সিডনী সোমবার, ১৩ই মে ২০২৪, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩১


চার জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, হতে পারে বৃষ্টি


প্রকাশিত:
১৩ জানুয়ারী ২০২৪ ১২:২২

আপডেট:
১৩ জানুয়ারী ২০২৪ ১৫:১৩


সারা দেশে গত দুই দিনে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার দেশের চার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও রাজধানীসহ দেশের অনেক অঞ্চলে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মূলত দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমায় ও বাতাসের গতি বেশি থাকায় দেশের অনেক অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার চেয়ে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।


শনিবার ও রবিবারও দেশে শীতের তীব্রতা বেশি থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল কিশোরগঞ্জ, পাবনা, দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি) বয়ে গেছে। আজ শনিবারও তা অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গা ও কিশোরগঞ্জের নিকলীতে, ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।


এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে ৯.৮ ডিগ্রি ও দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি। ঢাকায় এ সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, কুয়াশার চাদর ভেদ করে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো না আসা, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসা, হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাস এবং বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকার কারণে দেশজুড়ে শীতের তীব্রতা সর্বনিম্ন তাপমাত্রার চেয়েও বেশি অনুভূত হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকায় আজ (গতকাল) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৯ ডিগ্রি।


কিন্তু অন্য সময় ১২ ডিগ্রি হলেও এত শীত অনুভূত হবে না যদি সকালে সূর্যের দেখা পাওয়া যায়। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমায় এবং বাতাসের কারণে অনেক জায়গায় শৈত্যপ্রবাহ না থাকা সত্ত্বেও শৈত্যপ্রবাহের মতো শীত অনুভূত হচ্ছে। আগামীকালও (আজ) শনিবার একই অবস্থা থাকতে পারে। চার জেলার শৈত্যপ্রবাহ আজ আরো দু-এক জায়গায় বিস্তার লাভ করতে পারে।’
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আরো দু-এক দিন দেশজুড়ে এ রকম তীব্র শীত থাকতে পারে।


দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও রাতের তাপমাত্রা একই রকম থাকতে পারে রবিবার পর্যন্ত। ১৮ জানুয়ারির দিকে সারা দেশে বৃষ্টি হতে পারে। তার আগে আকাশে মেঘ জড়ো হওয়ার কারণে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। বৃষ্টির পর আবার মেঘ কেটে গেলে দেশের কোথাও কোথাও মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ শনিবার সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। আজ মধ্যরাত থেকে পরদিন রবিবার সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

শীতের তীব্রতায় ব্যাহত জীবন ও জীবিকা
গত কয়েক দিনে দেশের প্রায় সব জেলায়ই বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের কারণে প্রকৃত সর্বনিম্ন তাপমাত্রার চেয়ে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে অনেক অঞ্চলেই। অনেক জেলায়ই দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছে কৃষি শ্রমিক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রমজীবীরা। চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল শীতবস্ত্র বিতরণ কষ্ট বাড়িয়েছে নিম্ন আয় ও ছিন্নমূলদের। কনকনে ঠাণ্ডায় কষ্ট পাচ্ছে গবাদি পশু-পাখিরাও। শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। কুয়াশায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোথাও কোথাও। ব্যাহত হচ্ছে বিমান, ফেরি ও যান চলাচল। ঘন কুয়াশায় যানবাহনের ধীরগতির কারণে কোথাও কোথাও তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত থাকছে ঘন কুয়াশা। দুপুর ১২টায়ও দেখা মিলছে না সূর্যের। হাড়কাঁপানো শীতে ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষরা। কুয়াশায় নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জে কনকনে ঠাণ্ডায় জনজীবন অনেকটাই স্থবির। কিশোরগঞ্জের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. লুত্ফর রহমান জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডার থেকে এরই মধ্যে ৪৫ হাজার কম্বল এসেছে। এগুলো উপজেলাগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে এসব কম্বল শীতার্তদের মাঝে বিতরণ শুরু হবে।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলায় ঠাণ্ডাজনিত রোগে এক সপ্তাহে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬১০ জন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ায়সহ বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্তান্ত।

হবিগঞ্জের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মঈন খান এলিস জানান, শীতবস্ত্রের যা বরাদ্দ এসেছিল তা এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। নতুন কোনো বরাদ্দ আসেনি।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীতে গতকাল ঘন কুয়াশা ভেদ করে একবারের জন্যও সূর্যের দেখা মেলেনি।

জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘এরই মধ্যে জেলার ছয় উপজেলায় ৪০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে বরাদ্দের জন্য নতুন করে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।’

হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, কুয়াশা আর হিমেল হাওয়া আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের অনুভূতি।

ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর ধামইরহাটে কনকনে শীতে কাঁপছে অসহায় মানুষ। কষ্ট পাচ্ছে গবাদি পশু ও বিভিন্ন প্রাণী।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. আসমা খাতুন বলেন, উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার শীতার্ত মানুষের মাঝে সরকারিভাবে এরই মধ্যে তিন হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশা আর শীতে নাটোর ও আশপাশের অঞ্চলে ব্যাহত হচ্ছে জনজীবন। ঠাণ্ডা আর ঘন কুয়াশায় আত্রাই নদী ও চলনবিল অঞ্চলের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল দুপুরের দিকে সূর্যের দেখা মিললেও সারা দিনই ছিল প্রচণ্ড শীত। চট্টগ্রামের প্রধান আবহাওয়া কার্যালয় পতেঙ্গার পূর্বাভাস কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল বারেক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১.২ ডিগ্রি, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪.৮ ডিগ্রি কম এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৫ ডিগ্রি, যা স্বাভাবিকের চেয়ে দশমিক ৪ ডিগ্রি কম।’

বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, পাঁচ দিন ধরে এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রির মধ্যে। উত্তরের হিমেল হাওয়া, মেঘলা আবহাওয়া এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কম থাকায় বরিশালে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে গতকাল আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থেমে থেমে যানজট তৈরি হতে দেখা যায়। গতকাল ভোর থেকে মহাসড়কের এলেঙ্গা হতে বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে এসব যানজট দেখা যায়।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে গতকাল সকাল পৌনে ৭টা পর্যন্ত সাড়ে চার ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল।
ডামুড্যা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার কারণে শরীয়তপুর-চাঁদপুর রুটের নরসিংহপুর ফেরিঘাটে সাত ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top