সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

ধ্রুবপুত্র (পর্ব তের) : অমর মিত্র


প্রকাশিত:
৪ জানুয়ারী ২০২১ ২২:৪১

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ২০:১৮

ছবিঃ অমর মিত্র

 

কামদীপ্ত অগ্নিশিখারা যেন নৃত্যছন্দে দেহ সঞ্চালন করছিল। প্রধান পুরোহিত দ্বিজদেব ব্রহ্মদেব ভট্টর সন্ধ্যারতি শেষ হওয়ার মুখে। সায়ংকাল থেকে একটি প্রহর যায়  দেবারতিতে। এখন ক্লান্ত হয়েছেন ধরা যাচ্ছে। এই শীতেও তাঁর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। তাঁর বামপার্শ্বে যুক্ত ঊরু বেদীর মতো প্রসারিত করে তাঁকে চামরব্যজনরতা দেবদাসীও ক্লান্ত হয়েছে। নীলকণ্ঠ মহাদেবের বামপার্শ্বে দণ্ডায়মান দেবভোগ্যা দেবদাসীও যেন শ্রান্ত হয়েছে প্রহর জুড়ে এই সন্ধ্যারতিতে। তার হাতও থামছে না। চামর‍ব্যজনে তার দেহে এই ছন্দ এসেছে। সেই ছন্দেই তার মুক্তি যেন বা।

শ্রেষ্ঠী বসে আছেন মূল প্রকোষ্ঠের বাইরে, দ্বারমুখে। তিনি এসেছেন আরতি আরম্ভ হওয়ার পর। তাঁর চোখের সামনে পঞ্চপ্রদীপের অগ্নিশিখারা দপ দপ করে দুলছিল। শ্রেষ্ঠীর আচমকা মনে হলো গণিকা দেবদত্তার কথা। পীতবর্ণের রেশমের যে রঙ, সেই রঙ আগুনের। সদ্য উদিত চন্দ্রের। পীতবর্ণের রেশমবস্ত্রে দেবদত্তা যেন প্রদীপ্ত অগ্নিশিখা। তার নৃত্য দেখেছিলেন শ্রেষ্ঠী এই মন্দির প্রাঙ্গণে। সে ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা। দেবারতি আরম্ভ হলো মহাদেবের। গণিকাই যেন অগ্নিশিখা হয়ে মহাকাল মন্দিরকে অর্চনা করতে  আরম্ভ করল। তারপর! সেই ঢাক, কাঁসরঘণ্টার শব্দের ভিতর যুবতী যেন অগ্নিময়ী হয়ে উঠল। তার দুটি হাত যেন সহস্র হাত হয়ে জ্যোৎস্নালোকিত রাত্রিকে গ্রাস করতে লাগল। রাজা এসেছিলেন, এসেছিলেন প্রধান সেনাপতি, এসেছিলেন রানী ভানুমতী, আর ছিলেন তিনি। তিনিই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন ধ্রুবপুত্রকে। সেই নিয়ে আসাই হলো তার কাল। ধ্বংসের বীজ বপন হলো সেই প্রহর জোড়া লাস্যনৃত্যে। শ্রেষ্ঠী দেবদাসীর দিকে তাকিয়েছিলেন। সুযুবতী, সুগঠনা, সুন্দরী। প্রতি জনই দেবতা এবং পুরোহিতের নিকটে নিবেদনযোগ্যা। মনে মনে চঞ্চল হয়ে উঠলেন শ্রেষ্ঠী। কম্পমান দীপশিখার ভিতরে তিনি যেন দেবদত্তাকে দেখতে পাচ্ছেন। এই যে অগ্নিশিখা দিয়ে দেবারতি, এ যেন কামাগ্নির মতো স্ফূরিত হয়ে উঠেছে। দেবতার শীত-গ্রীষ্ম নেই, তাঁদের বাস যেখানে, সেখানে চিরবসন্ত। কামাগ্নিই একমাত্র বিচলিত করতে পারে তাঁদের। শ্রেষ্ঠী মস্তক সঞ্চালন করে  মনের ভিতরে উদয় হওয়া অশিষ্ট ভাবনাগুলিকে ত্যাগ করতে চাইলেন। কিন্তু দেবতার পাশে দাঁড়ানো দেবদাসীর দেহের বিভঙ্গে, শরীর চালনায় আবার চঞ্চল হলেন। সে ঈষৎ ন্যুব্জ হয়ে নীলকণ্ঠের লিঙ্গ মূর্তির উপর চামর ব্যজন করছে। তার বিস্তৃত নিতম্বদেশ, পরিস্ফূট স্তনযুগল, শ্যামবর্ণের দেহলতা, মেখলার আড়াল থেকে প্রস্ফূটিত ঊরুরেখা সবই চোখে পড়ছিল শ্রেষ্ঠীর। এই যুবতী এখন এই ঋতুতে দেবসেবার অধিকারী হয়েছে। রাত্রে মহাকালের গর্ভগৃহের দ্বারে শুয়ে থাকে। মহাকালের ডাক এলে দ্বার খুলে যায়।

ঢাক বাজছিল। কাঁসরঘণ্টা বাজছিল। ক্রমশ ঢাক এবং ঘণ্টার শব্দ উত্তাল হয়ে উঠছিল। আরতির সময় প্রায় শেষ হলো। মহাকাল মন্দিরের উত্তরে মহাকাল অরণ্যে শৃগাল প্রহর ঘোষণা করলেই যেন থাকবে। শ্রেষ্ঠী দেখছিলেন পঞ্চপ্রদীপের অগ্নিশিখার সঙ্গে দেবদাসীও কাঁপছে। তিনি দেখছিলেন প্রধান পুরোহিতের পাশে প্রস্তুর মূর্তির মতো স্থাপিত যুবতীর হাতের চামর টলছে। সেই যে বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে প্রহর জোড়া নৃত্য, তা থামেনি প্রহর শেষ হলেও। বিভোর হয়ে গিয়েছিল প্রধান গণিকা। তার পদক্ষেপণে মন্দির প্রাঙ্গণের পাথর থেকে অগ্নি-স্ফূলিঙ্গ উঠছিল। কটিদেশ থেকে ঊর্ধ্বাঙ্গ যেন স্বয়ং শিহরিত হচ্ছিল। দক্ষিণ-পশ্চিমা বাতাসে ছিল যে নমনীয়তা, শীতলতা, তা অগ্নিশিখার কাছে এসে তপ্ত হয়ে আকাশে উঠে যাচ্ছিল। জ্যোৎস্না হয়ে উঠেছিল উষ্ণ, আলো ফুটেছিল বিহানবেলার মতো। মস্তক সঞ্চালন করে শ্রেষ্ঠী আবার অশিষ্ট ভাবনাগুলিকে দূর করতে লাগলেন। দৃষ্টিপাত করলেন সম্মুখে। আরতি প্রায় শেষ। কিন্তু শেষ না হলেই যেন ঠিক হতো। দেবদাসী যুবতী ক্রমশ ঝুঁকে পড়ছে নীলকণ্ঠ মহাদেবের লিঙ্গমূর্তির অভিমুখে। মাথার ভিতরে আবার আবার অলীক ভাবনার উদয় হলো। দুটি চোখ বন্ধ করলেন শ্রেষ্ঠী। তাঁর মনে হচ্ছে এই যুবতী নিশ্চিত কামার্ত হয়েছে। নিবেদনে উন্মুখ হয়েছ। দেবতা, মহাকাল কি জেগে উঠবেন?

ঢাক, কাঁসরঘণ্টার মিলিত ধ্বনির সঙ্গে শঙ্খধ্বনির মিলন হলো। দুই দেবদাসী গর্ভগৃহের বাইরে, শ্রেষ্ঠীর পশ্চাতে দাঁড়িয়ে আকাশমুখী হয়ে শঙ্খধ্বনি করতে লাগল। শঙ্খধ্বনি আরম্ভ হলো মন্দির প্রাঙ্গণেও। মন্দির চূড়ায় আশ্রয় নেওয়া, মন্দিরের ছাদের ঘুলঘুলিতে আশ্রয় নেওয়া কবুতরগুলি আচমকা জেগে উঠে ডানা ঝাপটিয়ে, বকম বকম করতে করতে ধীরে ধীরে নিঃশব্দ হলো। পুরোহিত উদ্দাম হাতে অগ্নিশিখা দোলাতে লাগলেন। চামরব্যজনরতা যুবতী দেবদাসীর শরীর ভাঙতে লাগল বারংবার। সুভগ দত্তের দেহের অভ্যন্তরে রক্ত চলাচল দ্রুত হলো।

চঞ্চল হয়েছেন শ্রেষ্ঠী। তাঁর দেহ আচমকা তপ্ত হয়ে উঠেছে। তাঁর দৃষ্টি বারেবারেই অধিকার করে  নিচ্ছিল মহাকালের কাছে সমর্পিতা যুবতীর সর্বস্ব। শঙ্খধ্বনি তার নিঃশ্বাস দ্রুত করেছে। তিনি রক্তের গভীরে মত্ততা টের পাচ্ছিলেন। এ যেন মিলনের কাল ঘোষণা। এ যেন আগুনের প্রতি আগুনের আহ্বান। অবাক শ্রেষ্ঠী দেখছিলেন চামরব্যজনরতা যুবতীর চঞ্চলতা বেড়েছে। এমন গভীর নিবেদনে ভরা দেহ বিভঙ্গ তিনি যেন ইহ জন্মে দ্যাখেননি।  দেখেননি আঁখিতারার এত চঞ্চলতা, কাম বিহ্বল কটাক্ষ। দুই চোখ ক্রমে জুড়ে আসছে শৃঙ্গারে ব্যাপৃতার মতো। তাঁর মনে হচ্ছে ওই দেবদাসী তার সত্তা বিলীন করে দেবে মহাকালে। থরথর করে কাঁপছেন শ্রেষ্ঠী সুভগ দত্ত।

মন্দিরে এখন তেমন আসা হয় না শ্রেষ্ঠীর। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে প্রধান পুরোহিত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। উপঢৌকন নিয়ে আসেন। শেষ কবে এমন নিবিষ্ট হয়ে সন্ধ্যারতি দেখেছেন তা মনে পড়ে না সুভগ দত্তর। যেটুকু মনে পড়ে তা হল কোনো এক বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে গণিকা দেবদত্তার লাস্যনৃত্য। তাও কতদিন হয়ে গেল তা! যেন বহু যুগ। সেই নিবেদন, সেই সমর্পণের সঙ্গে এই সন্ধ্যার সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছেন তিনি। ওই দুই দেবদাসীর নিবেদনের সঙ্গে অগ্নিময়ী দেবদত্তার নিবেদনের ভাবটুকুর গভীর মিল। মনে পড়ে রসমঞ্জরীর কন্যার রূপে সেই সন্ধ্যার জ্যোৎস্নাও  যেন মলিন হয়ে গিয়েছিল। চাঁদের আলো ঢেকে গিয়েছিল গণিকার রূপে, যেমন আকাশের তারার আলো ঢেকে যায় চন্দ্রালোকে। তার লাস্যনৃত্যে, আকুল নিবেদনে মহাকাল যেন জেগে উঠেছিল। মন্দির প্রাঙ্গণ কাঁপছিল। সুভগ দত্তর মনে পড়ে প্রজ্জ্বলন্ত অগ্নিশিখা যেমন পতঙ্গকে টেনে নেয়, সেইভাবে তাঁকে টেনেছিল, টেনেছিল ধ্রুবপুত্রকেও। ধ্রুবপুত্র আগুনে পুড়েছে। তিনি পুড়ছেন। তাঁর ধনসম্পত্তি, অতুল বৈভব তাঁকে রক্ষা করছে বটে কিন্তু তিনি তো পুড়েছেনই। সেই রাত্রেই তিনি ছুটেছিলেন গণিকাগৃহে। ক্লান্ত গণিকা তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিল, ওই রাত্রিটি সে মহাকালকেই উৎসর্গ করেছিল, এই কথা বলে। স্বর্ণমুদ্রাভরা পেটিকাটিও ফেরত দিয়ে জোড় হাতে তাঁকে ফিরে যেতে বলেছিল।  তারপর তো ওই আগুনের পাশেই তিনি ঘুরছেন। টানটান হয়ে বসলেন অবন্তীদেশের শ্রেষ্ঠ ধনী মানুষটি। মাথা ঝিমঝিম করছে। তাঁর মনে হচ্ছে মহাকালের প্রতি নিবেদিতা ওই দেবদাসী, এমনকি পুরোহিতের সেবাদাসীও যেন নগরের প্রধান গণিকার চেয়ে যৌবনে ধনী। বয়স তো কম। যৌবন এখনো হয়ত অনাঘ্রাত। দেখে তেমনই মনে হলো তাঁর। শ্রেষ্ঠী মস্তক সঞ্চালন করলেন। দেবভোগ্যা দাসীদের প্রতি প্রলুব্ধতা বিধিসম্মত নয়।

প্রলুব্ধ হতেন না তিনি, কিন্তু যুবতীর ছন্দোবদ্ধ চামরব্যজনে তাঁর পৌরুষ দৃপ্ত হয়ে উঠছে তা সত্য। তার চামরব্যজনে যে ভঙ্গিমা, যে ছন্দ তৈরি হচ্ছে প্রতি দণ্ডে, প্রতি পলে, তা যেন লাস্যনৃত্যেরই আর এক রূপ। ঊরু যুগল ভাঙছে মেখলার আড়ালে, যুক্ত ঊরু প্রসারিত হচ্ছে শিবলিঙ্গের নিকটে, জঙ্ঘা ভাঙছে ঊরু প্রান্তে এসে। কটিদেশ, ঊরুমূল, নিতম্ব সব একই ছন্দে মুক্ত হচ্ছে ছায়া থেকে আলোয়। কটিদেশ থেকে ঊর্ধ্বদেশ শুক্লা চতুর্থীর চাঁদের মতো বঙ্কিম রূপে ঝুঁকে পড়ছে দেবতার উপর। ঘোর নিঃশ্বাস পড়ছে শিবলিঙ্গে। পরিপূর্ণ বক্ষদেশ শিথিল হয়ে আবার ছন্দের নিয়মেই হয়ে উঠছে কামনায়, দৃঢ়, দেবদাসী উন্নত করছে তার দেহলতা, দেহের এই নানা বিভঙ্গে উত্থিত নূপুর ধ্বনি চঞ্চল করছে শ্রেষ্ঠীকে। নিমীলিত চক্ষু শ্রেষ্ঠীর কানে আসছে সঘন নিঃশ্বাসের শব্দ। তিনি কল্পনায় মত্ত হয়ে উঠলেন আবার। ঢাক, কাঁসর ঘণ্টা, শঙ্খধ্বনির মিলিত শব্দ যেন উত্তেজনার শিখরে তুলেছে দেবদাসীকে। এই উত্তেজনার ছায়া এসে পড়েছে  পুরোহিতের প্রতি নিবেদিতা যুবতীতেও। কোথাও কোনো নিষ্কাম ভক্তির চিহ্ন দেখছেন না শ্রেষ্ঠী কেননা তিনি নিজেই তো নিষ্কাম নিবেদনে স্থির হয়ে নেই। শ্রেষ্ঠী সুভগ দত্ত টের পাচ্ছিলেন পৌষমাসের রাত্রিটিতে আগুন ধরে গেছে।  গোপন আগুনে প্রস্তরনির্মিত মন্দিরতল, মন্দিরগাত্রও তপ্ত হয়ে উঠেছে। মিলিত ঘণ্টাধ্বনি, শঙ্খধ্বনির ভিতরে ঢেকে যাচ্ছ অলৌকিক  এক শীৎকার ধ্বনি। তিনি যেন গোপন শীৎকারে মত্ত হলেন।

সহসা পৃথিবী স্তব্ধ হলো। যে ধ্বনিময়তা ব্যাপ্ত হয়েছিল এই বিপুল মন্দিরে, মন্দিরের উপরে অসীমে বিস্তৃত তারাজ্বলা আকাশে, মন্দির সংলগ্ন গন্ধবতী নদীর অন্ধকারে, প্রাঙ্গণে, এই উজ্জয়িনী নগরে, তা থেমে গেল। থেমে গেছে শঙ্খধ্বনি, ঢাকের শব্দ। মিলিয়ে যাচ্ছে উত্তরে মহাকাল অরণ্যে শৃগালের প্রহর ঘোষণা। উঠে দাঁড়ালেন শ্রেষ্ঠী। ঘর্মাক্ত হয়ে  গেছেন তিনি বহু মূল্যবান মদ্রক দেশীয় পশম আবরণের ভিতর। চাদরটি সরিয়ে বুক আলগা করে দিলেন সুভগ দত্ত। তাঁর নিঃশ্বাস  প্রশ্বাস এখন ধীর লয়ে বইছে। পরিশ্রান্ত হয়েছেন তিনি। কোমর থেকে স্বর্ণমুদ্রার পেটিকাটি বের করে অস্ফূট গলায় বললেন, অপূর্ব, অপূর্ব ওই চামরব্যজন, মহাকাল তৃপ্ত হবেন নিশ্চিত।

চামরব্যজনের প্রশংসা বাক্যে  প্রবীণ পুরোহিত ঘাড় বাঁকিয়ে পশ্চাতে তাকিয়ে শ্রেষ্ঠী সুভগ দত্তকে দেখে বিরক্তি লুকিয়ে মুখে প্রসন্নতা আনলেন, বিগলিত হলেন, বললেন, দেবদাসীটির কথা বলছেন মহাশয়?

শ্রেষ্ঠী পুরোহিতের কথা শুনতে পেলেন না। তাঁর চোখ পুরোহিত ব্রহ্মদেবকে পার হয়ে মন্দির গাত্রে এলিয়ে পড়া দেবদাসীর দিকে। মাথার পশ্চাত অংশটি পাথুরে দেওয়ালে আঘাত পেয়েছে যে তা তিনি বুঝতে পেরেছেন। শব্দটি তাঁর কানে এসেছে।  হাতের চামর পড়ে গেছে। যাক্। অগ্নিশিখায় অর্চনার সময়ই তো মহাকাল উত্থিত হন, এখন তাঁর বিশ্রামের সময়। কিন্তু দেবদাসী, পদ্ম শোভিত সরোবরের মতো পরিপূর্ণ যুবতী কি সত্যিই আত্মনিবেদনে বিভোর হয়ে গেছে? দুই চক্ষু নিমীলিত। পরিপুষ্ট অমৃতফলের মতো যুগল স্তন শ্বাস প্রশ্বাসে উত্থিত হচ্ছে বারেবারে। অবাক হয়ে স্তন সুষমা দেখতে দেখতে অস্ফূট গলায় চিৎকার করে উঠলেন শ্রেষ্ঠী, কী হলো ওর, এখন তো মহাকাল ঘুমিয়ে।

মহাকাল ঘুমোন না। তাঁর নিদ্রা নেই, সবই জাগরণ, কখনো ধ্যানস্থ থাকেন মাত্র। বলতে বলতে প্রধান পুরোহিত ঘুরে মহাকালের দিকে ফিরলেন। তাঁর সেবাদাসী যুবতীটি দ্রুত এগিয়ে দেবদাসীকে ধরেছে দুই হাতে। তার মাথাটি কোলের উপর তুলে নিয়েছে। বিরক্ত হলেন শ্রেষ্ঠী। ওই রতিবিহ্বল ভঙ্গীটি তাঁকে আবার উষ্ণ করছিল। দেবদাসীকে আড়াল করেছে যুবতী সেবাদাসী। শঙ্খধ্বনিরতা অন্য দুই দেবদাসী বাইরে থেকে অস্ফূট আর্তনাদ করে ভয়ার্ত হয়ে গর্ভগৃহে প্রবেশ করল। প্রধান পুরোহিত বেরিয়ে এলেন জ্বলন্ত পঞ্চ-প্রদীপ নিয়ে। সোনার প্রদীপে সোনার আগুন দপদপ করছিল। প্রধান পুরোহিত আগুনের তাপ নিজ হাতে নিয়ে শ্রেষ্ঠীর কপালে ছোয়ান, নিজে নেন তারপর। হেঁকে ডাকলেন এক যুবতীকে, এটা নে, কী হলো ওর?

ভীত সেবাদাসী তার কোল থেকে দেবদাসীর মাথা নামিয়ে প্রধান পুরোহিতের কাছ থেকে পঞ্চ-প্রদীপ গ্রহণ করল, প্রধান পুরোহিত তাকে ভর্ৎসনা করলেন, তোর কাজ কী, দায়িত্ব ভুলে তুই ওকে ধরলি কেন?

ভীতা যুবতী কী বলল তা বোঝা গেল না। মুখ অন্ধকার করে পঞ্চপ্রদীপ হাতে সে দাঁড়িয়ে আছে। প্রদীপের আগুন নিভে যাচ্ছে। দপদপ করে পাঁচটি বুকই পুড়ছে।

প্রধান পুরোহিত ব্রহ্মদেব ভট্ট এবার ভর্ৎসনা তীব্র করলেন, তোর সৌভাগ্য যে তুই এই মন্দিরে প্রবেশ করতে পেরেছিস, ভুল করলে আঁস্তাকুড়ে স্থান হবে

যুবতী ফিসফিস করে বলল, সুভদ্রা জ্ঞান হারিয়েছে।

প্রধান পুরোহিত বললেন, জ্ঞান ফিরবে আপনি, ও মহাকালের আশ্রিতা, মহাকাল ওকে দেখছেন, তুই ওকে ধরার কে?

সমস্ত দিন উপবাসে ছিল। বিড়বিড় করল যুবতী।

উপবাসে থাকতে তো হবেই। প্রধান পুরোহিত গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে এলেন। শ্রেষ্ঠী তাঁর পাশে হাঁটছেন। প্রধান পুরোহিত বললেন, আপনি প্রীত হয়েছেন?

কীসে?

দেবদাসী সুভদ্রাকে দেখে?

চামরব্যজনের ভঙ্গিটি সুন্দর। বললেন সুভগ দত্ত।

প্রধান পুরোহিত বললেন, আপনার কথা দেবদাসীকে অবগত করব, মহাকালের কৃপায় আপনার দৃষ্টি পড়েছে ওই সুভদ্রার প্রতি, যুবতী সৌন্দর্যময়ী, আত্মনিবেদিতা।

হাঁটতে হাঁটতে দুইজনে প্রধান পুরোহিতের কক্ষের দিকে যাচ্ছেন। তাঁদের সম্মুখে এক দেবদাসী দীপ হাতে পথ দেখাচ্ছে। সে দীপের পথটুকু আলোকিত করে তোলার জন্য ঝুঁকে পড়েছে অনেক। যেতে যেতে প্রধান পুরোহিত বললেন, আপনি কি সুভদ্রাকে আকাঙ্ক্ষা করেন?

থাক, ও মহাকালের আশ্রিতা।

দু’জনের আলাপনের মধ্যে দেবদাসীর হাতের দীপ কেঁপে গেল। রমণী পা ঘষটে এগোচ্ছে। তার পায়ের নূপুর নিক্কন অন্ধকারেও শুনতে পাচ্ছেন শ্রেষ্ঠী। তিনি দৃষ্টি প্রসারিত করে এই দেবদাসীটিকে দেখতে চেষ্টা করলেন। অন্ধকারে বোঝা যায় না যুবতী না প্রাচীনা। নূপুর ধ্বনিতে যে কল্পনা তৈরি হয় তা যুবতীরই। শ্রেষ্ঠী দেখছিলেন দীপের কোমল হলুদ আলোয় মন্দির গাত্রে, মন্দিরের ছাদে নানারকম ছায়ার নকশা তৈরি হচ্ছে। মূল মন্দির, গর্ভগৃহ থেকে প্রধান পুরোহিতের শয়নকক্ষ সামান্য পথ। সেই কক্ষও মন্দিরের অংশ। মস্ত পাথুরে চাতাল, অগণিত স্তম্ভ পার হয়ে যেতে হয়। মাথার ছাদটি অনুচ্চ। একটু চেষ্টা করলেই তা স্পর্শ করতে পারেন শ্রেষ্ঠী। সেই ছাদে দেবদাসীর হাতের ছায়া পড়েছে। দেওয়ালে তার ছায়া কাঁপছে।

শ্রেষ্ঠী জিজ্ঞেস করলেন, ও কি নৃত্যে পারঙ্গমা?

নৃত্য ব্যতীত মহাকাল তুষ্ট হবেন কেন? বললেন ব্রহ্মদেব।

এই যুবতী কোন দেশের, কোন গ্রামের?

অবন্তীরই, কিন্তু নারীর তো শেষ পর্যন্তই কোনো সূত্র থাকে না, যার কাছে আছে তার, এই মহাকালেই ওই দেবদাসীর জন্ম মনে করতে দোষ কী?

দু’জনে কক্ষদ্বারে দাঁড়িয়েছেন। দীপ হাতে দেবদাসী ঢুকে গেছে ভিতরে। আসন সাজাচ্ছে। তার নূপুরধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন শ্রেষ্ঠী। ওই নূপুরেই তো ধরা যায় আছে কোনো রমণী। নূপুরের শব্দ না থাকলে ধরা যায় না কেউ আছে কিনা। ধ্বনি নিঃশব্দ হলো। কয়েক দণ্ড কোনো শব্দ নেই। প্রধান পুরোহিত চাপা গলায় ডাকলেন, কী হলো, থেমে গেলি কেন?

ত্রস্তপায়ে অন্ধকারে বেরিয়ে এল রমণী। দ্রুতবেগে একটি স্তম্ভের গায়ে পিঠ দিয়ে দাঁড়াল। আবছা দেখে মনে হলো যুবতীই। প্রধান পুরোহিত বললেন, ওখানে বসে থাক, ডাকলে যেন সাড়া পাই, আসুন মহাশয়।

দুটি আসনে দু’জন বসেছেন। দীপ জ্বলছে একধারে। ধূপের গন্ধে ঘরটি ভরপুর। কিন্তু অন্য একটি গন্ধও যেন নাকে আসছিল শ্রেষ্ঠীর। তিনি ঠিক ধরতে পারছিলেন না, ধূপের ধোঁয়ার ভিতরেই ওই গন্ধটি ভেসে আছে কিনা। ভাবতে ভাবতে শ্রেষ্ঠী তাঁর কোমর থেকে স্বর্ণমুদ্রায় ভারি রেশম পেটিকাটি বের করে এগিয়ে দিলেন পুরোহিতের দিকে, দেবদাসী সুভদ্রার জন্য।

পুরোহিত ব্রহ্মদেব গ্রহণ করতে করতে উজ্জ্বল হলেন। পেটিকাটির ভার পরখ করে দক্ষিণ হস্ত থেকে বামহস্তে স্থানান্তর করে বললেন, আপনি উদার প্র্কৃতির মানুষ।

গমগম করে ওঠে শ্রেষ্ঠীর কণ্ঠস্বর, শুনুন ব্রাহ্মণ, আমি আজ দ্বিপ্রহরে রত্নাকর সাগরে গিয়েছিলাম, শূদ্রপল্লীর সন্নিকটে।

শূদ্রপল্লী! ব্রাহ্মণের মুখে ঘৃণার ভাব জেগে উঠল, বললেন, আপনার আশ্রিত সেই ধ্রুবপুত্রও ক্ষত্রিয় সন্তান হয়ে শূদ্র গমন করত, তার ফল সে পেয়েছে, আপনি কি কোনো শূদ্রানীর খোঁজে গিয়েছিলেন?

হাসলেন শ্রেষ্ঠী, বললেন এই নগর কি এতই তুচ্ছ, যে সুভগ দত্তকে যেতে হবে শূদ্রানীর খোঁজে, শুনুন সেখানে শুনলাম, মানুষজন বলছে যে সরোবর কোনোদিন জলহীন হয় না, যে সরোবরে সম্বৎসর পদ্ম ফুটে থাকত, তার এই করুণ দশা কেন?

সরোবর কি শুকিয়ে গেছে? ব্রহ্মদেব জিজ্ঞেস করলেন।

যাওয়ার মুখে।

অনাবৃষ্টির দরুন?

শূদ্রপল্লীর মানুষজন বলছে সরোবরের জলের উৎস বৃষ্টি নয়, এর আগেও যে অনাবৃষ্টির কাল আসেনি তা নয়, যা ঘটছে তা অভূতপূর্ব।

প্রধান পুরোহিত বললেন, কিন্তু সে কথা শূদ্রজাতির মুখে শুনতে হবে কেন, শূদ্র এবং নারী দুইই নির্বাক থাকবে, এই তো সমাজের অনুশাসন।

শ্রেষ্ঠী বললেন, কথাটা ধীরে বলুন, আপনার দেবদাসীটি বাইরে আছে, তাকে চলে যেতে বলুন।

হাসলেন ব্রাহ্মণ, বললাম না শূদ্র এবং নারী, দুই জাতিরই কোনো ক্ষমতা নেই, দুই জাতিরই মনুষ্যেতর প্রাণীর মতো অবলা, যে বসে আছে তার কোনো চিন্তা করার ক্ষমতা আছে, না বোধশক্তি আছে? কিছুই নেই, আপনি নিশ্চিত থাকুন, তেমন কোনো সম্ভাবনাই নেই, ওরা জানে খাদক অনেক, প্রয়োজনে মহাকাল অরণ্যের বন্য পশুরা, শৃগালে ভক্ষণ করবে সুস্বাদু নারী মাংস, বলে যান শ্রেষ্ঠী।

সুভগ দত্ত গন্ধটি অনুভগ করছিলেন। কোনো প্রাণীদেহের পচনের গন্ধ। মুষিক হতে পারে। তিনি বললেন, আপনার কথা সত্যি, তবে নারীজাতির সঙ্গে শূদ্রজাতি তুলনীয় নয়, শূদ্রানী নারীই, কিন্তু শূদ্র পুরুষ তো সেনাবাহিনীর হয়ে অস্ত্র ধরে।

কথাটি শুনে পুরোহিতের কণ্ঠস্বর নিম্নখাদে নেমে এল। একটু ঝুঁকে রেশম পেটিকাটি এ হাত থেকে ও হাতে নিতে নিতে তিনি বললেন, আপনার কথা সম্যক উপলব্ধি করতে পারছি না।

সুভগ দত্ত বললেন, শূদ্র জাতি সমাজের সবচেয়ে নিম্নস্তরে অবস্থান করে, কথাটা সেখান থেকে উঠছে, তারাই বলছে অবন্তী দেশে এমন কখনো হয়নি, সাগর শুকিয়ে যায় এ কখনো কেউ শুনেছে, কমলহীন সমস্ত নগর, এ কখনো হয়েছে?

কমলের ঋতু তো পার হয়ে গেছে।

যাক্ আগে নাকি সমস্ত ঋতুতে সরোবরগুলি শ্বেতকমল, নীলকমলে শোভিত থাকত।

মনে নেই।

মনে করুন, কথাটা নিম্নস্তরে উঠছে, কথাটা এখানেও উঠুক, সম্মুখের দিনগুলি কঠিন।

কিন্তু মাঘ ফাল্গুনে তো বৃষ্টি হয়। ব্রহ্মদেব বললেন।

দু’বছরের উপর বৃষ্টি নেই, আশা করি এখনও তা হবে  না।

বরুণদেব কি অত নির্দয় হবেন, বর্ষা ঋতু যদি নির্জলা যায়, এই সময়ে বৃষ্টি নামে।

মহাকাল করুন বৃষ্টি না নামে যেন, এমন প্রাকৃতিক দুর্বিপাক তো ইচ্ছা করলেই আসে না।

প্রধান পুরোহিতের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠছিল, তিনি আচমকা চিৎকার করে উঠলেন, ললিতা, ললিতা কোথায় তুই?

জবাব পেলেন না দেখে তিনি চট করে উঠে দাঁড়ালেন, দ্বারমুখে গিয়ে চাপা গলায় ডাকলেন, ললিতা, কোথায় চলে গেলি মাগী, দেওয়ালে গা ঘষছিস, এ মাগীটার কামড়ানি বেশি।

নূপুরধ্বনি শোনা গেল। দূর থেকে অন্ধকারে নূপুরধ্বনি এগিয়ে আসছে। দাঁড়িয়ে থাকলেন পুরোহিত।  তিনি উত্তেজিত হয়েছেন শ্রেষ্ঠীর কথায়। উত্তেজনা নিরসনের জন্যই উঠে দাঁড়িয়েছেন। দেবদাসীর নূপুরধ্বনি থামল। তিনি চাপাগলায় বললেন, কোথায় ছিলি?

দূরে।

যা, আরো দূরে গিয়ে অপেক্ষা কর, তবে ডাকলে যেন সাড়া পাই।

সুভগ দত্ত উঠেছেন, কীসের গন্ধ, পচাপ্রাণীর মনে হয়, কিছু পচেছে ভিতরে।

তাই! প্রধান পুরোহিত আচমকা শ্রেষ্ঠীর হাত ধরে ফেলেছন, গন্ধ ভুলে যান মহাশয়, আপনি কি চান অবন্তী দেশ আরো কিছুকাল অনাবৃষ্টিতে থাকুক।

চাই তা। তার জন্য যা প্রয়োজন সব পাবেন।

বরুণ দেবতাকে বিমুখ করতে হবে, সে অতি কঠিন কর্ম, আমিও শাপগ্রস্ত হয়ে যেত পারি, আমি রাজরোষে পড়তে পারি।

আপনি নিশ্চিত থাকুন, রাজকোষে টান পড়েছে, প্রজার জমিতে ফসল নেই, রাজা আমারই সাহায্য প্রার্থী হন এই সময়ে, রাজভাণ্ডার আমার মুখাপেক্ষী, এ  কারোর অজানা নয়।

গন্ধটা তীব্র হচ্ছিল। ধূপের গন্ধ ছাপিয়ে উঠছিল অন্ধকারে ভারী হয়ে ওঠা পচা প্রাণীটির গন্ধ। দ্বারমুখে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতে ভিতরে আবার প্রবেশ করলেন দু’জনে। শ্রেষ্ঠী বলছিলেন, আপনি পারবেন, রাজা কি যজ্ঞের কথা বলেছেন, আপনাকে?

বলেন নি, হয়ত বলবেন।

যজ্ঞের অর্থ দেবে এই সুভগ দত্ত, গোপনে যজ্ঞ নষ্ট করুন আপনিই।

ভীত হলেন প্রধান পুরোহিত, আমি যজ্ঞ করব, আমিই নষ্ট করব?

হ্যাঁ, আমি বলছি এই প্রাকৃতিক দুর্বিপাক মানুষের কাছে একসময় আশীর্বাদ হয়ে উঠবে, প্রকৃতি আমাদের সাহায্যকারী শক্তি  হয়ে দেখা দিয়েছেন, প্রজারা অসুন্তুষ্ট হয়ে উঠছে ধীর ধীরে, আপনি কি তা টের পান?

প্রধান পুরোহিত নিশ্চল। শ্রেষ্ঠীর দেওয়া স্বর্ণমুদ্রার পেটিকাটি বুকের উপর আঁকড়ে ধরে বসে আছেন তিনি। ভীতও হয়ে উঠছেন। শ্রেষ্ঠী সুভগ দত্ত রাজ-অনুরাগী মানুষ। রাজদরবারে তাঁর অসীম ক্ষমতা। রাজা তাঁর সাহায্যপ্রার্থী হয়ে ওঠেন কখনো কখনো। তার মুখে এমন স্পষ্ট কথা শুনতে পাবেন তা ভাবেননি তিনি। কদিন আগে এসেছিলেন সুভগ দত্ত সকালে। তখন যা কথা হয়েছিল সব ভাসাভাসা। বারবার জিজ্ঞেস  করছিলেন সুভগ দত্ত, এই খরার কারণ কী, প্রকৃতি মুখ ফেরানোর অর্থ কী, কার জন্য উজ্জয়িনী, অবন্তী দেশের এই অবস্থা, এর থেকে মুক্তি পাওয়ার বিধান কী?

শ্রেষ্ঠী উঠলেন। ধীর পায়ে দ্বারমুখে দাঁড়িয়ে বললেন, ওই দেবদাসী সুভদ্রা আপনার কাছেই থাকুক, আমি তাকে উপঢৌকন দিলাম স্বর্ণমুদ্রাসহ, আপনি আপনার লক্ষ্যটি সম্পর্কে অবিচল থাকুন। মহাকাল মন্দিরের প্রধান পুরোহিত, আপনার আঁজ্ঞাই শিরোধার্য। বলতে বলতে সুভগ দত্ত হাঁটু মুড়ে বসে মাথা ঠেকালেন পাথুরে ভূমিতে। কানে শুনলেন, জয় হোক! অবন্তী লক্ষ্মী আপনার প্রতি আরো প্রসন্না হন। অবন্তী দেশের কল্যাণ হোক; কল্যাণের জন্য, ক্ষমতার জন্য কোনো পথই পরিত্যাজ্য নয়।

ধ্রুবপুত্র (পর্ব এক)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দুই)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তিন)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পাঁচ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাত)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আট)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব নয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব এগার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বারো)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top