সিডনী রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১

শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ২০) : সেলিনা হোসেন


প্রকাশিত:
১৬ নভেম্বর ২০২২ ০৩:০১

আপডেট:
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:২৯

 

ও সোচ্চার কন্ঠে ধ্বণিত করে জয় বাংলা। আমিও ওর সঙ্গে জয় বাংলা বলতে থাকি। দুজনের কন্ঠস্বর আগাছামন্ডিত সবুজভূমিতে তরঙ্গ তোলে। একটু আগে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসার পথে যেসব বাধা পেয়েছিলাম তার অনুভব কেটে যায়। কেটে ফেলা ঝোপের ধারালো শাখার ছোঁয়ায় হাতে এবড়োখেবড়ো দাগ পড়ে গেছে। ব্যথা হচ্ছে হাতে। কখনো জংলি কাঁটার সাথে জড়িয়ে পড়ি। কি যে বিপদজনক পথ, আসলে এটাতো পথ নয়। আমি পথ মনে করছি কেন? এগিয়ে যাচ্ছি হামাগুড়ি দিয়ে। এটাতো সবুজ বনভূমি। অল্প একটু সময় এগোতেই টের পাই জংলি কাঁটার সঙ্গে জেিড়য় পড়েছি। সামনে এগোতে পারছিনা। পিঠে কাঁটা এমনভাবে আটকে আছে যে সামনে এগোতে পারছিনা। চারদিকের আগাছার মধ্যে আটকে যাচ্ছে পিঠে লেগে থাকা কাঁটা। রাইফেলের ব্যারেলও নানা জায়গায় আটকে যাচ্ছে। আহত আলমকে আমি ঘাসের ওপর শুইয়ে দেই। ও চোখ বুঁজে শুয়ে থাকে। মুখে মৃদু স্বরে কোঁ-কোঁ ধ্বনি করে। আমার কানে সেই শব্দ ঢুকে গেলে আমার পুরো শরীর তোলপাড় করতে থাকে।
আমি চারদিকে তাকাই খুঁজতে থাকি অন্য কেউ আছে নাকি কোথাও। না, কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। কাউকে পেলে আলমকে দুজনে উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম। এমন সময় পাকিস্তানি সেনাদের দুটো সেল এসে একটু দূরে পড়ে। মনে মনে ভাবলাম, ওরা কি আমাদের দেখতে পাচ্ছে নাকি? এদিকে সেল ছুঁড়লো কেন? হাতে পারে, আমাদের এখান থেকে সরে যাওয়া উচিত। আলমকে আবার আমার পিঠে উঠিয়ে নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে থাকি। অনেকখানি পথ এসে আবার আলমকে পিঠ থেকে নামাই। ওকে বললাম, তোমার গায়ের কোথায় গুলি লেগেছে আমাকে দেখাও। ও চুপ করে থাকে, কিন্তু বলেনা। বিষণœ মুখে তাকিয়ে থাকে অন্য দিকে। বুক ভেঙে বড় বড় নিঃশ^াস আসছে। আমি ওর জামার ভেতর হাত ঢুকাই। বুকের ওপর হাত বুলাতে থাকি। একসময় আমার আঙুলের মাথা ওর বুকের ডানদিকের ছোট একটি গর্তে ঢুকে গেল। ও কঁকিয়ে উঠল। আমি সঙ্গে সঙ্গে হাতটা টেনে বের করে ফেলি। বুঝতে পারি গুলি কোথায় লেগেছিল। তারপর ওকে পিঠে নিয়ে আবার যেতে শুরু করি। ঝোপঝাড় পেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পাই অনেকে ছুটে আসছে। সবাই মিলে আমাদেরকে তুলে দাঁড় করিয়ে দেয়। হাসতে হাসতে স্যালুট করে। বলে, মুক্তিযোদ্ধাদের হাজার সালাম।
কেউ কেউ চেঁচিয়ে বলে, আমরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা।
- না, সবাই মুক্তিযোদ্ধা না। আমরা সবাই শরণার্থী। আমাদেরকে যুদ্ধ করে যোদ্ধা হতে হবে।
- ঠিক, ঠিক। আমরা সবাই যোদ্ধা হব। আমাদের হাতে স্বাধীনতার ফুল ফুটবে।
আমি চেঁচিয়ে বলি, চল চল আমরা এখন যে যার তাঁবুতে যাই। একদিন কেউ কেউ আমরা যশোর রোডে যাব।
- ঠিক বলেছিস। ওখানে গেলে স্বাধীনতার পক্ষে অনেক শিক্ষা পাব।
আমি আর কথা বলিনা। বুকের ভেতর কথা আটকে যায়। স্বাধীনতা লাভের শিক্ষাতো আমাদেরকে প্রতি মুহূর্তে শিখতে হবে। নিজেদের জমিন নিজেদের তৈরি করতে হবে। মনে মনে ভাবি, আমিও যশোর রোডে যাব। তবে কাউকে বলবনা। একা চলে যাব। এখান থেকে অনেকে চলে গেলে এলাকা শূন্য হয়ে যাবে। এটা হতে পারে না। যুদ্ধ করার জন্য সীমান্তের সব এলাকায় যোদ্ধাদের থাকতে হবে। সবার আত্মদানে স্বাধীনতার পতাকা উড়বে।
কয়েকটি দিন যায়। আমি তাকিয়ে থাকি আকাশের দিকে। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে লোক চলাচল দেখি। আমার সামনে পাহাড়ভরা মাতৃভূমির সবুজ সৌন্দর্যকে বলি, মাগো তোমাকে ভালোবাসা আমার স্বপ্ন। এই ভালোবাসায় খুঁজে নেব মাতৃভূমির স্বাধীনতা। এমন সব ভাবনা বুকের ভেতর জমাট হয়ে থাকে। একদিন পাহাড়ের গাছের মাথায় পতাকা উড়িয়ে আসি। দূর থেকে দেখবে সবাই। বাঙালিরা যেমন দেখবে, পাঞ্জাবি সেনারাও দেখবে। দেখে ওদের চোখ পুড়ে যাবে। আর বাঙালির মাথার ওপর দিয়ে বয়ে যাবে স্বাধীনতার বসন্ত বাতাস। প্রত্যেকে বড় করে শ^াস টেনে ছড়িয়ে দেবে বাতাসে। আমার ভাবনায় আনন্দধ্বনি বাজতে থাকে। তিন-চার দিন পর মাকে বলে যশোর রোডে চলে আসি। দেখতে পাই সেদিন ওখানে একজন বিদেশি কবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে। যারা ইংরেজি বলতে পারেনা তারা হেসে মুখ ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকায়। হাসতে হাসতে হাততালি দেয়। আমি সবার পেছনে গিয়ে দাঁড়াই। শরণার্থী মানুষদের নিয়ে কবিতা লিখবেন তিনি। আমেরিকা থেকে এসেছেন। গর্বে-অহংকারে আমার বুক ভরে যায়। ভাবি, কবির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাকে জড়িয়ে ধরব। পাশের একজনকে একথা বললে ও রেগে ধমক দিয়ে বলে, খবরদার না। এমন কিছু করলে আমাদের কাছে পিটুনি খাবি। তুই কোথায় থেকে এসেছিস? তোকে তো এখানে দেখিনি?
- আমি এখানে থাকিনা। দেখতে এসেছি। আপনারা আমার সঙ্গে এমন আচরণ করছেন কেন? আমিতো আপনাদের মতো শরণার্থী।
- তাতো বুঝতেই পারি। এখনতো এখানে বেড়াতে আসার সময় না।
- আমি কোথায় থাকব?
- আজকে গাছতলায় থাকতে হবে। পরে ইন্ডিয়ান ভাইয়েরা ব্যবস্থা করে দেবে।
- আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি ওই বড় গাছটার নিচে থাকব।
- যা, চলে যা। খাবি কি?
- জানিনা। বাতাস খাব।
- হা-হা করে হাসে সবাই। হাসতে হাসতে ইউনুস বলে, বাতাস খেয়ে বাঁচবি?
- বাতাস আমার মুক্তিযুদ্ধ। খেয়ে পেট ভরলে হবে স্বাধীনতা।
- বাব্বা, কথাতো না, কবিতা।
- চল, আমার বাড়িতে চল। তোকে কিছু খাওয়াব। তারপরে গাছতলায় যাবি। একটা মাদুর দেব। পেতে শুয়ে থাকবি।
দুজনে রাস্তা থেকে নেমে যশোর রোডের পাশে গড়ে ওঠা শরণার্থী শিবিরের ভেতর দিয়ে হাঁটতে থাকে। অল্পক্ষণেই দুজনে পৌঁছে যায় তাঁবুর সামনে। ইউসুফ ভেতরে ঢোকে। মুরশিদ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। চারদিকে শরণার্থী শিবির নিজের বুকে ধারণ করে। যশোর রোড ওর সামনে বিশাল হয়ে ওঠে। নিজেকে বলে, শরণার্থীর ভিড়ে যশোর রোড ভরে গেছে। যুদ্ধ! যুদ্ধ! তখন ইউসুফ বেরিয়ে ওকে তাঁবুর ভেতর নিয়ে বসায়। ওর বউ আমিনা সুজির হালুয়া বানিয়েছে। ওকে খেতে দেয়। মুরশিদ বাটি হাতে নিয়ে আমিনার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বলে, শরণার্থী জীবনে সুজির হালুয়া খেতে পারব ভাবি নাই।
স্বামী-স্ত্রী দুজনে আনন্দে হাসতে থাকে। মুরশিদ ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, এ হাসি স্বাধীনতার। তারপর নিজেও হাসতে শুরু করে।
যশোর রোডে ঘুরে অঞ্জন এখন নিজেকেও শরণার্থী বলে। এখানে আসার আগে পর্যন্ত এমন ধারণা ওর ছিলনা। ভেবেছিল, কলকাতায় চলে যাবে। কলকাতার সল্ট লেকে শরণার্থীদের জন্য আস্তানা হয়েছে। এটা ও কারো কারো কাছে শুনেছে। ওখানে গিয়ে শরণার্থী হবেনা। সাধারণ মানুষের মতো জীবন কাটাবে। বলবে, আমি দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দেব। আমার কোনো পিছুটান নাই। এখন যশোর রোডে হেঁটে চলে - মানুষের সঙ্গে কথা বলে শরণার্থীর জীবনে নিজেকে ঢোকায়। বলে, এটাই মুক্তিযুদ্ধের সত্য। এই সত্যের বাইরে যাওয়া উচিত না। নিজেকে প্রবলভাবে ধমকায়। বলে, এমন ভাবনা ভাবার কোনো যুক্তি নাই। বদমাইশি করার জায়গা পাস না তুই। এসব ভাবনার মাঝে কপালে হাত দিয়ে বলে, আর ভুল করবনা। আমার সামনে এখন যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো সত্য নাই। এটাইতো শরণার্থী জীবন কাটিয়ে ওঠার বড় দিক। দেশ স্বাধীন হলে বীরদর্পে স্বাধীন দেশে ফিরে যাবে।
যশোর রোডে হাঁটতে হাঁটতে একজন ভারতীয় ক্যামেরাম্যান দেখতে পায়। তিনি শরণার্থী শিবিরের বিভিন্ন ছবি তুলছেন। অঞ্জন তার সঙ্গে কথা বলার জন্য তাড়া অনুভব করে। নিজেকে বলে, এইসব ছবি হবে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ডকুমেন্ট। এইসব ডকুমেন্ট স্মৃতির নিঃশ^াস। ক্যামেরাম্যানের কাছে গিয়ে বলে, ভাই আপনার নাম কি?
- আমার নাম রঘু রাই। আপনার নাম কি?
- অঞ্জন।
- কোথায় থেকে এসেছেন?
- ঢাকা থেকে।
- আপনার বাড়ি কোথায়? আপনিতো বাংলা ভাষায় কথা বলছেন না?
- আমার বাড়ি পাঞ্জাবে। আমি দিল্লিতে থাকি। স্টেটম্যান পত্রিকার ক্যামেরাম্যান। অনেক ছবি তুলেছি। ছাপা হবে পত্রিকায়।
- ও আচ্ছা। আপনার সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুশি হলাম।
রঘু রাই ঘাড় নেড়ে নিজের খুশির কথা বলে।
- আপনি এখানে দাঁড়ান একটা ছবি তুলি।
অঞ্জন খুশি হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। রঘু রাইয়ের দিকে তাকিয়ে হাসে। রঘু রাই ক্যামেরা তাক করে বলে, হাসবেন না।
অঞ্জন হাসতে হাসতে বলে, শরণার্থী শিবির কি শুধু চোখের জলের তাঁবু? নাকি বেঁচে থাকার আনন্দের জোয়ার? নাকি যুদ্ধের সাহসের বসন্ত-দিন?
- বাব্বা অনেক কথা বললেন? আমি বাংলা বলতে পারিনা, তবে কিছু কিছু বুঝি। যাই আমি। ওই যে একদল শরণার্থী আসছে। ওদের ছবি তুলব।
রঘু রাই দ্রæতপায়ে হেঁটে যায় সীমান্তের কাছে। অঞ্জন দাঁড়িয়ে থাকে। ভাবে আমিয়া যদি ওর বাবা-মায়ের সঙ্গে আসত তাহলে ও শরণার্থী শিবিরের রাজপুত্র হয়ে যেত। পরক্ষণে নিজে নিজে হাসে। নিজেকে বলে, রাজপুত্র হওয়ার এত শখ কেন? ঢং দেখানোর জায়গা পাস না। হ্যাঁ, তাইতো। আমিও যাই। দেখি কারা এসেছে। পরিচিত কেউ থাকতেও পারে।
অঞ্জন এগিয়ে যেতে থাকে সীমান্তের কাছাকাছি। বুকের ভেতর প্রবল টান, যদি অমিয়া আসে ওর বাবা-মাকে নিয়ে। ওতো জানে অঞ্জন এখানে আছে। রঘু রাই শরণার্থীদের লম্বা সারির ছবি তোলে। চারপাশে ঘুরে অনেক ছবি তোলে। শরণার্থীদের অবস্থান ওর ক্যামেরায় ফুটে উঠতে থাকে। অঞ্জন খুব অনুপ্রাণিত হয়। ভাবে, মুক্তিযুদ্ধের দলিল হয়ে থাকবে এইসব ছবি। একসময় শরণার্থীর সারি যশোর রোডে ঢুকে যায়। অঞ্জন দেখতে পায় অমিয়া নেই। ওরা হয়তো ঢাকাতেই থেকে যাবে। শরণার্থী হবেনা। বুকের ভেতর হাহাকারের ধ্বনি ওঠে। পরক্ষণে নিজেকে শাসায়। যুদ্ধের সময় প্রেমের বাতাস বুকে টানার দরকার আছে কি? কেন ওর মধ্যে এমন হাহাকার তড়পায়। নিজেকে শাসন করে ফিরে আসে সীমান্তের ভেতর। যারা এখানে নানা ধরণের কাজ করছে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করা দরকার। নানা মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য সহযোগিতা করা দরকার। নিজেকে শাসন করে রঘু রাইয়ের পেছনে হাঁটতে শুরু করে। রঘু রাই বলে, অনেক ছবি তুলেছি। কাল সকালে এখান থেকে চলে যাব। পত্রিকায় পাঠাব। ছাপা হবে। এসব ছবি দেখলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী আরও সক্রিয় হয়ে উঠবেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য চেষ্টা করছেন। এসব ছবি দেখে খুশি হয়ে বলবেন, জয় বাংলা।
অঞ্জন হাসতে হাসতে বলে, রঘুদা, তুমি প্রধানমন্ত্রীর মনের কথা বলে ফেললে।
- ঐ যে দেখ কেমন হাঁ করে কাঁদছে একটি বাচ্চা। আমি ওর ছবিটা তুলে নেই। এটা শরণার্থী জীবনের কষ্ট।
- না, আমাদের কোনো কষ্ট নেই। আপনাদের ভালোবাসায় আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধের যোদ্ধা। শিশুরা আমাদের মাথার মণি।
রঘু রাই অঞ্জনের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে শিশুটির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ছবি তোলে। বিশাল হাঁ করে কান্নারত শিশুটির ছবি উঠিয়ে অঞ্জনকে দেখিয়ে বলে, এটা শরণার্থী জীবনের দুঃখ।
- আমি মনে করি দুঃখ না। এটা বেঁচে থাকার সত্য।
- বাব্বা, তুমি কি কবি নাকি? কতগুলো কবিতা লিখেছ?
- সত্যি কথা বলার জন্য কবি হতে হবেনা। যে কেউ বলতে পারে।
- হ্যাঁ, ঠিক। তোমার কথা শুনে আমার মন ভরে গেছে। যাই আরও ছবি তুলি।
রঘু রাই একদিকে চলে যায়, তখন দূর থেকে কান্নার ধ্বনি ভেসে আসে। অঞ্জন শব্দ শুনে সেদিকে এগিয়ে যায়। তাঁবুর কাছে গিয়ে শুনতে পায় বয়সী জয়নুল মারা গেছে। ওরা পাঁচজন এসেছিল শরণার্থী হয়ে। ছেলে ইমরুল কাঁদতে কাঁদতে অঞ্জনের কাছে এসে দাঁড়ায়। দুহাতে চোখ মুছে বলে, বাবাকে তাঁর নিজ দেশে কবর দিব। সীমান্ততো কাছেই। নিজে যেতে অসুবিধা হবেনা। আপনি আমাকে সাহায্য করবেন।
- হ্যাঁ, অবশ্যই করব। আমরা ঘাড়ে তুলে নিয়ে যাব ওনাকে।
- ঘাড়ে তুলতে হবেনা। আপনি মাথার দিক ধরবেন, আমি পায়ের দিক। তাহলেই নিয়ে যেতে পারব। বাবাতো শুকনো মানুষ। ওজন বেশি না।
- কবর খুঁড়ব কীভাবে?
- আমার কাছে দা আছে। আগে চলেন দা দিয়ে গর্তের মতো খুঁড়ে আসি। কোনোরকমে মাটি চাপা দিলেই হবে। দাফনতো হবে না। কাফনের কাপড় নাই। ঠিকমতো গোসলও করাতে পারবনা। বাবা আমাদের সবসময় বলতেন, আমি মরে গেলে কোনোরকমে মাটি চাপা দিয়ে দিও। শরণার্থী মানুষের এভাবে কবর হবে।
চিৎকার করে কেঁদে ওঠে ইমরুল। একসময় দুহাতে চোখ মুছে বলে, আমার বাবা স্বাধীনতা দেখে যেতে পারলেন না। হায় আল্লাহ - আবার কাঁদতে শুরু করে ইমরুল। অঞ্জন ওর ঘাড়ে হাত রেখে বলে, কষ্ট বুকের ভেতর ধরে রাখ। চোখের পানি ফেলতে হবেনা।
- কেন ফেলব না? ফেলবই।
ইমরুল আবার কাঁদতে শুরু করলে অঞ্জন ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে। কানের কাছে মুখ রেখে বলে, চলো কবরের ব্যবস্থা করি।
তাঁবুর ভেতর কাঁদতে থাকে ইমরুলের মা আর দুই বোন। কান্নার শব্দ শুনে চারদিক থেকে লোকজন এসে জড়ো হয়। অনেকের চোখে পানি গড়ায়।
কেউ একজন আর একজনকে জিজ্ঞেস করে, তোরা কাঁদছিস কেন?
- কাঁদবনা কেন? আমরাতো সবাই শরণার্থী পরিবার। আমাদের পরিবারের একজন বাবা মারা গেলেন।

চলবে

 

শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ১)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ২)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ৩)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ৪)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ৫)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ৬)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ৭)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ৮)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ৯)
শরণার্থীর সুবর্ণরেখা (পর্ব- ১০)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১১)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১২)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১৩)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১৪)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১৫)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১৬)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১৭)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১৮)
শরণার্থীর সূবর্ণরেখা (পর্ব- ১৯)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top