সিডনী সোমবার, ১৩ই মে ২০২৪, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩১


শৈত্যপ্রবাহ নেই তবুও কনকনে ঠাণ্ডা!


প্রকাশিত:
১২ জানুয়ারী ২০২৪ ১৪:৪২

আপডেট:
১৩ মে ২০২৪ ০৪:১৬


দেশজুড়ে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। শৈত্যপ্রবাহ না থাকা সত্ত্বেও দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় অনুভূত হচ্ছে কনকনে ঠাণ্ডা। রাজধানীতেও দু-তিন দিন ধরে হিমেল বাতাস ও হাড়-কাঁপানো শীত টের পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আজ শুক্রবারও শীতের এই অনুভূতি একই রকম থাকতে পারে।


আগামী কিছুদিনে শীতের তীব্রতায় বড় কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। তবে ১৭-১৮ জানুয়ারির দিকে দেশে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে দেশের কোথাও কোথাও বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলে একটি মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে কুয়াশা পড়া ও কুয়াশার চাদর ভেদ করে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো না আসা, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসা, হিমালয় থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাস এবং বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকার কারণে দেশজুড়ে শীতের তীব্রতা সর্বনিম্ন তাপমাত্রার চেয়েও বেশি অনুভূত হচ্ছে।


আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে কুয়াশা পড়ছে। সূর্যের আলো ঘন থেকে অতি ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে যথেষ্ট সময় ধরে ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করতে পারছে না। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে কনকনে বাতাস উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে শীতের অনুভূতিকে আরো বাড়াচ্ছে। বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকার কারণেও ঠাণ্ডার অনুভূতি বেড়েছে।


দেশে কোনো শৈত্যপ্রবাহ নেই, তবুও এসব কারণে তীব্র শীত ও ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, কুয়াশা কমে গেলে দিনে শীতের অনুভূতি কমবে, কিন্তু রাতে বাড়বে। তবে শীতের তীব্রতায় খুব বড় কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই আগামী কিছুদিন।

কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, দেশব্যাপী চলমান কুয়াশার বিস্তার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের জেলাগুলোর ওপর থেকে আরো কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে আজ শুক্রবার সকালে। অন্যদিকে উত্তর ও পূর্ব দিকের বিভাগগুলোর (রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট) ওপরে কুয়াশা বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে আগামী রবিবার পর্যন্ত।


কুয়াশা কমার সঙ্গে সঙ্গে সকালের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর ওপরে। দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকটাই কমেছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই পার্থক্য ১০ ডিগ্রি বা তার কম হলে তাহলে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। পার্থক্য যদি ৫ ডিগ্রি বা তার কম হয় তাহলে শীতের অনুভূতি আরো তীব্র হয়। অর্থাৎ রাতের কাছাকাছি ঠাণ্ডা দিনেও অনুভূত হয়। যেসব জায়গায় তাপমাত্রার পার্থক্য যত কম সেখানে শীতের অনুভূতির তীব্রতা বেশি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া অধিদপ্তরের তাপমাত্রার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য সবচেয়ে কম। রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ৩ থেকে ৬ ডিগ্রি। ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি। ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে ৬ থেকে ১০ ডিগ্রি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ থেকে ১৩ ডিগ্রি, খুলনা বিভাগে ৯ থেকে ১৪ ডিগ্রি এবং বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলিতে, ১০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় এ সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

উত্তরে বেড়েছে শীত, জনজীবনে দুর্ভোগ

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমায় দিনাজপুরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। দিনাজপুর আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, গত দুই দিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি কমে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশা, ঠাণ্ডা বাতাস আর কনকনে শীতে বিপাকে পড়েছে জেলার সাধারণ মানুষ। রাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বৃষ্টির ফোঁটার মতো শিশির পড়ছে। গত দুই দিনে সূর্যের দেখা মেলেনি। এ পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছে। কনকনে শীতে কাজে বের হতে পারছেন না অনেকে।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলা থেকে শহরের ষষ্টিতলা মোড়ে কাজের সন্ধ্যানে আসা আবুল হোসেন বলেন, ‘গ্রামে খড়কুটো জ্বেলে শীত নিবারণ করি। আর শহরে এসে চিপস ও বিস্কুটের প্যাকেটসহ ময়লা-আবর্জনা দিয়ে আগুন জ্বেলে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করি। তিন দিন ধরে কাজ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছি।

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, উপজেলায় তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। হাড়-কাঁপানো শীতে জবুথবু জনজীবন। কুয়াশা ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় শীত সর্বনিম্ন তাপমাত্রার চেয়েও বেশি অনূভূত হচ্ছে বলে জানায় স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কে হেডলাইট ও ফগলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহনগুলো। একই কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে দৃষ্টিসীমা কম থাকায় সকালের ফ্লাইটগুলো দুপুরের পর ওঠানামা করছে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top