সিডনী শনিবার, ১১ই মে ২০২৪, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১


রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কূটনৈতিকদের কাছে ১০ সুপারিশ দিলো বিএনপি


প্রকাশিত:
২৯ আগস্ট ২০১৯ ২১:৪২

আপডেট:
১১ মে ২০২৪ ১৬:১২

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কূটনৈতিকদের কাছে ১০ সুপারিশ দিলো বিএনপি

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সরকারকে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে ১০ দফা সুপারিশ দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বুধবার সন্ধ্যায় রোহিঙ্গা সমস্যার ওপর এক গোলটেবিল আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আহ্বান জানান।



তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, রোহিঙ্গা সংকট এখন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের। সুতরাং সরকারকে বিশ্ব জনমত তৈরি করতে হলে সমগ্র জনগণকে সামনে নিয়েই এই অভাবটা পূরণ করতে হবে।’



বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সেমিনারের মধ্য দিয়ে আমরা সরকারের কাছে পৌঁছাতে চাই, জনগণের কাছে পৌঁছাতে চাই, বিশ্বমানবতার কাছে পৌঁছাতে চাই। একইসঙ্গে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে, জাতিসংঘকে, আন্তর্জাতিক বিশ্বকে আহ্বান জানাচ্ছি, মানবিক যে অবস্থা তৈরি হয়েছে সেটাকে সমাধানের জন্য তারা তাদের ভূমিকা পালন করবে।’



১০ দফা সুপারিশের মধ্যে আছে, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তাদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, নিজের মাতৃভূমিতে অবাধ চলাচল নিশ্চিতকরণ, বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রসমূহকে নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, প্রত্যাবাসনের আগে ও পরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সুযোগ রাখা, রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে যাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি না হতে পারে সে ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া প্রভৃতি।



গুলশানে লেক শোর হোটেলে বিএনপির উদ্যোগে ‘রোহিঙ্গা সংকট ও বাংলাদেশের ভূমিকা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনা সভা হয়। এতে বিএনপির নেতারাসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, কানাডা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, আফগানিস্তান, তুরস্ক, জাতিসংঘ, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল প্রভৃতি দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন।



তবে কূটনীতিকরা আলোচনায় কোনো বক্তব্য রাখেননি তারা আলোচকদের বক্তব্য নোট করেছেন।



আলোচনায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্র কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এতে রোহিঙ্গাদের আগমনের প্রেক্ষাপট, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের প্রতিবেদন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তাদের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।



বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মইন খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম, সাবেক সচিব এএইচএম মোফাজ্জল করীম, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী ও অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া বক্তব্য রাখেন।



মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবার পুরনো খেলা শুরু করেছেন, বিএনপিকে দায়ী করতে শুরু করেছেন এবং তিনি আমাকে দায়ী করেছেন যে, রোহিঙ্গা ইস্যু দিয়ে নাকি আমরা উস্কে দিচ্ছি রোহিঙ্গাদের।’



ফখরুল বলেন, ‘এটা সুইসাইডেল, এটা আত্মহননের কথা। আমরা মনে করি যে, এই ধরনের কথাবার্তা শুধুমাত্র রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, মিয়ানমারকে আরো শক্তিশালী করবে এবং সমস্যা আরো বৃদ্ধি করবে।’



তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে জীবন-সম্পদ সম্ভ্রমে অখণ্ড নিরাপত্তা ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে নিজ মাতৃভূমিতে বসবাস করতে পারে সেই নিশ্চয়তা বিধান কল্পে বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।’



বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে এর কোনো বিকল্প নাই। ঐক্যবদ্ধ জাতিকে নিয়েই এই সমস্যা সমাধান করার জন্য এগিয়ে যেতে হবে।’



সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘আমি বলতে চাই, প্রধান যে বিষয়টা- রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হলে অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব ও প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সেটা সরকার পারেনি।



তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন বাংলাদেশের জন্য সত্যিকার অর্থে বিপজ্জনক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছিলাম যে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে হলে এককভাবে বাংলাদেশের পক্ষে ওটা করা সম্ভব হবে না। প্রথম থেকেই বলে এসেছিলাম যে, একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে।’



রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে আসার সময়ে খালেদা জিয়া যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।



বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সসম্মানে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের নাগরিকত্ব, তাদের নিরাপত্তা, তাদের চলাচলের স্বাধীনতা, বাড়ি-ঘর-সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার গ্যারান্টি তারা চায়-এটা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে।’



‘এজন্য দেশে একটি জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করতে হবে, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমাদের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বন্ধু বৃদ্ধি করে মিয়ারমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। জাতীয় ঐক্য ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে আমরা মনে করি।’


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top