সিডনী সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১


ঈদ যাত্রায় পথে পথে বাড়িমুখো মানুষের স্রোত


প্রকাশিত:
৯ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩৬

আপডেট:
৬ মে ২০২৪ ০৪:২৮


ঈদের ছুটিতে রাজধানী থেকে ঘরে ফেরার তাড়া বেড়েছে কর্মজীবী মানুষের। গতকাল সোমবার অফিস শেষ করে অনেকে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছে। অন্যরা আজ মঙ্গলবার ঢাকা ছাড়বে।

বাস, ট্রেন ও লঞ্চ—সব ধরনের পরিবহনে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।খোলা ট্রাকে করেও অনেকে গেছে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে।
যাত্রীর চাপ থাকলেও দেশের বেশির ভাগ জাতীয় মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথায় তীব্র যানজটে দুর্ভোগের খবর পাওয়া যায়নি। তবে পরিবহনসংকট দেখা গেছে অনেক জায়গায়।


এই সুযোগে বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ট্রেনের আসনের সব টিকিট আগেই অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। তবে যাত্রার আগে অতিরিক্ত বগির টিকিট কাউন্টারগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে। কমলাপুরে রয়েছে স্ট্যান্ডিং টিকিটের ভিড়।


গতকাল আন্ত নগর, বিশেষ, কমিউটার ও লোকাল মিলিয়ে মোট ৬৯টি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে গেছে।

ময়মনসিংহের পথে যাত্রীর ঢল, বাস সংকট

গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণার পরপরই ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। গতকাল দুপুরের দিকে হঠাৎ করে মহাসড়কে যানবাহন কমে গেছে।

যাত্রী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। সড়কে যাত্রী বাড়ায় ভাড়া বেড়েছে কয়েক গুণ।


গতকাল দুপুরের পর টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-ঘোড়াশাল সড়কেও স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে। নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরতে মহাসড়কের পাশে জড়ো হয়েছে হাজারো মানুষ।

গাজীপুরগামী বলাকা বাসের চালক জানান, অনেকে ঈদের ছুটিতে চলে গেছে। বিকেলে পোশাক কারখান ছুটি হলে চাপ বাড়বে। শেরপুরগামী যাত্রী ইকরাম মিয়া বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি পরিবার নিয়ে। গাড়ির অপেক্ষায় আছি।’

চট্টগ্রামের পথে আরামের যাত্রা

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যাত্রীর পাশাপাশি বেড়েছে যানবাহনের চাপ। তবে মহাসড়কের কোথাও কোনো যানজট হয়নি। যাত্রীরা স্বস্তিতেই যেতে পারছে।

গতকাল সকাল থেকে মহাসড়কের কোথাও কোনো পরিবহনের ধীরগতি বা চাপ দেখা যায়নি। ঢাকা ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী বিরতিহীন বাসগুলো কোনো দুর্ভোগ বা যানজট ছাড়াই অনায়াসে মেঘনা সেতু পার হচ্ছে। একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী পরিবহনও স্বাভাবিক গতিতে যাচ্ছে।

হাইওয়ে পুলিশ বলছে, এবারের ঈদ যাত্রা উপলক্ষে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, সড়ক দখল করে যানবাহন পার্কিংসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ডিভাইডার দিয়ে আলাদা লেন করা হয়েছে। এ ছাড়া যেসব স্থানে যানজটের শঙ্কা রয়েছে, সেখানে ইউটার্ন দেওয়া হয়েছে। এতে যানজট অনেকাংশে কমে গেছে।

সিলেটের পথে যানজটের ঝুঁকি

ঈদ যাত্রায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিলেট বিভাগ অংশে অন্তত ছয়টি স্থানে যানজটের বিশেষ ঝুঁকি রয়েছে। মহাসড়কের হবিগঞ্জের মাধবপুর বাজার সড়ক, অলিপুর ও শায়েস্তাগঞ্জ গোলচত্বরসহ শেরপুর, গোয়ালাবাজার থেকে চণ্ডীপুল এলাকা যানজটের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

মহাসড়কের ৩৬টি স্থানকে যানজটের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। মহাসড়কের উন্নয়নকাজ চলমান থাকা, রাস্তার পাশে বাজার এবং অবৈধ যান চলাচলের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে।

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূল সড়ক অক্ষত রয়েছে, সড়কের পাশে উন্নয়নকাজ চলছে। আর ঈদের আগে কাজ আরো সীমিত করা হচ্ছে।

তবে বিষয়টি মানতে নারাজ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা। তাঁরা বলছেন, উন্নয়নকাজের জন্য এখনই সড়কে যানজট লেগে থাকে, ঈদের চাপ আরো বাড়বে। বাড়বে যানজট আর ভোগান্তি।

সিলেটের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, মূল সড়কের কাজ শুরু হয়নি। এটি অক্ষত রয়েছে। ঈদের আগে উন্নয়নকাজ সীমিত করে আনা হবে। ফলে ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগ তেমন বাড়বে না। এ ছাড়া সড়কের যেসব স্থানে ভাঙাচোরা রয়েছে, সেসব স্থানে ঈদের আগে সংস্কার করা হবে।

সাভারে বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ

বেলা বাড়তেই সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়কে যাত্রীর ভিড় বাড়ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, ভিড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভাড়াও। গতকাল দুপুরের পর থেকে সাভার বাসস্ট্যান্ড, নবীনগর, বাইপাইলসহ মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ায় ঈদে বাড়ি যেতে বাইপাইলে পরিবারসহ এসেছেন রফিক হোসেন। যাবেন রংপুর। বাইপাইলে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও বাস পাননি। দু-একটা পেলেও তিন গুণ ভাড়া বেশি। তিনি বলেন, ভোগান্তি থাকলেও বাড়িতে গেলে সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, পোশাক কারখানার শ্রমিকরা একযোগে বাড়ি যাচ্ছেন। প্রায় অর্ধকোটি মানুষের ঢল নেমেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপও বাড়ছে। তবে যানজট নিরসনে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

শেষ বেলায় লঞ্চে যাত্রীর চাপ

রাজধানীর সদরঘাট থেকে প্রতিটি লঞ্চে যাত্রীর চাপ তৈরি হয়েছে। বিশাল আকৃতির এসব লঞ্চে যারা যাচ্ছে, তাদের চোখে-মুখে ক্লান্তি ছাপিয়ে স্বস্তির ছাপ। নির্ধারিত ভাড়ায় সময়মতো ঘাট ছাড়ছে লঞ্চগুলো।

আমাদের চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুর টার্মিনালে নেমে বাড়ি যেতে প্রয়োজন অন্য বাহন। প্রতিটি লঞ্চে উপচে পড়া যাত্রীর চাপ। এর পরও নৌপথে যাত্রীবাহী লঞ্চে স্বস্তির যাত্রা। তবে টার্মিনাল থেকে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বাড়ি যেতে হচ্ছে মানুষজনকে। এই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অনেকেই।

গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এমন চিত্র দেখা গেছে চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনালে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘শেষ দিকে লঞ্চে যাত্রীর চাপ তৈরি হয়েছে। আমাদের অতিরিক্ত লঞ্চও প্রস্তুত রয়েছে। যাত্রীরা নির্বিঘ্নে গন্তব্যে যেতে পারবে।’

২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৩০ লাখ যান

ঈদ সামনে রেখে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। গত রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ২৯ হাজার ৭৮০টি যানবাহন পারাপার হয়। এই সময় দুই কোটি ৫০ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা সেতুর টোল আদায় হয়েছে।

টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব অংশে ১৫ হাজার ৮৫টি যানবাহন পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ৮৫ লাখ ৪০ হাজার ৫০ টাকা। সেতুর পশ্চিম অংশে ১৪ হাজার ৬৯৪টি যানবাহন পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ৩২ লাখ ৩৫ হাজার ১৫০ টাকা। সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার হয়েছে দুই হাজার ৭১০টি।

সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানান, যানজট নিরসনে সেতুর উভয় অংশে ৯টি করে ১৮টি টোল বুথ স্থাপনসহ মোটরসাইকেলের জন্য চারটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।

মহাসড়কের পার্শ্ব সড়কে চলছে ট্রাক

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়ে ও মহাসড়কে যাত্রীদের চলাচল বেড়েছে। তবে বাস, ট্রাক কিংবা অন্য যানবাহনের ছাদে লোক চলাচল করতে দেখা যায়নি। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়ের বগাইল টোল প্লাজায় দেখা যায়, গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে মোটরসাইকেলের চলাচল অনেক বেড়েছে। ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-খুলনাগামী মোটরসাইকেল আরোহীরা নির্বিঘ্নে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যেতে পারছে।

ঢাকা থেকে ভাঙ্গা নেমে অনেকেই বরিশাল কিংবা খুলনা যাওয়ার জন্য স্থানীয় পরিবহনে উঠছে। কিছু বিশেষ পরিবহনও চালু হয়েছে। যাত্রীরা জানায়, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। যদিও বাসের চালকরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এদিকে এক্সপ্রেসওয়ের টোল ফাঁকি দিয়ে সার্ভিস রোড দিয়ে অজস্র ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস চলতে দেখা যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এতে সরকার বিপুল পরিমাণ আয়কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top