সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

ধ্রুবপুত্র (পর্ব চৌত্রিশ) : অমর মিত্র


প্রকাশিত:
২২ মার্চ ২০২১ ১৯:১৩

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৭:০৭

ছবিঃ অমর মিত্র

 

চৈত্র পূর্ণিমা এসেছিল বৈশাখের আরম্ভে। তারপর ক’দিন বাদে কৃষ্ণপক্ষের ঘোর অন্ধকারে জ্বলে উঠল শূদ্রপল্লী। আগুন মুহূর্তে খেয়ে নিল পর্ণকুটিরগুলিকে। শুকনো গাছগাছালিও জ্বলে উঠল আগুনের ছোঁয়ায়। আর্তনাদে, বিলাপে নগরের আকাশ ভরে উঠল। আগুনের লকলকে জিভ আকাশ ছুঁয়ে ফেলল যেন। আকাশেও যেন আগুন ধরে গেল। ওই আকাশ কতদিন জলহীন, শুষ্ক, ভেসে আছে অবন্তীর উপরে। আগুন তাকেও পুড়িয়েছিল।

আগুন যে নেভাবে সে উপায়ও নেই। কোথায় জল? লেলিহান আগুন নিজে নিজেই জ্বলল, শেষে নিজে নিজেই থামল। এর ভিতরে যে পারল মুরগি, শুকর, গাধা, মহিষ, মেষগুলিকে ছেড়ে দিল অন্ধকারে। তারা পালিয়ে বাঁচল। কিছু বাঁচল, কিছু বাঁচল না। আগুনে পুড়ল। মানুষও কিছু মরল। চলনশক্তি রহিত এক বুড়ি পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেল। তার মরণ কান্না শুনল বুড়ো পরাশর। কেউ এগোতেই পারল না।

এমন আগুন কেউ দ্যাখেনি আগে। আগুন যেন একসঙ্গেই ঘরে ঘরে জ্বলে উঠেছিল। শূদ্রপল্লী তখন ঘুমিয়েই ছিল প্রায়। কৃষ্ণা নবমী তিথি। চাঁদ তখন পুব আকাশে অগ্নিবর্ণ হয়ে জেগে উঠছে মাত্র।

শেষ রাত্রে এলেন শ্রেষ্ঠী। তাঁর পিছু পিছু ঘোড়ায় চেপে আসছেন সেনাপতি। কথা আছে সেইরকম। রত্নাকর সাগরের পাড়ে বসে বিলাপ করছিল মানুষজন। দূরে ধিকিধিকি জ্বলছে সব। শিমূল গাছটির ডালে ডালে আগুন। আগুনের বিন্দু ফোটা ফোটা পড়ছিল পোড়া ঘাসের উপর। ধোঁয়ার গন্ধ ছেয়ে ছিল চারদিকে।

শ্ৰেষ্ঠীর রথের শব্দে জানা গেল তিনিই আসছেন। রথে দাঁড়িয়ে শেষ রাতের অন্ধকারে শ্রেষ্ঠী হাঁক দিলেন, উতঙ্ক হে, খোঁজ নে কেন আগুন লাগল।

অন্ধকারে উতঙ্কর হাতের প্রহরণ সাঁই সাঁই করে ঘুরল। ম্রিয়মান জ্যোৎস্নায় ধিকিধিকি জ্বলা আগুনের আলোয় দেখা গেল শ্ৰেষ্ঠী নামছেন। তাকে দেখে শূদ্রপল্লীর শতেক মানুষজন কেঁদে উঠল, উতঙ্ক, উতঙ্ক। এল! হে প্রভু, এক ফোটাও জল নেই যে আগুনে দেব।

শ্ৰেষ্ঠী বললেন, এমনই আগুন, যা  শতযোজন দূর থেকেও দেখা গেছে।

কাঁদতে কাঁদতে কে যেন বলল, এমন কখনো হয়নি এ জীবনে।

তবে হলো কেন? শ্রেষ্ঠী জিজ্ঞেস  করলেন। 

প্রভু! কে আছে কে নেই জানিনা, মানুষ কত মরল, আমরা ভিখিরি হয়ে গেলাম, সর্বস্ব গেল।

কেন হলো?

কে যেন আগুন দিয়ে গেল। অন্ধকারে শোনা গেল এইকথা। কথাটা উঠতেই শ্ৰেষ্ঠী সতর্ক হলেন। তিনি বললেন, কে বলছে ওকথা?

আর জবাব এল না। জবাব এল না মানে যে বলেছে কথাটা সে সতর্ক হয়েছে। এই সতর্কতার অর্থ সে এমন কিছু জেনেছে বা দেখেছে যা বলতে তার ভয় করছে। শ্রেষ্ঠী ডাকলেন, পরাশর, পরাশর কোথায়?

আছি অন্ধকারে।

পরাশর আগুন লাগল কেন?

জানি না প্রভু।

আগুন কি আকাশ থেকে নামল?

জানি না প্রভু।

অন্ধকারে কেউ বলল, আকাশ থেকেই নামল প্রভু।

সেই কণ্ঠস্বরই, যে কণ্ঠস্বর একটু আগে বলেছে কারোর আগুন লাগিয়ে দেওয়ার কথা। শ্রেষ্ঠী টের পেলেন হয়ত উতঙ্ক কোনো একজনের কাছে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারেনি। তা যদি হয়ে থাকে, তাহলে সেই লোকটিকে শনাক্ত করা প্রয়োজন। অন্ধকারে কত মানুষ। সবাই কথা বলছে, বিলাপ করছে। মানুষের গুঞ্জনে দগ্ধরাত্রি ছেয়ে আছে। এর ভিতর থেকে লোকটাকে আলাদা করে চেনা যাবে কীভাবে? শ্ৰেষ্ঠী ডাকলেন, কে বলছ, এগিয়ে এস।

এগিয়ে এল না কেউ। শ্রেষ্ঠীও চুপ করে গেলেন। অপেক্ষা করা প্রয়োজন। হয়ত কথাটা আর নাও  উঠতে পারে। সেনাপতি কুমার বিক্রম আসছেন। কাল সকাল থেকে অন্নসত্ৰ বসে যাবে এখানে। তারপর সাহায্য করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে আকাশ থেকে নেমে আসা অগ্নির কথা ছড়িয়ে দিতে হবে। ছড়িয়ে যাবে আপনা আপনিই।

বুড়ো পরাশর বলল, দাঁড়িয়ে দেখতে হলো, কী আগুন! জল ঢালা হলো, কূপ থেকে তুলে কয়েক কলসি, ধোঁয়া হয়ে উড়ে গেছে,  আগুনের কিছু হয়নি, প্রভু কীভাবে হলো কেন হলো, আমরা তো আপনারই অনুগত।

শ্রেষ্ঠা ঠোঁট দাঁতে চাপলেন। আবার সন্দেহটা চাগাড় দিচ্ছে। উতঙ্ককে কি দেখে ফেলেছে কেউ? উতঙ্ক কথা বলে না, কিন্তু তার উপস্থিতিও তো ভয়ানক। কী সব্বোনাশ! শ্রেষ্ঠী ডাকলেন, উতঙ্ক, উতঙ্ক হে, আবার কি নিদ্রা গেলি, উতঙ্ক সন্ধ্যা থেকেই নিদ্রিত ছিল, রাত্রে বের হতে চায় না, অন্ধকারে ও  নাকি কম দ্যাখে।

অন্ধকারে কে  না কম দ্যাখে। জবাব এল গুঞ্জন থেকে।

শ্রেষ্ঠী বললেন, আমি গবাক্ষ থেকেই দেখেছি আকাশ লাল, আমি তখনই টের পেয়েছি তোমাদের এখানে আগুন লেগেছে, দাসীকে পাঠালাম উতঙ্ককে ডাকতে, উতঙ্ক ওঠেই না, আমি জানি রাতের অন্ধকারকে ও ভয় পায়।

কে যেন বলল, সকলেই ভয় পায় শুধু নিশাচর ছাড়া।

শ্রেষ্ঠী বললেন, কী আগুন! আসছেন সেনাপতি, তার কাছে খবর পাঠালাম আমি, কিন্তু উতঙ্ক কি আবার ঘুমালো, কোথায় উতঙ্ক, উতঙ্ক হে, এদিকে আয়।

থাক, যদি ঘুমায় ঘুমাক, ওকে দেখলে শরীর কাঁপে! বুড়ো পরাশর বলল।

থাক উতঙ্ক, উতঙ্ক রথেই থাক, রাত ফুরোল উতঙ্ক আমাদের সঙ্গে হাত লাগাবে, হ্যাঁ বলো দেখি  কীভাবে লাগল আগুন।

অন্ধকার নীরব, পোড়া গন্ধ ভারী হয়ে উড়ছে। বৈশাখের পশ্চিমা বাতাস পোড়া গন্ধ পুবের দিকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চাঁদের অগ্নিবর্ণ এখন রূপালী হয়েছে। আকাশের তারাগুলি একসময় চোখের আড়ালে চলে গিয়েছিল ধোঁয়া ধুলো আর বিলাপে। এখন সব চোখে পড়ছে। মেয়েপুরুষ শিশু, বৃদ্ধরা সবাই  সরোবরের চারদিক ঘিরে বসে আছে। মধ্যিখানে অতল গহ্বর। সরোবরে জল নেই যে তা ধরা যাচ্ছে। সরোবরে কোনো গ্রহ তারার ছায়া নেই, চাঁদের ছায়া নেই, যা জলের উপর সমস্ত রাত ভেসে থাকে। সরোবরের ভিতরে অন্ধকার যেন ছাইপোড়া হয়ে পড়ে আছে নিশ্চল। সকলে অপেক্ষা করছিল রাত পোহানোর। রাত না পোহালে যাওয়া যাবে না ওই অগ্নি কুন্ডের দিকে। এখন শ্মশানের চিতার মতো জুলে যাচ্ছে সব।

শ্রেষ্ঠী বললেন, আমি আর থাকতে পারিনি, আমি তো তোমাদের পালক নই, রাজাও নই এ দেশের, কিন্তু আমার বুক হু হু করে উঠল, তোমার মুখটা মনে পড়ল পরাশর, সেনাপতি আসছেন, তোমরা তার সৈনিক।

কে যেন বলল, আমাদের ঘরে দীপ জ্বলে না প্রভু, চাঁদের আলো থাকলে সেই আলোয় কাজ সারি, না হলে দিনের আলোয় সব হয়, আগুনের চিহ্ন ছিল না কোনো ঘরে, কী করে আগুন লাগবে কেউ যদি না পোড়ায়।

কে আগুন জ্বেলেছিল তা কে জানবে? ভর্ৎসনা করে ওঠে পরাশর।

শ্রেষ্ঠী বললেন, এ আগুন আপনা আপনি জ্বলে উঠতেও পারে।

হ্যাঁ হ্যাঁ পারে। বুড়ো পরাশর যেন দিশা খুঁজে পেল, আমি দেখেছিলাম এরকম, দক্ষিণ দেশের মলয় পর্বতের কোলের জঙ্গলে, এমনিতে আগুন লেগে গিয়েছিল সেখানে।

কিন্তু প্রভু যে ঘরে আগুন লেগেছিল প্রথমে, সে ঘরে কোনো মানুষ থাকে না, মেষ  ছিল, মেষগুলি  তো আগুন জ্বালতে পারে না, ইতর প্রাণী।

শ্রেষ্ঠী টের পেলেন যে বলছে সে তার মত থেকে সরে যেতে চাইছে না। তার মানে সে জেনে গেছে উতঙ্কর কথা বা কোনো মানুষের কথা। কিন্তু আগুনের স্বয়ং জ্বলে ওঠার কথাটাই তো ছড়িয়ে যাওয়া দরকার। কে যেন বিলাপ আরম্ভ করল ওই দূরে। এখন চাদের আলোয় সামনের মানুষকে দেখা যাচ্ছে। তিনি দেখছেন মাটিতে বসে, হাঁটুর উপর মুখ রেখে বুড়ো পরাশর ভীত চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে। সেনাপতি আসছেন না কেন এখনো? সেনাপতি এলেই সবাই আগুনের কথা থেকে সরে যাবে, কীভাবে আগুন লেগেছে তা বুঝে নেওয়ার চেয়ে বাঁচার রসদ প্রার্থনা করে তার ব্যবস্থা করা অনেক জরুরি হয়ে উঠবে।

শ্ৰেষ্ঠী বললেন, সেনাপতি আসছেন।

আসুন প্রভু! এসে দেখে যান আমাদের কী হলো, কোন পাপে সব ছাই হয়ে গেল, আমরাও যদি ছাই হয়ে যেতাম, বেঁচে যেতাম।

কে যেন কার জন্য কাঁদতে আরম্ভ করল। অন্ধকারে যারা এখানে আসতে পারেনি, তারা আগুনের ভিতরে থেকে গেছে। শ্রেষ্ঠী পায়চারি করতে করতে বললেন, আমি দেখেছি ভয়ানক আগুন নেমে আসতে।

প্রভু! অস্ফূট ধ্বনি শুনলেন শ্ৰেষ্ঠী।

পাপের ভার সম্পূর্ণ হলে আগুন এইভাবেই নামে।

প্রভু!

শ্ৰেষ্ঠী বললেন, অর্থ দেব আমি, কোনো ভয় নেই, যা গেছে তা আবার ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

প্রভু কী বলছেন?

শ্রেষ্ঠী ফিরতে লাগলেন, কেন না আবার কে যেন বলতে শুরু করেছে আগুনটা কেউ লাগাল, আগুন  আপনা আপনি জ্বলেনি...।

শ্রেষ্ঠীর পিছনে পিছনে পরাশর আসছে। পরাশর বলছে, ওসব কথা মনে নেবেন না প্রভু, মহাকালের রোষ এসব।

না! বলল কে যেন। শুনলেন শ্ৰেষ্ঠী, কিন্তু কে বলেছে তা দেখতে পেলেন না। ধন্ধ হলো, কেউ কি সত্যিই না বলল, নাকি তিনি শব্দের বিভ্রমে পড়েছেন। ওই যে অন্ধকারে অঙ্গার হয়ে যাওয়া পল্লীর  দিক থেকে বিদেহীর মতো মানুষজন আসছে, আবার যাচ্ছেও সেদিকে। এখানো জ্বলছে মাটি। শ্রেষ্ঠী ডাকলেন, উতঙ্ক!

উতঙ্ক কই? ওই তো রথ। রথের ভিতরে গুঁড়ি মেরে বসে আছে সে। শ্রেষ্ঠী চাঁদের আবছা আলোয় দেখলেন উতঙ্কর মুখখানিতে ভয়ের ছায়া যেনবা। নাকি তা নেই, তিনি নিজেই এসব ভেবে নিচ্ছেন।

পরাশর কাছে এল, প্রভু! উতঙ্ক যেন আর না আসে।

কেন?

কেন তা জানিনা, উতঙ্ককে বড় ভয় করে।

শ্রেষ্ঠী গর্জন করে উঠলেন নিজের সমস্ত সংকোচ ফেলে রেখে, জল যে কারণে ফুরিয়েছে সরোবরে, সেই কারণেই আগুন লেগেছে, উতঙ্ক হে আবার ঘুমোলি নাকি, রাত পোহায়ে যায় যে।

উতঙ্ক তার রক্তশূন্য মুখ তুলল। যেন ভয়ই পেয়েছে উতঙ্ক। নাকি চাঁদের পাণ্ডুর আলোয় সবকিছু পাণ্ডুর। শ্ৰেষ্ঠী ঘুরে তাকালেন। বুড়ো পরাশর এসেছে। ঠিক তার পিছনে দাঁড়িয়ে। সরোবরের ধার থেকে কান্না ভেসে আসছে।

উতঙ্ক ফিরে চল। শ্রেষ্ঠী ডাকলেন।

উতঙ্ক রথ থেকে নেমে এল। ঘোড়ার রাশ ধরতেই চিহি চিহি ডেকে উঠল ঘোড়া দুটি। এতক্ষণে তারাও যেন ভয় পেল। শ্রেষ্ঠী উঠবেন তো পরাশর বলল, প্রভু একে নিয়ে আর আসবেন না, ওহ হো, কী ভয় না করে, আমাদের যে সব্বোনাশ হলো এতে কার পুণ্য হলো!

কেন, কেন হে।

বলতে পারবনা প্রভু! চাপা গলায় আর্তনাদ করল যেন পরাশর, কী পাপে আমাদের সব ছাই হয়ে গেল, আমরা তো কোনোদিন মাথা তুলে কথা বলি না প্রভু।

প্রভু সুভগ দত্তর গা হিম হলো আচমকা। এখন মনে হচ্ছে উতঙ্ককে এরা চিনে ফেলেছিল যে তা উতঙ্কও জানে। খুব সাহসী, নিষ্ঠুর উতঙ্ক এবার ভেঙে পড়ছে যেন। উতঙ্কর চাপা কান্না শোনা যাচ্ছে কি? কাঁদছে সে? কোনোদিন তো তার কান্না দ্যাখেননি শ্রেষ্ঠী। কিন্তু এরা তো উতঙ্কর নাম করেনি। উতঙ্ককে কোনো অভিশাপ দেয়নি। শুধু বলছে সে যেন আর না আসে। তাতেই ভেঙে পড়ল নিষ্ঠুর। উতঙ্ক ফিরেছিল পরম উল্লাস নিয়ে। উতঙ্কই শ্রেষ্ঠীকে আগুন দেখিয়েছিল গবাক্ষ থেকে। দুজনে দাঁড়িয়ে। ছিলেন বহু সময়। আগুনের জিহ্বা আকাশ চেটে নিচ্ছিল। শ্রেষ্ঠীর মনে হচ্ছিল যদি লুকোনো মেঘও থাকে আকাশের কোথাও এককণা তা খেয়ে নিয়েছে আগুন। শ্রেষ্ঠী আসতে চাননি রাতে। কিন্তু উতঙ্কর উৎসাহ বেশি। সে দেখতে চায় কতটা পুড়ল। নিজে কী করে এসেছে তা চোখে না দেখে তৃপ্তি হচ্ছিল না উতঙ্কর।

পরাশর বলল চিন্তা নেই, আমাদের সাধ্য কী আগুনের কথা বলি, কিন্তু ওই উতঙ্ক যেন না আসে, ওকে দেখলে মাথা ঠিক রাখতে পারবে না মানুষ।

কেন, কেন হে

প্রভু সব উতঙ্ক জানে! ফিসফিস করে বলল বুড়ো পরাশর, ওর কাছে জেনে নিয়ো প্রভু যদি না জানা থাকে, হায় হায়! কবে এ দেশে এমন দিন এসেছে, ওহে উতঙ্ক, যাও চলে যাও প্রভুকে নিয়ে।

উতঙ্ক রথে উঠেই রাশ আলগা করে প্রহরণ ঘোরায় দুই ঘোড়ার পিঠে। অশ্বের হ্রেষাধ্বনিতে অন্ধকার কেঁপে ওঠে। উতঙ্কের চাবুক এসে পড়ল বুড়ো পরাশরের পিঠে। চাপা অর্তনাদ করে ছিটকে গেল বুড়ো। উতঙ্ক শোধ নিয়েছে। দাঁতে দাঁত ঘষে চাঁদের আলোয় ছুটিয়ে দিল রথ।

শূদ্রপল্লী পিছনে পড়ে থাকল। বিলাপ, ক্রন্দন ক্রমশ দূরে সরে গেল। পোড়া গন্ধ সরে গেল চারপাশ থেকে। শ্রেষ্ঠীর গায়ে ঠান্ডা বাতাস লাগছে। কিন্তু উদ্বিগ্ন শ্রেষ্ঠীর কোনোদিকে মন নেই, দুচোখ বন্ধ করার উপায়ও নেই। তিনি চাপা গলায় ডেকে উঠলেন, তোকে দেখতে পেয়েছিল?

প্রভু হ্যাঁ। উতঙ্কর গোঙানি শুনলেন শ্রেষ্ঠী।

কে দেখেছিল পরাশর?

প্রভু হ্যাঁ। উতঙ্ক প্রহরণ আঘাত হানে ঘোড়া দুটির পিঠে।

আর কেউ?

প্রভু হ্যাঁ। উতঙ্কর হিংস্র গলা শুনলেন শ্রেষ্ঠী, যে দেখেছে তাকে মেরে ফেলবে উতঙ্ক, প্রভু যদি অনুমতি করেন।

প্রভু সুভগ দত্ত ভয় পেলেন, তুই কী সব্বোনাশ করলি উতঙ্ক, এখন তোর কী হবে ? রাজার কানে গেলে, সেনাপতির কানে গেলে, উতঙ্ক হে, তোকে চিনে ফেলেছিল সবাই?’

উতঙ্ক জবাব দিল না।

চলবে

 

ধ্রুবপুত্র (পর্ব এক)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দুই)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তিন)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পাঁচ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাত)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আট)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব নয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব এগার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চৌদ্দ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পনের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ষোল)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সতের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আঠারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব উনিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব কুড়ি)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব একুশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বাইশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তেইশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চব্বিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পঁচিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছাব্বিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাতাশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আটাশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব উনত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব একত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বত্রিশ)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top