতফেরীর সম্পাদক শ্রাবন্তী কাজী আশরাফীকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয় বাংলাদেশ কমিউনিটিতে তাঁর বিশেষ অবদানের জন্য। শ্রাবন্তী কাজী শুধু এবারই পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, এমন নয়; তিনি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান সুযোগ পেলেই বাংলাদেশি যেকোনো অনুষ্ঠানকে সহযোগিতা করেন সব সময়। বইমেলা আয়োজনের পথচলা শুরু যাঁর হাত ধরে, তিনি সিডনিপ্রবাসী বাংলাদেশি নেহাল নেয়ামুল বারী। তাঁকে ভাষা দিবস আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সবশেষে একুশে বইমেলার আয়োজক একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি আবদুল মতিন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: