সিডনী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১

ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছয়) : অমর মিত্র


প্রকাশিত:
১২ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:২২

আপডেট:
১২ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:২৩

ছবিঃ অমর মিত্র

 

অবন্তীর পশ্চিমে সৌরাষ্ট্র দেশ। সৌরাষ্ট্রের উত্তরে মরু। অপরা সমুদ্রের তীরবর্তী ওই দেশটি গুর্জরদের বাসভূমি। গণিকা দেবদত্তার দেহে গুর্জর রক্ত। সেই রক্ত এসে মিশেছে যখন গ্রীক রক্ত।  তার মা রসমঞ্জরী ছিলেন সৌরাষ্ট্রের সুখ্যাত গণিকা, চৌষট্টি কলা ও শাস্ত্রজ্ঞ, নৃত্য-পটিয়সী, পরম গুণবতী। সৌরাষ্ট্রর এক ভূস্বামীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে তাকে পালিয়ে আসতে হয়েছিল অবন্তী দেশে। সেই কাহিনী জানে দেবদত্তা। অবন্তীর বৃদ্ধরা জানে। দেবদত্তার কাছে শুনেছে চতুরিকাও। কতদিনের কথা তা। ঘটনাটি রাজা গন্ধর্ব সেনের আমলের, তিনি ছিলেন রাজা ভর্তৃহরির পিতা।

গন্ধর্ব সেন আশ্রয় দিয়েছিলেন সুন্দরী শ্রেষ্ঠা, গুণবতী, রসমঞ্জরীকে। রসমঞ্জরীর কোলে তখন চারমাসের মেয়ে দেবদত্তা, যার পিতা এক গ্রীক বণিক, যিনি হত হয়েছিলেন সৌরাষ্ট্রের ভূ-স্বামীর হাতে। যদি শেষরক্ষা হতো তাহলে রসমঞ্জরী ওই বণিকের সঙ্গে পাড়ি দিত বাহ্লিক দেশে, হিন্দুকুশ পর্বতমালার কোলে, অক্সাস নদীর তীরে। বণিক সেই দেশ থেকেই এসেছিল। পবিত্র অক্সাস নদী (রসমঞ্জরী বলত আকসু নদী), শস্য শ্যামলা বাহ্লিক দেশের কথা মা রসমঞ্জরীর কাছেই শুনেছিল দেবদত্তা। মা শুনেছিল তার সেই যবন-দেশীয় প্রেমিকের কাছে। দেবদত্তার মনে মায়ের কাছ থেকে পাওয়া আকসু নদী সম্পর্কে এক অলীক কল্পনা আছে, স্বপ্ন আছে। সে একবার অন্তত যাবে তার পিতৃভূমিতে। আকসুর জলে স্নান করে পবিত্র হবে। বাহ্লিক দেশ, হিন্দুকুশ পর্বতমালা তার পিতৃভূমি। স্বপ্নে তার স্থান আছে।

সন্তান ধারণ করায় রসমঞ্জরীকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল সন্তান জন্মের জন্য। বাহ্লিক দেশ, আকসু নদী তো কম দূর নয়। সিন্ধুনদী পার হয়ে পুরুষপুর তক্ষশীলা গান্ধার কত দেশ পার করে পৌঁছতে হয় সেখানে। তিনটি ঋতুই হয়ত লেগে যেত সেই দেশে পৌঁছতে। পথও দুর্গম। নদী, পাহাড়, অরণ্য পার হতে হয় অত দূরে পৌঁছতে। রসমঞ্জরীর অপেক্ষাই তার বিপদ ঘটিয়েছিল। প্রেমিকের মৃত্যু হয়েছিল, ভূ-স্বামীর হাত থেকে বাঁচতে তাকে সেই বরষার  ভিতরেই পাড়ি দিতে হয়েছিল উজ্জয়িনী। আশ্বিনেই তারা রওনা হতো বাহ্লিক দেশের পথে। মায়ের কাছে সেই সব দিনের কথা শুনেছে দেবদত্তা।

রসমঞ্জরী উজ্জয়িনীতেই এসেছিল, কেননা গ্রীক বণিক অ্যান্টিওকাসের সঙ্গে উজ্জয়িনী হয়েই আকসু নদীর দেশে যাওয়ার কথা ছিল। তার আশা ছিল শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকবে অ্যান্টিওকাস। বেঁচে থাকলে উজ্জয়িনীতেই আসবে। সে তো রসমঞ্জরীর কাছে শিপ্রা, গন্ধবতী, মহাকলেশ্বর মন্দিরের কথা শুনেছিল। শুনেছিল দূরদেশে যাওয়ার আগে রসমঞ্জরী মহাকাল দর্শন করে যাবে। আকসু নদীর মতোই শিপ্রা, গন্ধবতী অতি পবিত্র।

মা অপেক্ষা করেছিল তার প্রেমিকের জন্য। সমস্ত জীবনই ছিল তার অপেক্ষা। রাজা গন্ধর্ব সেন রসমঞ্জরীর প্রেমে পড়েছিলেন। মায়ের ছিল দুই টান। রাজা গন্ধর্ব সেনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতায় তাঁকে কোনোদিন ফেরায়নি মা। ফেরাবার সাধ্যও ছিল না গণিকার। তবুও সে তার আচরণেও তো কিছু বলতে পারত। রসমঞ্জরীর দ্বিতীয় প্রেম ছিল রাজা গন্ধর্ব সেন।

রাজা গন্ধর্ব সেন সৌরাষ্ট্রের কন্যার গুণের সমাদর করতেন। সে ছিল নৃত্যনিপুণা। মায়ের বিদ্যা দেবদত্তাও পেয়েছে। সৌরাষ্ট্রর রক্তও তো আছে তার ভিতরে। ওই দেশের বারাঙ্গনাদের মতো নৃত্য পটিয়সী কেউ হয় না। সৌরাষ্ট্রের রমণীরা কোন এক দূর অতীতে নৃত্যশিক্ষা করেছিল দ্বারকার গোপিনীদের কাছে। গোপিনীরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মনোরঞ্জনের জন্য নৃত্যকলা শিখেছিল শোনিতপুরের রাজপুত্রী, বাণরাজার কন্যা ঊষার কাছে। ঊষা ছিলেন হিমালয়-কন্যা পার্বতীর সহচরী। শাপভ্রষ্টা হয়ে ঊষা জন্মগ্রহণ করেছিলেন শোনিতপুরে। ঊষা লাস্য নৃত্য শিখেছিলেন পার্বতীর কাছে। পার্বতী তাঁর স্বামী মহাদেবকে মোহিত করার জন্য এই নৃত্যকলা সৃষ্টি করেছিলেন নিজে। রসমঞ্জরী থেকে দেবদত্তা যে লাস্য নৃত্যের অধিকারী তা আসলে পার্বতীরই। পার্বতীকে স্মরণ করা হয় লাস্য নৃত্যের মধ্য দিয়ে।

চতুরিকা নৃত্যশিক্ষায় এসেছে দেবদত্তার কাছে। রসমঞ্জরীর কন্যা দেবদত্তার তুল্য নৃত্যপটিয়সী এই  অবন্তী  দেশে আর কেউ নেই। চতুরিকা দাসী-কন্যা। তার মা ছিল গণিকা রসমঞ্জরীর সহচরী। মা নৃত্যকলা শেখেনি। রসমঞ্জরীর সেবা করতে করতেই তার দিন গেছে। চতুরিকা জানে গণিকাবৃত্তিতে সফলতার শিখরে উঠতে হলে নৃত্যকলা শিখতেই হবে। জানতে হবে চৌষট্টি কলা। এই দুই বিদ্যায় পারদর্শী না হলে গণিকার কাছে কেন আসবে পুরুষ? যৌবনকে মহার্ঘ করে তুলতে, যৌবনকে বিকশিত করে তুলতে এই দুই বিদ্যার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। এসব না জানা গণিকা তো শুধুই নর্মসহচরী হতে পারে পুরুষের। আর সে পুরুষও সামান্যজন, রাজপুরুষ তার দিকে ফিরেও তাকাবে না। তার দাম না থাকলে সে প্রত্যাখ্যানও করতে পারবে না কাউকে। পুরুষকে মুগ্ধ করতে  নৃত্যের কোনো বিকল্প নেই। দেবদত্তা অবশ্য আরো অন্য কথা বলে, শুধুই পুরুষ কেন, নিজেকে জাগিয়ে তুলতে, নিজের শরীর মনকে শুদ্ধ করে তুলতে নৃত্যছন্দই প্রধান কলাবিদ্যা। কী সুন্দর বলে দেবদত্তা, এ দেহ ছন্দময়, দেহের ছন্দকে পরিস্ফুট করে তুলতেই নৃত্য। নিজেকে নিবেদন করতেই ঈশ্বর সন্ধান হয় নৃত্যের ভিতরে।

দেবদত্তা ‘সমনখম’ মুদ্রায়, পায়ের দুটি পাতা পরস্পরে সংশ্লিষ্ট করে, নখগুলি সমভাবে এনে, দুটি হাত দেহের দুপাশে লতার মতো বাড়িয়ে ধরে, ঊরু, জংঘা পরস্পরের সংস্পর্শে এনে বলল, এই হল সমনখম, দেহের কোনো ভার থাকবে না, এবার পতাকাঞ্জলি বুকে স্থাপন করে মুখখানির নিম্নভাগ এইভাবে সম্মুখে বাড়িয়ে দাও।

চতুরিকা অনুকরণ করছিল। যুক্তকর বুকে এনে অবিকল দেবদত্তার মতো হয়ে উঠতে চাইছিল, শুনতে পাচ্ছিল দেবদত্তার মধুর কণ্ঠে নৃত্যের শ্লোক উচ্চারিত হচ্ছে—পতাকাঞ্জলি বক্ষঃস্থং প্রসারিত শিরোধরম/ নিকুঞ্চিতাং সকুটং চ তল্লীনং করণং স্মৃতম। বল দেখি চতুরিকে।

চতুরিকা হাসে, ও আমি পারি না।

দেবদত্তা বলল, নিজের ভিতরে নিজে ডুবে গিয়ে প্রার্থনা করতে হয় এই সময়, স্মরণ করতে হয় শঙ্কর, পার্বতীকে, নৃত্যের আদি গুরু এঁরা। যে কাহিনী বলেছি, শোনিতপুরের রাজকন্যা ঊষা, দ্বারকার গোপিনী, সৌরাষ্ট্রের কন্যাদের, তাদের কাছে প্রার্থনা কর মনে মনে। আমি মা রসমঞ্জরীর কথাও স্মরণ করি, মায়ের বিদ্যায় তো ধনী আমি, এই বিদ্যা তুই অর্জন করছিস, এই অবন্তী দেশে আমার মায়ের তুল্য কে ছিল নৃত্যে, এই দ্যাখ।

দেবদত্তা তার পতাকাঞ্জলি ত্যাগ করে দুটি হাত হাঁসের ডানার মতো কাঁপাতে থাকে। তারপর তার দুটি হাত আবর্তিত হতে থাকে। পলকের ভিতরেই বাহু, কাঁধ ও কনুইয়ের শীর্ষভাগগুলি দুটি হাতের সঙ্গে ঘুরিয়ে হাঁসের ডানার মতো করতল দুটি উল্টোভাবে রেখে স্থির হয় দেবদত্তা। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চতুরিকা। কয়েক দণ্ডের ভিতরে যে রূপ ফুটে উঠল দেবদত্তার তা দেখে ধন্য হলো যেন সে।

চতুরিকা বলল, তুমি কীভাবে পার?

দেবদত্তার চরণ দুটি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি ত্রিভুজ মুদ্রায় স্থিত হলো। কটিদেশে দুটি হাত এসে মিলল, ঠোঁটের কোণে এসে ফুটল আনন্দময় হাসির রেখা, দু-চোখ প্রস্ফুটিত হলো ফুলের মতো, প্রসন্নভাব এল সেখানে।

চতুরিকা বলল, অঘ্রান পূর্ণিমায় তুমি মহাকালেশ্বরের জন্য কোন নাচ বেঁধেছো?

দেবদত্তা বলল, সে তো মহাকালই প্রথম দেখবেন।

মহাকাল কি দেখবেন সত্যি?

দেবদত্তার পদযুগল পরস্পরকে অতিক্রম করল জঙ্ঘাদ্বারা। স্বস্তিক চিহ্ন ফুটে উঠল পদযুগলের বিন্যাসে। দুটি হাত নিম্নগামী, বুকের কাছে স্থির হয়ে অধোমুখ হলো সে, অস্ফুটস্বরে বলল, অবন্তীর রাজা তো আসবেন।

যদি তিনি না আসেন?

যে প্রসন্নতা, যে দীপ্তিময়তা এসেছিল দেবদত্তার সর্বাঙ্গে,তা ক্রমে মুছে গেল।  আঁখিপল্লব নিশ্চল হলো, দু’চোখের মণি নিম্নমুখী, স্থির, অনুজ্জ্বল। চোখের আলো নিভে গেল। ম্লান মুখখানি ধীরে ধীরে উপরে তুলল দেবদত্তা, দৃষ্টি অর্ধনির্মীলিত, অনুচ্চ গলায় সে বলল, তুই একবার যাবি?

চতুরিকা দুই হাতের জোড়বদ্ধ পতাকাঞ্জলি বুকের উপর স্থাপন করে একটু আগে দেখা নৃত্যের মুদ্রা আয়ত্তে আনার চেষ্টা করছিল। মুখমণ্ডলের নিম্নভাগ সম্মুখে প্রসারিত করার সময় তার করতলের সংযুক্তি ভেঙে যাচ্ছিল। এক অঙ্গের সঙ্গে অন্য অঙ্গ মেলাতে পারছিল না সে, মনে মনে স্মরণ করতে চাইছিল শঙ্কর, পার্বতী, গোপিনীদের। মগ্নতা তৈরি করতে পারছিল না সে, তার চোখের সামনে বিষণ্ণ দেবদত্তার মুখখানি, সে বলল, সখী, মহাকালে যাবেন হয়ত অবন্তীরাজ, রাজমহিষীও সঙ্গে থাকবেন।

কে বলেছে এই কথা? দেবদত্তার দৃষ্টি ঊর্ধ্বমুখী হলো, মুখমণ্ডলের বিষণ্ণতা কেটে গিয়ে জেগে উঠল প্রশান্তি, ফিসফিস করে বলল সে, আসুন না রাজমহিষী, তিনিও দেখে যাবেন দেবদত্তার নিবেদন, এমন তিনি এই অবন্তী দেশে আর দেখতে পাবেন না।

কথা শেষ করতে করতে দেবদত্তা কনুই থেকে ভেঙে প্রসারিত হাতটি মাথার কাছে চাঁদোয়ার মতো ভাসিয়ে দিল যেন। পাঁচ আঙুলে মৃগশীর্ষ মুদ্রা রচনা করল। ডান হাতটি বুকের কাছে ভেঙে, পাঁচ আঙুলে ওই একই মুদ্রা রচিত হলো। দক্ষিণ চরণ ত্রস্ত, কটিদেশের বামপার্শ্ব ঈষৎ প্রকট হলো। নৃত্যের তালে দেবদত্তা কাঁপতে থাকে, ফিসফিস করে বলল, এখানে যদি আসতেন অবন্তীরাজ! রাজা গন্ধর্ব সেন মায়ের কাছে আসতেন, রাজা ভর্তৃহরির কত শিক্ষা আমার মায়ের কাছে।

পতাকাঞ্জলি ভেঙে দিল চতুরিকা, দেবদত্তার অনুকরণে দুই হাতে মৃগশীর্ষ রচনায় রত হলো, তারপর আচমকা বসে পড়ল মেঝেতে, বলল, তোমাকে দেখি সখী।

তোকে কে বলেছে রাজমহিষীও আসবেন?

কে বলেছে? চতুরিকা অধোমুখী হলো। কে বলেছে তা কি জানাবে? বলেছে উদ্ধবনারায়ণ। সে কী করে অবন্তীরাজের অন্দরমহলের খবর জানল তা জানে না চতুরিকা। জানতে চায়ওনি। উদ্ধব একদিন বলেছিল গণিকার কৌতূহল তার পেশাকে সাহায্য করে না। বরং ক্ষতিকারক। কৌতূহল যত, তা হলো উদ্ধবের। সে খোঁজ নেয় সুন্দরী, পরম রূপবতী, উজ্জয়িনীর সেরা গণিকা দেবদত্তার গৃহে কে এল? কখন এল? চতুরিকা দাঁড়াল দেবদত্তার ইঙ্গিতে। দেবদত্তার কাছে এল। দেবদত্তার হাতে মুদ্রা এবার বদলে গেছে। ময়ূর হস্ত হয়েছে সে। অনামিকা আর অঙ্গুষ্ঠ পরস্পরে সংযুক্ত। অন্য আঙুল প্রসারিত। চতুরিকা দৃষ্টি প্রসারিত করে দেবদত্তার ঊর্ধ্বমুখী ডান হাতের পাশ দিয়ে খোলা জানলার বাইরে দূরে স্বর্ণমণ্ডিত মহাকাল মন্দিরের চূড়া দেখল। উজ্জয়িনীর বারাঙ্গনারদের ভিতর দেবদত্তার গৃহটি সুন্দর। তার মা রসমঞ্জরীর জন্য এই গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছিলেন গন্ধর্ব সেন। প্রতিটি ঘর থেকেই মহাকাল শীর্ষ দেখা যায়। জানালায় গিয়ে দাঁড়ালে দেখা যায় গন্ধবতীর বালুকাময় তীর, শীর্ণ জলধারা।

দেবদত্তা জিজ্ঞেস করল, অবন্তীরাজ সন্ধ্যায় যাবেন তো, চন্দ্রোদয় হলে?

মাথা দোলায় চতুরিকা, তা তো জানি না।

শরীর শিথিল করে দুটি হাতে নানা মুদ্রা রচনা করতে থাকে দেবদত্তা। মুষ্টিবদ্ধ দুই হাতের অঙ্গুষ্ঠ ঊর্ধ্বমুখী করে শিখর হস্ত হলো। ডান হাতের অঙ্গুষ্ঠে তর্জনী ও মধ্যমা স্থাপন করে লীলায়িত ভঙ্গিতে দাঁড়ায়। শ্বাসপ্রশ্বাসে তার ভরা বুক কাঁপছে। সে একটু নিচু হয়ে চতুরিকার কানের কাছে মুখ এনে বলল, যাবি তুই অবন্তীরাজের কাছে?

আবার! বিস্মিত চতুরিকা সরে দাঁড়ায়। মনে পড়ে কার্তিক পূর্ণিমার আমন্ত্রণ নিয়ে সে  গিয়েছিল অবন্তীরাজের কাছে। গণিকা দেবদত্তা তার আঙিনায় নৃত্য প্রদর্শন করবে, অবন্তীরাজের উপস্থিতি ভিক্ষা করেছে। আমন্ত্রণের ভূর্জপত্র নিয়ে সে রাজগৃহের এক রক্ষী মারফৎ পৌঁছে দিয়েছিল রাজা ভর্তৃহরির কাছে। অপেক্ষা করেছিল। রক্ষী এসে তার হাতে তুলে দিয়েছিল চতুর্দশ স্বর্ণমুদ্রা। ফেরত দিয়েছিল ভুর্জপত্রখানি, বলেছিল, মহারাজ আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন, কিন্তু তিনি অপারগ, অন্য ব্যস্ততা আছে ওইদিন।

চতুর্দশ স্বর্ণমুদ্রা ভাগাভাগি করে সাতটি হাতে নিয়ে ফিরে এসেছিল চতুরিকা। যে দাসী তাকে রক্ষীর কাছে পৌঁছে দিয়েছিল তাকে দিয়েছিল দুইটি মুদ্রা। পাঁচটি স্বর্ণমুদ্রা কম কিসের? কিন্তু মনে হয়েছিল শূন্য হাত। শূন্য হাত তো নিশ্চয়। দেবদত্তার মুখখানি রক্তশূন্য হয়ে গিয়েছিল তার আমন্ত্রণপত্রখানি অবিকল ফিরে আসায়। অবন্তীরাজ দেখেছেন কি দ্যাখেননি তার কোনো চিহ্ন ছিল না সেখানে। দেখেছেন তো নিশ্চয়, না হলে স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে এল কেন রক্ষী? কার্তিক পূর্ণিমাটি গেছে অন্ধকারে। সেদিন খোপা বাঁধেনি দেবদত্তা, ফুল সাজে সাজায়নি নিজেকে।

দেবদত্তা বলল, মা রসমঞ্জরীর কাছে আসতেন কুমার ভর্তৃহরি, আমার মা না থাকলে কি তাঁর কাব্য প্রতিভার স্ফূরণ হতো, দান ছিল না মায়ের? মা-ই তো বলেছিলেন কুমার ভর্তৃহরির অন্তর অতি শুদ্ধ, সেখানে অধিষ্ঠান করেন দেবী সরস্বতী, তুই বল চতুরিকে তার মতো রসশাস্ত্র জ্ঞানী কে আছেন এই  অবন্তী দেশে, যে শৃঙ্গার কাব্য রচনা করেছেন সেই শৃঙ্গারের আদি কথা তো শেখা মা রসমঞ্জরীর কাছে, কেউ বিকৃত রসের সন্ধান পায় তার ভিতরে, আর কেউ তার ভিতরেই খোঁজে জীবনের শুদ্ধ আনন্দ, শৃঙ্গার কাব্যের কত শ্লোকই না আমার কণ্ঠস্থ!

চতুরিকা চুপ করে থাকে। দেবদত্তার সব কথার মর্ম উদ্ধার করতে পারে না সে। শৃঙ্গার রস কীভাবে বর্ণনা করেছেন অবন্তীরাজ ভর্তৃহরি তাও জানে না সে। শৃঙ্গার শব্দটির সঙ্গে রাজকর্মচারী উদ্ধবনারায়ণের কামার্ত মুখের ছবি মনে ভাসে তার। দেহবিলাস ব্যতীত সে কী বোঝে? কিছুই না। তার জন্যই তো নৃত্যশিক্ষা, বীণাবাদন, যদি অন্যরসে রসিক হয়ে তার উপর পীড়ন কম করে উদ্ধবনারায়ণ। তার শরীর ছাড়ে। তার যে মন আছে এইটুকু বুঝতে পারে সে।

দেবদত্তা বলল, অবন্তীরাজ নিশ্চিত আসবেন সন্ধ্যায়, তুই যা।

চতুরিকার মনে অন্ধকার এল। তার তো মনে হয় অবন্তীরাজের মনে দেবদত্তার কোনো চিহ্নই নেই। সে শুনেছে রাজমহিষী, কনখল কন্যা ভানুমতী ব্যতীত অন্য কোনো নারীর দিকে সরাসরি দৃষ্টিপাত করেন না অবন্তীরাজ। যে শুদ্ধতার কথা বলল দেবদত্তা, সেই শুদ্ধতা এতই সত্যি যে শৃঙ্গার রসের কল্পনা সবই তার অর্ধাঙ্গিনীকে নিয়ে। এসব সত্ত্বেও তার মনে হয় কার্তিক পূর্ণিমায় অবন্তীরাজ তাঁর সুনামের প্রতি সুবিচার করেননি। কাউকে দুঃখ দেওয়ার অধিকার তাঁর নেই। তিনি অবন্তীর অধিপতি, তাঁর দিকে চেয়ে সকলে বেঁচে আছে। মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা তাঁকে নিয়ে। মানুষের অন্তরের কথা তাঁকে জানতেই হবে সুশাসনের জন্য। তিনি কেন অপমান করবেন নগরীর শ্রেষ্ঠা নারীকে। দেবদত্তার তুল্য গুণবতী কে আছে এই নগরে? রাজমহিষী তো দেবদত্তার সঙ্গে কোনো তুলনায় তুলনীয়া নন। অবন্তীরাজ বোধহয় সেদিন পত্রটি পাঠ করেননি। গ্রহণও করেননি। গ্রহণ করলে মুক্তোবিন্দুর মতো দেবদত্তার হস্তরেখায় মুগ্ধ হতেনই। কী অপরূপ চিত্রময় দেবদত্তার হস্তরেখা। ভাষা বিন্যাসই বা কী সুন্দর! প্রকাশ কী মধুর! পত্রের ভিতরে শৃঙ্গার রসের শ্লোকও ছিল উদ্ধৃত। কী যেন কণ্ঠস্থ করিয়েছিল তাকে দেবদত্তা? কিছুই মনে রাখতে পারে না চতুরিকা। যা শেখে তাই ভুলে যায়। এই নৃত্যবিদ্য, নানান মুদ্রা, লাস্যভঙ্গী ও ক’দিন ধরে রাখতে পারবে জানে না। এখান থেকে বেরিয়ে ঘরে গিয়ে উদ্ভবকে যদি দেখে, নিজের মুখটিও যেন অচেনা মনে হয়।

দেবদত্তা হাতের নানান মুদ্রা গড়ছিল, ভাঙছিল। মুদ্রা গড়তে গড়তে, ভাঙতে ভাঙতে দেওয়ালে পিঠ দিয়ে বসে পড়েছে। তার সামনে হাঁটু মুড়ে ঊরুবেদী প্রসারিত করে বসেছে চতুরিকা। দেবদত্তা চতুরিকার ঊরুতে হাত রাখে, নিবিড় গলায় বলল, অবন্তীরাজের খবর কি সেই রাজকর্মচারী দিল?

ও কথা থাক। বলল চতুরিকা।

তোকে আমি এমন নৃত্যপটিয়সী করে তুলব যে অবন্তী দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি তোরই অতিথি  হবেন, ওই উদ্ধবনারায়ণ থাকবে দ্বাররক্ষী হয়ে।

থাক ও কথা, শ্রেষ্ঠী সুভগ দত্ত তোমার রূপে, গুণে মুগ্ধ। নিম্নস্বরে বলল চতুরিকা।

সেই মুগ্ধতা তোকে ঘিরেই হবে, তুই তো শিখে নিবি সব বিদ্যা আমার কাছ থেকে, তোর মতো মার্জারাক্ষি কে আছে এই নগরে?

সেই জন্য তো আমি অসুন্দর।

কে বলে? চতুরিকার চোখের পাতায় আঙুল ছোঁয়াল দেবদত্তা, চাপা গলায় বলল, এমন শ্যামবর্ণা ছিল আমার মা রসমঞ্জরী, আমি তো পেয়েছি পিতা অ্যান্টিওকাসের রক্ত, যবন, গ্রীকরা ধবল বর্ণের হয়, কিন্তু তারা আকৃষ্ট হয় এমন তম্বীশ্যামায়।

চতুরিকা বিহ্বল হয়ে পড়ে। অধোমুখী  হয়ে নিজেকে দ্যাখে। গভীর ভরন্ত বক্ষদেশ, কদলী কাণ্ডের মতো ঊরুযুগল, মসৃণ ত্বক। তার চোখে জল এসে গেল। রাজকর্মচারী যেদিন  বুভুক্ষু থাকে দেহের কামনায়, তাকে যেন গিলে খেতে চায়। বস্ত্রে ঢাকা আছে সব। স্তনযুগল, ঊরুতে কত যে নখের আঁচড়, দাঁতের দাগ তা কি জানে দেবদত্তা? তাকে ঠেকিয়ে রাখতে হলে অন্য মদিরা চাই। এক একদিন মনে হয় সে আর্তনাদ করে পুরবাসীকে, পথচারীকে, সকলকে জানিয়ে দেয় উদ্ধবনারায়ণের আচরণের কথা। গণিকার অসম্মতিতে তার উপরে উপগত হওয়া, তাকে পীড়িত করা অপরাধ। অবন্তীরাজের কানে পৌঁছলে তিনি নিশ্চিত এর প্রতিবিধান করতেন।

দেবদত্তা বলে, শোন চতুরিকা, আমি রাজা ভর্তৃহরি ব্যতীত এই নৃত্য কোথাও দেখাব না, না মহাকালেশ্বরকেও না।

হাত বাড়িয়ে দেবদত্তার মুখ চাপা দিল চতুরিকা, ছি, এসব কী বলো পাপের কথা?

পাপ কোথায়?

মহাকালই তোমার নৃত্যের প্রেরণা, তিনিই তো আদিগুরু।

আমি মনে মনে স্মরণ করি কুমার ভর্তৃহরিকে, সেই যে তিনি আসতেন এখানে, তখন প্রকৃতি সদয় হয়েছেন সবে, আমার কোষে কোষে রক্তচঞ্চল হয়েছে, শরীর থেকে শরীর প্রস্ফূটিত হচ্ছে, মা বলতেন, রাজা‍‌নুগ্রহই গণিকার সমস্ত বিদ্যাকে বিকশিত করতে পারে, মনে পড়ে কুমার ভর্তৃহরির চোখ দুটি। কীভাবে, কী আপন ভোলা হয়ে তিনি মায়ের কথা শুনতেন, নৃত্যের ব্যাখ্যা শুনতেন, নারী দেহের, পুরুষ দেহের ছন্দের কথা শুনতেন, আমার নৃত্যও দেখেছেন তিনি, তখন মা আমাকে সব পাঠ দিচ্ছেন, বলছেন কোন পদবিন্যাসে, কোন হস্তমুদ্রায়, আঁখি সঞ্চরণে কী ভাব ফুটে ওঠে! আমি মন মনে রাজাকেই ভাবি, রাজা ভর্তৃহরিই আমার প্রেরণা।

এসব কথা মনেই থাক সখী।

দেবদত্তা বলে, মহাকাল বলিস, পার্বতী, গোপিনী বলিস, যাঁদের কথা বলেছি তোকে, তাঁরা তো নিরাকার, তাঁদের কথা উচ্চারণ করবি, কিন্তু মনের ভিতরে আরাধ্য একজন থাকবে, তিনি রক্তমাংসের মানু্‌ষ, তাঁর কথা মনে রাখলেই সব শিক্ষা সম্পূর্ণ হবে।

তিনি কে, আমি তো ওই উদ্ধব ব্যতীত কারোর কথাই ভাবতে পারি না, আবার উদ্ধবের কথা ভাবলে কখনো রোমাঞ্চিত হই, কখনো ভীত হই।

আমি তো বললাম এই নগরের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি তোর গুণে মুগ্ধ হবেন, মুগ্ধ হবেন সেনাধ্যক্ষ কুমার বিক্রমও, উদ্ধবনারায়ণ থাকবে দ্বারে।

কেঁপে উঠল চতুরিকা, না, না সখী, এই কথা যদি কোনোক্রমে কারোর কানে যায় তবে আমি বিপন্ন হবো, আমাকে খুন করে ফেলবে ওই উদ্ধব, সে খুব নৃশংস, পীড়ন ভালবাসে, থাক সখী, এসব কথা থাক। বলতে বলতে হাঁপাতে লাগল চতুরিকা। উত্তেজনায় তার সর্বাঙ্গ থরো থরো। কুমার বিক্রমকে দেখেছে সে। কী পৌরুষ তাঁর? কত বড় যোদ্ধা! হুন দমন করেছেন তো তিনিই। প্রধান সেনাপতির কথা সে শুনেছে উদ্ধবের কাছে। উদ্ধব তাঁর কত কাছের মানুষ সে কথা বলে মাঝে মাঝে। নিজের ক্ষমতার বহর দেখাতে সে কুমার বিক্রমের কথা, শ্রেষ্ঠী সুভগ দত্তর কথা, তাকে পীড়ন করতে করতে, তার সমস্ত অঙ্গে আঁচড় কাটতে কাটতে বলে। এমনকি অদ্ভুত সব রতি বিহারে মত্ত হতে হতে, রতিক্রিয়ায় উন্মত্ত হতে হতে উদ্ধব বলে কুমার বিক্রমের কথা। কী আশ্চর্য! কীভাবে দেবদত্তা কুমার বিক্রমের কথা বলল? কোন অনুমানে? সে তো ভাবতেই চায় না তাঁর কথা। বড় হীন লাগে, শঙ্কিত হয়ে পড়ে। কী করে বলল সোনার রথাসীন শ্রেষ্ঠীর কথা? থাক এসব কথা। মুছে যাক এই মুহূর্ত, এই সময়। তিথি কালের মতোই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক। প্রসঙ্গ বদলায় চতুরিকা। চাপা গলায় বলল, তুমি কি জান, সেই জন, সেই কবি, গম্ভীরাবাসী যুবক, যে তোমার প্রেম ভিক্ষা করেছিল, সে এখন কোথায়?

ঈষৎ আনমনা হলো দেবদত্তা, দু’চোখ ঊর্ধ্বমুখী, উদাসিনী হলো রসমঞ্জরীর কন্যা, বিড়বিড় করে বলল, ধ্রুবপুত্র, যে আমাকে বাহ্লিক দেশ, আকসু নদীর কথা বলত, গ্রীক বীর আলেকজান্দারের কথা বলত?

সে তোমার প্রত্যাখ্যানে অবন্তী ত্যাগ করে চলে গেছে।

হ্যাঁ, গেছে তো, দুবছর হতে যাচ্ছে, সে যবনদের কথা জানত অনেক, বিদিশায় নিয়ে যাবে আমাকে, বলেছিল, ওখানে পুরুষপুরের এক যবন রাজপুত্রের সম্মানে নির্মিত স্তম্ভ আছে, হোলিওডেরাস তাঁর নাম ছিল।

তুমি তাকে প্রশ্রয় দিয়েছিলে তাই তোমার প্রেমে পড়েছিল সে।

গুণী, গুণের সম্মান তো দিতে হবে, কিন্তু এর ফলে সে যদি--! কথা থামিয়ে দিয়ে উন্মনা হলো দেবদত্তা, মন খারাপ লাগে তার জন্য।

সে নাকি হুন রাজ্যে গিয়া আশ্রয় নিয়েছে, সেই উত্তর-পশ্চিমে সিন্ধুনদের তীরে।

কে বলেছে তোকে?

চুপ করে থাকল চতুরিকা। দেবদত্তার তো বুঝতে অসুবিধে হবে না কে বলেছে। তার জানা-অজানার সূত্র তো একটাই। যুবক তো তাকে বলেছিল চলে যাবে বাহ্লিক দেশে তাকে নিয়ে। নবীন বয়স। তারই সমবয়সী হবে সে। একেবারে শিশুর মতো আচরণ ছিল তার। কী রূপবান! জ্ঞানী। তার গুণে মুগ্ধ ছিল সে। অথচ কী যে হয়ে গেল তখন! দেবদত্তা ঘুরে জানালা দিয়ে দৃষ্টি আকাশে প্রসারিত করে। আকাশের আলো কমে এল। অপরাহ্ন বেলা। চোখ বুঁজল সে।  কল্পনার আকসু নদীর কলধ্বনি শুনতে চাইল দেবদত্তা। নিথর হলো একা একা। যুবকটিকে সে অপমান যত না করেছে, তার চেয়ে করেছিল তো এই নগরের সবচেয়ে ধনী সুভগ দত্ত, যে নাকি যুবকের পিতার সঙ্গে  বাণিজ্য আরম্ভ করেছিল অনেক বছর আগে। শ্রেষ্ঠী সুভগ দত্ত যুবকের শিক্ষার ব্যবস্থাও করেছিল, এখানে পাঠিয়েছিল সে-ই। অথচ সেই মানুষই  কিনা তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিল এই নগর থেকে।

দেবদত্তা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হূন আশ্রয়ে যাওয়ার মতো মানুষ সে ছিল না, কিছুতেই না। আহা মুখখানি মনে পড়ে। সে যেন যবন পুরুষেরই মতো ছিল। নাকি সে ছিল দেবতাদের মতো। কী গম্ভীর নীল চোখ দুটি। কী অদ্ভুত ছিল সেই যুবক! উজ্জয়িনীতে যে বণিকরা আসত তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করত তাদের দেশে যাওয়ার পথনির্দেশ। তাদের কাছ থেকেই জানত তাদের দেশের সব কথা। সেই যে বাহ্লিক দেশ, আকসু নদী, গান্ধার পুরুষপুর, গিরিপথ, সব যেন তার চোখের সামনে ভাসত। যবন বণিকরা অবাক হয়ে যেত। কবে গেল এই যুবক ওই দেশে? ধ্রুবপুত্রর অসম্মান সে ঠেকাতে পারেনি। বরং নগরে রটে গেছে সেই অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছ যুবকটিকে। তার প্ররোচনায় শ্রেষ্ঠী সুভগ দত্ত প্রহার করেছিল ধ্রুবপুত্রকে, যে শ্রেষ্ঠী তাকে আশ্রয় দিয়েছিল, সে-ই কিনা ভীষণ রুষ্ট হয়ে তাকে নগর থেকে বহিষ্কার করল। যুবকটি কেমন ছিল? অত যার জ্ঞান, অত যার কৌতূহল, কল্পনা, সে কিনা আন্দাজও করতে পারেনি পিতৃসখার দুর্বলতাটি কোথায়? সে কিনা সুভগ দত্তর নিকটেই নিজের মনোবাসনা প্রকাশ করে দিল। আর দেবদত্তা, যে কিনা পুরুষের মনের ভাষা পড়তে পারে, সে টেরও পায়নি ধ্রুবপুত্রর মনের কথাগুলি! ধরতে পেরেছিল এই চতুরিকা। সে একদিন  আভাস দিয়েছিল, সখী, তোমার ওই ধ্রুবপুত্র, যাঁকে শ্রেষ্ঠী পাঠিয়েছেন, তার চোখ দেখেছ তুমি?

নীল, সাগরের মতো শুনেছি, সাগর যেন ওইরকম হয়। 

নীল তো চিনি, আর সেই নীল তোমার সম্মুখে এসে আরো নীল হয়ে যায়, তা কি দেখেছ তুমি সখী, সে তোমাকে যেন কামনা করে।

দেবদত্তা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল চতুরিকার কথা। কিন্তু সত্যিই কি তাই! রোমাঞ্চ কি ছিল না ধ্রুবপুত্রকে দেখায়?

 

চলবে

ধ্রুবপুত্র (পর্ব এক)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দুই)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তিন)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পাঁচ)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top