যেভাবে অনলাইনে পড়াশোনা করবেন বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে
প্রকাশিত:
২২ মে ২০২০ ১৪:৪৬
আপডেট:
২৩ মে ২০২০ ০১:৫৯
প্রভাত ফেরী: বর্তমানে সবকিছুই চলছে অনলাইনে। অফিসের কাজ, আদালতের শুনানিসহ নানান গুরুত্বপূর্ন কাজ শেষ করা যাচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে। শুধুই প্রয়োজন একটি কম্পিউটার আর ইন্টারনেট সংযোগ। কিন্তু এই অনলাইনের মাধ্যমে পড়াশোনা করা যায় বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালগুলোতে সেটা অনেকটাই আমাদের অজানা। স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়াও বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কোর্স করা যাবে এই উপায়ে। আর পড়াশোনার স্বীকৃতি হিসেবে তো থাকছেই সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসনদ।
যাঁরা দূরশিক্ষণ বা ডিসটেন্স লার্নিং প্রোগ্রাম সম্পর্কে জানেন তাঁরা ইতিমধ্যেই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু আমাদের অনেকেরই দূরশিক্ষণ সম্পর্কে ধারণাটা পরিষ্কার না। আজ এ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে-
দূরশিক্ষণ: সহজ ভাষায় বলতে গেলে দূরশিক্ষণ হচ্ছে, দূর হতে শিক্ষা গ্রহণ। শিক্ষকের নিকটে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বশরীরে উপস্থিত না থেকে পড়াশোনা করা। এতে আপনি নিজ বাসায় বসে দেশের অভ্যন্তরে বা বিদেশের বিভিন্ন নামিদামি শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজগুলোতে পড়তে পারবেন। আর আধুনিক যুগে কম্পিউটার-ইন্টারনেটের কল্যাণে দূরশিক্ষণ আরো উপযোগী হয়ে উঠেছে। লাইভ ক্লাস, লেকচার, ট্রেইনিং, পরীক্ষা বলতে গেলে প্রায় সবকিছুই হচ্ছে অনলাইনে। এ ছাড়া শিক্ষকদের সাথে লাইভ চ্যাটের সুবিধা, সার্বক্ষণিক সহপাঠীদের সাথে অনলাইনে যোগাযোগ, দূরশিক্ষণের মানকে দিন দিন উন্নত করছে। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে দূরশিক্ষণ বেশ পাল্লা দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, সারা বিশ্বের স্নাতকদের এক-তৃতীয়াংশ কোনো না কোনো ভাবে দূরশিক্ষণের সাথে জড়িত।
যাদের জন্য দূরশিক্ষণ: বিদেশে গিয়ে সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনার স্বপ্ন তো সবারই থাকে। কিন্তু তার জন্য কম ঝক্কিও তো পোহাতে হয় না। এ সমস্যা সমাধানে দূরশিক্ষণ অনেকখানিই পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে। বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বেশির ভাগই উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ার সাধ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সাধ্য থাকে না। কারণ সেসব দেশে থাকা-খাওয়াসহ পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অনেক ব্যয়বহুল। দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থী নিজ দেশে বসেই পড়ালেখা করতে পারে। তাই থাকা-খাওয়ার অতিরিক্ত খরচটা তো বাঁচেই, উপরন্তু পড়ালেখার খরচটাও গতানুগতিক শিক্ষার্থীদের থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কম নেওয়া হয়। এ ছাড়া চাকরির পাশাপাশি দূরশিক্ষণের মাধ্যমে পড়ালেখা করেন অনেকেই। দূরশিক্ষণ যেমন একজন শিক্ষার্থীকে সহজেই বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ করে দিচ্ছে, তেমনি সেসব বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি ডিগ্রি বা সনদ চাকরির বাজারে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখছে অনেকটাই।
দূরশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় :এতক্ষণে যদি দূরশিক্ষণ সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পেয়ে থাকেন, তাহলে এবার আলোচনা করা যাক দূরশিক্ষণের জন্য শীর্ষস্থানীয় কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান দূরশিক্ষণের জন্য জনপ্রিয়। এ ছাড়া আমেরিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরশিক্ষণ চালু আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িত কয়েকটি জনপ্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো, বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিস ম্যাডিসন, পেনিসেলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি। যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন (ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন), ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার, ইউনিভার্সিটি অব লিভারপুল, ইউনিভার্সিটি অব নর্থহ্যাম্পটন, এডিনবার্গ নেপিয়ার ইউনিভার্সিটি, অ্যাশরিজ বিজনেস স্কুল ইত্যাদি। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু আছে।
কোর্সেরা: কোর্সেরা বিশ্বের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত আছে। কোর্সেরার মাধ্যমে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে বিভিন্ন অনলাইন কোর্স সম্পন্ন করা যাবে। কোর্সেরা বর্তমানে মেডিসিন, জীববিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, গণিত, কম্পিউটার বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে ওপরে কোর্সের সুযোগ দিচ্ছে।
খান একাডেমি: অলাভজনক অনলাইন শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট খান একাডেমি সম্প্রতি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পৃথিবীর যেকোন স্থানে বসেই খান একাডেমিতে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করা যাবে। খান একাডেমির লাইব্রেরিতে নানা বিষয়ের ওপরে রয়েছে চার হাজার ৫০০টির অধিক ভিডিও। এসব ভিডিও যেকোনো জটিল বিষয়ও অনেক সহজসরলভাবে বুঝতে সাহায্য করবে আপনাকে।
শিক্ষাবৃত্তির সুবিধা: সাধারণত দূরশিক্ষণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ খরচ নিয়ে থাকে। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে দূরশিক্ষণের জন্য শিক্ষাবৃত্তির সুযোগ। এসব বৃত্তির মধ্যে রয়েছে-
কমনওয়েলথ ডিসটেনস লার্নিং স্কলারশিপ: কমনওয়েলথভুক্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীর জন্য এই শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির আওতায় ৩০টির অধিক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পান। সম্পূর্ণ শিক্ষার খরচ কমনওয়েলথ বৃত্তি তহবিল থেকে দেওয়া হয়।
ইউনিভার্সিটি অব পিপলস টিউশন ফ্রি ডিগ্রি: ইউনিভার্সিটি অব পিপলস বিশ্বের প্রথম অনলাইন বিশ্ববিদালয়। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে বিনামূল্যে ব্যবসায় প্রশাসন ও কম্পিউটার সায়েন্সের ওপর ডিগ্রি অর্জনের সুবিধা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অনলাইনে ক্লাস নেন হার্ভার্ড-অক্সফোর্ডের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাঘা বাঘা সব শিক্ষক। ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের চাকরির জন্যও উপযোগী করে তোলে। কীভাবে? ইউনিভার্সিটি অব পিপলস তার বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করে দেয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়টির সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে মাইক্রোসফট ও এইচপির মতো জায়ান্টও। বছরে সাধারণত পাঁচ বার ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। সেখানে পরবর্তী শিক্ষামেয়াদে ভর্তির জন্য সুযোগ থাকছে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তারিখ পর্যন্ত।
এডিনবার্গ গ্লোবাল ডিসটেনস লার্নিং স্কলারশিপ: যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীর জন্য এই শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে। চার ধরনের বৃত্তির আওতায় ৩০টির অধিক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সুযোগ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের তিন বছরের জন্য সব শিক্ষার খরচ বহন করে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
অনলাইনে বিনামূল্যে কোর্সের সুযোগ: দূরশিক্ষণের মাধ্যমে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়াও বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সুযোগ থাকে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানই বিনামূল্যে কোর্সের সুযোগ দেয়। বাসায় বসে বিনামূল্যের এসব কোর্স করে নিজের দক্ষতার পাশাপাশি চাকরির জীবনবৃত্তান্তটির ওজন বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে অনায়াসেই।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: