সিডনী সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

ধ্রুবপুত্র (পর্ব বিয়াল্লিশ) : অমর মিত্র


প্রকাশিত:
১৮ মে ২০২১ ১৯:৪৯

আপডেট:
৬ মে ২০২৪ ০০:৩৬

ছবিঃ অমর মিত্র

                                        

আলাপ চলছিল। প্রতিদিন। প্রতি গোধূলি বেলায়। প্রতি সন্ধ্যায়। রাত্রিকালে নগরময় আলাপের কোলাহল বাড়ছিল। 
একদিন মুক্তা বিপণির অধিকারী সেই প্রৌঢ়জন বলল, সবই তো শেষ, তৃণের গোড়ায় রস নেই, গাছগাছালি কত শুকিয়ে যাচ্ছে বলো দেখি, আর ক’দিন এমন চললে সব মরে যাবে।
প্রৌঢ়জনের এই কথায় প্রাজ্ঞ নগরবাসী বলল, এখনও কত বাকি, মাটির রস না হয় নিঃশেষ হলো, মানুষের মনের রস, দয়ামায়া স্নেহ? 
বোঝা যাচ্ছে না, তার সঙ্গে অনাবৃষ্টির সম্পর্ক কী?
সম্পর্ক গভীর, দয়াময়া স্নেহ-ভালোবাসা সবই তো রসের মতো, জলের মতো, তা ফুরোতে আরম্ভ করেছে সবে, দেখতে পাচ্ছ, এরপর জ্ঞানের অভাবও ঘটবে এই নগরে। 
প্রৌঢ় ব্যক্তিটি কেমন যেন হয়ে গেল এই কথায়, বলল, বুঝতে পারছি না তবুও। 
ভেবে দ্যাখো দেখি তুমি কি আর আগের মতো ভা্লোবাসতে পারো? 
কাকে ভালবাসব? প্রৌঢ় বিড়বিড় করে, সহধর্মিণী গত হয়েছে দুবছর আগে, মৃত্যুর আগে সে খুব কষ্ট পেয়েছিল, কালান্তক ব্যাধি তাকে আশ্রয় করেছিল.....।
তার কথা মনে পড়ে?
মনে পড়ে ব্যাধিগ্রস্ত এক বিকটদর্শন মেয়েমানুষের কথা, তার কিন্তু রূপ ছিল একসময়, কীভাবে যে তা ধ্বংস হয়ে গেল! প্রথম জীবনে তাকে ভালবেসেছিলাম, পরে কি ভালোবাসা ছিল? নাকি করুণাই শুধু করেছি। প্রৌঢ়ের চোখে জল এসে গেল।
তখন প্রাজ্ঞ নগরবাসী বলল, এই যে তুমি কাঁদছ, তার মানে এখনও হয়তো মনে দয়ামায়া রয়েছে, এই সব যখন অন্তর্হিত হবে, তখনই কল্পের শেষ হবে, মানে রোদে পুড়ে পুড়ে পৃথিবী ছাই হবে, আগুন আর রোদ অনন্ত হবে।
শুনল প্রৌঢ় নগরবাসী, উত্তরীয় দিয়ে চোখ মুছল ধীরে। তারপর আপনা-আপনিই কঠিন হয়ে উঠতে লাগল, বলল, না আমার দয়ামায়া নেই, আমার জীবন মরুভূমি। 
আবার বিবাহ করলে না কেন, নারীই পারে পুরুষের জীবন শান্ত করতে।
করেছি, কিন্তু ভুল হয়ে গেছে।
কী ভুল হল ? 
সে এক তরুণী, আমার সন্দেহ সে অন্য কাউকে মনে মনে ভা্লোবাসে, তার মনের নাগাল পাই না, তার দেহের নাগালও পাই না আমি। 
সত্য বলছ?
সত্য, তার যৌবন আমাকে আকৃষ্ট করেছিল, কী যে হল তার?
সে কী বলে, প্রেমালাপ করে?
কিছুই বলে না, নীরব থাকে প্রায় সবসময়।
সহবাস তো করো, কী বলে?
কিছুই না, শয্যায় শান্ত।
রতিক্রিয়ায় পারঙ্গম? প্রাজ্ঞজন জিজ্ঞেস করল।
বুঝতে পারি না, সে কখনোই উদ্দীপ্ত হয় না।
তুমি রতিক্রিয়ায় এখনও সমর্থ? 
জানি না। প্রৌঢ় অন্যদিকে মুখ ঘারোয়, স্ত্রীলোক যদি উদ্দীপ্ত না করে, রতিক্রিয়া হয় কীভাবে? 
মনে করে দ্যাখো।
প্রৌঢ় বলল, কামার্ত তো হই, কিন্তু সে থাকে পাথরের মতো নিশ্চল।
অনাবৃষ্টির কারণে এই রকম হয়ে গেছে হয়তো।
সত্য বলছ? প্রৌঢ় জিজ্ঞেস করল।
সত্যই, সেই তরুণী বধূর মন থেকে সমস্ত রস নিঃশেষিত হয়েছে হয়তো, মানুষের মনের প্রেম প্রীতি-ভালোবাসা, করুণার সমস্ত আবরণ যেন চূর্ণ হয়ে গেছে, দয়ামায়া প্রেম আর নেই। 
প্রৌঢ় মানুষটি বিষণ্ণ হল, বলল, কেন এই অনাবৃষ্টি?
মাথা নাড়ে প্রাজ্ঞ মানুষটি, বিড়বিড় করল, বলতে লাগল, তা জানি না, তবে কারণ তো নিশ্চয়ই আছে, শোনা যাচ্ছে সূর্যদেবের রথের চাকা বসে যাচ্ছে, দিন শেষ হবে না। 
থাক, ও কথা থাক। প্রৌঢ় ভয় পায়। 
সুর্যদেব ক্রোধের আগুনেই শেষ করে দেবেন সব, রথ তো চলচ্ছক্তি হারাবে, রাজা যদি বিলাস আর ফূর্তিতে দিন যাপন করেন রাজত্ব বাঁচে কীভাবে? আচার্য বৃষভানুর নিষ্ক্রমণ এই কারণে।
প্রৌঢ় মাথা নাড়তে থাকে, বিড়বিড় করে, আমি তোমার সঙ্গে একমত নই, রাজা কোনো অন্যায় করতে পারেন না, রাজার পাপ হয় না, রাজা শুদ্ধ পুরুষ....। বলতে বলতে লোকটি হাঁটল চন্দ্রালোকিত রাজপথ ধরে। এই রাত্রিটিও কত দুঃসহ। একটুও বাতাস নেই, অসহ্য গুমোট। রাজপথ প্রস্তর নির্মিত। এখনও তা শীতল হয়নি। মাটি সমস্ত দিন যে উত্তাপ ধারণ করেছে তা ধীরে ধীরে ত্যাগ করছে। পথের দুপাশের মাটি থেকে যেন আগুনের ভাপ উঠছিল। লোকটি হাঁটতে হাঁটতে নিজগৃহে পৌছয়। তরুণী  বধূ বিষণ্ণ  মুখে খোলা জানালা পথে আকাশের চন্দ্রমার দিকে চেয়ে ছিল নিৰ্ণিমেষ। বধূকে ডাকল প্রৌঢ়, বলল, কী দেখছিলে আকাশে? 
চাঁদ। 
দেখে নাও, যদি সূর্যের রথের চাকা বসে যায়, তবে তো রাত থাকবে না, চাঁদও উঠবে না, শুধু  দ্বিপ্রহর থেকে যাবে জগতে, বিষণ্ণ  কেন? 
বধূ বলল, কতদিন মেঘ দেখিনি আকাশে।
মেঘ না থাকলেই বা কী? 
তরুণী জবাব দিল না। আনত মুখে দাঁড়িয়ে থাকল প্রৌঢ় স্বামীর সম্মুখে। স্বামী পুরুষটি জবাব না পেয়ে অসন্তুষ্ট হল, বলল, গৃহবধূর জানালায় দাঁড়ানো শোভন নয়।
চুপ করে থাকে বধূ। তাকে নিশ্চুপ দেখে প্রৌঢ় স্বামী কূপিত হয় ধীরে ধীরে, বলল, পরপুরুষ দ্যাখো জানালায় দাঁড়িয়ে, সন্ধ্যায় দুরাচারীরা পথে নামে। 
না প্রভু, আমি এসব জানি না।
যখনই গৃহে ফিরি তুমি ওই স্থানে দাঁড়িয়ে থাক কেন?
আপনি ফিরছেন কিনা তা দেখি, এই তো দাঁড়িয়েছি। মিথ্যা বলল তরুণী।
পথচারীরা আমার পত্নীকে লক্ষ্য করে, দৃষ্টি দেয়, তাদের কথা আমি শুনেছি। 

তরুণী নিশ্চুপ। তার ভয় করছিল। দিনদিন প্রৌঢ় স্বামীর চোখ মুখ বদলে যাচ্ছে। মুখের ভাবে নিষ্ঠুরতা ফুটে উঠছে যে তা সে লক্ষ্য করছে। জানালায় দাঁড়িয়ে পথচারী, রথারোহী, অশ্বারোহী, রাজপুরুষ থেকে নিষাদ, সকলকে দেখতে তার ভাল লাগে। এই গৃহটি বড় অন্ধকার, নিঃঝুম, কথা বলার মানুষও তেমন নেই। আছে এক দাসী, সে বিগত যৌবনা। সেই দাসী শুধু তার যৌবনকালের কথা বলে, বলে তার স্বামী মানুষটি কবে কীভাবে তার প্রতি মনযোগ দিয়েছিল। তার কথা যে সত্য তা প্রমাণ করতে স্বামী তার যৌবনকালে শয্যায় কীরকম আচরণ করত সেই বিবরণ পুঙ্খানুপুঙ্খ দিয়ে যায়। তখন যে  সমস্ত শরীরে কী হয়! নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিল না খুঁজে পেয়ে কী বিষণ্ণতা এসে ছেয়ে যায় সবদিক! এই গৃহটিতে সেই বিষাদ নিয়ে বাস করে সে। জানালায় দাঁড়িয়ে আকাশ, পথ, মানুষ দেখে সে যেন বাঁচে।
স্বামী বলল, আকাশে মেঘ এলে তা জানালায় না দাঁড়িয়ে টের পাওয়া যায়।
হ্যাঁ প্রভু।
মেঘের গর্জন শোনা যায়, বাতাস শীতল হয়।
হ্যাঁ প্রভু।
যদি বৃষ্টি হয়, ধুলোমাটি ভিজলেই তার গন্ধ পাওয়া যায়--শয্যায় শুয়ে, অলিন্দে বসে।
হ্যাঁ প্রভু।
যদি বৃষ্টি নামে তার শব্দ শোনা যায়, যায় তো?
যায়।
তবে তুমি পোড়া আকাশে তাকিয়ে কী দ্যাখো, উড়ন্ত গৃধিনী?
না, গৃধিনী তো দেখি না। ভয়ার্ত হয়ে উঠে তরুণী তার স্বামীর রুক্ষ কণ্ঠস্বরে।
পথে শৃগাল দ্যাখো, যে পুরুষ যৌবনশালী সে তো শৃগালের মতো।
কথা বলে না তরুণী। তার গা ছমছম করে। স্বামীর ঘোলাটে চোখদুটি যেন ধকধক করছে। দৃষ্টিতে ক্রূরতা ফুটে উঠছে। কেন এমন হচ্ছে? তার চোখে জল এসে গেল। পতি সেবায় সে কি কখনও অবহেলা করেছে? বৃদ্ধ স্বামীর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে তো তার দৃষ্টি সবসময়। স্বামী যখন যেমন চান, সে তা পালন করে। তবে কেন এমন আচরণ করছেন উনি?
প্রৌঢ় বলল, যৌবনকাল ঘৃণ্য, আমি ওই কাল পার হয়ে এসেছে বুঝেছি।
প্রভু। কেঁদে ফেলেছে তরুণী বধূ
স্ত্রী যদি তার স্বামী সঙ্গে কপট আচরণ করে, স্বচ্ছ না হয়ে থাকে, তবে এই অনাবৃষ্টির কাল আরও দীর্ঘ হবে, তুমি যৌবনের অহংকারে মনে করো না যৌবন অক্ষয় হয়ে থাকে।
যুবতী স্ত্রী ভয় পেয়ে দুর্মূখ স্বামীর পা দুটি জড়িয়ে ধরল, কী বলছেন প্রভু?
নগরের মানুষ বলছে দ্বিচারিণী স্ত্রীলোকের পাপে এই অনাবৃষ্টি, আকাশ নাকি ভাঙতে শুরু করেছে সূর্যের তাপে, ভেঙে পড়লে তখন তুমি সব টের পাবে।
স্ত্রীর মুখে ভয়ের চিহ্ন ফুটে উঠল তীব্রভাবে তা দেখে প্রৌঢ় স্বামী আরো উৎফুল্ল হয়ে উঠল। তার মুখে ভয়ানক হাসির রেখা ফুটে উঠল। প্রতি রাতেই স্ত্রীর নিকট থেকে শীতল ব্যবহার পেয়ে থাকে সে। মনের বাসনা চরিতার্থ করতে সে যুবতী বধূটিকে সংগ্রহ করেছিল, কিন্তু তার শরীর সামর্থ্য হারিয়েছে রতিক্রিয়ায়। সে মনে করছে বধূর নিরুত্তাপ  আচরণে এমন হচ্ছে। স্ত্রীর মুখে ভয়ার্ত ভাব দেখে প্রৌঢ় বলল, আকাশ এবার ভেঙে পড়বে উজ্জয়িনীর মাটিতে, দ্বিচারিণী স্ত্রীলোক গৃধিনীর খাদ্য হবে, তার সর্ব অঙ্গে রোগ ফুটে উঠবে, যৌবন কাল ঘৃণার কাল। 

এ কী বলছেন, প্রভু! কেঁদে উঠেছে সরল যুবতী। সে বুঝতে পারছিল না দিনদিন স্বামী কেন তাকে ভয়ার্ত করে তুলেছন? স্বামী কেন বদলে যাচ্ছেন? প্রৌঢ় স্বামী কেন তাকে সন্দেহ করছেন? সে জানালায় দাঁড়িয়ে  যৌবনদীপ্ত পুরুষ দেখলে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে ভয়ে, যদি স্বামীর চোখে পড়ে যায়। সে কাঁদতে চাইছিল। ভয়ে কাঁদতে পারছিল না। তার বুকের গভীর থেকে উদগত কান্না বিস্ফোরিত হয়ে ফেটে পড়ছিল যেন। প্রৌঢ়র মনের ভিতরে তখন হিংস্রতা জাগল আরও। এই যুবতীর মহার্ঘ অঙ্গ সে স্পর্শই করতে পারে প্রথমে, তারপর দুর্বল দেহে দলিত করতে পারে, কিন্তু স্ত্রী এতটুকুও সক্রিয় হয় না কেন? স্ত্রী নিশ্চয়ই যৌবনশালী পুরুষ চায়। ভাবতেই আরও ক্রুব্ধ হয়ে উঠল সে, বলল, এরপর যদি জানালায় দেখি, পরপুরুষ দেখতে দেখি, তোমার শাস্তি হবে, জনমেও  নরকবাস, মরণেও।

স্ত্রী নিঃশব্দে কাঁদছিল। কিন্তু তার চোখে জল আসছিল না। সব যেন শুকিয়ে গেছে। তার স্বামী তাকে পায়ে ঠেলে সরিয়ে দিল, তারপর সরাসরি বলল, তুই শয্যায় কার কথা ভাবিস?
না প্রভু, মিথ্যা
কোন শৃগালের কথা? গৃধিনী তুই, শূকরী!
মাথা নিচু করে থাকল বধূ। বুঝতে পারছিল প্রৌঢ় স্বামীর মাথার ঠিক নেই। সে কী করবে? তার কিছুই করার থাকে না শয্যায়। কখনও কোনো মুহূর্তে, অনেক পরে সক্রিয় হয়ে ওঠার সময় প্রৌঢ় ক্লান্ত হয়ে ঘুমোয়। তখন যে কী মায়া লাগে।
প্রৌঢ় বলল, আমার শরীর অশক্ত হল তোর সংস্পর্শে এসে, তুই ডাকিনী, নিশ্চয়ই ইন্দ্রজাল জানিস নেড়িদের মতো, তোকে আমি শেষ করে দেব, সাবধান মাগি। 

অশ্রাব্য ভাষায় প্রৌঢ় পুরুষ ভর্ৎসনা করতে লাগল তরুণী স্ত্রীকে। ভর্ৎসনা করতে তার দেহে এক ধরণের সুখ জন্মায়। তরুণী বধূর অঙ্গগুলির নিন্দা করতে করতে, তরুণী বধূকে ক্রমাগত ঘৃণার কথা বলতে বলতে তার মুখ দিয়ে লালা ঝরতে লাগল।

বধূ ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিল অনাবৃষ্টির কাল দীর্ঘ হলে এমন হয়ে থাকে। বর্ষা এলে তার প্রৌঢ় স্বামী হয়তো বদলে যাবে। আবার হয়ে উঠবে স্নেহময়। তারপর? সে দুচোখ বন্ধ করে। কবে মরণ হবে এই মনুষ্যের? তখনই যেন সে বাঁচবে। বর্ষা আসবে তখনই। 

প্রৌঢ় আচমকা জিজ্ঞেস করল, তুই আমার মরণ কামনা করিস? 

চমকে ওঠে তরুণী, তার মনের কথাটি কী করে জানতে পারল স্বামী? সে নীরব হয়েই থাকল, আর তাতেই প্রৌঢ় বলল, কালান্তক ব্যাধি তোকে অধিকার করবে, তোর যৌবন শেষ হয়ে যাবে ক’দিনেই, তখন কী করবি তুই? কাকে নিয়ে বাঁচবি?

তরুণী কাঁদছিল। কাঁদতে কাঁদতে প্রার্থনা করছিল, মেঘ আসুক, বহুদিন বাদে হলেও বৃষ্টি নামুক, কদম্ব বিকশিত হোক, ময়ূর পেখম মেলুক। সে প্রৌঢ় স্বামীর পা দুটি আঁকড়ে ধরে তার কাছেই প্রার্থনা জানাল, প্রভু, অনাবৃষ্টির কাল শেষ হোক, বর্ষা আসুক, প্রভু মেঘ নিয়ে আসুন উজ্জয়িনীর আকাশে, হে প্রভু আপনিই পারেন, হ্যাঁ আপনিই পারেন মেঘের ডাক শোনাতে, প্রভু আমার সর্বস্ব আপনাকে নিবেদন করলাম, শুধু অনাবৃষ্টির কাল ধ্বংস করুন আপনি। 

প্রৌঢ় দুর্মুখ শান্ত হল সাময়িক। তার মনে হতে লাগল সে নিজেই বরুণদেব। সে হয়তো পারে। দেবতার মতো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, করুণাহীন হয়ে উঠতে লাগল সে ধীরে ধীরে। করুণাহীন না হলে দেবতা হয়ে ওঠা কঠিন। দেবতার করুণার চেয়ে ক্রোধের সঙ্গে মানুষের পরিচয় নিবিড়। সেই পরিচয় আরও নিবিড় করে তুলতে চায় প্রৌঢ় স্বামী, ধীরে ধীরে বলল, আমি আর ক’দিন, আয়ু তো ফুরিয়ে গেল প্রায়, তোর তো যৌবনকাল, যৌবনেই বার্ধক্য দেখে যাবি তুই, বুড়ি হ, বুড়ি হয়ে যা।

তরুণী মাথা নিচু করে থাকল।
সূর্যদেব আকাশে যদি দাঁড়িয়ে যান, রথের চাকা যদি বসে যায়, তুই আরও জ্বলে মরবি, বুড়ি হয়ে মরে পড়ে থাকবি।
প্রভু শান্ত হন।
তরুণী বধূর আকুল প্রার্থনা জ্যোৎস্নারাত্রিতে ছড়িয়ে গেল। সেই রাতে উজ্জয়িনীর মানুষ মেঘের স্বপ্ন দেখল। এই স্বপ্নও দ্যাখেনি তারা বহুদিন। স্বপ্ন যদি এসে থাকে, তা সত্যও তো হয়ে উঠতে পারে। মানুষের স্বপ্নই তো বাস্তবতার জন্মদাত্রী।

চলবে

 

ধ্রুবপুত্র (পর্ব এক)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দুই)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তিন)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পাঁচ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাত)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আট)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব নয়)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব দশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব এগার)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চৌদ্দ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পনের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ষোল)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সতের)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আঠারো)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব উনিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব কুড়ি)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব একুশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বাইশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তেইশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চব্বিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পঁচিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছাব্বিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাতাশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আটাশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব উনত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব একত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব বত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব তেত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চৌত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব পঁয়ত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ছত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব সাঁইত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব আটত্রিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব ঊনচল্লিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব চল্লিশ)
ধ্রুবপুত্র (পর্ব একচল্লিশ)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top