সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৫ই বৈশাখ ১৪৩১

গিলগামেশ : এস ডি সুব্রত


প্রকাশিত:
১০ এপ্রিল ২০২১ ১৯:২৫

আপডেট:
১৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৪৫

 

বইমেলা মানে নতুন বইয়ের গন্ধ। লেখক প্রকাশক ও পাঠকের এক মিলনমেলা। করোনার কারনে বইমেলা এবার ফেব্রুয়ারি তে না হয়ে শুরু হয়েছে মার্চে। সংগত কারণেই বইপ্রেমীদের ভীড় স্বাভাবিক এর চেয়ে কম। বইমেলা বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অসংখ্য বইয়ের ছবি। পৃথিবীর প্রথম বই কে লিখেছিল, কি সেই বইয়ের নাম প্রশ্ন জাগে মনে।

পৃথিবীর প্রথম বই হিসেবে যে নামটি পাওয়া যায় তা হলো "গিলগামেশ" যা একটি মেসোপটেমীয় মহাকাব্য। অবশ্য কারো মতে এটি উপন্যাস, আবার কারো মতে গল্প। গিলগামেশ এর কাহিনী প্রথম শুরু হয় ৫ টি সুমেরীয় কবিতার মাধ্যমে।

গিলগামেশ প্রায় চার হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ায় (বর্তমান ইরাক সিরিয়া) লেখা হয়েছিল। লেখক এর নাম জানা যায়নি। বইটি ব্রিটিশ যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে মাটির ফলকে। এটা লেখা হয়েছিল পৃথিবীর প্রাচীন বর্ণমালা কিউনিফর্মে (কিলকাকার)। তখনকার লিপিকাররা নল খাগড়া দিয়ে কাদা মাটির উপর কীলক খোদাই করে লিখত।

১৮৭০ সালে জর্জ স্মিথ নামে লন্ডনে এক শ্রমজীবী ব্রিটিশ যাদুঘরে এই মাটির ফলক দেখতে যেয়ে পাঠোদ্ধার করেন এবং আমরা গিলগামেশ নামক পৃথিবীর  প্রথম বইটির নাম  জানতে পারি। ২০১১ সালে ইরাকের সুলায়মানিয়া যাদুঘরে  গিলগামেশ এর দ্বিতীয় একটা কপি উদ্ধার করা হয়েছিল। গিলগামেশ হলো উড়ুক (বর্তমান ইরাক) এর দক্ষিণে  অবস্থিত শহরের রাজা। গিলগামেশ ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা এবং অন্যদিকে নারী লিপ্সু ও অত্যাচারী রাজা। তিনি বিয়ের আসর থেকে মেয়েদের কে তুলে নিয়ে যেতেন।তখন দেবতারা মিলে এনকিডু নামের এক বন্য মানুষ তৈরি করেন উড়ুকের জনগণকে রাজার অত্যাচার থেকে  রক্ষার জন্য।  গিলগামেশের মহাকাব্য অনুযায়ী এনকিডুকে প্রেরণ করেন গিলগামেশের সাথে যুদ্ধ করার জন্য। কিন্তু এক পর্যায়ে এধকিডু গিলগামেশের ভাল বন্ধু তে  পরিনত হয়।এনকিডু টারজানের মতো একটা চরিত্র যাকে দেবতা আরুরু আবির্ভাব ঘটান। দেবমাতা নিনসন এনকিডু কে তার দ্বিতীয় পুত্র হিসেবে গ্রহন করেন। দেবমাতা নিনসনের আদেশে গিলগামেশ ও এনকিডু  বিভিন্ন অভিযানে যান তার কাহিনী এই উপাখ্যানে বর্ণিত আছে। ঘটনা চক্রে স্বর্গের ষাঁড় হত্যা অপদেবতা হুমাবাবা হত্যার জন্য এনকিডুর শাস্তি হয় মৃত্যুদণ্ড। এতে গিলগামেশ হতাশায় ভেঙে পড়েন।সে এটা মন থেকে মেনে নিতে পারে না।গিলগামেশ  বন্ধু কে পূণর্জীবিত করার জন্য চেষ্টা চালান । অমরত্বের রহস্য জানার জন্য গিলগামেশ যান উৎনাপিশতিম এর কাছে। অনেক চেষ্টা করে গিলগামেশ মৃত্যু সাগরপাড়ে পৌঁছে। কিন্তু সে সাগর উৎনাপিশতিম এর মাঝি  উর্শানারি ছাড়া কেউ পাড়ি দিতে পারে না। কিন্তূ উর্শানারি গিলগামেশ কে পাড় করে নি। সে নিজের চেষ্টায় হাজির হয় উৎনাপিশতিমের কাছে।গিলগামেশ  উৎনাপিশতিম এর কাছে অমরত্বের সন্ধান চায়। উৎনাপিশতিম গিলগামেশ কে অমরত্বের সন্ধান জানা নেই বলে জানিয়ে দেয়। গিলগামেশের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে উৎনাপিশতিম এর স্ত্রী তার স্বামীকে অনুরোধ জানান  গিলগামেশ কে অমরত্বের সন্ধান দেয়ার জন্য। অবশেষে উৎনাপিশতিম তার স্ত্রীর অনুরোধে গিলগামেশ কে অমরত্বের সন্ধান দেন। তিনি বলেন মৃত্যু সাগরের তলায়  কাটা যুক্ত এক ধরনের লতা যার নাম জীয়নলতা। এটা মানুষ কে অমরত্ব দিতে পারে। গিলগামেশ জীয়নলতা উদ্ধার করে উড়ুকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পথে এক দিঘীর ঘাটে জীয়ন লতা রেখে  স্নান করতে নামে।স্নান শেষে এসে দেখে জীয়ন লতা নেই। জীয়ন লতা সাপে খেয়ে ফেলে। সাপের খোলস দেখতে পেয়ে সেটা টের পায় গিলগামেশ।

গিলগামেশ বাঁচাতে পারে নি এনকিডুকে। এর পর গিলগামেশ অনুধাবন করতে পারে যে মৃত্যু সত্য। সবাইকে মরতে হবে একদিন।

এভাবেই গিলগামেশ এর কাহিনী শেষ হয় এক সময়। গিলগামেশ এর বাংলা অনুবাদ করেন হায়ৎ মামুদ।

 

এস ডি সুব্রত
কবি ও প্রাবন্ধিক
সুনামগঞ্জ, বাংলাদেশ

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top