ফিরে দেখা : স্বপ্না ধর
প্রকাশিত:
২৮ এপ্রিল ২০২১ ২০:৫১
আপডেট:
১৯ জুন ২০২১ ২০:২৩
শ্রাবণীর মাঝে মাঝে কী যেন হয়। সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না। যতসব আজগুবি ভাবনা তার মাথায় ভর করে। কীসব উল্টোপাল্টা চিন্তায় সে যেন অস্থির হয়ে ওঠে। তার বিষণ্ণ মুখখানা দেখলেই তা বোঝা যেত।
ছোটবেলা থেকেই সে একটু বেশি আবেগপ্রবণ। অল্পতেই তার মন খারাপ হয়। শব্দ করে না কাঁদলেও চোখ থেকে তার জল পড়বেই। এই কারণে কতবার যে তাকে ননীর পুতুল বলে হেয় করেছে তার আপনজনেরা তার কোন ইয়ত্তা নেই। ছোট থেকে সে লেখালেখি করতে ভালোবাসত। কিন্তু তা গোপনে, সবার চোখের আড়ালে। শ্রাবণীর মা ঠিকই বুঝত।
একবার কী হলো, তার মাকে যিনি কোলেপিঠে মানুষ করেছিলেন সেই নিঃসন্তান পিসির প্রয়াণ দিবসে পত্রিকায় ছাপানোর জন্য কিছু একটা লেখার প্রয়োজন পড়ল। কোন কিছু বলার আগেই শ্রাবণী সুন্দর করে তা লিখে দিয়েছিল। মায়ের খুব মনে ধরেছিল লেখাটা। তখন থেকে প্রায়ই তার মা তাকে পুরোনো কাহিনি গল্পাকারে বলে বলে শোনাতো। নিজের বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি, সবার কাহিনি। আর বলত, এসব নিয়ে একটা বই লিখ। তার মায়ের অগাধ বিশ্বাস ছিল যে সে খুব ভালো লিখতে পারে।
আসলে তার উল্টোটা। শ্রাবণী যা ভাবে কল্পনায় বাস্তবে কলম ধরলে তার কিছুই লিখতে পারে না, মনের অগোচরে বিলীন হয়ে যায় । কত শত কাহিনি লেখার জন্য সে মনের মধ্যে ভেবেছে। কিন্তু আজ অবধি একটাও প্রকাশিত হয়নি। একা একা ভাবে আর পুরোনো স্মৃতিতে ফিরে যায়। সব সুখময় মুহূর্তের কথা ভেবে আনমনে মাঝে মাঝে হেসে ওঠে।
কী সুন্দর সময় ছিল তখন। কেন এত তাড়াতাড়ি চলে যায়? এই কারণে মনে হয় সবার মুখে মুখে ফেরে সুখের সময় বড় ছোট।
এই তো সেদিন, সানাই বাজিয়ে, জাঁকজমক করে, কত শত বাধা বিপত্তি জয় করে তার বিবাহ হলো পছন্দের সেই রাজকুমারের সাথে। চোখ ভরে সবাই দেখল, কত আশীর্বাদ কত সুনাম! কী সুন্দর একেবারে রাজযোটক। শ্বশুর শাশুড়ির সেরা জামাই। শাশুড়ি মায়ের চোখে বউ আমার অন্নপূর্ণা। রাজপ্রাসাদের স্বপ্ন কোনদিনই শ্রাবণীর মনে ছিল না। সে যা পেয়েছিল তার মূল্য রাজপ্রাসাদের চেয়েও মূল্যবান। স্বর্গীয় এক শান্তির ছায়ায় জীবন কাটাত সে। তারপর কিছুদিন কেটে গেল....
বিষয়: স্বপ্না ধর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: