সিডনী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১

ঝর্ণাধারার সঙ্গীত (পঞ্চম পর্ব) : সেলিনা হোসেন


প্রকাশিত:
২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:৩৬

আপডেট:
২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:৪১

 

ওরা এদিক-ওদিক দৌড়াচ্ছে। আশিকা পানি থেকে উঠে আসে। ফিসফিসিয়ে মাকে বলে, আমি সমুদ্রের প্রেমে পড়েছি।
হামিদা বানু রূঢ় কন্ঠে বলে, কোনো লাভ হবে না। উঠে আয় পানি থেকে।
- তুমি আমার সঙ্গে রাগ করছ কেন মা?
হামিদা বানু ওর কথার উত্তর না দিয়ে সরে আসে। সঙ্গের যাত্রীরা ওদের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
নূরবানু বলে, কি রে বুবু তুই এত ভোরে বের হয়ে আসলি?
- আসব না কেন? সমুদ্র দেখতে এসে হোটেলের ঘরে বসে থাকব? ঘরতো জীবনভরই দেখতে হবে। ইচ্ছা করলেইতো সমুদ্র দেখতে পারবনা।
চারদিক থেকে একসঙ্গে অনেকে বলে, ঠিক বলেছেন। দারুণ কথা। আমাদের সবার জীবনের কথা।
তুমুল তালি বাজায় সবাই।
- চলেন, যাত্রা শুরু হোক আমাদের।

আশিকা মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে বলে, আমরা পঁচিশ কিলোমিটার হাঁটলে শিলখালি বাহারছড়া গ্রামে পৌঁছে যাব। ওখানে ইউনিয়ন পরিষদের অফিস আছে রেষ্ট করা যাবে। চমৎকার একটি রেস্তোরাঁও আছে। চলেন আমরা হাঁটতে শুরু করি। শুরু হয় যাত্রা। এদিকে-ওদিকে ঘুরে ঘুরে সবাই আনন্দ নিয়ে হেসে-গেয়ে যাচ্ছে। আশিকার মনে হয় এইভাবে সৈকতের পথে হাঁটা শুধু হাঁটা না, একই সঙ্গে উড়ে যাওয়াও। ও সবার দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় আনন্দের উচ্ছ্বাস। শীলা এসে ওর হাত ধরে বলে, আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছে মাঝে মাঝে বনের মধ্যে ঢুকতে। আশিকা সঙ্গে সঙ্গে সায় দেয়।
- চল আমরা ঢুকে পড়ি। পাহাড়ের পাশ দিয়ে কিছুদূর হেঁটে আবার চলে আসব সৈকতে। ভালোই লাগবে। বন আর সমুদ্র - বন আর সমুদ্র - সুর মিলিয়ে গানের মতো উচ্চারণ করতে থাকে আশিকা।
শীলা বলে, হয়েছে আর গান গাইতে হবে না। চল দৌড়াই। দুজনে দৌড় দিয়ে বনে ঢুকে পড়ে। ওদের পেছনে আরও চার-পাঁচ জন আসে।
বাবুল বলে, বনের মধ্যে আমাদের সাবধানে হাঁটতে হবে। চারদিকে অনেক বণ্যপ্রাণী আছে।
আশিকা চেঁচিয়ে বলে, আমরা বন্যপ্রাণীর খবর জানি। বন ওদের এলাকা। সেজন্য আমরা বেশি ভেতরে যাব না।
- তাহলে চলো চারপাশে ঘুরেটুরে বেরিয়ে যাই।
- না, বনের ভেতর দিয়ে আমরা সামনে দিকে এগোব। তাহলে সবার সঙ্গে থাকা হবে।
শীলা উচ্ছসিত হয়ে বলে, ঠিক বলেছিস আশিকা। আমাদের বনও দেখা হবে, দলের সঙ্গেও থাকা হবে।
বাবুল হাসিতে মেতে ওঠে। হাসতে হাসতে বলে, চলো আমরা সাবই মিলে একটা গান করি।
- কি গান, আমাদেরতো মুখস্ত নাই।
- মুখস্ত লাগবেনা, আমি গাইব তোমরাও আমার গান ধরে গাইবে।
- তোমাকে আমাদের অভিনন্দন বাবুল ভাই। এমন একটি প্রোগ্রামের আয়োজক তুমি।
- আশিকা আমিতো জানি এমন প্রোগ্রাম তোমার নেশা। তুমি না হলে এ প্রোগ্রাম হতোনা।
- থাক হয়েছে, আর বলতে হবে না। চলো এগোই।
সৈকতের পাশে বন তেমন ঘন নয়। সহজে হাঁটা যাচ্ছে। হঠাৎ করে একটা খেঁকশিয়াল দেখতে পায় বাবুল। হাত নেড়ে বলে, বন্ধু আমরা এসেছি। তুমি আমাদের সঙ্গে হাঁট। খুক খুক করে আমাদের সঙ্গে গান গাইবে।

তুমুল হাসিতে সবাই ভরিয়ে ফেলে এলাকা। খেঁকশিয়াল দৌড় দিয়ে চলে যায় বনের ভেতরে। বাবুল বলে, আমাদের হাসিতে ও মজা পায়নি। ভয়ে পালিয়ে গেছে।
- তাহলে তুই যা ডেকে নিয়ে আয়। বলবি, ভয়ের কিছু নাই। তুই আয় আমাদের সঙ্গে।
- সমুদ্রের ধারে এসে তোদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে দেখতে পাচ্ছি রে। থাক, আর ইয়ার্কি করতে হবে না। চল এগোই।
দুপদাপ পা ফেলে সবাই এগোয়। কখনো পড়ে থাকা শুকনো পাতা পায়ের নিচে মচমচ করে। মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায় পাখি। গাছের মাথায় বসে থেকে ডাকে।
- বেশ মজা লাগছে হাঁটতে।
তুহিন উৎফুল্ল হয়ে হাত তুলে ঘুরপাক খায়। তারপর এক দৌড়ে বনের ভেতরের দিকে চলে যায়। মাসুমও অন্য দিকে যায়।
আশিকা হাসতে হাসতে বলে, বনরাজিতে আমাদের ছুটাছুটি। দারুণ।
তখন ও শুনতে পায় বাবা ওর নাম ধরে চিৎকার করে ডাকছে। ও ঘাবড়ে গিয়ে একদৌড়ে সৈকতে নেমে আসে। বাবার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
- তোর মা তোকে খুঁজছে?
- কি হয়েছে মায়ের?
- তেমন কিছু হয়নি। আমাদেরতো আরও অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। তোর মা কিছুক্ষণ রেষ্ট করবে।
- হ্যাঁ, চলো চলো বাবা।
আশিকা দৌড়ে মায়ের কাছে যায়। মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, কি হয়েছে মা?
- হয়রান লাগছে। চাদর বিছিয়ে শুব কিনা চিন্তা করছি।
- না গো মা, চলো মা ওই পাথরের উপর কিছুক্ষণ বসে থাকি।
- হ্যাঁ চল। পাথরের উপর বসি।
আতিকুর রহমান বলে, আমিও তোমাদের সঙ্গে বসব। কি সুন্দর লাগছে চারদিক দেখতে।
- আব্বা, আজকের এই বসা হবে আমাদের ঘরের বাইরে ঘর। আমাদের ঘরের আনন্দ।

বাবা-মা দুজনেই হেসে ওঠে। আতিকুর বলে, মেয়েটার কথা শুনলে প্রাণ ভরে যায়। ও যে কত সুন্দর করে সবকিছু দেখে। বেঁচে থাকার জন্য এমন ঘরের আনন্দও আমাদের খুব দরকার।
- আব্বা, ঘরে বসে আমাদের এমন গল্প করা হয়না। কত কাজ থাকে মায়ের। আব্বা তো প্রায় সারাদিন অফিসে থাকেন। নইলে বাইরে। আমার তো ইউনিভার্সিটি যেতে হয়। নইলে পড়ার টেবিলে।
হামিদা বানু আশিকার মাথায় নিজের মাথা ঠেকিয়ে বলে, দেখি ওর চোখ দিয়ে চারদিক দেখব।
- তা হবে না মাগো। তোমার দেখা তোমার নিজের। তুমি নিজের মতো করে দেখ। যা দেখবে সেটা তোমার স্মৃতিতে থাকবে। আমার দেখা আমার স্মৃতি। বাবারও তাই। তাই না বাবা?
- হ্যাঁরে মেয়ে, তাই।
- বাবা তুমিও আমাদের সঙ্গে এখানে বস।

আতিকুর পাথর ডিঙ্গিয়ে আর একটু এগিয়ে বড় একটি পাথরের ওপর পা ছড়িয়ে বসে। পাশ দিয়ে চলে যাওয়া অনেকে ওদের দিকে হাত নাড়ায়। নূরবানু কাছে এসে বলে, তোর কি খারাপ লাগছে বুবু?
- নারে সেইরকম খারাপ লাগছে না। একটু বসে দম নিচ্ছি। এমন হাঁটায় তো আমাদের অভ্যাস নাই।
- তা ঠিক। হঠাৎ করে হাঁটতে গিয়ে হয়রান লাগছে। তাই না?
- হ্যাঁ, এইরকমই। তোরা যা, আমারা একটু পরে উঠে আসছি।

নূরবানু হাত নাড়িয়ে চলে যায়। দুপুর গড়িয়েছে। মাথার ওপর সূর্য ঝকঝক করছে। আতিকুর উৎফুল্ল হয়ে চারদিকে তাকায়। মাথা অনবরত এদিক-ওদিক ঘুরছে। এই দেখাতো জনমভর দেখা হবেনা। সময়টা এজন্য সমুদ্র বাতাসের সঙ্গী হয়ে ওঠে। মনে পড়ে একবার চিম্বুক পাহাড়ে গিয়েছিল। সে স্মৃতি এখন পুরোদমে সমুদ্রের পানিতে ভেসে উঠেছে। মনে হচ্ছে এলাকটি একটি স্বর্গপুরী। সবুজ পাহাড়ে ওঠার জন্য আঁকাবাঁকা পথ আর পথ থাকেনা। বদলে দেয় সবকিছু। দুপাশের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য সময়ের পরিধিকে স্থির করে ফেলে, যেন এই স্মৃতি আর কখনও মুছে যাবেনা। পাহাড়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদী এই মহূর্তে আতিকুরের সামনে সমুদ্র হয়ে যায়। যেন সাঙ্গু নদী সবুজ প্রকৃতি বুকে নিয়ে সবুজ সমুদ্র হয়ে গেছে। আর পাহাড়ে উঠে গেলে মেঘ নেমে আসে মাথার উপরে। বলে, দেশকে ভালোবেসে সুন্দর রাখ। যেন দেশ কখনো মলিন না হয়ে যায়। তারপরে আতিকুর গুনগুন করে, ঝর্ণা ঝরে রে ঝরঝরিয়ে-
- আব্বু তুমি কি গান করছ?
- গান না রে মা, এটা হলো মনের সুখের সুর।
- সুরের সঙ্গে তো কথাও আছে আব্বু?
- হ্যাঁ, আছে রে মা, আছে। আমাদের এই পাহাড়ি এলাকায় এলে চারদিকে যতকিছু দেখি এসব তো ঢাকা শহরে বসে দেখা যায় না।
- পুরো দেশ কি একরকম হতে পারে বাবা? আমি তো এটা মানব না। ঢাকাসহ সব জেলাশহর একরকম সুন্দর হবে না। পার্বত্য ভূমির সব জায়গাও একরকম হবে না। সব জায়গার সৌন্দর্য ভিন্ন ভিন্ন হবে।
- মাগো তোর মতো এত কল্পনা আমার নাই।
- বাবা-মা তোমাদের কি মনে আছে সেই ঝর্ণাটার কথা, যেটার সামনে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ বলছিল এটা আমাদের নায়েগ্রা জলপ্রপাত।
- হ্যাঁ মা, মনে আছে।

বাবা-মা দুজনে জোরে জোরে বলে। আশিকা হাততালি দিতে দিতে বলে, আমাদের বাংলাদেশে নায়েগ্রা জলপ্রপাত আছে। আমরা সেটা দেখেছি। আমরা নায়েগ্রা বলবনা। আমরা বলব ঝর্ণাধারা, ঝর্ণাধারা।
- ঠিক আছে, তোর মতো আমরাও বলব।
বাবা-মা দুজনে হাততালি দেয়। আশিকা হাসিতে ভেঙে পড়ে।
মা হাসতে হাসতে বলে, এসব জায়গায় এলে তোর হাসি ফুরোয়না মা রে।
- মাগো, হাসতে পারাতো সুখের আনন্দে। তোমরা আমার জীবনটা আনন্দে ভরিয়ে দিয়েছো।
আতিকুর পাথর থেকে নেমে বলে, চল আমরা এগোই। সামনে গিয়ে রেস্টুরেন্টে ভাত খাব।
- আমারও খুব খিদে পেয়েছে আব্বু।
মা ওকে ব্যাগ থেকে বিস্কুট বের করে দিয়ে বলে, নে খা।
-নাগো মা। খাব না। পেটে খিদে রেখে সমুদ্র পাড়ের রেস্তোরায় গিয়ে খাব। তখন খাওয়ার সঙ্গে সমুদ্রের মিল খুঁজে পাব।
- কেমন মিল রে মা?
আতিকুর হাসিমুখে মেয়ের দিকে তাকায়।
আশিকা হাসতে হাসতে বলে, বাবা আমার মনে হবে ছোট ছোট ভাতের দানা এক বিশাল সমুদ্র আমাদের বেঁচে থাকার শক্তি। আমাদের বাঁচিয়ে রাখার জোয়ার।
হামিদা বানু হাসতে হাসতে বলে, তুই বানাতেও পারিস কথা। এটাও তোর বেঁচে থাকার শক্তি।
আশিকা কল্লোলিত ধ্বনির মতো বলে, চলো চলো এগিয়ে যাই।

তিনজনে সৈকতের পথে পা বাড়ায়। আশেপাশের অন্যরা অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে। আতিকুরের মনে হয় এই সমুদ্র সৈকতে হেঁটে যাওয়ার আনন্দ আশিকার মতো আর কারো নয়। ওর চিন্তা কারো সঙ্গে মিলবেনা। ও আনন্দ উপভোগের জায়গা খুঁজে নিতে পারে অনায়াসে।

দূর থেকে বাবুল ওদেরকে দেখে এগিয়ে আসে। বলে, আপনারা যে সমুদ্রের ধারে পাথরের উপর বসেছিলেন দেখে ছবির মতো লাগছিল। একদিকে বিশাল সমুদ্র আর তার কিনারে তিনজন মানুষ। সাগর আর মানুষ মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিল।

আশিকা হাসতে হাসতে বলে, তোমার কথাটা স্বপ্নের মতো লাগল বাবুল ভাই।
- তুইতো নতুন কথা শুনলে এমন করেই উত্তর দিস। খালাআম্মা আপনার খিদে পেয়েছে? হাঁটতে পারবেন?
- পারবরে বাবুল। তুই সবার জন্য এমন একটা আয়োজন করেছিস যে আমি এখানে আসার পর থেকে ভাবছি তোকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দিব।
- খালাগো দিবেন। এই সমুদ্রের ধারে বসেই দিবেন।

আতিকুরও বলে, তুই যে এমন একটা চিন্তা করতে পেরেছিস তা আমাদেরকে ধন্য করেছে।
- আপনারাতো এই পার্বত্যভূমিতে বেশ কয়েকবার এসেছেন।
- হাঁ এসেছি। আশিকার তাড়নায় আসতে হয়েছে।
- নিজেরা আনন্দ পাননি?
- পেয়েছি রে। শুধু পাইনি বললে কম বলা হবে। আনন্দে ডুবে গিয়েছি। এই সমুদ্রের সমান আনন্দ পেয়েছি।

আশিকা উচ্চ কন্ঠে হাসতে হাসতে বলে, বাবার আনন্দের কথা শুনে মনে হচ্ছে ভ্রমণ আমাদের চিন্তাকে সুন্দর করেছে। নইলে বাবা কীভাবে সমুদ্রের সঙ্গে তুলনা করল।
- আমি তোর কাছেই শিখেছি মা।

আশিকা হাসতে হাসতে দৌড়াতে থাকে। ভাবনায় ভেসে ওঠে সমুদ্র সৈকত। সৈকতে দৌড়ানো গভীর আনন্দ, যেন মনে হয় সমুদ্র আমার সঙ্গী। একদিন সমুদ্র ওর ঘরে গিয়ে ওকে বলবে, আয় আজ রাতে তুই আর আমি একসঙ্গে ঘুমাব। তোর বিছানায় আমাকে পাবি। পরক্ষণে দৌড়ের গতি কমিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। নিজেকে ধমক দিয়ে বলে, কল্পনার সীমা থাকা উচিত। নইলে লোকে ওকে পাগল বলবে।

 পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া হরিপ্রসাদ বলে, দাঁড়ালি কেন রে?
- বাবা-মায়ের জন্য। হঠাৎ করে তাদের ছেড়ে এসেছি।
- চল, আমরা আস্তে আস্তে হাঁটি।
- না, আমি যাব না। আমি মায়ের হাত ধরে হাঁটব।
- ঠিক আছে, দাঁড়িয়ে থাক।

হরিপ্রসাদ চলে যায় দ্রুতপায়ে হেঁটে। ভদ্রলোক বাবুলের বন্ধুর বাবা। আশিকা তাকে আগে দেখেনি। এই ভ্রমণে পরিচয় হয়েছে। ভদ্রলোক ওকে একা দেখে সিকিউরিটির প্রশ্নে এগিয়ে এসেছে। ও দূর থেকে দেখতে পায় খালামণিও যুক্ত হয়েছে বাবা-মায়ের সঙ্গে। তিনজনে গল্প করতে করতে হাঁটছে। আশিকা বসে পড়ে। পাশে পড়ে থাকা একটি ছোট কাঠি কুড়িয়ে নিয়ে বালুর ওপর নানারকম দাগ কাটতে থাকে। আশিকার মনে হয় এটা একধরণের ছবি আঁকার আনন্দ। এই মুহূর্তে সমুদ্র সৈকত ওর সামনে শিল্পের ক্যানভাস। ও বড় বড় দাগ কেটে নানা আঁকিবুঁকি টানতে থাকে বালুর ওপর। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। ভাবে, এ এক দারুণ খেলা। খেলতে খেলতে জমে ওঠে জীবনবেলা। ক্ষুধার্ত অনুভূতি মাঝে মাঝে ঘাবড়ে দেয় নিজেকে। কিন্তু পরক্ষণে সেটা তাড়িয়ে নিজের অনুভবের মাত্রাকে গাঢ় করে তোলে। আশিকা নিমগ্ন হয়ে যায় বালুর রেখা ফুটিয়ে তোলার মগ্নতায়। চারদিকে খেয়াল রাখতে পারে না। একসময় বাবা-মা-খালা এবং অন্যরা কেউ কেউ ওর চারপাশে এসে দাঁড়ায়।

- কি করছিস মা? এমন করে বালু ঘাঁটছিস কেন?
- বাবা, বালু ঘাঁটছিনা। বালুর মধ্যে ছবি আঁকছি।
নূরবানু ধমক দিয়ে বলে, একবার দেখলাম দৌড়াচ্ছিস। আবার দেখলাম ছবি আঁকছিস। ঢং দেখানোর আর জায়গা পাসনা।
- বকছেন কেন খালা? এমন একটি জায়গায় আসার জন্য তো-
- হয়েছে, হয়েছে থাম। তোর পাগলামি আর দেখাস না।
-ঠিক আছে, আমি হাত ধুয়ে আসছি। 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top