সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার : কাজী মাহমুদুর রহমান


প্রকাশিত:
৭ অক্টোবর ২০২১ ২১:২৬

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৩:৩৪

 

পর্ব বাইশ

নন্দলাল ও মাদাম রোজেঁর যে বাড়ির বেজমেন্টে আমি আশ্রয় নিলাম সেটি অতি পুরাতন একটি দ্বিতল বাড়ি। এক তলাটিতে হলঘর, ড্রইং, ডাইনিং ও কিচেন। দোতালায় নন্দলাল ও মাদাম রোঁজে তাদের স্কুল পড়ুয়া দুটি কিশোর সন্তান নিয়ে বসবাস করে। দোতালায় ওঠার সিঁড়ির নিচে বেজমেন্টে প্রবেশের দরোজা আর আট ধাপের নিম্নমুখির সিঁড়ি। বেজমেন্টটি হিম শীতল। এটি সেলার এবং ফুড স্টোরেজ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তবে নন্দলাল এবং তার স্ত্রী মাদাম রোঁজে তাদের ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে  বেজমেন্টের একটি অংশ কাঠের পার্টিশন দিয়ে ছোট্ট একটি কক্ষ তৈরি করে রেখেছে কোনো অতিথিকে সাময়িকভাবে ভাড়া দেবার উদ্দেশ্যেই। কক্ষটির সঙ্গে টয়লেট আছে। কক্ষটি এত ছোট যে সেখানে একটি লোহার ফোল্ডিং খাট ছাড়া আর কোনো আসবাবপত্র রাখার জায়গা নেই। রুম হিটার ছাড়া এখানে বিশ্রাম বা ঘুম অকল্পনীয়। বদ্ধ, হিমশীতল বেজমেন্টের এই ঘরটিতেই মাসিক পাঁচশো ফ্র্যাঁ ভাড়ায় বলা যায় নন্দলালের বদান্যতায় আমি মাথা গোঁজার একটি ঠাঁই পেলাম। নন্দলালও বন্ধুসুলভ আচরণে আমাকে একটি রুম হিটার ও লোহার ফোল্ডিং খাটসহ বিছাতে একটি গদি সরবরাহ করল। শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমাকে কিনতে হল একটি চাদর, দুটি পুরু কম্বল ও বালিশ। কিন্তু তাতে সেলারের জমাট ঠা-াকে উষ্ণ করা যায় না। রাত্রে আমি শীতে থর থরে কাঁপতে থাকি। বাড়ির মূল হলঘরে ও বেজমেন্টে প্রবেশের জন্য আমাকে দেওয়া হল দুটি ডুপ্লিকেট চাবি। আমি যতদিন ইচ্ছে থাকতে পারি এবং আমি এই বেজমেন্ট ছাড়া বাড়ির অন্য কোনো ঘরে বা অংশে অনধিকার প্রবেশ করব না, সেলাবে রক্ষিত কোনো পানীয় বা খাদ্য আমি ভুলেও গ্রহণ করব না এইসব মৌখিক শর্ত আমাকে বুঝিয়ে বলা হল। আরো সতর্ক করে বলা হল আমি যে এইখানে ভাড়ায় থাকি তা ঘূণাক্ষরে কাউকে না বলতে। কেননা সেলার কোনো অতিথি বা পর্যটককে ভাড়া দেওয়া আইনত অবৈধ।

নন্দলাল, তার স্ত্রী বা সন্তানদের সাথে আমার দেখা হয় না বললেই চলে। তাদের সাথে প্রথম দিনের সেই অন্তরঙ্গ সম্পর্কও নেই। সম্পর্ক শুধু মালিক ও ভাড়াটিয়ার। ওদের ছেলে দু’টি সকালে চলে যায় স্কুলে, নন্দলাল আর রোঁজে সকালে তাদের ব্রেকফাস্ট সেরেই চলে যায় তাদের কপি শপে। আমার সঙ্গে তাদের দেখা বা বাক্য বিনিময় হয় না। সকাল ন’টা বা দশটার দিকে আমি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ি। দাঁত ব্রাশ আর শরীরটা একটু স্পঞ্জ করে কাপড় চোপড় পরে সারাদিন বাইরে ঘোরাঘুরি, বাইরের কোনো রেস্তরাঁতে কিছু সস্তায় খাবার খাওয়া, আর একটা মানচিত্র অবলম্বন করে বাসে চড়ে প্যারির বিভিন্ন এলাকার আর্ট শপ, আর্ট স্কুলগুলোতে আমি ধর্ণা দিয়ে বেড়াই। জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্যে চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকা যায় এমন একটা চাকরির জন্যে অনুরোধ, আবেদন করে যেতে থাকি। তারা আমাকে আশ্বাস দেয় বটে কিন্তু পরে আর কোনো সাড়া পাই না।

বড় বড় শপিং মলগুলোতে মাঝে মধ্যে ভারী মালপত্র টানা, ছোটো খাটো হোটেল, রেস্তরাঁয় ওয়েটার বা কিচেনে সবজি কাটারও জব পাই। কিন্তু এগুলি করতে গেলেও পূর্ব অভিজ্ঞতা ও দক্ষ হাতের প্রয়োজনযা আমার নেই। আধপেটা খাওয়া, সারাদিন ঘোরাঘুরি আর রাত্রে সেলারের ঠা-ায় আমি ঘুমুতে পারি না, আমার প্রায়ই জ্বর আসে, শরীর, স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতি ঘটতে থাকে। আমি নন্দলালের ক্যাফেতে যাই না। তাকে কিছু বলিও না। নিজের হতাশা মেটাতে আমি কিছু ড্রইং পেপার আর পেন্সিল নিয়ে কোনো পার্কে যাই। পার্কে হাঁটাহাঁটিরত বা বসে থাকা, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ভালোবাসার চুম্বন দৃশ্য দেখি। আমার ব্যাগপ্যাক থেকে ড্রইং খাতা আর পেন্সিল বের করে পার্কের বনশোভার ড্রইং বা স্কেচ করি। আমার স্কেচ দেখতে আস্তে আস্তে কৌতূহলী বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাদের ভিড় জমতে থাকে। কেউ কেউ আমাকে অনুরোধ করে তাদের ছবি এঁকে দিতে। আমি রেখায় রেখায় একেঁ দিই বড় জোর দশ মিনিটের মধ্যেই। ছবিটা পেয়ে তারা অবাক হয়, খুশি হয়। আমার হাতে কিছু ফ্র্যাঁ গুজে দেয় যা এই দুঃসময়ে আসার পরম প্রাপ্তি। তবে প্রতিদিন আমি একই পার্কে একই স্থানে যাই না। এক একদিন এক এক পার্কে বা কোনো দর্শনীয় স্থানে যেখানে পর্যটকদের ভিড়। সবাই যে ছবি আঁকায় তা নয়।

 

হয়তো দু’চারজন মানুষ, কেউ বালক, বালিকা, কেউ বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা। তরুণ বা তরুণীরা কম আগ্রহী। অনেকেই কার্টুন আঁকাতে পছন্দ করে। আমার মতো আরো কয়েকজন পথশিল্পী ক্ষুধার্ত কাকের মতো শিকারের অপেক্ষায় ড্রইং পেপার, রঙিন পেন্সিল নিয়ে ইতস্তত ঘোরাফেরা করে। সবারই কিছু না কিছু শিকার জুটে যায়।

আইফেল টাওয়ারের কাছে পর্যটকদের বেশি ভিড়। আমি প্রায়ই ওখানে যাই। ওখানে অনেক পেশাদার ফটোগ্রাফির আর পথচিত্রীদের ভিড়। তবে আর্ট পেপারে ছবি আঁকানোর চাইতে পর্যটকরা আইফেল টাওয়ারসহ নিজেদের ছবি তুলতেই বেশি আগ্রহী। পথ চিত্রকর বা পথশিল্পীদের চাহিদা কম। তবুও তার মধ্যে রোজই আমি দু চারটে ছবি বা কার্টুন আঁকানোর কাস্টমার পেয়ে যাই। অন্য পথশিল্পীরা যেখানে পঞ্চাশ ফ্র্যাঁ করে নেয় আমি সেখানে পঁয়ত্রিশ, চল্লিশ ফ্র্যাঁ নিই। এ নিয়ে অন্য পথ চিত্রকরদের সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায়। এখানে ওদেরও একটা সংঘবদ্ধ দল আছে। এই দলের সদস্য না হলে এবং দলের নেতাকে ছবি প্রতি নির্দিষ্ট হারে চাঁদা না দিলে কোনো বহিরাগত চিত্রকরের এখানে ঠাঁই নেই। ওরা আমাকে সতর্ক করে তাড়িয়ে দিতে চেষ্টা করে। একজন কৃষ্ণবর্ণের মাস্তান যে ওদের নেতা সে এসে আমার আর্ট পেপার ড্রইং পেন্সিল ছুঁড়ে ফেলে দেয়। অশ্রাব্য গালি দিতে দিতে আমার মুখে বুকে ঘুষি মারতে থাকে। আমি জীবনে কখনো মারপিট করিনি। এই বিশালদেহি মাস্তানের হাতে মার খেতে খেতে আমি প্রায় অর্দ্ধচেতন হয়ে পড়ে যাই। পুলিশ এসে আমাদের সবাইকে ধরে নিয়ে যায় থানায়।

আমার নাকমুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে, আঘাতে আঘাতে আমার চোখ মুখ ফুলে গেছে। মনে হচ্ছে আমার একটা বিছানা দরকার। আমি ঘুমোতে চাই। যন্ত্রণায়, কাতরাতে কাতরাতে পুলিশ অফিসারকে আমি ফ্রেন্স ভাষায় বলি, জ’ আই বে সৈন দ্য উনলিত। ই-আ-ত-ইল উন লিত ইচি? জে ভেউক্স দমির।

আমার মতো একজন বাঙালির মুখে মোটামুটি শুদ্ধ ফ্রেন্স ভাষা শুনে পুলিশ অফিসার ভ্রু কুঞ্চিত করেন। তিনি আমার ব্যাগপ্যাক খুলে আমার পাসপোর্ট, পদক, সনদগুলো তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে পরীক্ষা করেন। এর মধ্যে পুলিশের আহ্বানে তাদের ইমারজেন্সি ফোর্সের একজন ডাক্তার নার্স আসেন। আমার অবস্থা পরীক্ষা করে আমার ক্ষতস্থান পরিষ্কার ও ব্যান্ডেজ বাঁধা শুরু করেন। আমাকে কিছুটা চাঙ্গা করার জন্যে গরম কফি ও পেইন কিলার ক্যাপসুল খাইয়ে দেওয়া হয়।

তাদের বিদায়ের পর শুরু হয় পুলিশ অফিসারের জিজ্ঞাসাবাদ। প্রবল যন্ত্রণার মধ্যেও আমি আমার পরিচয় বলি, শিল্পী জীবনের কথা বলি।

পুলিশ অফিসার বলেন, আপনার এত খ্যাতি সত্ত্বেও আপনি ঐ সব পথ শিল্পীদের মতো পথে বসে গেলেন ট্যুরিস্টদের ছবি আঁকতে?

আমি বললাম, স্যার খ্যাতিতে তো পেট ভরে না। আমি তিন মাস ধরে প্যারিসে আছি, একজন মানুষের দয়ায় তার বাড়ির ঠান্ডা সেলারে রাত্রে মাথা গুজে শুয়ে থাকি। আমার কোনো চাকরি নেই। দুবেলা হোটেলে পেট ভরে খাবারের পয়সা নেই। আমি কী করব?

- দেশে ফিরে যাননি কেন?

- যাইনি কারণ, আমি একজন বড় চিত্র শিল্পী হবার স্বপ্ন নিয়ে এদেশে এসেছি।

- এই রকম স্বপ্ন নিয়ে অনেকেই আসে। স্বপ্নটাও মরে যায়, আর তারাও মরে যায়। আপনিও আজ মরতেন যদি পুলিশ আপনাকে উদ্ধার না করত।

আমি বললাম, তা ঠিক। পুলিশের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তবে আমার একটি কথা, ফ্রান্স তো পৃথিবীর অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ। খ্যাতিমান শিল্পীদের চিত্র শিল্পের দেশ। তবুও এ দেশে কেন এই অরাজকতা? আমাদের মতো নিঃসম্বল অসহায় শিল্পীদের পথে ঘাটে পেটের ক্ষিদে মেটাতে ছবি আঁকার মতো এই তুচ্ছ কাজ করতে গেলে অকারণে কেন নাজেহাল হতে হয়, এমন মার খেতে হয়?

 

পুলিশ অফিসার বললেন, দুঃখিত। আসলে আপনি মার খেয়েছেন অন্য পথ শিল্পীদের সাথে সমঝোতা না করে, তাদের আয় রোজগারে ভাগ বসিয়ে। আপনি ওদের রেটের বাইরে  কম পয়সায় ছবি আঁকায় ওরা ক্ষেপে গেছে। ওদের নেতাকে নালিশ করেছে এবং নেতা এসে আপনাকে পিটিয়েছে।

আমার সঙ্গে ধরে আনা পাঁচ ছয়জন পথ শিল্পী আর তাদের নেতা যে আমাকে পিটিয়েছিল তাদেরকেও ধরে আনা হয়েছিল একই সাথে। আমি আহত অবস্থায় পুলিশ অফিসারের সামনে চেয়ারে বসে? আর অন্যরা পুলিশ প্রহরায় এক কোণে দাঁড়িয়ে। পথ শিল্পীরা কিছুটা ভীত, কিন্তু তাদের নেতা ভয় ভীতিহীন, একটা বেপরোয়া ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশ অফিসার কঠোর কণ্ঠে ডাকলেন, লুক্কা?

নেতা লুক্কা উত্তর দিল, ইয়েস স্যার।

তুমি এই বিদেশিকে এভাবে মেরেছ কেন?

লুক্কা তেমনি বেপরোয়া ভঙ্গিতে উত্তর দিল, ঐ লোকটা আমাদের পুত্তর আর্তিস্তদের রোজগারে ভাগ বসিয়েছে। সামান্য বাদ-প্রতিবাদ, ঝগড়া-ঝাটি ধাক্কাধাক্কি হয়েছে ... ইত্স জাস্ত অ্যান এক্সসিদেন্ত ...

- লুক্কা, তুমি কি আর্তিস্ত?

- মে বি আই অ্যাম নত এ রিয়েল আর্তিস্ত। বাত আই লাইক, লাভ দিজ পুত্তর আর্তিস্ত। দে আর মাই ব্রাদার। আই লুক আফতার দেম।

- রোজ প্রত্যেক শিল্পীর কাছ থেকে কত করে চাঁদা নাও?

- নাথিং। লুক্কার উত্তর।

পুলিশ অফিসারের আচমকা সপাট চড়ে ‘ওহ গদ’ বলে লুক্কা মাথা ঘুরে পড়ে গেল মেঝেয়।

পুলিশ অফিসার এবার লুক্কার সঙ্গী পথশিল্পীদের প্রশ্ন করলেন, শিল্পীদের আমিও শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি। তোমরা সত্যি করে বল এই লুক্কা বদমাসটাকে তোমরা রোজ কত করে চাঁদা  দাও? মিথ্যে বল না।

একজন পথ শিল্পী ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল, ছবি প্রতি বিশ ফ্র্যাঁ করে। না হলে ...।

পুলিশ অফিসার একজন কনেস্টবলকে আদেশ দিলেন লুকার বডি সার্চ করতে। অন্য একজন পুলিশ সেই সার্চ ভিডিও করা শুরু করল। নির্দেশ মতো লুক্কাকে উলঙ্গ করে তার দেহের প্যান্ট, জ্যাকেট সব তন্ন তন্ন করে সার্চ করে পাওয়া গেল অনেক ফ্র্যাঁ, পাউন্ড, ডলার, হিরোইনের গোটা কয়েক পুরিয়া আর ছোট্ট একটা গুপ্ত ছুরি। সে সব টেবিলের ওপর সাজিয়ে রেখে ছবি তোলা হল লুক্কাকেসহ।

পুলিশ অফিসার বললেন, এসব টাকাই হল লুক্কার আজকের আয়, ট্যুরিস্টদের পকেটমার ও চাঁদাবাজির টাকা। সব চাইতে বড় ক্রাইম হল ওর কাছে পাওয়া নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য আর অস্ত্র। তারপর হুংকার দিয়ে বললেন, ওকে গারদে ঢোকাও।

লুক্কাকে উলঙ্গ অবস্থাতেই গারদে লকআপ করে ওর পরনের প্যান্ট, শার্ট আর জ্যাকেট ছুঁড়ে দেওয়া হল গারদের মধ্যে। অন্য পথ শিল্পীদের মুখ বিবর্ণ। তারা ভয়াবহ আতঙ্কে। আমি পুলিশ অফিসারকে অনুরোধের স্বরে বললাম, এই পথশিল্পীরা আমারই মতো দুর্ভাগ্যের শিকার। দয়া করে ওদের ছেড়ে দিলে আমি কৃতজ্ঞ থাকব।

পুলিশ অফিসার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ওদের বিরুদ্ধে আপনার কোনো অভিযোগ নেই?

আমি বললাম, না।

পুলিশ অফিসার পথ শিল্পীদের উদ্দেশ্যে বললেন, যেহেতু তোমাদের বিরুদ্ধে এই বিদেশি শিল্পী অভিযোগ করছেন না, সে কারণে আমি তোমাদের ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু লুক্কা ছাড়া পাবে না। এরপর তোমরা কোনো হাঙ্গামা না করে নিজেদের মতো ছবি আঁকবে। কেউ কাউকে বিরক্ত করবে না। কোনো নতুন লুক্কা বা লুচ্চাকে চাঁদা দেবে না। যদি কেউ আমার আদেশ অমান্য কর তাহলে তার অবস্থা লুক্কার মতোই হবে। ইউ পিপল  দু ইউ আন্দারস্তান্দ হোয়াত আই সেইদ?

সবাই সমস্বরে বলল, ইয়েস স্যার।

আমি ছাড়া সবাই চলে গেল। পুলিশ অফিসার আমাকে বললেন, সব দেশেই কিছু না কিছু অ্যান্টি সোশ্যাল এলিমেন্ট থকে। প্যারিসের মতো এত বড় শহরেও সেই সব এলিমেন্টের সংখ্যা কম নয়। এই লুক্কার মতো বহু সাদা কিংবা কালো মানুষ আছে যারা সুযোগ পেলেই টাকার জন্যে আপনাকে খুন করতে দ্বিধাবোধ করবে না। সো, বি কেয়ারফুল ম্যান।

পাসপোর্ট ও সনদপত্র, ক্রেডিট কার্ডসহ আমার ব্যাগপ্যাকটি ফেরত দিয়ে বললেন, প্লিজ ইউ গো তু সাম ক্লিনিক অ্যান্ড গেত ইয়োর ত্রিতমেন্ত।

কিন্তু যাবার আগে তুমি তোমার ঠিকানা দাও কোথায় তুমি থাক। তোমাকে আমাদের দরকার হবে ঐ লুক্কার কারণে। সে তোমাকে অন্যায়ভাবে মারপিট করেছে।

আমার সামনে কাগজ দিয়ে বললেন, প্লিজ রাইত ডাউন ইয়োর অ্যাদ্রেস।

আমি অসহায়ের মতো নন্দলালের বাসার অ্যাড্রেস লিখতে বাধ্য হলাম। জানি নন্দলাল এতে আইনি ঝামেলায় পড়বে। তার সাথে আমার সম্পর্ক চিরতরে শেষ হয়ে যাবে। তবুও আমার উপায় নেই।

আমি আহত অবস্থা সত্ত্বেও কোনো ক্লিনিকে গেলাম না। আমার এখন একটা বিছানা প্রয়োজন, প্রয়োজন ঘুম।

আমি ফিরে গেলাম নন্দলালের সেই অন্ধ হিম বেজমেন্টে। বিছানায় শুয়ে ঘুমে অচেতন।

যখন চেতনা ফিরে পেলাম আমি কেমন যেন একটা স্বপ্নময় উষ্ণতার মধ্যে। একটা আরামদায়ক কোমল শয্যা, সাদা দেয়ালের মধ্যে সাদা পোশাকের নার্স। আমার শরীরে স্যালাইন চলছে। আমি বিস্ময়ে হতবাক। কে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে এল? আমার আরো বিস্ময়আমার শয্যাপাশে সোফি বসে। সোফি তো আমাকে প্যারির কলেজ অব আর্টস এর গেস্ট হাউজ থেকে তুলে নিয়ে আমাকে আমার কথা মতো আমাকে সেন্ট্রাল মুনসিটিতে ড্রপ করে বিদায় নিয়ে চলে গিয়েছিল। তারপর আর কখনো দেখা হয়নি। আজ হঠাৎ এখনে কেন, কীভাবে? আমার মুখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন আর বিস্ময় বিমূঢ় ভাব দেখে বোধহয় অনুমান করল আমি কী জানতে চাইছি। বলল, মশিঁয়ে তাইমুর, পুলিশ স্টেশন থেকে আমাদের কলেজ অব আর্টস এ ফোন করে তোমার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তুমি যে আইফেল টাওয়ারের ওখানে লুক্কা নামের একটা গু-ার হাতে প্রচ- মার খেয়েছ গুরুতর আহত সেটাও বলা হয়েছিল। তোমাকে কোনো হাসপাতালে বা ক্লিনিকে যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু সেখানেও তুমি যাওনি। তাই পুলিশের নির্দেশে কলেজ আর্টস এর চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমি তোমার খোঁজ নিতে তোমার সেই নন্দলালের ক্যাফেতে গিয়েছিলাম। ওরা কিছুতেই তোমার খবর জানাতে চাননি। আমি বাধ্য হয়ে পুলিশের সাহায্য নিয়ে তোমাকে নন্দলাল বাবুর বাড়ির বেজমেন্ট থেকে প্রবল জ্বর ও অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে তোমাকে এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। দুদিন ধরে তুমি অচেতনে আর জ¦রে। নাউ ইউ গট ব্যাক ইয়োর সেন্স। হোপ, ইউ উইল বি অল রাইট উইদিন ফিউ ডেজ। আমার প্রতি কলেজ অব আর্টস এর নির্দেশ হচ্ছে তোমার দেখ-ভাল করা, তুমি সুস্থ হলে তোমাকে রিলিজ করে কলেজ অব আর্টস এর চেয়ারম্যান এবং ডিনের কাছে তোমাকে উপস্থিত করা। এটা হচ্ছে আমার অফিসিয়াল বক্তব্য।

আমি ক্লান্ত কণ্ঠে বললাম, প্রিয় সোফি, তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ। তুমি আমার খোঁজ না নিলে আমি ওখানেই মরে পড়ে থাকতাম। তোমার হৃদয় অনেক বড়। এখন সেই বড় হৃদয় দিয়ে আমাকে তোমার ব্যক্তিগত বক্তব্য বল, আমি শুনতে চাই।

সোফি মৃদু হেসে বলল, মশিঁয়ে তাইমুর আমি একজন গাইড। একজন গাইডকে রোবটের মতো নিজেকে তৈরি করতে হয়। তাকে নানান ভাষা জানতে হয়। মানুষের চেহারা, চরিত্র, তার আচার আচরণ, চাওয়া পাওয়া বুঝতে হয়। অতিথিকে কীভাবে তুষ্ট করতে হয়, সুকৌশলে নিজেকে তার লোভের হাত থেকে রক্ষা করতে হয় তার সবকিছুই আমাদের শিখতে হয়। আমি দু’সপ্তাহ তোমার সঙ্গে ছিলাম। বিদেশি তরুণীদের প্রতি একটা লোভী আকর্ষণ তোমার মধ্যে থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু লক্ষ্য করলাম তোমার মধ্যে শারীরিক লোভ নেই। ভুলেও আমার হাত ধরোনি, আমাকে প্রেম নিবেদন করোনি। কিন্তু এ যাবত সকল অতিথিই আমার সঙ্গে এই আচরণ করেছে। আমিও তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ যে তুমি নিজেকে ছোট করোনি, আমাকেও মানসিকভাবে আহত করোনি।

আমি চোখ বন্ধ করে সোফির কথাগুলো শুনলাম। বললাম, ধন্যবাদ। সোফি, নন্দলাল বাবুর কি খুব ঝামেলা হবে?

- ঝামেলা তো কিছু হবেই। ওরা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তোমার মৃত্যু হলে ওদের দুজনকেই জেলে যেতে হত। থ্যাংকস গড, যে তুমি মরোনি। তবে ওরা ঝানু লোক। কিছু জরিমানা আর তোমাকে কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে হয়তো ব্যাপারটা সামলে নেবেন।

- আমার জন্যে ওরা ঝামেলায় পড়–ক তা আমি চাইনে। আমি তো জেনে শুনে স্বেচ্ছায় ওদের ঐ বেজমেন্ট ভাড়া নিয়েছিলাম। আমি কোনো ক্ষতিপূরণ চাইনে। শুধু আমার ব্যাগপ্যাক, পাসপোর্ট, ক্রেডিট কার্ড আর কম্বল দুটো ফেরত পেলেই হল।

সোফি আমাকে আশ্বস্ত করে বলল, ডোন্ট ওয়রি। ওগুলো আমার হেপাজতে নিরাপদেই আছে। এখন তুমি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠো।

আমি স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বললাম, সোফি আমি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে চাই যদি তোমার বন্ধুত্বের হাতটা আমার কপালে রাখ। আমার মনে হচ্ছে তোমার হাতের স্পর্শ পেলে আমার সব জ্বর, যন্ত্রণার অবসান ঘটবে। উইল ইউ প্লিজ?

সোফি বিনা সংকোচে আমার কপালে হাত রাখল। আমি আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে গেলাম।

সাতদিন পর প্যারিস কলেজ অব আর্টস এর চেয়ারম্যান মশিঁয়ে আতোঁয়ান এবং ডিন মশিঁয়ে দানিয়েলের মুখোমুখি আমি। মশিঁয়ে আতোঁয়ান জিজ্ঞেস করলেন, মশিয়ে তাইমুর আপনার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন?

- জি এখন কিছুটা ভালো বোধ করছি। অশেষ ধন্যবাদ আপনাদের সাহায্যের জন্যে।

- আপনি নির্ধারিত সময়ে দেশে ফিরে যাননি কেন?

- যাইনি কারণ, এ দেশে ছবি আঁকা শেখা আমার আজীবনের    স্বপ্ন ছিল।

- আপনি লন্ডন আর প্যারিসের বিখ্যাত দুটি আর্ট ফাউন্ডেশন থেকে সম্মানজনক তিনটি পুরস্কার লাভ করেছেন, সনদ পেয়েছেন। এরপর ছবি আঁকা শেখার আর কিছু কি বাকি আছে?

- জি আছে। শেখার কোনো শেষ নেই। আমি জীবনভর ছবি আঁকলেও আমার শেখার শেষ হবে না।

- তাই যদি হয় আপনি প্যারিসে কেন? লন্ডনকেও বেছে নিতে পারতেন? লন্ডনেও আমাদের এই প্যারিস কলেজ অব আর্টস এর মতো অনেক নামী দামি প্রতিষ্ঠান আছে।

- তা হয়তো আছে। কিন্তু আমার প্যারিসে আসার পেছনে একজন বিশিষ্ট চিত্র সমালোচকের সামান্য কিছুটা ভূমিকা আছে। তিনি তিন বছর আগে যখন একটা গবেষণার কাজে ঢাকা গিয়েছিলেন তিনিই আমার ছবি দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছিলেন এবং আমার মনে ভেতরে প্যারিসে আসার স্বপ্নবীজ বুনে দিয়েছিলেন।

- তিনি কে?

- মাদাম জুলিয়াঁ।

- ওহ তাই! তিনি আমাদের সুপরিচিতা, ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনিই আপনার রিকশা পেইন্টিং নিয়ে কিছু আর্টিকেল লিখেছিলেন।

- তার সঙ্গে কি আপনার দেখা হয়েছে?

- জি না। সম্ভবত তিনি দেশে নেই।

- তা এখন আপনি কি করবেন?

- যতদিন পারি এই দেশেই থাকব।

- কিন্তু আপনি তো এদেশের নাগরিক নন। আপনার রেসিডেন্ট পারমিট নেই।

- ফ্রান্সে তো জন্মগতভাবে ফ্রান্সের মানুষই থাকে না। অন্য দেশের মানুষও এসে বসবাস করে, পড়াশুনো করে, ছবি আঁকে, অভিনয় করে, ব্যবসা বাণিজ্য করে। নানা ধান্দায় তারা এখানে থেকে যায়। এক সময় নাগরিকত্বও পেয়ে যায়। আমি তো শুধু এখানে ছবির জগতে থাকতে চাই, প্রিয় শিল্পীদের ছবি পাঠ করে ছবি আঁকা শিখতে চাই। এই দুঃসময়ে আমার প্রয়োজন শুধু একটু সাহায্য-সহযোগিতা।

- আপনি আমাদের কাছে কী ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা আশা করেন?

- বেঁচে থাকার জন্যে, ছবি আঁকা-আঁকির সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্যে যে কোনো একটা চাকরি।

- হুম। কঠিন ব্যাপার। আপনার মতো গুণী শিল্পীকে রাখার মতো পদ আমাদের হাতে নেই।

- সে ক্ষেত্রে আমি পথশিল্পী হয়ে আয় রোজগারের চেষ্টা করব। লুক্কার মতো আবার কোনো গু-া, বদমায়েশের হাতে মার খাব, তারপর মশিঁয়ে নন্দলালের মতো অন্য কারো বেজমেন্টের সেলারে ঠা-ায় জমে মরে পড়ে থাকব। তারপর একদিন ঐ অন্ধকার হিম ঘর থেকে আমার হিম জমা শুকনো লাশ কেউ উদ্ধার করবে। সেই পরিণতির জন্যে আমি প্রস্তুত।

আমার কথা শুনে মশিঁয়ে আতোঁয়ান এবং মশিঁয়ে দানিয়েল কিছুক্ষণ গুম হয়ে বসে রইলেন। মনে হল কিছু একটা ভাবছেন তারা। নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে দানিয়েল বললেন, সেটা হবে একজন সম্ভাবনাময় শিল্পীর মৃত্যু।

আতোঁয়ান বললেন, দুঃখজনক অপমৃত্যু।

এরপর ওরা দুজনে আমি বুঝব না এমন এক দুর্বোধ্য ভাষায়-সম্ভবত কাতালান ভাষায় আলাপ আলোচনা শুরু করলেন। অবশেষে তারা বোধহয় একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন। মশিঁয়ে আতোঁয়ান আমাকে ইংরেজিতেই  বললেন, মশিয়ে তাইমুর আমরা তোমার সমস্যা বুঝতে পারছি। আমরা তোমাকে সাহায্য করতে চাই। তবে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, কলেজের কিছু নিয়ম-নীতি আছে, তা সত্ত্বেও আমরা সাময়িকভাবে তোমার জন্যে যেটুকু করতে পারি আমাদের এই কলেজে শিক্ষার্থীরা যে সব ছবি আঁকে, দেশ-বিদেশ থেকে যে সব ছবির বাছাই ও রিভিউ করার জন্যে দুটো কমিটি আছে। একটি জুনিয়র রিভিউ কমিট, অন্যটি সিনিয়র রিভিউ কমিটি। আমরা তোমাকে জুনিয়র রিভিউ কমিটির সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। সদস্য হিসাবে তোমার কাজ হচ্ছে শিল্পী তার ছবিতে কোন ভাবনা-চিন্তা বা শিল্প বোধের প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা পর্যবেক্ষণ করে খুব সংক্ষেপে সর্বোচ্চ দশ লাইনের মধ্যে লিখে এই রিভিউ রিপোর্টটি ফ্যাকাল্টির ডিন প্রফেসর দানিয়েলের কাছে জমা দিতে হবে। এখানে একটি কথা জানিয়ে রাখতে চাই যে শিল্পীরা যে সব ছবি আমাদের এখানে পাঠান তারা তাদের ছবির সঙ্গে তাদের চিন্তা-চেতনা এবং ছবির মূল বক্তব্যসহ সংক্ষিপ্ত নোট পাঠান। যেমনটি তুমিও পাঠিয়েছিলে তোমার পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি সম্পর্কে। তবে তুমি যে সব ছবি রিভিউ করবে শিল্পীরা সেই বক্তব্য তোমাকে জানানো হবে না। তোমার রিভিউ রিপোর্টের সঙ্গে সিনিয়র রিভিউ কমিটি যাচাই করে দেখবেন শিল্পীর ভাবনা-চিন্তা তোমার শিল্প দৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মেলে কি-না? বিষয়টি কি তোমাকে বুঝাতে পেরেছি?

আমি মাথা নাড়লাম। বললাম, হ্যাঁ পেরেছি। তবে বিষয়টি অত্যন্ত জটিল ও স্পর্শ কাতর।

দানিয়েল বললেন, হ্যাঁ এই জটিল ও স্পর্শ কাতর বিষয়টি তোমাকে অনেক সাবধানতা ও গোপনীয়তার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে। কারো সাথেই তোমার মনোভাব শেয়ার করা যাবে না। আমাদের সঙ্গেও নয়। তুমি শুধু তোমার রিপোর্ট একটা বন্ধ খামের মধ্যে আমাকে দেবে। আর কিছু জানতে চাও?

- জি, আমার সম্মানী এবং আশ্রয় সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা পেতে চাই।

- কাজের সুবিধার জন্যে তুমি আমাদের ডরমিটরিতে একটা রুম পেতে পার। আর ছবি রিভিউয়ের জন্যে ছবি প্রতি পাবে একশ ফ্র্যাঁ। দিনে দুটো ছবির রিভিউ রিপোর্ট দিতে পারলে দুশো ফ্র্যাঁ। তবে দিনে দুটোর বেশি ছবির রিভিউ আমরা গ্রহণ করি না। আশা করি এতে তোমার আশ্রয়ের সমস্যা মিটবে এবং ক্ষুধার অন্ন জুটবে। এখন বল আমাদের এই প্রস্তাবে তুমি সম্মত কিনা? সে, ইয়েস অর নো।

এই অভাবিত প্রস্তাব তো আমার হাতের তালুর ওপর আইফেল টাওয়ার পাওয়া। আমি বিনা দ্বিধায় বললাম, হ্যাঁ।

নন্দলালের বাড়ির সেই অন্ধকূপে আমি আর ফিরে যাইনি। আর্ট কলেজের ডরমিটরিতে আমাকে একটা ছোট্ট রুম দেওয়া হয়েছে। সোফি তার হেপাজতে রাখা আমার কম্বল, বালিশ, স্যুটকেস, পাসপোর্ট, ক্রেডিট কার্ড সব বুঝিয়ে দিয়েছে। এখন কিছুদিনের জন্যে নিশ্চিন্ত।

চলবে

 

লাইফ অব এ রিকশা পেইন্টার (পর্ব এক)
লাইফ অব এ রিকশা পেইন্টার (পর্ব দুই)
লাইফ অব এ রিকশা পেইন্টার (পর্ব তিন)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব চার)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব পাঁচ)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব ছয়)
লাইফ অব এ রিকশা পেইন্টার (পর্ব সাত)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব আট)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব নয়)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব দশ)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব এগার)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব বার)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব তের)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব চৌদ্দ)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব পনের)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব ষোল)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব সতের)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব আঠারো)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব উনিশ)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব বিশ)
লাইফ অব এ রিক্শ পেইন্টার (পর্ব একুশ)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top