সিডনী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

ধ্রুবপুত্র (পর্ব একচল্লিশ) : অমর মিত্র


প্রকাশিত:
১০ মে ২০২১ ১৯:৪২

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ২১:২৪

ছবিঃ অমর মিত্র

 

অনাবৃষ্টির কাল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। শ্রেষ্ঠ জ্যেতির্বিদ আচার্য বৃষভানু উজ্জয়িনী ছেড়ে চলে গেছেন। কেউ বলছে তিনি পুবে গেছেন শিপ্রাতীর ধরে, কেউ বলছে তিনি গেছেন পশ্চিমে। কেউ কেউ এমন কথাও বলছে যে সে ভোর রাতে দেখেছিল আচার্য শিপ্রানদী পার হয়ে ওপারের মাঠ ধরে যেতে যেতে শূন্যে মিলিয়ে গেছেন যেমন দিনের আলোয় মিলিয়ে যায় রাতের আকাশের তারা। বৃষভানুর শিষ্য তাম্ৰধ্বজও তারপর যেন কোথায় গেছে। সে কি চলে গেছে বিদিশা নগরে, নিজ দেশে, নাকি আচার্যের পথই তার পথ, গোপনে অনুসরণ করছে তাঁকে। তাম্ৰধ্বজ অবশ্য আচার্যর মহানিষ্ক্রমণের পরও ছিল আশ্রমে। তারপর কদিন বাদে সেও নিরুদ্দিষ্ট। নগরবাসী আচার্যর নিরুদ্দেশযাত্রা নিয়ে নানা কথা বলছে। অনুমান করতে চাইছে, কল্পনা করতে চাইছে।

আচার্য বৃষভানুর নিষ্ক্রমণের পর শোনা যাচ্ছে ধনপতি সুভগ দত্ত বাণিজ্যযাত্রা করবেন। তাঁর সঙ্গী হবে উজ্জয়িনীর ছোটবড় বণিক ক’জন। সুভগ দত্তর বাণিজ্যযাত্রা নিয়েও নানা অনুমান, কল্পনা করা হচ্ছে। নানা কথা উড়ছে নগরে। নগরবাসী ভাবছে ধনপতি কি চিরকালের মতো ছেড়ে যাচ্ছেন এই নগর ?  আচার্য গেছেন, সুভগ দত্ত যাবেন, নগর কি ক্রমশ শূন্য হয়ে যাবে? এই সমস্ত মানুষের জন্যই তো উজ্জয়িনী আলোকিত হয়ে ছিল, এঁরা যদি চলে যান, উজ্জয়িনীর গৌরবগাথা কাদের নিয়ে রচিত হবে? কী হবে এই নগরের যদি সত্যিই বর্ষার মেঘ না আসে?

বৈশাখ শেষ হল প্রায়। দিন যাচ্ছে প্রবল দাবদাহে পুড়তে পুড়তে। রাতের আয়ু, এই সময় দীর্ঘ হয় না, তাই রৌদ্র-জ্বলনের সময়ও থাকে অনেক। দিনমান রৌদ্রদহনে আতঙ্কের হয়ে উঠেছে। রাত্রিকাল যদিবা  শীতল, কিন্তু তার ব্যাপ্তি আর কতটুকু? আরম্ভ হতে হতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন দিবা ও রাত্রিতে নানারকম কথা উড়ছে নগরে, নানারকম কথা তৈরি হয়ে উড়ে যাচ্ছে মানুষের কাছে, মানুষও সেই কথা ধরে আরো কথা বানিয়ে তুলছে। কেউ বলছে উজ্জয়িনীর সোনার দিন শেষ। এই যে দীর্ঘকাল ধরে প্রবাহিত হচ্ছে অনাবৃষ্টির বাতাস, এর অর্থ গভীর, গভীরতর। এই অনাবৃষ্টি নাকি অনন্তকাল ধরে চলতে থাকা এক মহাপ্রলয়েরই ইঙ্গিত। কীসে কী হয় কে বলতে পারে? কতদিন এভাবে পুড়বে নগর তা কেউ বলতে পারছে না। আচার্য বৃষভানু চলে গেছেন, অন্য জ্যোতির্বিদরা কিছুই ধরতে পারছেন না।

এক নগরবাসী বলল, বরুণদেব অপ্রসন্ন হয়েছেন, তাই এমন হচ্ছে।

বরুণদেবের কথা বলো দেখি, মুক্তা বিপণির অধিকারী এক প্রৌঢ় জিজ্ঞেস করল তাকে।  নগরেরই পথের ধারে দুজনে মুখোমুখি হয়েছিল গোধূলিবেলায়। সেই সময় পার হয়ে এখন অন্ধকার নেমেছে। মধ্যগগনে চাঁদ। কয়েকদিন বাদেই পূর্ণিমা। বৈশাখের ওই পূর্ণিমাতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভগবান বুদ্ধ। তিনি নাকি ভগবান বিষ্ণুরই অবতার, তাই শুনেছে তারা। কিন্তু তাঁর পথে যারা গেছে তারা এখনও ব্রাত্য। নেড়া-নেড়ির দলকে সন্দেহের চোখে দ্যাখে নগরের মানুষ, ব্রাহ্মণ পুরোহিতরা।

প্রাজ্ঞ নগরবাসী বলল, বরুণদেব অপ্রসন্ন হলে কোনো উপায় নেই, তিনিই তো বৃষ্টির দেবতা, দশ দিকপালের অন্যতম হলেন বরুণদেব, সূর্য তাঁর চক্ষু, সুবর্ণরথে তিনি চলাফেরা করেন, তিনি থাকেন আকাশ যেখানে সমুদ্রের সঙ্গে মিলেছে সেই রেখায়।

সমুদ্র দেখেছ তুমি? জিজ্ঞস করল প্রৌঢ়।
মাথা নাড়ে প্রাজ্ঞ নগরবাসী, বলল, দেখিনি, শুনেছি সমুদ্রের কথা, শুনেছি সমুদ্র নীলবর্ণের, সমুদ্র জলময়, তার আরম্ভ নেই, শেষ নেই।
উজ্জয়িনীর সপ্তসাগর তো জলহীন হয়ে গেছে, তবে সমুদ্রের কী হয়েছে?
সমুদ্রও নাকি জলহীন হয়ে যেত যদি তা অবন্তী দেশে থাকত।
সমুদ্র কোথায় আছে?
আছে, সৌরাষ্ট্র পার হয়ে ওদিকে কোথায়।
কতদূর তা?
তিন সহস্র যোজন দূরে হতে পারে, সমুদ্র সব দিকেই আছে, যেমন আমাদের পশ্চিমে  সৌরাষ্ট্র দেশ, সেদিকে আছে, আবার পূর্বদিকেও, দক্ষিণ দিকেও, উ উত্তরে আছে হয়তো, জানি না, থাকলেও থাকতে পারে।

উত্তরে শুনেছি নানা পর্বত, তুষারময় দেশ।

তা পেরিয়ে আছে হয়তো, সমুদ্রের উপরে আকাশ উপুড় হয়ে থাকে।

কে বলল?

বণিকেরা বলেছে এসব।

সমুদ্রের কথা নিয়ে আলাপ চলতে থাকে। চলতে চলতে একসময় এই সিদ্ধান্তে আসা হয় যে দশদিকেই সমুদ্র আছে, যেমন ঊর্ধ্বে, আকাশই সমুদ্র। আকাশ যে সমুদ্র তার প্রমাণ আকাশ থেকেই অঝোরে জল নেমে আসে পৃথিবীতে, আর আকাশের রং যে নীল তা কে না জানে। ঊর্ধ্বে যেমন আকাশ সমুদ্র রয়েছে, তেমনি পাতালেও সমুদ্র আছে। না হলে পাতাল থেকে জল বেরিয়ে আসে কী করে? মাটি খুঁড়লেই জল আসে কী করে, নদীগুলি পাতালের জলে সমৃদ্ধ হয় যেমন, তেমনি কূপের জলও  তো পাতালসমুদ্র থেকে ওঠে।

প্রৌঢ়মানুষটি বলে, কূপ তো শুকিয়ে গেছে অধিকাংশ, তার মানে কি পাতালসমুদ্রের জল ফুরিয়ে গেল অনাবৃষ্টিতে?
প্রাজ্ঞমানুষটি বলে, তাহলে নদীর বালি খুঁড়ে জল পাওয়া যাচ্ছে কীভাবে?
ঠিকই, প্রৌঢ় মাথা নাড়ে, তারপর জিজ্ঞেস করে, আকাশ সমুদ্র কী শুকিয়ে গেছে?
জানি না, হতে পারে হয়তো।
সেই জল গেল কোথায়?
শুকিয়ে গেছে, উত্তাপে তার মরণ হয়েছে।
কী ভয়ানক ঘটনা! বিড়বিড় করে প্রৌঢ়, বলল আমাদের অজ্ঞাতে এইসব ঘটে যাচ্ছে, আমরা কিছুই জানতে পারছি না।
প্রাজ্ঞজন মাথা দোলায়, মানুষ সব জানতে পারে না, শুধু তার ফল ভোগ করে।
এর কোনো বিহিত নেই?
কী বিহিতের কথা বলো?
মানুষ সব জানবে, সতর্ক হবে তাহলে।
মানুষ অতি ক্ষুদ্র, মহাপ্রকৃতি, সমুদ্র, পাহাড়, নদী, বায়ু, গ্রহ, তারা সব মানুষের চেয়ে অনেক অনেক বড়, মহাপ্রকৃতির সমস্তটাই আমাদের কাছে দুর্জ্ঞেয়।
প্রৌঢ় মাথা দোলায়, ঠিক বলেছ, মানুষ মানুষের কথাই জানতে পারে না।
ঠিক বলেছ, তবে কিনা ভালবাসা, প্রেম থাকলে মানুষ জ্ঞানী হতে পারে।
কথাটা বুঝতে পারল না প্রৌঢ়। সে অপরাহ্ন থেকেই নগরের পথে পথে ঘুরছে। এই রকম অনেকেই ঘুরছে। রোদ পড়ে গেলেই সকলে যেন মেঘের সন্ধানে, বর্ষার আর কত দেরি, কেন অনাবৃষ্টি তা সন্ধান করতে বেরোয়। সেও বেরিয়েছিল পথে। কিন্তু তার ভিতরে আরও অনেক জিজ্ঞাসা, অনেক কথা। কীভাবে বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। সে রাতের আকাশে তাকায়। কী পরিষ্কার! কী নীলভাব চন্দ্রলোকিত আকাশে! সে চেয়ে থাকল। বুঝতে চেষ্টা করছিল জ্ঞানবান মানুষটির শেষ কথাটি।

প্রাজ্ঞব্যক্তিটি বলল, জলময় আকাশ এখন শুধুই স্মৃতি মনে হয়, সাতটি সমুদ্রই জলহীন হয়ে গেছে হয়তো।
উজ্জয়িনীতে তো দেখা যাচ্ছে তাই, সাতটি সরোবরের কোনোটিতেই জলের চিহ্ন নেই। 
হ্যাঁ, এখন আমার তেমনই মনে হচ্ছে, উজ্জয়িনীর সপ্তসাগর জলহীন হয়ে যায় যদি, পৃথিবীর সপ্তসাগর জলময় থাকবে কীভাবে? 
সেই সমুদ্র তো অবন্তী দেশে নেই, তুমি তো বললে সেখানে জল আছে, নীলার্ণব তা।

বলেছি বটে, কিন্তু সেই অনুমানে এখন সন্দেহ হচ্ছে, কেননা এদেশ মহাকালের আশীর্বাদ পুষ্ট, এদেশ যদি নির্জলা হয়ে যায়, এখানে যদি রত্নাকর সাগর, বিষ্ণুসাগর সব সাগর শুকায়ে যায়, তবে অন্য জায়গার সাগরও তো শুকানোর কথা। 

চুপ করে থাকল প্রৌঢ়। সে আবার শুনছে বরুণদেবের কথা। বরুণদেব অন্য সময় আকাশ সমুদ্রের মিলনরেখায় দাঁড়িয়ে সূর্যের পথ ঢেকে দেন, এখন তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন তাই মেঘের কোনো চিহ্ন নেই কোথাও। কী ভয়ানক অবস্থা হয়েছে এই নগরের, এই দেশের। মহাকাল অরণ্যে জল নেই তাই বন্য পশুরা মরতে আরম্ভ করেছে। তৃষ্ণার্ত পশুরা অরণ্য ছেড়ে বেরিয়ে আসছে রাত্রে, দিনে। বেরোলেই নিষাদের হাতে মরছে। মহাকাল অরণ্যের দিকে মৃতপশু ইতস্তত পড়ে আছে। আকাশ থেকে গৃধিনীর পাল নেমে আসছে ক্রমাগত। রোদে মানুষ ও পশু উভয়েই মরছে। এক নিষাদ নাকি মরে পড়েছিল শিপ্রানদীর ওপারে। এইরকম কত কিছু যে ঘটছে ভয় উদ্রেককারী।। 

কী হবে এরপর ? 
প্রাজ্ঞ নগরবাসী বলল, আকাশ সমুদ্র নিশ্চিত জলহীন হয়ে গেছে, রোদের তাপে আকাশ বেঁকে যাচ্ছে একটু একটু করে, এরপর মাটি ফাটার মতো করে আকাশও ফেটে যাবে একটু একটু করে। 
কই দেখতে তো পাচ্ছি না ? 
আমি দেখেছি। প্রাজ্ঞজন নিজের বুকে হাত দিয়ে অবলীলায় বলে, আকাশ ফেটে গেলে সেই ফাটলের ভিতর দিয়ে আগুন ঝরতে থাকবে একটু একটু করে, দিনমানে তাই ঘটছে, মনে হয় না আকাশ থেকে আগুন ঝরছে যেভাবে বর্ষার দিনে অবিরাম জল ঝরে পড়ত? 
কথাটা সত্য, তেমনই মনে হয়। বিড়বিড় করে বলল প্রৌঢ় মানুষটি।
বলো দেখি আচার্য বৃষভানু কেন নগর ছাড়লেন?
কেন? 
কেন আবার, তিনি জানতে পেরেছিলেন এই সমস্ত কথা, আকাশের বক্রভাব তিনি ছাড়া কে জানবে আগে? তিনি টের পেয়েছিলেন উজ্জয়িনী ভয়ানক এক মৃত্যুপুরী হয়ে উঠছে।

কী ভয়ানক কথা! শুনতে শুনতে প্রৌঢ়র গা ছমছম করে। কী শুনছে সে? না, আচার্য ছিলেন পিপীলিকার মতো। পিপীলিকা যেমন বর্ষা আরম্ভের ইঙ্গিত পেয়ে যায় সবার আগে, তেমনি তিনিও দীর্ঘকালের অনাবৃষ্টির খবর জানতে পেরেছিলেন বলেই ছেড়ে গেছেন নগর। তিনি জানতে পেরেছিলেন বর্ষা শুধুই অতীতের স্মৃতি। ভবিষ্যতের গর্ভে বর্ষার মেঘ নেই, তাই তাঁর নিষ্ক্রমণ।

আচার্য কি সত্যিই জানতে পেরেছিলেন?
হ্যাঁ, তাইই সত্য, অনেক অনেক বছর বৃষ্টি হবে না এই দেশে।
তারপর? প্রৌঢ় জিজ্ঞেস করল।
তারপরও বৃষ্টি হবে না, সব শুকিয়ে জলশূন্য হয়ে যাবে।
তারপর?
তারপরও বৃষ্টি হবে না, মাটি, বৃক্ষ জলহীন হবে, নদী, সরোবর, কূপ, পুষ্করিণী তত জলহীন হয়েই গেছে দেখতে পাচ্ছি।
তারপর কী হবে? 
তারপর মানুষ জলহীন হবে, তৃষ্ণার জল পাবে না তো সত্য, কিন্তু মানুষের দেহের সমস্ত রস, রক্তমজ্জা সব শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে। 
তারপর কী হবে?
চোখের জলও ঝরে নিঃশেষ হয়ে যাবে।
কী ভয়ানক কথা, এই সবই কি জানতে পেরেছিলেন আচার্য বৃষভানু ?
মনে হয়, কোথাও কোনো জলবিন্দু থাকবে না যে তাইই সত্য।
তারপর? 
তারপর পৃথিবী অগ্নিময় হয়ে কঙ্কাল হবে, মানুষ যখন শুকিয়ে যাবে, সবই  ফুরিয়ে যাবে, সব শূন্য হয়ে যাবে। 
শূন্যের পর কী হবে?
তখন অনন্ত বর্ষণ শুরু হবে, বৃষ্টি ঝরেই যাবে, থামবে না। 
সত্যি বলছ, তার আর কত দেরি?
অনেক অনেক সহস্র বছর হয়তো, কিন্তু সেই বর্ষণ সুখের হবে না।
এমন অনাবৃষ্টি তো শেষ হবে। 
হবে, কিন্তু পুরাকালের মতো বর্ষণ শুরু হবে, প্রতিটি কল্পের শেষে পুষ্করাবর্ত মেঘ বর্ষণ শুরু করে, থামে না, চলতেই থাকে সেই অবিরাম বর্ষণের কাল ...। 
তোমাকে এইসব কথা কে বলল?
আমি জানি। সেই প্রাজ্ঞ নগরবাসী নিজের বুকে হাত দিল, বিড়বিড় করল, অনাবৃষ্টির কাল সম্পূর্ণ না হলে বৃষ্টি শুরু হবে না, অনাবৃষ্টির কাল শেষ হবে কল্পের শেষে। 
সে তো তুমি বলছ, কল্প কবে শেষ হবে?
এক কল্প হল ব্রহ্মার এক অহোরাত্রি, দিনমান কেটেছে এখন রাত্রিকাল শেষ হয় হয়।
কবে শেষ হবে? প্রৌঢ় নগরবাসী আবার জিজ্ঞেস করল। 
শেষ হবে, সেদিন বৃষ্টি আরম্ভ হবে, সেই বৃষ্টি আর থামবে না। প্রাজ্ঞজন বললেন। 
না থামুক, হোক, উফ, সব যে শুকিয়ে খাক হয়ে গেল!
বৃষ্টি চলতেই থাকবে। 
চলুক, একদিন তো থামবে?
উঁহু, দিনমণি মেঘের আড়ালে থাকবেন।
প্রৌঢ় নগরবাসী বলল, তাহলে পৃথিবীতে মেঘের ছায়া থাকবে শুধু?
তাইই থাকবে। প্রাজ্ঞজন বললেন।
তাহলে রোদ থাকবে না?
না থাকবে না, কিন্তু আলোও তো প্রায় থাকবে না, যুগান্তকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়ে যাবে, হয়েই যাবে।
আহা সে কী সুন্দর হবে! প্রৌঢ় নগরবাসী আকাশে তাকায়, বলল, তখন কদম্ব বিকশিত হবে?
হবে আবার অতিবৃষ্টিতে নতুন পুষ্পেই পচন ধরবে।
বলাকারা গর্ভবতী হবে মেঘের দ্বারা?
হতে পারে, তবে বলাকারা ছেড়ে যাবে এই দেশ।
কে বলেছে? 
তারা তো আশ্রয়হীন হবে, বৃক্ষরা শিকড় থেকে উৎপাটিত হয়ে ভূপতিত হবে, সে ভয়ানক দিন হবে, জলমগ্ন হবে সব। 
প্রৌঢ় বলল, গৃহতে আশ্রয় নিয়ে থাকব।
জলমগ্ন হবে গৃহগুলিও। 
প্রৌঢ় দীর্ঘশ্বাস ফেলল, হোক, তবু তো এই উত্তাপের হাত থেকে বাঁচা যাবে, কবে এই কল্পের শেষ হবে?
হবে, কতদিন, কত সহস্র বৎসর, কত কোটি বৎসর লাগবে তা বলতে পারি না, কতদিন পার হয়েছে কল্পের, আর কতদিন রয়েছে বাকি কে জানে, এই জন্ম হয়তো শেষ হয়ে যাবে। 
তবুও কতদিন বাকি মনে হয়?
বিড়বিড় করল প্রাজ্ঞ নগরবাসী, বাকি তো আছেই, অনাবৃষ্টির সমস্ত লক্ষণ ফুটে তো ওঠেনি এখনও, সবে  তার চিহ্ন নজরে পড়ছে, সমস্ত রস তো  জগৎ থেকে এখনও নিশ্চিহ্ন হয়নি, এখনও তো আমরা বেঁচে আছি, আছি কিনা? 

চলবে

 

ধ্রুবপুত্র (পর্ব এক)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দুই)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তিন)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পাঁচ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাত)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আট)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব নয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব এগার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চৌদ্দ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পনের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ষোল)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সতের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আঠারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব উনিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব কুড়ি)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব একুশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বাইশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তেইশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চব্বিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পঁচিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছাব্বিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাতাশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আটাশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব উনত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব একত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তেত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চৌত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পঁয়ত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাঁইত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আটত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ঊনচল্লিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চল্লিশ)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top