সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

ধ্রুবপুত্র (পর্ব পঁচিশ) : অমর মিত্র


প্রকাশিত:
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:৪০

আপডেট:
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:০৬

ছবিঃ অমর মিত্র

 

চৈত্র যায়। সামনে পূর্ণিমা। তারপর ক’দিন বাদেই বৈশাখের শুরু। পূর্ব দিগন্তে বিশাখা নক্ষত্র উদয়ের রাত এসে গেল। চিত্রা নক্ষত্র আছেন এই চৈত্রে। উত্তর আকাশে সপ্তঋষিরা ধ্যানমগ্ন, অগস্ত্য নক্ষত্র আছেন দক্ষিণে। ওই দক্ষিণ কতদূরে! অগস্ত্য নক্ষত্র উদয়ের দেশে এক নদী আছে, নদীর নাম কাবেরী। আছে মলয় পর্বত, চন্দনবন--সবই ধ্রুবপুত্রের কাছে শোনা। এখন মনে পড়ছে গন্ধবতীর।

মা মেয়ে বসে আছে দাওয়ায়। সন্ধ্যা নামল ধীরে। চারদিক খুব চুপচাপ। মা মেয়ে আকাশ দেখছিল। চিত্রা, স্বাতী, উত্তরফাল্গুনী, পূর্বফাল্গুনী, লুব্ধক, রোহিণী, আদ্রা...। এইসব তারারা কেউ কেউ নিরুদ্দেশে গিয়েছিল, যেমন এখনো নিরুদ্দেশে আছে ধ্রুবপুত্র, নিরুদ্দেশে আছে বিশাখা। ফিরে আসবে নিরুদ্দিষ্ট তারারা, যেমন ফিরবে বিশাখা। ধ্রুবপুত্রেরও তো ফেরার কথা। চৈত্র আকাশে যেই সব তারাদের রেখে গিয়েছিল ধ্রুবপুত্র, প্রতি চৈত্রেই তারা ফিরবে, সে কি ফিরবে না? পূর্ণিমার রাতেও না? মদনোৎসবের দিনেও না? মনে পড়ে যায়, সেই পূর্ণিমার রাতে গম্ভীরা নদী, বেতবন, চরাচর জ্যোৎস্নায় ঢেকে গিয়েছিল। নদী বেয়ে চলেছিল আলোরই স্রোতে, শুধুই আলো। আলোও তাহলে আড়াল করতে পারে? ধ্রুবপুত্রকে যে করল। আলোয় হারিয়ে গেল যে সেই মহাজ্ঞানী, বিপথগামী।
রেবা জিজ্ঞেস করল, কবে আসবে সে?
কেউ জানে না মা।
তোকে বলে যায়নি?
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে গন্ধবতী। মা রেবা তখন দেখতে পায় গন্ধবতীর মনের ছবি। রেবা হাসল বলল, দশার্ণ দেশের সেই জ্যোতির্বিদের কথা বলছি।
গন্ধবতী বলল, আমাকে তো বলে যায়নি মা।
সে কিন্তু পারবে।

গন্ধবতী চুপ করে থাকে। মনে হয় পারবে হয়ত তাম্রধ্বজ। সত্যিই তো অনেকদিন হলো সে আসেনি। সে কি চলে গেল বিদিশার পথে? বৃষ্টিহীনতা মানুষকে অস্থির করেছে। এই তো ঠাকুরদা বলছিলেন, কোন দেশ থেকে যেন একজন মানুষ সাতদিন, সাতরাত হেঁটে উজ্জয়িনীতে এসেছে। তাদের দেশেও বৃষ্টি নেই। তারা ভেবেছিল, এদিকে হয়ত অন্ন আছে। অনাবৃষ্টি যে অন্নহীন করেছে তাদের। ঠাকুরদা বলছিলেন, এমন হলে মানুষ দিশাহারা হয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যায়। শুধু যায় আর আসে। অবন্তী দেশের মানুষ ওই একই আকাঙ্ক্ষায় চলে যাবে দশার্ণের দিকে। যাওয়া আসা চলছেই। তাম্রধ্বজ কিসের বিভ্রমে পড়ে চলে গেল নিজের দেশে? দশার্ণ দেশ থেকে কি খবর এল কোনো? না হলে কেন আসছে না সে?

অন্ধকারে ভেসে আসছিল কণ্ঠস্বর। মা মেয়ে দু’জনেই শুনল। শুনে চকিতা হরিণীর মতো সিধে হয়ে বসল গন্ধবতী। তাহলে এল দশার্ণ দেশীয় সেই জ্যোতির্বিদ? গণনা সম্পূর্ণ হয়েছে কি? হওয়ার তো কথা নয়। কেন না সে সব শোনেনি এখনো। গন্ধবতী সেই পূর্ণিমা রাতের কথা তো বলতে পারেনি তাম্রধ্বজকে। বলবে বলে পথ চেয়ে বসে আছে। সমস্ত কথা শোনার পর তাম্রধ্বজ হিসাব সম্পূর্ণ করবে। কোন দিশায় আছে ধ্রুবপুত্র, কোন দিশায় কার্তিককুমার।

রেবা বলল, কেউ আসছে!

একজন না, দু’জন?

একজন তো তোর ঠাকুর্দা, পিতা আসছেন, কিন্তু আর একটি কণ্ঠস্বর অন্য কারোর।

আর একজন কে? গন্ধবতী মায়ের অনুমান জানতে চাইল। কিছু শুনতে চাইল।

রেবা বলল, বোধহয় সেই তাম্রধ্বজ, সে তো সন্ধ্যাতেই আসে।

গন্ধবতী চঞ্চল হয়ে ওঠে, মা অনেকদূর থেকে আসছেন উনি।

জানি।

ক্ষুধার্ত হতো পারেন, আশ্রমে স্বপাকে খান। গন্ধবতী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

হ্যাঁ, আমি দুধ ফোটাব তো? রেবা মৃদুস্বরে বলল।

গন্ধবতী মাথা নামায়। তার চঞ্চলতার জন্য আচমকা সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। সে নিজে শিহরিত হয়ে উঠল কেন? ওই মানুষ ধ্রুবপুত্রের সংবাদ দেবে, তাই! ধ্রুবপুত্রের কথাগুলি অবিকল উচ্চারণ করবে তাই! ওই মানুষকে তো এখন শোনাতে হবে চৈত্র পূর্ণিমার গভীর রাতের কথা, সেই মহানিষ্ক্রমণের কথা। গন্ধবতীর মনে হয় তাম্রধ্বজ সব জানে। সব। সেই রাত, গম্ভীরা নদী, আত্মহননের পথে যাত্রা করা ধ্রুবপুত্রের কথা জানে তাম্রধ্বজ। তারপর? নদী থেকে উঠে চাঁদের আলোয় যেন ভেসে গেল মানুষটা। তাও জানে। কী করে যে জানে?

গন্ধবতী বলল, জলচৌকি দেব উঠোনে?

রেবা চুপচাপ। গন্ধবতী উৎকর্ণ হলো। সে দেখল মাও যেন কণ্ঠস্বর আন্দাজ করতে চাইছে। যে অচেনা কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছ তা তো তাম্রধ্বজের নয়। তাহলে কে? কেঁপে উঠল গন্ধবতী। চেনা যাচ্ছ, চিনতে পেরেছে সে। মা দীপ জ্বালতে বলল। গন্ধবতী বলল, মা এ যে সেই দুর্বৃত্ত

কে? আর্তনাদ করে ওঠে রেবা।

তখন অন্ধকারে দ্রুত পায়ে আঙিনায় চলে এসেছে শিবনাথ। এই প্রথম তার কণ্ঠস্বর শোনা গেল, না, না, আপনি চলে যান, চলে যাও তুমি উদ্ধব, আমার পৌত্রী বরং অনুঢ়াই থেকে যাবে।

গন্ধবতী আর রেবা দাওয়ার দেওয়ালে পিঠ দিয়ে অন্ধকারে সতর্ক নিঃশ্বাস ফেলছে। তারা লুকিয়েই পড়েছে। আঙিনায় উদ্ধবনারায়ণ দাঁড়িয়ে। তার সামনে নতজানু হয়েছে বৃদ্ধ শিবনাথ।

উদ্ধবনারায়ণ বলল, আপনি অযথা উত্তেজিত হচ্ছেন মশায়, এই উদ্ধবনারায়ণ যে কণ্ঠহারটি এনেছে, এটি মহালতার তুল্য প্রায়, এই কণ্ঠহার কখনো ছুঁয়েও দেখার সৌভাগ্য হবে না আপনার পৌত্রীর।

থাক, আপনি ফিরে যান, তাকে আপনার হাতে দিতে পারব না।

উদ্ধব গর্জন করে ওঠে অন্ধকারে, পারতেই হবে, দেখুন এই কণ্ঠহার রানীর গলায় শোভা পেতে পারে, নগরের সেরা গণিকার গলায় এটি মানায়, আমি এটি সংগ্রহ করেছি গন্ধবতীর জন্য, তার কি কোনো দাম নেই? উদ্ধবনারায়ণ যা বলে তাই করে, আপনার সাধ্য কী আমাকে আটকাবেন।

শিবনাথ হাঁটু ভেঙে উঠোনের ধুলোয় নিচু হয়েছে। চৈত্রের বাতাস আরম্ভ হলো। উদ্ধবনারায়ণ পায়চারি করছে শিবনাথের সামনে। অন্ধকারে তার ধড়াচুড়ো ঝলমল করছে। সে ইতিউতি তাকাচ্ছে, দেখতে চাইছে কোথায় আছে গন্ধবতী। ঈষৎ পান করেছে উদ্ধবনারায়ণ। আগের বার গন্ধবতী পালিয়ে বেঁচেছিল, উদ্ধবও ছেড়ে দিয়েছিল ভীতা হরিণীকে। ব্যাধেরও ভুল হয় কখনো সখনো, কিন্তু সেই মায়াতেই সুযোগ নষ্ট। আজ আর কোনো ক্ষমা নেই, মায়া নেই। কথা নিয়ে ফিরবে সে। বৈশাখেই গন্ধবতীর পানি গ্রহণ করবে। মনোমত একটি যুবতীকে যদি অধিকার না করতে পারল উদ্ধব, তাহলে সে কেমন রাজসত্রী। রাজ সভার মানুষ যদি সামান্য গ্রামবাসীর কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়, তবে সে প্রত্যাখ্যান তো রাজাকেই স্পর্শ করে। এই যে উদ্ধব দাবি করছে সৈনিকের পুত্রীকে, কোন জোরে? না, রাজার জোরে। সে রাজসভার মানুষ মানে রাজ-আশ্রিত, তার কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না নিরুদ্দিষ্ট সৈনিক পরিবারের কেউ।

উদ্ধব বলল, দেখুন মশায়, এ আপনাদের সৌভাগ্য যে এই উদ্ধব আপনাদের সহায় হয়ে উঠতে চাইছে, হেলায় সুযোগ হারাবেন না।

গন্ধবতী, রেবা দু’জনেই শুনতে পাচ্ছিল উদ্ধবের কণ্ঠস্বর। গন্ধবতী তেতে উঠছিল। তার মনে হচ্ছিল এখানে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানায়। ইস! বুড়ো ঠাকুর্দা কীভাবে হাতজোড় করে আছে দুর্বৃত্তের সামনে। অন্ধকারে ও যেন ঠাকুর্দার অসহায় মুখ দেখতে পাচ্ছে গন্ধবতী।

শিবনাথ বলল, তুমি সীমা অতিক্রম করছ উদ্ধব, রাজসভায় কাজ পাওয়ার আগে ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরতে, আমিও তোমাকে রাজার কাছে যেতে বলেছিলাম, তার ফল যে এই হবে তা কে জানত ?

উদ্ধব মাটিতে পদাঘাত করে ধুলো উড়োয়, বলল, ওসব পুরোন কথা তুলে লাভ নেই, তোমার পৌত্রীকে আমার চাই, তার জন্য আমি বারবার আসছি, যদি এ ব্যাপারে মত না দাও, বলপ্রয়োগ করব, তুলে নিয়ে যাব, অপহরণ করে বলপূর্বক বিবাহ করব রাক্ষস মতে, আজই তুলে নিয়ে যাব, কেউ আমাকে নিবৃত্ত করেত পারবে না, অবন্তীর রাজা কিনা মহাকালের দেবদাসীকে গোপনে ভোগ করে আসে, তখন সত্রী তো গন্ধবতীকে অধিকার করবেই, কে আটকাবে দেখি, এ হলো রাজার আদেশ, লুটেপুটে খাও

হা ঈশ্বর! হে মহাকাল! আর্তনাদ করে ওঠে শিবনাথ, তারপর বলে, এই মেয়ের পিতা যুদ্ধে নিরুদ্দেশ, গন্ধবতী সৈনিকের পুত্রী, অবন্তী দেশের জন্য, মাতৃভূমির জন্য ত্যাগ করেছে আমার পরিবার।

কথা শেষ করতে দিল না উদ্ধব, হা হা করে হাসতে লাগল, দূর বুড়া, এবার রাজা মশায়কে বলব গণশ্রাদ্ধ করতে, যারা ফেরেনি সবাই পরলোকে গেছে ধরে নিয়ে পিণ্ডদান করা হবে, যা বলছি কর বুড়া, ডাক গন্ধবতীকে, সেদিন ছেড়ে দিয়েছি, আজ ছাড়ব না, আমার কাছে অস্ত্র আছে, বাধা দিতে এলে বিপদ হবে, এই গন্ধবতী, এই যে সুকন্যা গন্ধবতী, তোমার জন্য কে এসেছে দ্যাখো, এসো গন্ধবতী তোমায় নিতে এসেছি আমি...।

উদ্ধব জড়ানো গলায় ডাকতে থাকে গন্ধবতীকে। উদ্ধব যে সুরা পান করে এসেছে তা স্পষ্ট ধরা যাচ্ছে। তার নেশা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। বিভ্রম প্রবল হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। উদ্ধব টলতে থাকে। টলতে টলতে বৃদ্ধ শিবনাথকে ঘিরে পাক খেতে থাকে। শিবনাথ দু’হাত কানে দিয়েছে। আকাশের দিকে চেয়ে মনে মনে বলছে, হে মহাকাল, আমাকে বধির করে দাও, হে ভগবান, এ কোন যুগ এল, শৃগালের শাসন শুরু হয়ে গেল নাকি?

উদ্ধব হাততালি দিতে থাকে, গন্ধবতী, গন্ধবতী তোর সেই নাগরের শ্রাদ্ধও হবে এবার, সে কিনা দেবদত্তার প্রেমিক হয়ে গিয়েছিল, বামন হয়ে চন্দ্র স্পর্শ! সেই দুর্বৃত্ত নগরে ফিরলেই কোমরে রশি বেঁধে কারাগারে ঢুকিয়ে দেব, পদাঘাতে তার প্রাণ হরণ করবে উদ্ধব, কী সাহস, সে কিনা গন্ধবতীর দিকেও হাত বাড়ায়, জানে না গন্ধবতী উদ্ধবের? কোথায় সেই ধ্রুবপুত্তর, তার একদিন না হয় আমার একদিন, আজ আমি তাকে বধ করব, শিয়াল শকুন দিয়ে খাওয়াবো ওর দেহ, মহাভোজ হবে—আয়, আয় দুটো মড়া আছে পিণ্ড খাবি, আয় আয় রাজার আদেশ কে খণ্ডন করবে? আয় গন্ধবতী আয়।

আর পারল না রেবা। অনেকক্ষণ সে মেয়ের মুখ চেপে কাঠ কাঠ হয়ে অন্ধকারে লুকিয়ে ছিল। চিৎকার করে সে উঠোনে লাফ দিয়ে পড়ে, উন্মাদিনীর মতো গর্জন করে ওঠে, থামবে, তুমি চুপ করো।

তুমি কে গন্ধবতী? উদ্ধব নিমীলিত চোখে অন্ধকারে তাকায়।

না, আমি তার মা।

হি হি করে হাসে উদ্ধব, সৈনিকের বিধবা, বিধবাকেও নগরে নিয়ে যাব আমি, অন্ন, বস্ত্র দিয়ে দুটো মেয়েমানুষ পুষব, অয়ি, অ বিধবে, তোমার পুত্রী কোথায় ডাক তাকে, শ্রীমুখ দর্শন করে যাই, এই মহালতা তার গলায় নিজে পরিয়ে দেব আমি, পায়ের নূপুর আছে, সোনার নূপু্ুর, ডাকো গন্ধবতীকে, এসে দেখুক মহামূল্যবান কোন গহনা এনেছে তার স্বামী উদ্ধবনারায়ণ।

রেবা টের পায় রাজ কর্মচারী উদ্ধবনারায়ণ ক্রমশ অধিকার করে নিচ্ছে এই উঠোন, বসতবাটি। কী একটা বিশ্রী গন্ধ অন্ধকারে ছড়িয়ে পড়ছে। নাকে এল তার। সমস্তদিন তো গন্ধটা ছিল না। এই এখন পাওয়া গেল। সন্ধ্যার দখিনা বাতাস বোধহয় বয়ে আনছে। কোনো প্রাণী মরেছে ধারে কাছে, দূরেও হতে পারে। উদ্ধবের প্রলাপে সে ভয় পেল। অন্ধকারে বারবার ‘বিধবা’ সম্বোধনে ভয় গভীর হলো। সে গুটিয়ে গেল। উদ্ধব অন্ধকারে কেমন হাত পা ছুঁড়ছে। এখন কী হবে? যে পুরুষ মানুষের আশ্রয়ে তারা আছে, তিনি যে ক্রমশ অশক্ত হয়ে পড়ছেন তা বোঝা গেল। নিরুদ্দিষ্ট পুত্রের জন্য শোক, অনাবৃষ্টি ফসলহীনতা, প্রিয় সখা ধ্রুবর পুত্রর অবন্তী দেশ থেকে বিদায় মানুষটির সমস্ত শক্তি নিঃশেষ করে দিয়েছে। মাথা নামিয়ে উবু হয়ে বসে আছে গন্ধবতীর ঠাকুরদা। কী করবে এবার রেবা? উদ্ধব বলল, তোমারও নাগর জুটিয়ে দেব, বিধবে, তুমি একা থাকবে না, কাঁচা বয়স, এই বুড়ো পড়ে থাক এখানে, চলো তোমাদের দু’জনকে নিয়ে চলে যাই, একটা না একটা না, দুটা—হা হা হা, অবন্তীর রাজার কাছে মাকে সমর্পণ করব, মেয়ে আমার, রাজাদেশ সেইরকম। 

তখন গন্ধবতী নিঃশব্দ পায়ে নামছিল দাওয়া থেকে। সে বুঝতে পারছিল নেশা যেভাবে চড়ে যাচ্ছে, এরপর উদ্ধবকে নিবৃত্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। রাজকর্মচারীর জোর তো আছেই। রাজকর্মচারী বলেই কেউ তাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে ওর বিপক্ষে সাক্ষী হবে না। সে আস্তে আস্তে মায়ের পাশে দাঁড়ায়। মা আঁচলে মুখ চেপে কাঁদছিল। গন্ধবতী বলল, মা কেঁদ না, প্রলাপ কি সত্য হয়?

উদ্ধব নেশার ভিতরেও আশা হারিয়েছিল গন্ধবতীর। ভাবছিল গন্ধবতী অন্ধকারে কোথাও লুকিয়েছে। তাই তো হয়ে থাকে। নিজেকে বাঁচাতে সে নিশ্চিত বনের ভিতরে গিয়ে ঢুকেছে, অথবা কোনো প্রতিবেশীর গৃহে আশ্রয় নিয়েছে। গন্ধবতী যে তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাত বাড়াবে তা কে ভেবেছিল? গন্ধবতী বলল, কী এনেছ দিয়ে যাও।

তুমি নেবে?

হ্যাঁ নেব, দিয়ে চলে যাও, পরে ঠাকুরদা সব ব্যবস্থা করবেন।

উদ্ধব হতবাক। এত সহজে যে কার্যসিদ্ধি হবে কে ভেবেছিল? সে হাতের কণ্ঠহারটি গন্ধবতীর হাতে ফেলে দিল। পেটিকাটি এগিয়ে দিল, পেটিকায়, নূপুর আছে। দিয়ে নিশ্চিন্ত হলো উদ্ধব। এবার আর গন্ধবতীকে অধিকার করতে কোনো অসুবিধা হবে না।

গন্ধবতী বলল, এবার বিদায় হও।

উদ্ধব সরে গেল আঙিনার ও প্রান্তে। সে ভাবছিল আর কী? এবার যে কোনো দিন না হয় এসে বলবে, গন্ধর্বমতে বিবাহ হোক। সে রাজার সত্রী। রাজার মতোই অবন্তী দেশের সব তার অধিকারে, নখদর্পণে। উদ্ধব অন্ধকারে হারিয়ে যায়।

চলবে

ধ্রুবপুত্র (পর্ব এক)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দুই)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তিন)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পাঁচ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাত)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আট)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব নয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব এগার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চৌদ্দ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পনের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ষোল)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সতের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আঠারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব উনিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব কুড়ি)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব একুশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বাইশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তেইশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চব্বিশ)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top