ভিভিড ফেস্টিভ্যালে আবারও জীবন সিডনি শহর : মোঃ ইয়াকুব আলী
প্রকাশিত:
৩১ মে ২০২২ ২০:৫১
আপডেট:
৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:০৩
করোনার প্রকোপ কাটিয়ে দীর্ঘ দুবছর পর আবার প্রাণ ফিরে পাচ্ছে রঙের শহর (সিটি অব কালারস) সিডনি। সিডনির হারবার ব্রিজের পৃথিবী বিখ্যাত যে আতশবাজি দিয়ে বছরের শেষ এবং নতুন বছর শুরু করা হয় সেখানে আলোর প্রদর্শনীতে সিডনিকে সিটি অব কালারস নামে উপস্থাপন করা হয়। বাস্তবেও সিডনি আসলেই রঙের শহর। এখানে ঋতু বদলের সাথে সাথে প্রকৃতি যেমন রং বদলায় তেমনি ঋতুর সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন উৎসবের রঙে শহর বর্ণিল হয়ে উঠে।
কিন্তু বিগত দুবছর সিডনিতে যেন শীতনিদ্রায় (হাইবারনেশন) চলে গিয়েছিলো করোনার প্রকোপে। অবশেষে এই বছর থেকে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এবং সিডনি বিভিন্ন উৎসবের রঙে নিজেকে আবার রাঙিয়ে নিচ্ছে। বছর ব্যাপী বিভিন্ন উৎসব চলতেই থাকে। কিন্তু শীতকাল আসলে সিডনি শহর শীতের তীব্রতায় কেমন জানি ঝিমিয়ে পড়তে চায়। ঠিক তখনই আয়োজন করা হয় 'ভিভিড সিডনি' নামের আলোর উৎসবের।
২০০৯ সাল থেকে এই উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। বর্ণিল আলোকচ্ছটা আর প্রাণচাঞ্চল্যকর মিউজিকে শীতের রাতের নির্জীব সিডনি শহর যেন প্রাণ ফিরে পায়। হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড়ে সিডনির পথঘাট মুখরিত হয়ে উঠে। সারা শহরের খাবার দোকানগুলোর সামনে ভিড় বাড়তে থাকে। আর মানুষ সারা শহর ঘুরেঘুরে আলোকচ্ছটার ধাঁধা দেখতে থাকে। সিডনির বারাঙ্গারু, সেন্ট্রাল স্টেশন, সার্কুলার কিয়ে স্টেশন, দি রকস, ডারলিং হারবার, ডারলিং কোয়ার্টার, লুনা পার্ক, তরঙ্গা জু, ইউনিভার্সিটি অব সিডনি প্রায় সবজায়গাতেই চলে আলোর এই খেলা।
বিশাল বিশাল ইমারতগুলোও যেন প্রাণ পায় আলোর স্পর্শে। একটু পরপর আবার সেই আলোর রং বদলায়। এই রং বদলানো দেখে অনেক সময় শিশু কিশোরেরা মনেকরে এগুলো যেন আসলেই ইমারতের গায়ের রং। সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে আলোর এই খেলা। আর প্রতিবছরই এই খেলায় যোগ হয় নতুন নতুন মাত্রা। সারা শহর ঘুরলে মনেহবে আপনি যেন ছোটবেলায় দাদি নানীর কাছে শোনা রূপকথার কোন গল্পের মায়ালোকে ঢুকে পড়েছেন।
দুবছর গৃহবন্দী থাকার পর মানুষ এইবার দলবেঁধে এই ভিভিড ফেস্টিভ্যালের আলোর খেলা দেখতে বেরিয়ে পড়েছে। ভিভিডের সর্বশেষ আয়োজন ছিলো ২০১৯ সালে। সে বছর রেকর্ড সংখ্যা দুই দশমিক চার মিলিয়ে দর্শনার্থী ভিভিডের এই আলোর খেলা দেখেছিলো। আশাকরা হচ্ছে এবছর সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে। আর ভিভিডের ফলে পর্যটন খাতে একটা বিশাল বড় অংকের যায় যোগ হয়। ২০১৯ সালে ১৭২ মিলিয়ন ডলার যোগ হয়েছিলো ভিভিডের যায় থেকে।
ভিভিড সিডনি ফেস্টিভ্যাল পৃথিবীব্যাপী বিখ্যাত এক উৎসবের নাম। ভিভিড সিডনি আন্তর্জাতিক ফেষ্টিভ্যাল এবং ইভেন্ট এসোসিয়েশন (আই এফ ই এ) কর্তৃক স্বীকৃত এক নাম এবং ২০১৯ সালে পনেরটা ক্যাটেগরিতে পুরুস্কার অর্জন করে। এছাড়াও ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে সেরা পর্যটন ইভেন্টের স্বীকৃত পায়। নিউ সাউথ ওয়েলস (এন এস ডব্লিউ) সরকারের 'ডেস্টিনেশন যেন এস ডব্লিউ' সংস্থাটি এই ভিভিড সিডনি ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে থাকে।
আপনি সিডনির যেকোন প্রান্ত থেকেই এই উৎসবে যোগদান করতে পারেন। সার্কুলার কিয়ে স্টেশনে নামলেই একইসাথে সিডনির বিখ্যাত অপেরা হাউস এবং হারবার ব্রিজকে আলোকিত দেখতে পারবেন। এছাড়াও আশেপাশের ইমরোতগুলোতে চলে বিভিন্ন প্রদর্শনী। এরপর আপনি ফেরিতে উঠে বারাঙ্গারুতে চলে যেতে পারেন। সেখান থেকে হেটে ডারলিং হারবারের রঙিন পানির নাচ দেখতে পারেন। ফেরিতে উঠলে পানিতে দেখা মেলে জীবন্ত অপেরা হাউজের ছায়া। এটা একটা অভূতপূর্ব দৃশ্য। জাহাগুলোও সেজে উঠে বর্ণিল সাজে। তাতে প্রদর্শন করা হয় 'আই লাভ সিডনি' এবং 'ভিভিড সিডনি'র সাজের আলোকসজ্জা। আর সেগুলোতে চলে বিভিন্ন পার্টি। বাচ্চাদের জন্যও থাকে অনেক ইন্টার একটিভ ইভেন্টযেখানে বাচ্চারা অংশগ্রহণ করে।
এছাড়াও শহরের দিকে তাকালে মনেহয় যেন পুরো শহরের ইমারতগুলো জেগে আছে। আর পানিতে তার ছায়া পড়ে তৈরি করে গল্পের মায়ালোক। বারাঙ্গারু এবং ডারলিং হারবারেও রয়েছে অনেক রকমের সজ্জা। এইবার বারাঙ্গারুর পায়ে হাঁটা রাস্তাটাকে সাজানো হয়েছে সৌরজগতের আদলে। হাঁটার পথের মাথার উপর শোভা পাচ্ছে সৌরজগতের এক একটা গ্রহ। আর শেষ মাথায় রয়েছে আদিকালের মহাকাশ স্টেশনের প্রদর্শনীর আদলে তৈরি স্ক্রিনে প্রদর্শনী। বাচ্চাদের জন্য এটা খুবই উপভোগ। তাহলে আর দেরি কেন। আপনিও সপরিবারে বেড়িয়ে পড়তে পারেন আলোকের এই মায়ার খেলা দেখতে।
বিষয়: মোঃ ইয়াকুব আলী
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: